আরেক রকম ● নবম বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২১ ● ১৬-৩০ কার্ত্তিক, ১৪২৮

সমসাময়িক

অথ করোনা কথা


ইজরায়েলের জনসংখ্যা ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৩৭ জন। এর মধ্যে ২৫ লাখের বেশি মানুষকে ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে তৃতীয় ডোজ। চতুর্থ ডোজের প্রস্তুতি চলছে, জানিয়েছেন ইজরায়েলের 'ভাইরাস জার' বলে পরিচিত সালমান জারকা।আমেরিকায় তৃতীয় ডোজ চলছে রমরম করে। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, দুই ডোজের টিকা নেওয়া মানব মানবীর মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেশি কেন?

বিচিত্র সব তথ্য আসছে। ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার মধ্যে জানা গেল, কলকাতা পুরসভা এলাকায় আক্রান্ত ২০৩ জন। এর মধ্যে দুটি ডোজ নিয়েছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ১০১। টিকার একটি ডোজ নিয়েছেন ১৬ জন। টিকা নেননি ৪২ জন। বাকিদের তথ্য ফোন করে পাওয়া যায়নি।

একটা আশঙ্কা ছিল, দুর্গাপূজার ভিড়ে করোনা বাড়বে। বেড়েছে।

১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্ত ছিলেন ৭০৮ জন। নমুনা পরীক্ষার ১.৭৯%। মৃত ১৩, নমুনা ৩৯,৬৬১। ৩০ অক্টোবর সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৯৮২। নমুনা পরীক্ষার ২%, মৃত ৮, নমুনা ৪৯১০৭। ২৩ অক্টোবর 'দ্য ওয়াল' লিখেছে, কলকাতা পুরসভা এলাকায় করোনা আক্রান্ত বেড়েছে। ৪৪৯ জন করোনা আক্রান্ত। দশ দিন আগে ছিল ২০৩ জন। এর মধ্যে ডবল ডোজের টিকা নিয়েছেন ১৯৪ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগই উপসর্গহীন। ২২ অক্টোবর আক্রান্তের সংখ্যাটা ছিল ২৬৩। এর মধ্যে ১৬৩ জন দুটি ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন। ১৭ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দু'দিন পর কলকাতায় ৬৫% করোনা রোগী বেড়েছে। ১৫ অক্টোবর সারা রাজ্যে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৫১, এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি। ৯৮২।

এর মধ্যে ৩১ অক্টোবর থেকে লোকাল ট্রেন চালুর কথা বলা হয়েছে। স্কুল-কলেজ খুলছে ১৫ নভেম্বর থেকে। স্কুলের সময়সীমা এক ঘন্টা বাড়ানো হয়েছে। সকাল সাড়ে নটা থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আসতে বলা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যালয় শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি। পার্বত্য এলাকায় ও অন্যত্র অসুবিধা হবে। বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা দূর থেকে আসেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়বেন, আশঙ্কা তাঁদের।

বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেকেই খুশি। কেউ কেউ শঙ্কিত। টিকা ছাড়াই বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ে হাজির হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি? আশঙ্কা কারো কারো।

কলকাতায় পাতাল রেল ও বাস চলছিল এবার জেলায় লোকাল ট্রেন চলায় অনেকেই সন্তুষ্ট। যদিও ৫০% যাত্রী নিয়ে রেল চলাচলের সিদ্ধান্ত কতোটা কার্যকর হবে, অনেকেই সন্দিহান।

কারো কারো মত, ধাপে ধাপে খোলা উচিত ছিল। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, ধাপে ধাপেই হচ্ছে।

এর মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির রাজ্য সম্মেলন হুগলি জেলা প্রশাসন বাতিল করেছে। মহিলা সমিতির নেত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে গেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাকদ্বীপ, বাঁকুড়া, শান্তিপুরে লকডাউনের প্রতিবাদে জমায়েত হলে দুর্যোগ মোকাবেলা আইনে মামলা করেছে রাজ্য পুলিশ। একদিকে দুর্গাপূজায় উদ্দাম ভিড় চলতে দেওয়া, সাত কেন্দ্রে বিধানসভার উপনির্বাচন করতে দেওয়া, সে উপলক্ষে মিছিল মিটিং সভা করতে দেওয়া অন্যদিকে গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর মামলা দায়ের করা - পরস্পরবিরোধী। দুর্যোগ মোকাবেলা আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। প্রচুর মিথ্যা মামলা হচ্ছে। পুলিশের হাতে এত অধিকার দেওয়া বিপজ্জনক হচ্ছে। সতর্কতা জরুরি।

জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। প্রতিবাদ নেই।‌ পেট্রল পশ্চিমবঙ্গে ১১০ টাকার কাছে। ডিজেল ১০০ টাকা পার।সারা দেশে কোথাও কোথাও যথাক্রমে ১২০ এবং ১০৪ টাকায় পেট্রল ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। বহু সবজি ১০০ টাকা পার। তেলের দামের তো কথাই নেই। ওষুধের দাম ৫০ থেকে ৪০০% পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে বাড়ছে করোনা। আশঙ্কা একটাই আবারও শয্যা এবং অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার না তৈরি করা হয়। আগাম ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু কে নেবে? কেউ ব্যস্ত রোমে কেউ গোয়ায়। কংগ্রেসকে দুর্বল করতে। গণতন্ত্রে ঐক্য ও বিচক্ষণতাই বড় শক্তি। তাকে বিসর্জন দেওয়া শুভবুদ্ধির কাজ নয়।