আরেক রকম ● নবম বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা ● ১৬-৩১ মার্চ, ২০২১ ● ১-১৫ চৈত্র, ১৪২৭

প্রবন্ধ

অনুপ্রবেশ আর নির্যাতনঃ হিন্দুত্ববাদীদের প্রিয় অস্ত্র

গৌতম রায়


আধুনিক বিশ্বে যে অনুপ্রবেশ ঘিরে শোরগোল, তার পেছনে সব থেকে বড় কারণ হল রাজনীতিকদের একাংশের স্বার্থান্ধতা। পশ্চিম থেকে শক, হুনেরা ভারতে এসেছিল একদিন। তারা এমনভাবে এদেশের সঙ্গে মিশে গেছে যে, তাদের আর এখন আলাদা করে চেনা যায় না। অহমদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকরা এখন অস্ত্রে শান দিচ্ছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই অসম বিধানসভার নির্বাচন। এই অহমরাও পুব দেশ থেকে এসে ভারতের জল-মাটি-আগুনের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। তাদের এখন আর আলাদা করে পুব দেশের মানুষ হিসেবে চেনার কোনো উপায় এবং কারণ নেই।

মার্কিন মুলুকে মেক্সিকোতে এমন অনুপ্রবেশ কার্যত জলভাত। পুয়ের্তোরিকো থেকেও আমেরিকাতে মানুষের নিরন্তর স্রোত আসছেই। ক্রোয়েশিয়া থেকে মানুষের স্রোত আসছে জার্মানিতে। বসনিয়া থেকেও জার্মানিতে অনুপ্রবেশ একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। সার্বিয়া থেকে যাচ্ছে জার্মানিতে। যাচ্ছে তুরস্ক থেকে, পোল্যান্ড থেকে। আলজেরিয়ার জনস্রোত আসছে ফরাসি দেশে। এই দেশগুলোতে যে অনুপ্রবেশ ঘটছে, সেখানে কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের পুশব্যাক ঘিরে সেসব দেশের রাজনীতিতে শোরগোল প্রায় নেই বললেই চলে। শোরগোল কেবল বাংলাদেশ থেকে আসা দু-চারজন মুসলমানকে ঘিরে।

গত এক দশকে ভারতের রাজনীতি এতটাই কুটিল আবর্তে নিমজ্জিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের বিষয়টি, যেটি কেবল পশ্চিমবঙ্গ এবং আংশিক ত্রিপুরা আর অসমের সমস্যা ছিল, সেটিকে একটি সর্বভারতীয় আঙ্গিক দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি জোরদার করে, বিভাজনের ডিমে তা দেওয়া হচ্ছে। সেই বিভাজনের রাজনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে ইতিহাসকেও চরমভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঙালির চরম আত্মত্যাগকে কেবল হিন্দুর আত্মত্যাগ হিসেবে দেখিয়ে সন্দর্ভ রচিত হচ্ছে। নামজাদা খবরের কাগজে সেসব আজগুবি তত্ত্ব প্রকাশিত হচ্ছে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশে সেখানকার সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীদের খেপিয়ে তোলা হচ্ছে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের সম্পর্কে। আর সেই খেপানোর ফসল ঘরে তুলছে ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক শক্তি বিজেপি।

চরম আর্থ-সামাজিক- রাজনৈতিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনিশ্চয়তার শিকার হচ্ছেন, ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানেরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, নিজেকে সংখ্যালঘু প্রেমি প্রমাণ করতে নানা ভঙ্গিমায় হাজিবিবি সেজে ফটোশুট করলেও, সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর এই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঘিরে, কেবলমাত্র হিন্দুদের উপরেই পাকিস্থান মুক্তিযুদ্ধের কালে অত্যাচার করেছে, '৭১ এর ২৫ শে মার্চের কালরাত্রির ক্রাকডাউনে কেবলমাত্র হিন্দুই মরেছে - হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের এইসব অসত্য, প্ররোচনামূলক প্রচার ঘিরে তিনি একটি কথাও বলেন না, পাছে আরএসএস রেগে যায়।

ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে বাংলাদেশ থেকে যে একজন-দুজন মানুষ কেবল পেটের দায়ে আসছেন, যারা জন্মসূত্রে মুসলমান, তারা পরিগণিত হন 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে। আর একটা বড় অংশের হিন্দু, মূলত নিম্নবর্গীয় হিন্দু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে থেকে, ধীরে ধীরে তাদের যাবতীয় অর্থ-বিত্ত ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে চালান করে, এখানে শাসকের অনুগ্রহে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড করে, জমি, বাড়ি কিনে একটা বিকল্প বাসস্থান করে, সেখানকার সংখ্যাগুরু মানুষদেরই ঠকিয়ে, হঠাৎ একদিন এপার বাংলায় পাড়ি দিচ্ছে, তারা কিন্তু আরএসএস-বিজেপির কাছে শরণার্থী। তারা বাংলাদেশে, সেখানকার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলছে, আবার কলকাতায় এলেই বাংলাদেশে মুসলমানদের 'অত্যাচার'-এর, বিশেষ করে মানুষ যা সব থেকে বেশি খায়, হিন্দু নারী মুসলমানের হাতে ধর্ষিতা হচ্ছে, এমন আজগুবি রোমহর্ষক কথা প্রচার করে আরএসএস, বিজেপির পালে বাতাস জোগাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে ভারতের ভোটার কার্ড জোগাড় করে, হাওড়াতে ফ্ল্যাট কেনা সিলেটের শ্রীমঙ্গলের ছেলেটির যাবতীয় কীর্তি কিন্তু গত দশ বছরে, তৃণমূলের আমলেই পল্লবিত হয়েছে।

এই অনুপ্রবেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে জলঘোলা করতে যেমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকরা সক্রিয়, তেমনি পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র বলে যারা নিজেদের দাবি করেন, চলতি কথায় যাদের 'ঘটি' বলা হয়, তাদের একটা বড় অংশও নিজেদের স্বার্থহানির আশঙ্কায় দেশভাগের অনেককাল আগে থেকেই 'বাঙাল' বিদ্বেষকে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন, যা আজ ভারত, বাংলাদেশ - এই দুই দেশেরই সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবিরকে অনেকখানিই হৃষ্টপুষ্ট হতে সাহায্য করেছে। নয়ের দশকের গোড়ার দিকে অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলে খবরের কাগজে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়।

বাংলাদেশের সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার যেসব বাঙালি অথচ জন্মসূত্রে মুসলমান, প্রাণ বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে বৈধ পাশপোর্ট ভিসা নিয়ে আসছেন, আবার গরিব হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে পেটের ভাতের তাগিদে এপার বাংলায় আসছেন, তাঁদের জন্যে একটু ভালোবাসা, প্রেমের দৃষ্টি প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়ে লিখেছিলেন। লিখে তাঁর প্রাণ সংশয় হয়েছিল। নব্বই উত্তীর্ণ অন্নদাশঙ্কর রায় মুসলমান 'শরণার্থী'-র প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীরা। খবরটি গোয়েন্দারা রাজ্য সরকারের গোচরে আনে। তৎকালীন পুলিশ মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে অন্নদাশঙ্করের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন পর্যন্ত করতে হয়েছিল।

এই অনুপ্রবেশের বিষয়টিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে সাম্প্রদায়িক শিবির মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে শুধু বিকৃত করছে না, সেই সঙ্গে পাকিস্তানের হানাদারদের এক ধরনের ইতিবাচকভাবে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাইছে। '৫২-র মহান ভাষা আন্দোলন মুসলিম জাতীয়তার কফিনে পেরেক পোতার কাজটি শুরু করেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয় কেতন ওড়াবার ভেতর দিয়ে। সেই পর্বটি ধারাবাহিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণতা পায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত অধিকারে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির ভেতর দিয়ে। সাম্প্রদায়িকতার বিষে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলমানে বিভাজিত করার বহু চেষ্টা করেও সফল হয়নি।

পাক হানাদারদের বাংলাদেশের দালাল, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, আলশামসেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করবার পর আবার সাম্প্রদায়িক অভিঘাতে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনে। খুনী খোন্দকার মোশতাক থেকে শুরু করে রাজাকার পুনর্বাসকারী জিয়াউর রহমান, স্বৈরাচারী এরশাদ, খালেদা জিয়ারা বাংলাদেশকে পরিণত করেন পাকিস্তানের ছায়া উপনিবেশে। চরম নির্যাতিত হতে থাকেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানেরা। একই সঙ্গে নির্যাতিত হতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের হাজার হাজার মানুষ যাঁরা জন্মসূত্রে মুসলমান এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক।

প্রাণ বাঁচাতে একটা বড় অংশের বাঙালি সাময়িক আশ্রয় নেন ভারতে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটলে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে দেশে সরকার গঠন করবার পর আশ্রয় নেওয়া সেইসব মানুষরা আবার বাংলাদেশেই ফিরে যান, যাঁদের ৯৮ শতাংশই জন্মসূত্রে মুসলমান। শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশ থেকে একজনও জন্মসূত্রে মুসলমান বাঙালি স্থায়ী ভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেননি। কিন্তু ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে বাঙালি হিন্দুর একটি অংশ বাংলাদেশ থেকে ছলে বলে কৌশলে টাকা করে, কলকাতাকে কেন্দ্র করে বাড়ি, জমি কিনে, ব্যবসাপত্তর জমিয়ে চলে আসছেন। একটা গরিব অংশের মানুষ যে আসছেন না, তা কিন্তু নয়। এই গরিব অংশের মানুষদের আসা ঠেকাতে বাংলাদেশের আর্থিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে সেই নয়ের দশকের গোড়াতে অন্নদাশঙ্কর যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেই প্রস্তাবের দিকে কিন্তু ভারত সরকার আজ পর্যন্ত দৃষ্টিক্ষেপ করেনি। যাঁরা কেবল সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য নিয়েই বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের নানা গল্প তৈরি করছেন, '৭১ এর ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে পাক হানাদারেরা কেবলমাত্র বেছে বেছে হিন্দুদের মেরেছে, গোটা মুক্তিযুদ্ধ পর্বে পাক হানাদারেরা বেছে বেছে হিন্দু হত্যা করেছে, হিন্দু রমণীদের ধর্ষণ করেছে - এইসব অসত্য, আজগুবি তত্ত্বের অবতারণা করছেন দুই দেশেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতে, তারা কিন্তু একটি বারের জন্যেও বলছেন না যে, শেখ হাসিনার শাসন কালেই পাকিস্থানী আমলের কালাকানুন 'শত্রু সম্পত্তি আইনে'র অবলুপ্তি ঘটেছে। ভারতে কিন্তু এই আইনটি এখনও বিদ্যমান। বিজেপি শাসনে এই আইনের সুযোগ নিয়ে গোটা ভারতে অবাধে চলছে সংখ্যালঘু মুসলমানদের সম্পত্তি গ্রাসের ঘটনা।

১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের রজতজয়ন্তী। সরকারি অনুষ্ঠান হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করছেন। মঞ্চে অন্নদাশঙ্কর, পিএন দার, সাইমন ড্রিং, শান্তিময় রায়, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়দের সঙ্গে বিদেশি অতিথি হিসেবে নিবন্ধকার ছিলেন।।আমার ঠিক পাশেই বসেছেন তরুণ এক ব্যক্তি। মুজিব কোট পরিহিত। তিনি আমাকে না চিনলেও বুঝছেন বিদেশি অতিথি। নেত্রীর বক্তৃতার মাঝেই তিনি ফিশফিশ করে আমাকে বলতে লাগলেন,- দেখেছেন, নেত্রী একবারও জেল শহিদদের নাম বললেনই না।

ভাটপাড়াতে ফিরে আসার কদিন পরেই দেখলাম, ঢাকায় তখনও হিন্দু সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি হিশেবে চিহ্নিত করার কালা আইনের সুযোগ নিয়ে একটি হিন্দু সম্পত্তি দখল করেছেন সেই ব্যক্তি। যিনি শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভার পূর্ত দপ্তরের উপমন্ত্রী। তাজউদ্দিনের দূর সম্পর্কের ভাই, আফসারউদ্দিন আহমদ খান। খবরটি শোনা মাত্র নেত্রী তাকে মন্ত্রীসভা এবং দল থেকে বিতাড়িত করেন।

আজকের বাংলাদেশে যে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর বি এন পি - জামাতের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িকরা আক্রমণ করে না, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে একদিন ভারতে যেমন সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের দ্বারা আক্রান্ত হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারতেন, সেদিন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা তেমন সুযোগ পেতেন না। আর আজ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা, সেদেশের সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে। পুলিশ অনেকখানি নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিষয়টিকে দেখে এবং সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ায়। আর আজ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের তো আধিপত্যবাদ বিস্তারকারী হিন্দুদের অত্যাচার ঘিরে বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, পুলিশের কাছে অভিযোগ করার মতো সুযোগটাই নেই।

মুক্তিযুদ্ধে বেছে বেছে হিন্দুদের উপর অত্যাচার করেছে পাক হানাদারেরা, বেছে বেছে হিন্দু রমণী ধর্ষণ করেছে হানাদার পাক জন্তুরা - এ ধরণের তত্ত্বের যারা উপস্থাপনা করেন এবং যেসব খবরের কাগজ সাড়ম্বরে সেগুলো লেখেন, তাদের নিয়ে কিছু বলতেও ঘৃণা হয়। যারা এগুলো লিখছেন, তারা প্রকৃত তথ্য জানেন না, এমনটা ধরে নেওয়ার কিন্তু কোনো কারণ নেই। প্রথাগত শিক্ষার যথৃষ্ট ভারী ভারী ডিগ্রি এদের আছে। তাহলে?

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর অন্নদাশঙ্করকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মেঘনাদ সাহার ছাত্র মুরলি মনোহর যোশি। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। তিনি কি করে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে শরিক হলেন? অন্নদাশঙ্কর বলেছিলেন, শিক্ষিত তুমি কাকে বলবে? ডিগ্রি থাকলেই কি শিক্ষা হয়? অন্তরের শিক্ষাই হলো প্রকৃত শিক্ষা। অনুপ্রবেশ আর হানাদার পাকবাহিনী কর্তৃক বেছে বেছে হিন্দু নারী ধর্ষণের তত্ত্বের উদ্গাতা এবং সেই তত্ত্বের প্রচারকদের উদ্দেশে অন্নদাশঙ্করের কথাটাই খুব বেশি করে বলতে ইচ্ছে করছে। সেই উচ্চনাদে এই কথাটিও যোগ করতে চাই, এসব কথা যারা বলছেন কিংবা লিখছেন এবং অবশ্যই যারা এসব প্রকাশ করছেন, তারা কেবল পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের সুস্থিতিই নষ্ট করতে চাইছেন, তা ভাববার মতো কোনো কারণ নেই। তারা চাইছেন বাংলাদেশেরও সুস্থিতি চুরমার করতে। তাহলে তাদের পক্ষে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সুস্থিতি নষ্ট করার কাজটা খুব সহজ হবে। আর সেটি নষ্ট করতে পারলে সব থেকে বেশি পোয়াবারো মার্কিন প্রভুদের।