আরেক রকম ● নবম বর্ষ চতুর্বিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ● ১-১৫ পৌষ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

বইয়ের বাজার কোন পথে - কিছু তথ্য কিছু বিশ্লেষণ

মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


অতিমারি পূর্ববর্তী বইয়ের বাজার

২০১৫ সালের নিলসন ইন্ডিয়ার 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য ইন্ডিয়া বুক মার্কেট’ রিপোর্ট [১, ২] অনুযায়ী সেই সময়ে ভারতের বইয়ের বাজার ছিল ২৬,১০০ কোটি টাকার। এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিশার্স ইন ইন্ডিয়া’ (এপিআই) এবং ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাবলিশার্স’ (এফপিআই)-র সহযোগিতায়। ঐ সময়ে ভারতের বইয়ের বাজার ছিল বিশ্বের মধ্যে ষষ্ঠ বৃহত্তম। নিলসন ইন্ডিয়ার অনুমান ছিল, প্রতি বছর প্রায় ১৯.৩% বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে এই বাজার হবে ৭৩,৯০০ কোটি টাকার।

• এই বাজারের ৫৫% হল ইংরেজি বই। ভারতে প্রায় ৯০০০ ইংরেজি বইয়ের প্রকাশক আছে। দেশে প্রকাশিত বইয়ের সঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানি করা বই যোগ করে ভারতের ইংরেজি বইয়ের বাজার পৃথিবীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম। অবশ্য বই বিক্রির আয়ের এক বৃহদংশ যায় বিদেশের প্রকাশনা সংস্থাগুলিতে, আর এই প্রকাশনা সংস্থাগুলির বেশিরভাগই এখনও লন্ডনের অফিসগুলি থেকে পরিচালিত হয়।
• ভারতীয় ভাষাগুলির মধ্যে ৩৫% হল হিন্দিতে প্রকাশিত বইয়ের বাজার। বাকিটা অন্যান্য সমস্ত আঞ্চলিক ভারতীয় ভাষার মধ্যে বিভক্ত। অন্ততপক্ষে ২২টা আঞ্চলিক ভাষার এই বাজার অত্যন্ত অসংগঠিত।
• নিলসন ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় ৯০৩৭ প্রকাশকের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮১০৭টি প্রকাশক শুধুমাত্র স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বই প্রকাশ করে। খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের স্কুল শিক্ষায় প্রায় ২৫ কোটি এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরে ৩.৫ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। পাঠ্য ও পরীক্ষার প্রস্তুতির বই পুস্তক-বাজারের ৭০% দখল করে রাখে।
• মাত্র ৯৩০টা প্রকাশনা সংস্থা ট্রেড বইয়ের সাথে যুক্ত। কথাসাহিত্য, ননফিকশন বা তথ্যভিত্তিক সাহিত্য এবং শিশুসাহিত্যকে বলে 'ট্রেড বই'। ট্রেড বইয়ের বিভাগে প্রকাশিত বইয়ের বাজার ১,৮৬০ কোটি টাকার। এই বিভাগে কথাসাহিত্য কেনার প্রবণতা বেশি। ট্রেড বই বাজারের বার্ষিক বৃদ্ধির হার অনেক কম, মাত্র ৭%।
• লম্বা লম্বা পা ফেলে ই-বুকের বাড়বাড়ন্ত হয়ে চলেছে। নিলসন ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ৭০ শতাংশেরও বেশি প্রকাশক ই-বুক সংস্করণ তৈরি করে, এরা স্মার্টফোন ও ই-রিডার-এর মাধ্যমে পড়ুয়াদের ডিজিটাল পাঠের সুযোগ দিচ্ছেন। আর এই বইগুলির ব্যবসা এ-দেশের সামগ্রিক ই-কমার্স বাণিজ্যের ১৫ শতাংশ দখলে রেখেছে। ইলেকট্রনিক্স (৩৪ শতাংশ) এবং পোশাক ও আনুষঙ্গিক (৩০ শতাংশ) ই-কমার্সের পিছনেই রয়েছে ই-বুকের বাজার।
• যে সব ব্যক্তিদের ইন্টারভিউ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৫৬% বলেছিলেন তারা বছরে অন্তত ১টা ই-বুক কেনেন। আবার ওই ৫৬%-এর মধ্যে অন্তত ৫০% বছরে ৩ থেকে ৪টা ই-বুক কেনেন।

ভারতীয় বইয়ের বাজার অত্যন্ত জটিল। ১৪০ কোটি জনসংখ্যা, বিশাল দেশ, বহু আঞ্চলিক ভাষা। অথচ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে মাত্র ২,০০০ জন শহুরে প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের মধ্যে সমীক্ষা করে। আবার বইয়ের প্রকাশনার তথ্য নেওয়া হয়েছে 'স্ক্যানকোড' থেকে। এটাও খেয়াল রাখা দরকার ভারতবর্ষে অনেক বইয়ে 'আইএসবিএন স্ক্যানকোড' দেওয়া হয় না, বিশেষ করে আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশিত বইয়ে এই প্রবণতা আছে। এইসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সমীক্ষা থেকে অন্তত পাঠকদের পছন্দ পরিবর্তনের একটা আভাস পাওয়া যায়। যে সময়ে রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল, তখনও অবশ্য কোভিড ১৯-এর নাম আমরা শুনিনি। তারপর গঙ্গা ও যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে।

২০১৮ সালে আর্নেস্ট ইয়ং ও পার্থেনন বইয়ের বাজারের প্রবণতা বুঝতে পৃথিবীর পাঁচটা দেশে বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেছিল। [৩] ওই দেশগুলি হল ভারতবর্ষ, আমেরিকা, নরওয়ে, ব্রিটেন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ওদের রিপোর্ট বলছে, ভারতবর্ষে পাঠ্য ও পরীক্ষা সংক্রান্ত বইয়ের বাজার বাড়ছে, কিন্তু ট্রেড বইয়ের বাজারের বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। আমেরিকা বা ব্রিটেনের মত গ্লোবাল নর্থের দেশগুলির সাথে তুলনা করলে বোঝা যায় যে, ওই সব দেশে ট্রেড বই, বিশেষ করে বিজ্ঞান সংক্রান্ত বই পড়ার ঝোঁক তাক লাগানোর মতো। এই দেশে শিক্ষার প্রসারের ফলে পাঠ্য বই বিক্রির বাড়বৃদ্ধি স্বাভাবিক। তবে ট্রেড বইয়ের চাহিদার স্থিতিশীলতা সুলক্ষণ নয়। আর্নেস্ট ইয়ং ও পার্থেনন জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে ই-বুক ও অডিও বুক ৮-১০% বাজার দখল করে আছে, আর এই বাজার ক্রমে বেড়ে চলেছে। উন্নত দেশগুলির প্রবণতা দেখে অনুমান করা যায় ভবিষ্যতে এই দেশেও ই-বুক ও অনলাইন চ্যানেলে বই বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।

অতিমারির সময় বইয়ের বাজার নিয়ে কিছু তথ্য

২০২০ সালের নিলসন সমীক্ষাটি ১৪ই মে থেকে ৭ই জুনের মধ্যে ১,০৮৪ জন প্রাপ্তবয়স্কর মধ্যে অনলাইন সমীক্ষা থেকে করা হয়েছে। [৪] এদের ৬০% মহিলা। নমুনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রকাশক, মিডিয়া কোম্পানি এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি। নিলসন রিপোর্ট অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর সময়ে মানুষের খাওয়া পরা ইত্যাদি অভ্যাসের যেমন পরিবর্তন হয়েছে তেমনই পাল্টেছে বই পড়ার অভ্যাস।

• বিভিন্ন ধরণের ভীতি থেকে মুক্তি পেতে, সময়ের সদ্ব্যবহার করতে মানুষ এই সময়ে বই পড়েছেন; অনেকে বই পড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই পড়ার মধ্যে সামাজিক উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, রহস্য উপন্যাস ইত্যাদি যেমন আছে তেমনই আছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস, নতুন ব্যবসা বা কর্ম প্রচেষ্টার বই; আছে আধ্যাত্মিকতা বিষয়ক বই।
• সার্ভে করার সময়ে উত্তরদাতাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বলেছেন তাদের পড়ার অভ্যাস সপ্তাহে ৯ ঘন্টার জায়গায় বেড়ে গিয়ে হয়েছিল সপ্তাহে প্রায় ১৬ ঘন্টা। মহিলাদের মধ্যেও বই পড়ার উৎসাহ বেড়েছে।
• কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ৮ বছর বয়সী বাচ্চাদের ছবির বই, দেখে দেখে কাজ করার বই এবং জীবজন্তু নিয়ে গল্পের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
• কিশোর কিশোরীদের মধ্যে রহস্য গল্প, ফ্যান্টাসি এবং ক্লাসিক গল্প উপন্যাস পড়ার প্রবণতা বেশি।
• পড়ুয়াদের ৫ জনের মধ্যে ২ জন ছাপা বই বেশি পড়ছেন।
• শতকরা ৫০% বলেছেন তারা ই-বুক ও অডিওবুক পড়া বা শোনা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
• উত্তরদাতাদের ৬৫% দেশি ও বিদেশি প্রকাশনার বই-এ সমান উৎসাহী, তবে ৯% শুধু দেশি বই এবং ২৬% শুধু বিদেশি প্রকাশনার বইতে উৎসাহী।
• ৫০% কথাসাহিত্যের পাঠক ও ৪০% নন ফিকশন বইয়ের পাঠক বলেছেন তারা পেপারব্যাক বইয়ের ক্ষেত্রে দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে চান।

প্রেডিকশন হল ২০২৪-এ এই বাজার হবে ৮০,০০০ কোটি টাকার। অর্থাৎ কোভিড-১৯-এ ধাক্কা লাগলেও বইয়ের বাজার আবার বৃদ্ধি পাবে। ই-বুকের জনপ্রিয়তা বাড়লেও এখনও বাজারের ৯০% ধরে রেখেছে ছাপা বই। অবশ্য এর মধ্যে পাঠ্য বই, পরীক্ষা প্রস্তুতির বই ইত্যাদি বড় অংশ দখল করে রেখেছে। ট্রেড বইয়ের অবস্থা আলাদা করে সমীক্ষায় ধরা পড়েনি।

আঞ্চলিক বইয়ের বাজার

আঞ্চলিক বইয়ের বাজারের বিস্তৃত তথ্য পাওয়া সহজ নয়। তবে ভারতবর্ষে তামিল বইয়ের বাজার ইংরেজি ও হিন্দির পরে। মারাঠি, তেলেগু, মালয়ালম, পঞ্জাবি, কন্নড়, ওড়িয়া ও বাংলা ভাষায় বইয়ের বাজার আছে। লক্ষণীয় হল, যে রাজ্যগুলি শিল্পায়ন ও চাকরির বাজারে এগিয়ে চলেছে সেখানে বই পড়ার চর্চাও বেড়ে চলেছে।

• অতিমারি বাংলা প্রকাশনার জন্যও ই-বুক প্রকাশনা জগতে প্রয়োজনীয় ধাক্কা দিয়েছে। তবে হয়তো আরও বড় ধাক্কার প্রয়োজন আছে। অতিমারির সময়ে কলেজ স্ট্রিটের ডিস্ট্রিবিউশন চেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল। অনেকে অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে, পোর্টালের মাধ্যমে বই বিক্রি করেছেন, তবে বেশিরভাগ অংশই তা করতে পারেননি। অর্থের অভাব ও প্রযুক্তি ব্যবহারে অনভিজ্ঞতা এর মূল কারণ।
• ভারতে এই মুহূর্তে বইয়ের বাজারের একটা বৃহৎ অংশ অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে আমাজন ও ফ্লিপকার্ট। কোভিডকালে ৭৫% বই বিক্রি হয়েছে এইসব অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে।
• এছাড়াও আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ই-বুক বিভাগ সম্প্রসারিত করার পাশাপাশি, আমাজন সম্প্রতি ভারতের গ্রামীণ এবং ছোট শহরের বাজারে ১০ কোটি গ্রাহক ধরার লক্ষ্যে একটি হিন্দি অ্যাপ চালু করেছে। এমনকি মাইক্রোসফ্টও হিন্দিকে বাদ দিয়ে ভাবতে পারছে না। এরাও হিন্দি ভাষার ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজিটাল টুল তৈরি করেছে। দিল্লি ভিত্তিক কিছু কন্টেন্ট এগ্রিগেটর হিন্দি, তামিল, তেলেগু ও মালায়ালাম ভাষায় অডিও বই চালু করেছে।

কোভিড কালের এই অভ্যাসগুলো, যেমন অনলাইন চ্যানেল থেকে বই কেনা বা ই-বুক ব্যবহার করার অভ্যাস থেকে যাবে। যেমন থেকে যাবে বিগ বাস্কেট, 1mg, জোমাটো ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রবণতা। এখন মুখের কাছে খাবার নিয়ে যাবার যুগ, ঘরে বসে অর্ডার করে পণ্যদ্রব্য পাবার যুগ। বাংলা নিয়ে এমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে কম। এই অভ্যাস যত তাড়াতাড়ি প্রকাশকরা নিতে পারবেন সার্বিকভাবে ততই মঙ্গল। তাদের, লেখকের এবং পাঠকের।

• যেখানে তামিলভাষী ৭ কোটি ও মালায়ালামভাষী ৩.৪ কোটি মানুষ আছেন, সেখানে দুই বাংলায় মোট বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ২২ কোটি। ঘরের উঠোনে বাংলা বই পৌঁছে দেবার অপেক্ষায় রয়েছেন এক বিরাট পড়ুয়াবাহিনী। এই মাপের বাজার কিন্তু হিন্দি ছাড়া অন্য ভারতীয় ভাষার নেই। তবে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে বইয়ের বন্টন অসংগঠিত ও স্থানীয়ভাবে চলেছে। দুই-চার জন চেনা ডিস্ট্রিবিউটর ধরে এই বাজারের হদিস পাওয়া সম্ভব নয়।
• ২০২০ সালের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের মোট ৫৫ শতাংশ পরিবার মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন ফোন ব্যবহার করে। [৫] এই সংখ্যা দেশের অনেক রাজ্যের সঙ্গে তুলনায় নিচে হলেও মোটের ওপরে এই সংখ্যা বিশাল। আগামীদিনে মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনলাইন চ্যানেল ও ই-বুক ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। [৬]
• সামগ্রিকভাবে বাংলায় প্রকাশনা ব্যবসা ছোট। সরকার এমনকি এটিকে একটি ক্ষুদ্র শিল্প হিসাবেও গণ্য করে না। প্রকাশনা এখানে পারিবারিক ব্যবসা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকাশকের ব্যক্তিগত যোগ্যতার ওপরে নির্ভর করে প্রকাশনার মান, বন্টন ও ব্যবসা। ইংরেজি বইয়ের মান ও ডিস্ট্রিবিউশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বাংলা বইয়ের পাঠক দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি ও ছোট প্রকাশকদের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল খারাপ অবস্থায় আছে। অধিকাংশ প্রকাশক সব জেলাকে কভার করতে পারে না।
• ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রকাশকদের ফেডারেশন নিয়মিতভাবে বার্ষিক প্রকাশনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সেই পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায় বিভিন্ন অঞ্চলের রকমারি বই পড়বার প্রবণতা। বিভিন্ন প্রকাশকদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং তৈরিতে এই ফেডারেশনগুলি মুখ্য ভূমিকা নেয়। সেই ১৯৭৫ সাল থেকেই কলকাতার প্রকাশক এবং বই বিক্রেতাদের গিল্ড বইমেলা করে। ওদের অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতা দেশের বিভিন্ন প্রকাশক ফেডারেশনের মধ্যে উল্লেখের দাবি রাখে। এখানকার প্রকাশকদের মধ্যে সমন্বয় সাধনে ও বই ডিস্ট্রিবিউশনে ওদের গঠনমূলক ভূমিকা নেওয়া প্রত্যাশিত। লেখক-প্রকাশক পেশাদার সম্পর্ক তৈরিতেও কলকাতার প্রকাশক এবং বই বিক্রেতাদের গিল্ড কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।

বাংলা প্রকাশনা শিল্প একটা ক্রান্তিকালে এসেছে। এখন নতুন চিন্তা এবং সংগঠিত প্রচেষ্টা দরকার। সেই সংগঠিত প্রচেষ্টা হয়তো সরকার নিতে পারত। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে সরকারি সাহায্য ও নির্দিষ্ট দিকনির্দেশ প্রচেষ্টা এখনও দেখা যাচ্ছে না। বছরে একটা বইমেলা করে এই বাজার বাড়ানো সম্ভব নয়।

অনলাইন চ্যানেল ও ই-বুক যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন অফলাইন বইয়ের বন্টন ব্যবস্থার উন্নতি। রাজ্যের প্রত্যেক জেলাতে বই ছড়িয়ে দিতেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। প্রকাশকদেরও পাঠক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংগঠিত উপায়ে জেলাগুলোতে যাওয়া প্রয়োজন।

আর দরকার গ্রন্থাগারগুলিকে উজ্জীবিত করা। প্রকাশক, বিক্রেতা এবং গ্রন্থাগারগুলির মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকা দরকার। এখানেও কার্যকরী গঠনমূলক সরকারি ভূমিকা বড় প্রয়োজন।

নিউজিল্যান্ডের মত ছোট্ট দেশেও দেখতাম গণপরিবহণে, হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে তরুণ-তরুণী বা মধ্য বয়সীরা বই পড়ছেন। সেই বই হতে পারে মুদ্রিত বা ই-বুক।

বাংলা বই পড়া ছড়িয়ে দিতে প্রকাশক, প্রকাশকদের গিল্ড বা ফেডারেশন, সরকার ও লেখকদের সমন্বয়সাধন দরকার। দরকার পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে সামান্য সচেনতা। এই মুহূর্তে সামগ্রিকতায় দেখতে না পারলে এবং কাজ শুরু না করতে পারলে দেরি হয়ে যাবে। ক্রমাগত বাড়তে থাকবে ইংরেজি ও হিন্দি বইয়ের বাজার, অন্যদিকে দুই-একটা প্রকাশনা সংস্থা ক্রম-সংকোচনশীল বাংলা বইয়ের বাজারের দখল করে রাখবে। এই অচলাবস্থা ভাঙা দরকার।


তথ্যসূত্রঃ
1. ‘The Nielsen India Book Market Report 2015: Understanding the India Book Market’, 12-10-2015.
https://www.nielsen.com/eu/en/press-releases/2015/the-nielsen-india-book-market-report-2015-understanding-the-indian-book-market/

2.    ‘Indian book market to touch Rs. 739 billion by 2020: Survey’, published by the Economic Times on 1 December, 2015 (accessed November 2021).
https://publishingperspectives.com/2020/07/coronavirus-impact-india-publishing-industry-nielsen-book-impact-study-pandemic-covid19/

3. E Y Parthenon report on Indian Publishing Industry shaping future of India, July 17, 2021 (Accessed on November, 2021).
https://www.educationworld.in/ey-parthenon-report-on-indian-publishing-industry-shaping-future-of-india/

4. ‘Corona Virus Impact: Nielsen Book India on Readers in the Pandemic, Publishing Perspective, Porter Anderson, Editor-in-Chief, July 15, 2020.
https://publishingperspectives.com/2020/07/coronavirus-impact-india-publishing-industry-nielsen-book-impact-study-pandemic-covid19/

5. Telecom Regulatory Authority of India, The Indian Telecom Services Performance Indicators April-June, 2020.

6. Nielsen Book Research, Data and Insights for the Book Industry, 2020.