আরেক রকম ● নবম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা ● ১৬-৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ● ২-১৭ মাঘ, ১৪২৭

প্রবন্ধ

টিকা টক্কর

মানস প্রতিম দাস


টিকা নিয়ে টিপ্পনী করার ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা আছে। টিকার ঢালাও প্রশংসা করলে কোনও সমস্যা নেই। অত্যন্ত আধুনিক নাগরিক হিসাবে আপনাকে সম্মান জানাবেন বিজ্ঞানী থেকে টিকা প্রস্তুতকারক। সমস্যা শুরু হবে কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন তুললে। সেই ‘প্রশ্ন’ যা বিজ্ঞানের মর্মমূলে, যা ছাড়া বিজ্ঞানের বিকাশ সম্ভব নয়। টিকা আমাদের নিরাপত্তা দেয়। বহু কঠিন ব্যাধি থেকে কোটি-কোটি মানুষকে টিকা রক্ষা করেছে এটা মেনে নিয়েও বিশেষ-বিশেষ ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে। কিন্তু তুললেই সংশ্লিষ্ট মহলের নানা পালটা প্রশ্ন ধেয়ে আসবে আপনার দিকে। কোন অধিকারে সন্দেহ করছেন টিকাকে? কী যোগ্যতা আপনার? আপনি কি ভাইরোলজিস্ট, ব্যাক্টিরিওলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট? কোনওটাই নন? তাহলে কি চিকিৎসক? চিকিৎসার কোন বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছেন, গবেষণা করেছেন? বিশেষ কোনও অভিজ্ঞতা নেই? শুধুমাত্র বিজ্ঞান পড়েছেন? কী বলছেন? সাংবাদিকতা করেন? আপনার তো অধিকারই নেই টিকা নিয়ে বিরোধী কথা উচ্চারণের! সমস্যা হল, সংশ্লিষ্ট যোগ্যতা থাকলেও আপনার বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণকে ‘স্বার্থান্বেষী’ মহলের চক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হতে পারে। কোভিড পর্বে যখন একাধিক টিকা প্রস্তুত বা প্রায়-প্রস্তুত হয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে এবং অধিকাংশ দেশের প্রশাসন দরজা খুলে স্বাগত জানিয়ে ফেলেছে তখন কিছু সমালোচনাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। কোনও নির্দেশেই দমানো যাচ্ছে না সেগুলোকে। এদিকে মানুষের মনে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যার উত্তর দেওয়া হয়ত ততটা কঠিন নয়। এই প্রবন্ধে এই সবকিছু আসবে মিলেমিশে। টিকার দল পরস্পরের মধ্যে টক্কর দিক, নিজেদের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী নানারকম মানবকল্যাণের দাবি করুক, আমাদের কাজ বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করা।

এত তাড়াতাড়ি!

কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে এই একটা প্রশ্ন সবার মনেই বোধহয় একবার উঁকি দিয়েছে। এমন নয় যে জনমানসে ফেসবুক, পুজোসংখ্যা, শীতের মেলা, বিরাট কোহলি বা দীপিকা পাড়ুকোনের পাশে টিকার অনেকটা জায়গা আছে। কিন্তু কোভিডের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে একখানা মোক্ষম টিকার কামনা করেছেন বিশ্বের সব মানুষ। একইসঙ্গে তারা জেনেছে যে টিকা রাতারাতি তৈরি হয় না। একটা দশকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে কার্যকরী একটা টিকা তৈরি করতে। অনেকগুলো ধাপ পেরোতে হয় টিকা নিরাপদ ও কার্যকরী কিনা তা জানতে। আইনি বাধা পেরোতেও সময় ও পরিশ্রম লাগে প্রচুর। ব্যাপারটা যদি তাই হয় তবে কোভিড নাইনটিন রোগের ক্ষেত্রে এত তাড়াতাড়ি এতগুলো টিকা তৈরি হয়ে গেল কীভাবে?

নির্দিষ্ট একটা উদাহরণ নিয়ে এগোলে বোঝার সুবিধে হতে পারে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বহুজাতিক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা টিকার কথাই ধরা যাক। এই প্রচেষ্টার মুখ্য কারিগর সারা গিলবার্ট জানিয়েছেন যে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ঘটে যাওয়া ইবোলা মহামারী সতর্কবাণী রেখে গিয়েছিল বিজ্ঞানীদের জন্য। মূলতঃ আফ্রিকায় ঘটা এই রোগের মোকাবিলায় বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া ছিল ভীষণ ঢিলেঢালা রকমের। ফলে মারা গেল প্রায় এগারো হাজার মানুষ। এই উদাহরণের পর আলোচনা শুরু হল বিজ্ঞানী মহলে, পরের মহামারীটা ঠিক কেমন হবে? কতটা জোরদার হবে তার আক্রমণ? ঠেকাতে কি পারা যাবে এই মুহুর্তের জ্ঞান দিয়ে? অজানা-অচেনা রোগের দ্রুত মোকাবিলার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা জেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা একটা নতুন কৌশল উদ্ভাবন করলেন। চিরাচরিত টিকা তৈরির পদ্ধতিতে বদল আনলেন তাঁরা। রুটিন টিকাকরণে ছোটদের বা বড়দের শরীরে যা দেওয়া হয় তা আসলে রোগ সৃষ্টিকারী জীবের মৃত বা দুর্বল করা শরীর। কখনও হয়ত ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের দেহাংশও ঢোকানো হয় টিকা হিসাবে। এগুলো দেখে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, সচেতন হয় সংশ্লিষ্ট কোষগুলো যাতে আসল হানাদার এলে আটকে দেওয়া যায়। কিন্তু এমন টিকা তৈরি করা সময়সাপেক্ষ। তার বদলে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন এক নতুন সিস্টেম যার নাম দেওয়া হল ChAdOx1। বিস্তার করলে নামটা দাঁড়ায় শিম্পাঞ্জি অ্যাডেনোভাইরাস অক্সফোর্ড ওয়ান। কী নতুনত্ব ছিল এতে? শিম্পাঞ্জীদের সর্দি ঘটায় এমন একটা অ্যাডেনোভাইরাস নিলেন গবেষকরা, সেটার জিনে এমন পরিবর্তন ঘটালেন যে তা আর বংশবৃদ্ধি করতে পারবে না, রোগ বাধানোর ক্ষমতা লোপ পেল তার। এবার এটা দিয়ে প্রায় যে কোনও ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা যায়! বস্তুতপক্ষে কোভিড টিকার আগে ChAdOx1 ভিত্তিক অনেক টিকা তৈরি হয়েছে, সেগুলো দেওয়া হয়েছে তিনশো তিরিশ জনের শরীরে। ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে জিকা ভাইরাস আটকানোর ব্যবস্থা হয়েছে, প্রস্টেট ক্যান্সার থেকে চিকুনগুনিয়ার গতি রোধের ব্যবস্থা হয়েছে। পরিবর্তিত অ্যাডেনোভাইরাস যে কোনও জিনসজ্জা বহন করতে পারে যার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তৈরি করতে চাই আমরা। ফলে এ এক নতুন নকশা যা আগে ছিল না দুনিয়ায়।

নভেল করোনা ভাইরাসের আগমনে উদ্বিগ্ন হননি সারা গিলবার্ট, ভেবেছিলেন ChAdOx1 প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই বাগে আনা যাবে ভাইরাসকে। তা হল না। কিন্তু একটা রূপোলি রেখা ছিল। নতুন শতকের দুটো দশকে করোনা ভাইরাসের এই পরিবার দু’বার জন্তুজানোয়ার থেকে মানুষের শরীরে ঢোকার চেষ্টা করেছে। ২০০২ সালে ঘটেছিল সার্স এবং ২০১২ সালে মার্স বিশ্বমারী। ফলে এই ভাইরাসের শারীরিক গঠন বারবার এসেছে বিজ্ঞানীদের চোখের সামনে। দুর্বল একটা জায়গা চিহ্নিত হয়ে যায় এভাবেই - ভাইরাসের কাঁটার মত অংশ বা স্পাইক। এই জায়গার গুরুত্ব অপরিসীম, মানুষের দেহকোষে ঢোকার জন্য এটাকেই ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসের দল। ফলে এখানে উপযুক্ত বাধা উপস্থিত করতে পারলে রোগ আটকানো যাবে। ChAdOx1 প্রযুক্তিতে মার্স রোগের টিকা আগেই উদ্ভাবন করেছিল অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদল। ফলে কোভিডের বেলায় একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেননি তাঁরা। গবেষকদের পক্ষে এটাও একটা আশার কথা ছিল যে করোনা ভাইরাস স্বল্প সময়ে অসুস্থতা তৈরি করে, ফলে মানবদেহের স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে এই আক্রমণ মোকাবিলা করার। টিকার কাজ সেখানে কিছুটা সাহায্য করা। এইডসের মত দীর্ঘস্থায়ী রোগ ঘটানোর ব্যাপার যদি থাকত তাহলে এত সোজা হত না টিকা তৈরির প্রক্রিয়া। যাই হোক, ২০২০ সালের ১১ই জানুয়ারি চীনের বিজ্ঞানীরা নভেল করোনা ভাইরাসের সম্পূর্ণ জিনচিত্র প্রকাশ করলেন। এরপর সারা গিলবার্ট ও তাঁর সহযোগীদের কাছে একটাই কাজ পড়ে রইল - ChAdOx1 প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভাইরাসের স্পাইকের প্রোটিনের জিন-তথ্য শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করা।

কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা আসবে কোথা থেকে? বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যেটুকু অর্থ এসেছিল তা কোনওভাবেই যথেষ্ট নয়। এপ্রিল অবধি পরিস্থিতিটা সুখকর ছিল না। কিন্তু যেই বিশ্বজুড়ে লকডাউন কঠোর হল অমনি নানান উৎস থেকে অর্থের যোগান আসতে লাগল। অক্সফোর্ডে চার্চিল হাসপাতালের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের টিকা তৈরির কারখানা ছিল। এবার বিস্তারিত ব্যবস্থা করতে হবে বুঝে উৎপাদনের কাজটা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল ইতালির এক সুবিধেজনক জায়গায়। চার্টার্ড বিমানে করে ইতালি থেকে লণ্ডনে পৌঁছতে লাগল টিকা। এবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পালা। গবেষণাগারের প্রাণীদের উপর পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার পরে মানুষের উপর ট্রায়াল শুরু হল ২৩শে এপ্রিল। নিয়ম অনুযায়ী ফেজ ওয়ানে সামান্য সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষা করা হল। ফেজ টু এবং থ্রি-তে ধাপে ধাপে বাড়ল টিকা পাওয়া মানুষের সংখ্যা। শেষ ধাপে তিরিশ হাজার মানুষের উপর করা হয় পরীক্ষা। এখানেই অনেকটা সময় এমনকি একটা দশক লাগে বলে আমাদের ধারণা কিন্তু বিপরীত কথা বলেছেন গবেষক দলের অন্যতম সদস্য মার্ক তোশনার। তাঁর বক্তব্য হল, বিজ্ঞানের এতটা সময় প্রয়োজন নেই। অর্থের জন্য আবেদনপত্র লেখা, বাতিল হলে আবার লেখা, স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা, প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছনো - এইসব কাজেই ব্যয় হয়ে যায় সময়টা। এবার বিশ্বমারীর পরিস্থিতিতে তার ব্যতিক্রম হওয়ায় টিকা অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে দ্রুততার সঙ্গে। বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবী হতে, অর্থ এসেছে প্রচুর পরিমাণে এবং প্রশাসকরা আইনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও চেষ্টা করেছেন নিরাপদ টিকাকে ব্যবহারের গণ্ডীতে নিয়ে আসার। ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো আগ্রহ দেখাতে শুরু করে।

এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে ভবিষ্যতে টিকা নেওয়া ব্যক্তির শরীরে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। অক্সফোর্ড টিকার ট্রায়াল পর্বে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে এক স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা ছিল সেই ব্যক্তির, প্রদাহ ঘটত এবং ভাইরাসের সংক্রমণে এই প্রদাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই ঘটনার পর কিছুদিন বন্ধ থাকে ট্রায়াল। কিন্তু টিকার সঙ্গে এই ব্যক্তির শারীরিক সমস্যার সরাসরি যোগাযোগ স্বীকার করতে চান নি সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। পরে আবার ট্রায়াল শুরু হয়। যাই হোক, যখন কোটি কোটি মানুষ টিকা নেবেন তখন বোঝা যাবে কোথায় কেমন ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ঘটল। অর্থাৎ আগেভাগে পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এই টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কেও কিছু টিপ্পনী করা দরকার। নভেম্বর মাসে সহযোগী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে যুক্তরাজ্য এবং ব্রাজিলে ট্রায়াল চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে দুটো মডেলের একটাতে নব্বই শতাংশ এবং অন্যটায় সত্তর শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গিয়েছে। সংস্থা দাবি করে, ডেটা সেফটি মনিটরিং বোর্ড নামে এক স্বাধীন সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে টিকার দুটো ডোজ নিলে চোদ্দ দিনের মধ্যে কোভিড নাইনটিন থেকে সুরক্ষা মেলে। যুক্তরাজ্য এবং ব্রাজিল ছাড়াও আমেরিকা, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, লাতিন আমেরিকায় ট্রায়াল চালানোর পরিকল্পনার কথা জানায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। প্রায় ষাট হাজার মানুষকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে সেই সময় জানানো হয়।

আরও তাড়াতাড়ি!

আমেরিকায় পরিস্থিতিটা ছিল আরও কঠিন। মানুষ মারা যাচ্ছিল লাখে-লাখে। টিকার প্রয়োজন অনুভব করছিলেন সবাই। ওই সেপ্টেম্বর মাসেই আমেরিকার ফুড অ্যাণ্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলে যে ফেজ থ্রি শেষ হওয়ার আগেই টিকার অনুমোদন দিয়ে দেওয়া উচিত। সে দেশের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যাণ্ড প্রিভেনশন বিভিন্ন স্টেটের কাছে আবেদন জানায় যে কিছু বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে পয়লা নভেম্বর টিকার ছাড়পত্র তৈরি করে ফেলা উচিত। খেয়াল রাখতে হবে যে এর মাত্র দু’দিন পরে ছিল মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। অর্থাৎ টিকার আগে রাজনীতিকে রেখেছিলেন সে দেশের নিয়ামকরা। আমেরিকায় টক্কর চলছিল ফাইজার আর মডার্নার মধ্যে। দুটো সংস্থাই ব্যবহার করেছে messenger RNA (mRNA) যা প্রোটিন তৈরির নির্দেশ বহন করে। প্রোটিন সরাসরি শরীরে না ঢুকিয়ে সেটা বানানোর নির্দেশ চালান করার কৌশল নিয়েছিল এই দুটো সংস্থা। mRNA দেহকোষে প্রবেশ করলেও নিউক্লিয়াসে ঢোকে না আর তাই আমাদের বংশগতির ধারক ডি এন এ-র সঙ্গে তার সংস্পর্শ ঘটে না। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে একই টিকার মাধ্যমে অনেক রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে সমস্যা হয় mRNA টিকায় ব্যবহৃত একটা যৌগ নিয়ে। এর নাম পলিইথিলিন গ্লাইকল, mRNA এই যৌগে মুড়ে চালান করা হয় দেহকোষে। এর আগে কোনও টিকায় এই যৌগ ব্যবহৃত না হলেও অনেক ওষুধে এর উপস্থিতি আছে। পলিইথিলিন গ্লাইকলের কারণে শরীরে র‍্যাশ বেরোতে পারে, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, মানুষ হাঁপাতে থাকে। এমনটা সবার মধ্যে হতে হবে তার কোনও মানে নেই। কিন্তু আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যাণ্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের কর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্যাপারটা নিয়ে। ফাইজার ও মডার্নার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা। টিকার স্বার্থে অনেক ইমিউনোলজিস্ট অবশ্য এই অ্যালার্জির প্রসঙ্গটা উপেক্ষা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু নাগরিক মনে আতঙ্ক দেখা দেয়, এই অ্যালার্জির কারণেই হয়ত তাঁরা আমেরিকায় প্রস্তুত টিকা দুটো নিতে পারবেন না!

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স তাদের অনলাইন পত্রিকা 'সায়েন্সম্যাগ'-এ এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে। তারা দেখায় যে ফাইজার ও মডার্না অবশ্যই বহু মানুষের উপর পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং কোনও পরীক্ষাতেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বলে জানানো হয়নি। কিন্তু এখানে একটা ফাঁক আছে। অতীতে যে সব ব্যক্তির কোনও টিকায় অ্যালার্জি দেখা দিয়েছিল তাদের সামগ্রিকভাবে বাদ রাখা হয়েছে এই ট্রায়ালে। কোভিড নাইনটিন টিকার উপাদানে অ্যালার্জি আছে এমন মানুষদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে এই ট্রায়াল কখনই সম্পূর্ণ নয়। এদিকে পলিইথিলিন গ্লাইকল যে একেবারে অচেনা যৌগ নয় তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। শ্যাম্পু থেকে টুথপেস্ট, অনেক কিছুতেই আছে এই যৌগ। মলত্যাগের সুবিধার জন্য ল্যাক্সেটিভেও রাখা হয় এটা। আগে এটাকে নিষ্ক্রিয় বলে ভাবা হত কিন্তু ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে প্রায় বাহাত্তর শতাংশ মানুষের দেহে এই যৌগের বিরুদ্ধে কিছু-না-কিছু অ্যান্টিবডি আছে। এর অর্থ পলিইথিলিন গ্লাইকল শরীরে ঢুকলে সেই অ্যান্টিবডির দাপাদাপিতে অসুস্থ হতে পারে শরীর। ডিসেম্বর মাসে দুই কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে যে এই বিষয়টা টিকার বাজারিকরণে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

শীর্ষে ভারত

সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইণ্ডিয়া। টিকা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এর কোনও জুড়ি নেই পৃথিবীতে। ঠিকই পড়েছেন, গোটা পৃথিবীর যে কোনও কেন্দ্রের থেকে উৎপাদনের পরিমাণে এগিয়ে আছে ভারতের এই প্রতিষ্ঠান। আর একবার উল্লেখ করতে হয়, উৎপাদনের নিরিখে সিরাম ইনস্টিটিউট শীর্ষে, বৈজ্ঞানিক অবদানের ক্ষেত্রে নয়। যাই হোক, ২০১৯ সালে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পুনা শহরে কুড়ি লক্ষ বর্গ ফিট জায়গার উপর গড়ে ওঠে তাদের নবতম উৎপাদন কেন্দ্র। সেখানে আধুনিকতম যন্ত্রপাতি রয়েছে এবং এই কেন্দ্রের কারণে টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে ইনস্টিটিউটের অংশীদারি পৌঁছে যাবে পনেরো শতাংশে। বিশ্বের প্রথম সারির গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এরা বৈজ্ঞানিক সহায়তা নিয়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথম স্থানটা ধরে রাখে। উদাহরণ প্রচুর আছে। এই যেমন বছর দুয়েক আগে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের সহযোগিতায় রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে 'রোটাসিল' নামে একটা টিকা তৈরি করে ইনস্টিটিউট যা অনেকটা তাপ সহ্য করতে পারে, ভেঙে যায় না। নির্দিষ্ট করে বললে, পঁচিশ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তিরিশ মাস অবধি ঠিকঠাক থাকে এই টিকা। এটা টিকা সঞ্চয় এবং বন্টনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি! রোটাভাইরাসে যে পাঁচ বছরের নীচে শিশুরা হামেশাই আক্রান্ত হয়, তাদের জলের মত পায়খানা হয় তা তো সবাই জানেন। ফলে এমন একটা সুস্থায়ী টিকা শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেকটা সহায়তা দেবে বলে আশা করা যায়।

বাণিজ্যের সম্ভাবনা বোঝা এবং বিনিয়োগের প্রভূত ক্ষমতা থাকলে যে কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তরতর করে এগিয়ে যায়, পেছনে ফেলে দেয় প্রতিযোগীদের। সরকারের নেকনজর থাকলে এতে আরও একটু সুবিধে হয় নিশ্চিতভাবে। এপ্রিলের শেষে সিরাম ইনস্টিটিউট জানায় যে তারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার উৎপাদন শুরু করে দেবে। ট্রায়ালের তৃতীয় ফেজের দিকে লক্ষ্য রেখে যথেষ্ট পরিমাণ টিকার ডোজ তৈরি করবে তারা, নাম দেবে 'কোভিশীল্ড'। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে ট্রায়াল শুরু হয় অগাস্ট মাসের শেষে। AZD1222 নামে ওই টিকার ফেজ থ্রি ট্রায়াল ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে যুক্তরাজ্য (মে মাসে), ব্রাজিল (জুন মাসে) ও দক্ষিণ আফ্রিকায় (জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে)। ভারতে সতেরোটা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ষোলোশো ব্যক্তিকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংখ্যাটা নিতান্তই কম ছিল। ফলে টিকাকে কার্যকরী ও নিরাপদ করার জন্য মানদণ্ড এখানে ভিন্ন হয়ে দাঁড়াল। সেপ্টেম্বর মাসের দু’ তারিখ অবধি একশো জন স্বেচ্ছাসেবীকে টিকা দেওয়া হল। তারপর বিরতির পর্ব কারণ এই ছোট গোষ্ঠীর শরীরে কী প্রতিক্রিয়া হল তা জানাতে হবে ডেটা সেফটি অ্যাণ্ড মনিটরিং বোর্ডকে। বোর্ড ছাড়পত্র দিলে আবার শুরু হবে টিকাকরণ। এদিকে যুক্তরাজ্যে টিকা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল এক ব্যক্তি, অ্যাস্ট্রাজেনেকা সিদ্ধান্ত নিল যে সারা বিশ্বে ট্রায়াল স্থগিত রাখবে তারা। সিরাম ইনস্টিটিউট নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নিল এ ব্যাপারে - ভারতে ট্রায়াল স্থগিত হবে না কারণ এদেশে কেউ অসুস্থ হয়নি টিকা নিয়ে। এ বিষয়ে দেশের নিয়ামক সংস্থা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইণ্ডিয়াকে জানানোর প্রয়োজনীয় কাজটা করল না তারা। ফল হল বিপরীত, নিয়ামক সংস্থা উত্তর চেয়ে পাঠাল সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে। তাদের অভিযোগের মধ্যে এটাও ছিল যে টিকাদান এবং অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে রিপোর্ট দাখিল করার প্রয়োজন বোধ করেনি এই প্রতিষ্ঠান। অবশেষে, চাপে পড়ে, সেপ্টেম্বরের দশ তারিখে ট্রায়াল স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানাল ইনস্টিটিউট। সাধারণ মানুষ এই ‘অসাধারণ’ ব্যতিক্রমের তাৎপর্য বুঝল কিনা জানা নেই তবে নিঃসন্দেহে মার খেল টিকা সম্পর্কিত বিশ্বাসযোগ্যতা।

এর মধ্যেই ঘটে যায় ছোটখাটো একটা বিপর্যয়। স্বেচ্ছায় টিকা নেওয়া চল্লিশ বছর বয়সী একজন পুরুষ ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা করে। একইসঙ্গে আইনি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তিনি দাবি করেন যে ভারতে ষোলোশো স্বেচ্ছায় টিকাগ্রহণকারীর উপর যে পরীক্ষা চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। ব্যাপারটা কেমনভাবে এগিয়েছিল তা জানলে অভিযোগ বোঝা সহজতর হবে। প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবীকে একটা ফর্মে সই করতে হয়। একে বলা হয় ‘ইনফর্মড কনসেন্ট ফর্ম’। টিকা নিরাপদ এমন মর্মে নানা বিবৃতি পড়ার পর সেপ্টেম্বর মাসের উনত্রিশ তারিখে অভিযোগকারী এই ফর্মে সই করে ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত হন। কোভিশীল্ড দুটো ডোজের টিকা, আটাশ দিন অন্তর দেওয়া হয়। তবে ট্রায়ালের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে কাউকে দেওয়া হয় আসল টিকা আর কাউকে দেওয়া হল গ্লুকোজ মেশানো জল বা ওই জাতীয় কিছু (placebo)। টিকা পাওয়ার এগারো দিন পরে করা পরীক্ষায় অভিযোগকারীর দেহে অ্যান্টিবডির খোঁজ পাওয়া যায় যার অর্থ হল, তাঁকে টিকাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয় তাঁর এবং ভীষণভাবে বমি হতে শুরু করে। স্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী তাঁর স্বামীর আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা যায় এবং চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর কোনও বোধ ছিল না। আইনি বিজ্ঞপ্তিতেও জানানো হয় যে আলো বা শব্দের প্রতি একটা বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন তিনি এবং বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইছিলেন না। ট্রায়ালের জন্য ইনি ভর্তি হয়েছিলেন চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ হায়ার এডুকেশন অ্যাণ্ড রিসার্চে। অভিযোগকারীর দৈহিক পরিস্থিতির অবনতি হলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রী রামচন্দ্র মেডিকেল কলেজ অ্যাণ্ড হসপিটালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে। পরে তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেও নিয়ে যাওয়া হয়। অক্টোবরের এগারো থেকে ছাব্বিশ তারিখ অবধি হাসপাতালে ছিলেন অভিযোগকারী। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় যে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তা দেখে জাতীয় সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’ জানায় যে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছিল এবং কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ (disoriented) ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত অনুরোধে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে, তখন তিনি acute encephalopathy থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন। এছাড়াও সার্টিফিকেটে বলা হয় যে তাঁর ভিটামিন ডি এবং বি টুয়েলভ ঘাটতি রয়েছে। সংযোজক কলার সম্ভাব্য সমস্যা আছে বলেও মন্তব্য করা হয়। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ‘দ্য হিন্দু’ জানতে পারে যে সেই ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হননি এবং আগের মত কাজ করতে পারছেন না। সুস্থতা ফেরাতে অন্য এক বেসরকারি হাসপাতালের নিউরোলজিস্টের সাহায্য নিচ্ছেন তাঁরা। ট্রায়ালের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার এস আর রামকৃষ্ণাণ এই সংবাদপত্রকে জানান যে অভিযোগকারী সম্পূর্ণ সুস্থ, সবকিছু নির্দিষ্ট প্রোটোকল অনুযায়ী করা হয়েছে এবং যাবতীয় খরচ হাসপাতাল বহন করেছে। তিনি এও বলেন যে অভিযোগকারীর শারীরিক অসুস্থতা টিকার জন্য হয়নি এবং সেটা তিনি নিয়ামক সংস্থা ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইণ্ডিয়াকে জানিয়েছেন। সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইণ্ডিয়ার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? স্বেচ্ছাসেবকের অভিযোগকে দুরভিসন্ধিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একশো কোটি টাকার মানহানির মামলা রুজু করে কোম্পানি।

খাঁটি ভারতীয়

ভারতের মাটিতে পরিকল্পিত, উপযুক্ত গবেষণা দ্বারা সমর্থিত একমাত্র টিকা যা প্রতিযোগিতায় রয়েছে তার নাম কোভ্যাক্সিন। বেসরকারি কোম্পানি ভারত বায়োটেক এই টিকা তৈরি করেছে ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) এবং পুনার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। কিন্তু শুরুতেই বিতর্ক জুড়ে যায় কোভ্যাক্সিনের সঙ্গে। জুলাইয়ের প্রথম দিনে কোভ্যাক্সিনের প্রাথমিক প্রস্তুতির চার দিন পরেই ICMR-এর মহানির্দেশক জানান যে পনেরোই অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবসে এই টিকা ছাড়া হবে বিশ্বমারী মোকাবিলার জন্য। তখন অনেকের চোখই কপালে উঠেছিল। প্রয়োজনীয় ট্রায়াল ছাড়াই, পঁয়তাল্লিশ দিনের মধ্যে একটা ক্যাণ্ডিডেট টিকা ছাড়পত্র পায় কীভাবে! যাই হোক, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হল এবং জুলাই মাসে এর হিউমান ট্রায়াল শুরু হয়। দুটো ফেজের সফল সম্পাদনের পর দেশের পঁচিশটা কেন্দ্রে ছাব্বিশ হাজার মানুষের উপর তৃতীয় দফার ট্রায়াল চালানোর অনুমতি পাওয়া যায়। কোভ্যাক্সিনে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহৃত হয়েছে যা চিরাচরিত ধরণের অনুসারী। এর সপক্ষে এমন কথাও উচ্চারিত হয়েছে যে গোটা ভাইরাস দেহে ঢুকলে শুধু স্পাইকের প্রোটিন নয়, অন্যান্য অংশের উপাদানের বিরুদ্ধেও সতর্ক হতে পারবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ভারত বায়োটেক বেশ বড় সংস্থা। সারা পৃথিবীতে তিনশো কোটি টিকার ডোজ সরবরাহের কৃতিত্ব দাবি করে এই কোম্পানি। প্রথম দফার ট্রায়ালে উৎসাহব্যঞ্জক ফল দেখা গেলেও তৃতীয় দফার ট্রায়ালে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে গেল কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে। এদিকে জানুয়ারির শুরুতে কোভিশীল্ড এবং কোভ্যাক্সিন পেয়ে গেল সরকারি ছাড়পত্র, জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য (emergency use)। কিন্তু একই সময় ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের পক্ষ থেকে জানানো হল যে তৃতীয় ফেজ থেকে কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতার প্রমাণসূচক রিপোর্ট তখনও পায়নি তারা।

মোটামুটিভাবে এই হল টিকা-চিত্র। এখন প্রশ্ন বাকি রইল দুটো - আর কোন কোভিড টিকা ছাড়পত্র পায় এদেশে এবং কেমন মূল্যে দেওয়া হবে সেগুলো। অনেক বিশেষজ্ঞ বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার জন্য দাবি তুলেছেন কিন্তু বেসরকারি ক্লিনিকে মূল্য দিয়ে টিকা নেওয়ার অবকাশ থাকবে বলে অধিকাংশের ধারণা। বাণিজ্যটা কীভাবে বিকশিত হবে তা দেখার জন্য উন্মুখ সবাই। কারা প্রথমে সুযোগ পাবে টিকা নেওয়ার আর কে থাকবে তালিকার শেষে তা নিয়েও কৌতূহল চড়ছে। সবরকম সংশয় সঙ্গে নিয়ে টিকা পেয়ে সুস্থ থাকার আশাটা অবশ্য রয়েছে এজেণ্ডার একেবারে শীর্ষে। তবে একইসঙ্গে সন্দেহগুলো বেঁচে থাকুক যাতে প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।