আরেক রকম ● নবম বর্ষ একবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ নভেম্বর, ২০২১ ● ১৬-৩০ কার্ত্তিক, ১৪২৮

প্রবন্ধ

ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতীয় আইন - একটি সমীক্ষা

অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী


আইনের প্রেক্ষিতে কেন ট্রেড ইউনিয়নের প্রয়োজন?

ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট, ১৯২৬-এর ধারা ২('জ') অনুসারে, শ্রমিক সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন হল এমন সংগঠন যা মূলত নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক বা কর্মী এবং শ্রমিক এবং কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের কাজের অবস্থার ব্যাপারে ব্যবস্থাপনার কাছে একটি সমন্বিত এবং একীভূত অবস্থান উপস্থাপন করতে সক্ষম করে। শ্রমিকদের দাবির কথা বলা ছাড়াও ট্রেড ইউনিয়নগুলিও শ্রমিকদের সুবিধার জন্য কাজ করে। অসুস্থতা, বেকারত্ব বা ধর্মঘটের সময় সদস্য কর্মীদের সাধারণ ভাতা, সুবিধা এবং সহায়তা হতে পারে যখন ফ্যাক্টর-বাবুর কোম্পানি দ্বারা হরতালকারী শ্রমিকদের বেতন এবং সহায়ক সুবিধা প্রদান করা হয় না।

ট্রেড ইউনিয়ন বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত, বিদ্যমান ও কার্যকরী হতে পারে। সেই স্তরগুলি কী কী?

এক কথায়, জাতীয়, শিল্প এবং কারখনা-স্তরে গঠিত হতে পারে ট্রেড ইউনিয়ন। এক এক করে দেখে নেওয়া যাক এই তিনটি স্তর বা পর্যায়ের বিষয়ে -

জাতীয় পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নঃ কয়লা, ডক, ব্যাংক ইত্যাদি শিল্পের জন্য জাতীয় পর্যায়ের ট্রেড ইউনিয়ন আছে যাকে বলা হয় সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়ন অর্গানাইজেশন বা সিটিইউও। এগুলি বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলির সাথে যুক্ত যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে এআইটিইউসি বা আইটাক, আইএনটিইউসি বা ইনটাক, সিআইটিইউ, বিএমএস ইত্যাদি। ভারতে শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১২টি প্রতিষ্ঠান সিটিইউও হিসাবে স্বীকৃত।

শিল্প, আঞ্চলিক বা কোম্পানি-স্তরের ট্রেড ইউনিয়নঃ ট্রেড ইউনিয়ন কোম্পানি-বিস্তৃত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি জাতীয়-অটো প্রস্তুতকারকের জন্য গাড়ি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের একটি কোম্পানি-বিস্তৃত ইউনিয়ন। এই ধরনের ট্রেড ইউনিয়নকে কার্যকরি করতে হলে শ্রমিকদের স্বার্থ, চাহিদা ও দাবির উপর নির্ভর করে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্লু-কলার শ্রমিক এবং হোয়াইট-কলার কর্মীদের জন্য আলাদা ইউনিয়ন থাকতে পারে।

কারখানা স্তরে ট্রেড ইউনিয়নঃ একটি নির্দিষ্ট কারখানার শ্রমিকদের দ্বারাও ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মারুতি সুজুকি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (এমএসইইউ) গুরগাঁওয়ের মানেশারে অবস্থিত মারুতি সুজুকি কোম্পানির কারখানার জন্য বিশেষভাবে গঠিত হয়েছিল।

এটা লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে ট্রেড ইউনিয়নগুলির সদস্যপদে ওভারল্যাপ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন কর্মী একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হতে পারেন - একটি কেন্দ্রীয় স্তর, শিল্প স্তর বা কারখানা স্তর। তাকে ইউনিয়নের নির্দিষ্ট বাই-ল্য অনুসারে চাঁদা দিতে হবে সবকটি ইউনিয়নকেই। তদুপরি, কারখানা-স্তরে ট্রেড ইউনিয়নগুলি সব স্তরে বা সংশ্লিষ্ট সেক্টর বা শিল্পের মধ্যে বৃহত্তর ইউনিয়নের সাথে সংযুক্তি চাইতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কারখানা-স্তরের ইউনিয়নগুলি শিল্প-স্তরের ইউনিয়নগুলির সাথে যুক্ত হতে পারে। শিল্প-স্তরের ইউনিয়নগুলি, পরিবর্তে, কেন্দ্রীয় স্তরের ইউনিয়নগুলির সাথে যুক্ত হতে পারে। ম্যানেজমেন্টের সাথে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের দর কষাকষির অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্টতা চাওয়া হয়। যাই হোক, এটি প্রয়োজনীয় নয় যে বাস্তবে তাদের শক্তি সংযুক্তির দ্বারা শক্তিশালী হয়। কিছু ইউনিয়ন শুধুমাত্র একটি কোম্পানি বা কারখানার মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে কাজ করতে পছন্দ করে। এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে রাজনৈতিক ও বাস্তববাদী পদ্ধতির উপর যা ইউনিয়ন নেতা এবং সদস্যরা বেছে নেবেন এবং অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেবেন। একটি ট্রেড ইউনিয়নের নিয়মে অধিভুক্তির ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থাকে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সময় বা এর সাথে যুক্ত হওয়ার সময়, ইউনিয়ন যে বিষয়টির জন্য দাঁড়িয়েছে তার সাথে সদস্যদের সম্পর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন ইউনিয়নগুলিকে কার্যকরভাবে পরিচালনার সামনে তাদের উদ্বেগ উত্থাপন করতে সক্ষম করবে। সব ট্রেড ইউনিয়ন শিল্প শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত নয়। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার সমিতি গঠনের অধিকারের অংশ এবং ভারতের সংবিধানের অধীনে একটি মৌলিক অধিকার। অনেক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যরা প্রায়ই নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী ও সুরক্ষিত করার জন্য নিজেদেরকে রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত করতে চাইতে পারেন।

ট্রেড ইউনিয়ন প্রসঙ্গে কোনো সংস্থার পরিচালক তথা ব্যবস্থাপক অর্থাৎ ম্যানেজারদের ভূমিকা কী?

যদিও ট্রেড ইউনিয়ন সৃষ্টি সম্পূর্ণরূপে শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল, ব্যবস্থাপনা কৌশলগত ভূমিকা পালন করতে পারে এবং শ্রমিকদের গঠনের প্রক্রিয়ায় এই ধরনের সমস্যাগুলির মধ্য দিয়ে চলতে সক্ষম করার প্রক্রিয়ায় তাদের অংশীদার হতে পারে। বাস্তবে, ভারতে, ইউনিয়নপক্ষ ও ম্যানেজমেন্টপক্ষের মধ্যে স্বার্থসংঘাত তথা দ্বান্দ্যিকতা প্রকট। বিশ্বের নানান প্রান্তে গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে জারি আছে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন। ভারতীয় পরিবেশে, ইউনিয়নবাদের অস্তিত্ব শ্রমিকদের এবং পরিচালকদের স্বার্থের মধ্যে দ্বান্দ্বিকতা বোঝাতে পরিচিত। কিন্তু ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটে এই দুটি গ্রুপ - ট্রেড ইউনিয়ন এবং ব্যবস্থাপনা - বিদ্যমান এবং সহযোগিতায় কাজ করা বোঝা যায়।

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন করা (‘রেজিস্ট্রেশন’) কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আইনে অনুসারে একটি ট্রেড ইউনিয়নকে একটি পৃথক সমিতি হিসেবে বৈধভাবে বিদ্যমান থাকার জন্য সেই ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেড ইউনিয়ন আইন, ১৯২৬ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে এই নিবন্ধন করা হয়। নিবন্ধনের সার্টিফিকেট এই মর্মে চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে কাজ করে যে ট্রেড ইউনিয়ন আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। যেসব রাজ্যে ট্রেড ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, সেখানে স্বীকৃতির অন্যতম পূর্বশর্ত হল ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধিতকরণ। একটি নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নের প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জরুরিঃ
১. ইউনিয়নকে বৈধভাবে গঠিত হতে হবে।
২. আইনের চোখে ট্রেড ইউনিয়ন একজন ব্যক্তি তথা 'জ্যুরিস্টিক পার্সন'। তাই, ট্রেড ইউনিয়ন স্বনামে মামলা করতের পারে, ট্রেড ইউনিয়নদের বিরুদ্ধের মামলা আনা যায়, আইনের চোখে জ্যুরিস্টিক পার্সন হওয়ার কারণে ট্রেড ইউনিয়ন স্বনামে সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় করতে পারে। এছাড়াও, স্বীয় অর্জিত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নদের রয়েছে চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার। ট্রেড ইউনিয়নের এই উত্তরাধিকার হবে তার সদস্যদের বা তার প্রধান অফিসারদের থেকে স্বাধীন।
৩. ট্রেড ইউনিয়ন আইনের ধারা ১৭ এবং ১৮ অনুসারে একটি ট্রেড ইউনিয়নের ফৌজদারি ও দেওয়ানি দায় থেকে নির্দিষ্ট সুরক্ষার অধিকারী।

ট্রেড ইউনিয়ন সদস্যপদ বিষয়ক নিবন্ধনের পূর্বশর্ত কী?

ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট, ১৯২৬-এর ধারা ৪(চার) অনুসারে অনুসারে একটি ট্রেড ইউনিয়ন সে শিল্প বা প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রের পরিসরের সাপেক্ষে কমপক্ষে সেখানে কর্মরত শ্রমিক/কর্মচারীদের ১০% ব্যক্তিকে সদস্য থাকতে হবে। অথবা সেই ইউনিয়নে ১০০ জন সদস্য থাকতে হবে। কর্মরত ব্যক্তিদের ১০% অথবা ১০০ - এই দুইটির সংখ্যার মধ্যে যেটি কম হবে - সেটিই ভারতে একটি ট্রেড ইউনিয়নের ন্যূনতম সদস্যর আইন-অনুমোদিত সংখ্যা। তাঁদের মধ্যে যে কোনো ৭ জন কর্মজীবি ইউনিয়নের নিয়ম অনুসারে সেটির নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন।

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া কোন আইনের কোন ধারা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?

এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক পদ্ধতিগত আইনের ধারাগুলি হলোঃ
১. ট্রেড ইউনিয়ন আইন, ১৯২৬-এর ধারা ৯
২. ট্রেড ইউনিয়ন আইন, ১৯২৬-এর ধারা ৫
৩. ট্রেড ইউনিয়ন আইন, ১৯২৬-এর ধারা ৩
৪. ট্রেড ইউনিয়ন আইন, ১৯২৬-এর ধারা ১০

ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের জন্য নেয় পদক্ষেপগুলি কী কী?

১. ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ট্রেড ইউনিয়নের নিয়মাবলী সহ নিম্নোক্ত বিবরণের বিবৃতি সহ একটি আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনে থাকতে হবে -
ক। আবেদনকারী সদস্যদের নাম, পেশা এবং ঠিকানা।
খ। উপরে বর্ণিত বিবরণ ছাড়াও, এটি ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের কাজের স্থানের ঠিকানাও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
গ। ট্রেড ইউনিয়নের নাম এবং এর প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা।
ঘ। ট্রেড ইউনিয়নের শিরোনাম, নাম, বয়স, ঠিকানা এবং পেশা।

২. যদি নিবন্ধন করার জন্য আবেদন করার আগে ট্রেড ইউনিয়ন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান থাকে তাহলে উপরে উল্লেখিত বিবরণ সহ ট্রেড ইউনিয়নের সম্পদ এবং দায়বদ্ধতার একটি সাধারণ বিবৃতি। রাজ্য প্রবিধানগুলি "ফর্ম" নির্দিষ্ট করে যেখানে নিবন্ধন আবেদন করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে একটি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন করার জন্য, আপনাকে বেঙ্গল ট্রেড ইউনিয়ন রেগুলেশন, ১৯২৭ অনুসারে "ফর্ম 'ক'" পূরণ ও জমা করার মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অপরাপর উদাহরণস্বরূপ, এমনকি কর্ণাটক ট্রেড ইউনিয়ন রেগুলেশন, ১৯৫৮-ও স্পষ্টভাবে এই বিধি প্রদান করে যে, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য আবেদন "ফর্ম 'ক'" অনুসারেই করতে হবে।

ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন কীভাবে ও কখন বাতিল হয়ে যেতে পারে?

একটি ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের একটি সার্টিফিকেট নিম্নলিখিত ঘটন-সংঘটনে রেজিস্ট্রার দ্বারা বাতিল করা যেতে পারেঃ
১. ট্রেড ইউনিয়নের আবেদনে
২. যদি প্রতারণা বা ভুল করে সার্টিফিকেশন পাওয়া যায়
৩. যদি ট্রেড ইউনিয়নের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায়
৪. এই আইনের বিধানের লঙ্ঘন
৫. প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য থাকা বন্ধ করে দেয়

কীভাবে একটি ট্রেড ইউনিয়নের উপবিধি (বাই-ল্য) প্রণয়ন করা হয়?

ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট, ১৯২৬-এর ধারা ৬ অনুসারে এমন কিছু বাধ্যতামূলক বিধান রয়েছে যা অবশ্যই ট্রেড ইউনিয়নের বিধি তথা বাই-ল্য-গুলির সাথে থাকতে হবে। এই বাই-ল্য তৈরি করা ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য আবশ্যিক। এই বাই ল্য-গুলোতে যা যা থাকবে তা হলোঃ
ক। ট্রেড ইউনিয়নের নাম;
খ। যেসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে;
গ। যে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ তহবিল ব্যবহার হবে। কেবলমাত্র সুনির্দিষ্ট এই উদ্দেশ্যগুলি সাধনের জন্যই এই আইনের অধীনে ট্রেড ইউনিয়ন দ্বারা বৈধভাবে ফান্ড সংগ্রহ করা হবে। ট্রেড ইউনিয়নের তহবিল কী কাজে লাগবে তার জন্য ট্রেড ইউনিয়নের বাই ল্য নির্ধারণ করা উচিত। আইনের ধারা ১৫ ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ তহবিল (সদস্যদের দেওয়া চাঁদা মারফৎ সংগৃহীত) যেসব উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যেতে পারে তা সীমাবদ্ধ করেছে।
ঘ। ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের একটি তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের পদাধিকারী সদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের দ্বারা সেই তালিকা পরিদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা যা দেওয়া হবে। ট্রেড ইউনিয়নের বাই-ল্য তথা উপবিধিগুলির মধ্যে থাকা উচিত কীভাবে কেউ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হবে তার নিয়ম। সদস্যদের রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেয় ব্যবস্থার কথাও থাকতে হবে সেই উপবিধিমালায়।
ঙ। এমন শিল্পে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সাধারণ সদস্য হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নের প্রবেশ; ট্রেড ইউনিয়ন চালানোর জন্য সাম্মানিক, সাময়িক এবং কার্যনির্বাহী তথা পদাধিকারি সদস্যদের নির্বাহীদল গঠনের জন্য ১৯২৬ আইনের ধারা ২২ প্রযোজ্য।
চ। ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের দ্বারা সাবস্ক্রিপশন প্রদান অর্থাৎ চাঁদা দেওয়ার প্রবন্ধন - যে চাঁদার পরিমাণ প্রতি সদস্যের জন্য প্রতি মাসে পঁচিশ তারিখের আগে অথবা প্রতি বছরের ২৫শে নভেম্বরের আগে দিতে হবে।
ছ। যে শর্তাবলীর অধীনে কোন সদস্য নিয়ম দ্বারা আশ্বস্তকৃত কোনো সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবে এবং যার অধীনে সদস্যদের উপর কোন জরিমানা বা বাজেয়াপ্তি আরোপ করা যেতে পারে।
জ। যে পদ্ধতিতে নিয়ম সংশোধন বা বাতিল করা হবে।
ঝ। যে পদ্ধতিতে কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ট্রেড ইউনিয়নের অন্যান্য পদাধিকারীদের নিয়োগ ও অপসারণ করা হবে। একটি ট্রেড ইউনিয়নের একাধিক পদাধিকারী বিভিন্ন পদবিধারী হতে পারে, যেমন সচিব, সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ইত্যাদি।
ঞ। ট্রেড ইউনিয়নের তহবিলের নিরাপদ হেফাজত, একটি বার্ষিক নিরীক্ষা, এই পদ্ধতিতে, যেমন হিসাব করা যেতে পারে, তার হিসাবের হিসাব এবং ট্রেড ইউনিয়নের অফিসের সদস্য এবং সদস্যদের দ্বারা হিসাব বই পরিদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা ; এবং
ট। যে পদ্ধতিতে ট্রেড ইউনিয়ন বিলুপ্ত হতে পারে।

এক-একটি ট্রেড ইউনিয়নের প্রভূত সদস্যতা থাকতে পারে। এবং বাস্তবে একটি ট্রেড ইউনিয়নের ডকুমেন্টেশন মোটামুটি বিস্তৃত হতে পারে। শ্রমিকদের বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন অফিসার, তাদের ক্ষমতা, নিয়োগ, অপসারণ, কিভাবে বেনিফিট দাবি করতে হয়, মিটিং ইত্যাদি নির্ধারণ করার জন্য প্রতিটি ট্রেড ইউনিয়নের উপরে নিবন্ধনের পূর্বেই বাই-ল্য বানিয়ে ফেলা ও নিবন্ধনের পরে তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ট্রেড ইউনিয়ন উপবিধিতে ‘সাবস্ক্রিপশন ক্লজ’ তথা চাঁদা বিষয়ক নিয়ম সমন্বিত অনুচ্ছেদের নমুনা কীরূপ?

তেমন এক নমুনা-পরিশোধ দেওয়া হলো নীচে -
"অ্যাসোসিয়েশনের প্রত্যেক প্রাথমিক সদস্যকে প্রতি বছর ৫০০/- (পাঁচশত টাকা মাত্র) অ্যাসোসিয়েশনের সাবস্ক্রিপশনের জন্য দিতে হবে। সাবস্ক্রিপশন সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসের জন্য সংগ্রহ করা হবে। এই উদ্দেশ্যে, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসের সময়কাল "সাবস্ক্রিপশন পিরিয়ড" হিসাবে উল্লেখ করা হবে। এই চাঁদা সেই সময়কালে সদস্যতা বজায় রাখার জন্য ট্রেড ইউনিয়নটির সদস্যদের দ্বারা প্রদেয়। সেই সদস্য পরবর্তী সাবস্ক্রিপশন পিরিয়ড থেকে নিয়মিত বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন প্রদান করতে থাকবেন। অ্যাসোসিয়েশন সদস্যদের বেতন থেকে চাঁদা কাটার এবং অ্যাসোসিয়েশনের কাছে অর্থ প্রদানের বিষয়ে কোম্পানির কাছে যেতে পারে। নির্ধারিত পরিমানের চাঁদা সদস্যদের জন্য সাবস্ক্রিপশন পেমেন্ট হিসাবে ধার্য্য হবে সেই সাবস্ক্রিপশন পিরিয়ড-এ। যে কোনো কারণে সদস্যের পদত্যাগ করলে বা ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যতা থেকে বেরিয়ে গেলে, সেই সদস্যকে কোনো পরিমাণ চাঁদা ফেরত দেওয়া হবে না।"

ট্রেড ইউনিয়নের ‘বাই-ল্য’-গুলিতে ‘সাবস্ক্রিপশন ক্লজ’-এর খসড়া তৈরি করার সময় সদস্যদের চাঁদার প্রসঙ্গে কোন বিষয়গুলি অপরিহার্য হয়ে ওঠে?

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নির্ধারণ করা জরুরি হয়ে দাঁড়ায় এই ক্ষেত্রে -
১. চাঁদার পরিমাণ কাকে দিতে হয়?
২. চাঁদার পরিমাণ কত?
৩. চাঁদা কি বার্ষিক ভাবে না মাসিক ভাবে দিতে হবে?
৪. কিভাবে একজন নতুন সদস্য সাবস্ক্রিপশনের পরিমাণ প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে?
৫. সদস্য আগের থেকেই উপস্থিত থাকলে সাবস্ক্রিপশন পরিমাণ কি হবে?

ট্রেড ইউনিয়ন ‘বাই ল্য’ অনুসারে যে পদ্ধতিতে নিয়ম সংশোধন বা বাতিল করা হবে তার একটি নমুনা ক্লজ কীরূপ হতে পারে?

"সাধারণ সংস্থার তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট যেখানে এজেন্ডায় এই ধরনের পরিবর্তনের যথাযথ নোটিশ দেওয়া হয়েছে যদি ইউনিয়নের কমপক্ষে অর্ধেক সদস্য এই জাতীয় সাধারণ পরিষদে উপস্থিত থাকে। ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট ১৯২৬-এর বিধান অনুসারে বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইনে এই বিষয়ে কার্যকর যা আইনি ব্যবস্থা রয়েছে তা কার্যকর রাখতে হবে। ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটি এই আইন দ্বারা এই ধরণের বাই-ল্যস বা তার সংশোধনাদি প্রণয়ন করতে পারে। তবে ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ পরিষদ এই ধরনের বাই-ল্য অনুমোদন করলে তবেই তা বলবৎ হবে।"

ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের পর অতিরিক্ত স্বীকৃতির বিষয়টিকে ভারতের আইন কোন চোখে দেখছে?

আইনের ভাষায় একটি ট্রেড ইউনিয়ন-এর 'স্বীকৃতি' হচ্ছে মানে মালিক-ম্যানেজমেন্ট পক্ষের সাথে দরকষাকষির সময়ে শ্রমিকদের সম্মিলিত করার কাজটি সেই ইউনিয়ন করছে - নিয়োগকর্তাদের দ্বারা নিবন্ধকের নির্দেশমাফিক ট্রেড ইউনিয়নকে এই স্বীকৃতি দিচ্ছে শংসাপত্র প্রকাশ করে। সাধারণত, ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে, নিয়োগকর্তারা দেখেন যে সেই ইউনিয়ন কর্মীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বা উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে কিনা। একে স্বেচ্ছাসেবী স্বীকৃতি প্রক্রিয়া বলা হয়। কিছু রাজ্যে, যেমন মহারাষ্ট্র, ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে বৈধ কর্তৃপক্ষ যেমন শিল্প আদালত দ্বারা স্বীকৃত করা প্রয়োজন। এটিকে কোথাও কোথাও কখনও কখনও সংবিধিবদ্ধ স্বীকৃতি হিসেবেও ধার্য্য করা হয় আইনের টেকনিকাল অথচ অতি-জরুরি প্রেক্ষণে। বিভিন্ন রাজ্যে আইন করে ট্রেড ইউনিয়নদের স্বীকৃতির এই ধাপটি ইউনিয়নদের নিবন্ধনের পদ্ধতি-প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতির আগে রেজিস্ট্রেশন থাকা আবশ্যিক। বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেড ইউনিয়ন আইনের অধীনে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্য ১৯৮৩ সালে সংশোধিত ট্রেড ইউনিয়ন আইন ১৯২৬-এর অধীনে প্রণীত পশ্চিমবঙ্গের ট্রেড ইউনিয়ন বিধিমালা ১৯৯৮, পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নগুলির বিধিবদ্ধ স্বীকৃতি প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। মহারাষ্ট্র রাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে হয়ে মহারাষ্ট্র রেকগনিশন অফ ট্রেড ইউনিয়নস অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ আনফেয়ার লেবার প্র্যাক্টিসেস অ্যাক্ট, ১৯৭১। সেই রাজ্যের সেই আইন ট্রেড ইউনিয়নগুলির বিধিবদ্ধ স্বীকৃতি প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। পশ্চিমবঙ্গের মতোই মহারাষ্ট্র রাজ্যের ক্ষেত্রেও ইতিমধ্যে নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নগুলিই কেবল স্বীকৃতির আবেদন করতে পারে।

ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতি (‘রেকগনিশন’) না পাওয়ার পরিণতি কী?

একটি অ-স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অবৈধ নয় - ট্রেড ইউনিয়ন আইন অনুসারে, শ্রমিক এবং নিয়োগকারীদের যেকোনো গ্রুপ একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ভারতের সংবিধানের অধীনে সমিতি গঠনের মৌলিক অধিকারেরও একটি অংশ। মেসার্স ধর্মপাল প্রেমচাঁদ (সৌগন্ধী) বনাম সেখানকার কর্মীদের মামলার আদেশে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কিছু মূল বিষয় তুলে ধরেছে। মামলার সাইটেশন-উদ্ধৃতি অনুরূপ - অল ইন্ডিয়া রিপোর্টার ১৯৬৬ সুপ্রিম কোর্ট পৃষ্ঠা নং ১৮২।

শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধির কারণে, শিল্পে বিভিন্ন ইউনিয়ন থাকতে পারে। কিন্তু শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক/কর্মচারীদের কালেক্টিভ বার্গেইনিং-এর অধিকারের স্বীকৃতিতে শ্রমিক সম্পর্কিত বিষয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা পরিচালনার ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট ভাবে বিধিবন্ধিত হয় একটি ট্রেড ইউনিয়নকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে। ট্রেড ইউনিয়ন বিধিমালার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, পক্ষপাত এবং পক্ষপাতিত্ব এড়ানোর জন্য কোনো শ্রমিক সংগঠন/কর্মীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের নির্দেশ দেয় তা যাচাই করার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে।অ-স্বীকৃত ইউনিয়নগুলি সাধারণভাবে শ্রমিকদের বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট/নিয়োগকর্তার সাথে সম্মিলিত বার্গেইনিং প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অধিকার বা অনুমতি নাও পেতে পারে। সেটি নির্ভর করছে স্বীকৃতিকরণ বিষয়ক বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যস্তরীয় আইনগুলির উপরে। তবে হ্যাঁ, অ-স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়নগুলিও প্রাসঙ্গিক ইস্যুতে নিয়োগকর্তার সাথে বা নিয়োগকর্তার দ্বারা নিযুক্ত কোন ব্যক্তির সাথে দেখা করার এবং আলোচনা করার অধিকার আছে। চাকুরীর শর্তাবলী সম্পর্কিত কোনো ব্যক্তি-সদস্যের অভিযোগ সম্পর্কিত তদন্তে এবং নিয়োগকর্তা কর্তৃক অনুষ্ঠিত কোনো আভ্যন্তরীণ বা বিভাগীয় তদন্তে অ-স্বীকৃত ইউনিয়নদের অধিকার রয়েছে সেই ইউনিয়নের সদস্যদের পক্ষ থেকে সমঝোতা বা নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট কর্মকর্তা বা শ্রম আদালত বা শিল্প ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হওয়ার।

রাজ্য-স্তরের বিধিমালায় অননুমোদিত ইউনিয়নের অধিকারের একটি বিধিবদ্ধ বিধান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ওড়িশা ট্রেড ইউনিয়ন রেগ্যুলেশনস, ১৯৪১-এর প্রবিধান (রেগ্যুলেশন) নং ২৪ অনুসারে বলা হয়েছে যে অননুমোদিত ইউনিয়ন অধিকার রাখে মালিকপক্ষ বা মালিকপক্ষের তরফে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তির সাথে ইউনিয়নের ব্যক্তিগত সদস্যের পরিষেবা শর্তাবলী সম্পর্কিত অভিযোগ নিরসনের বিষয়ে সাক্ষাৎ এবং আলোচনা করার। ট্রেড ইউনিয়নগুলির মহারাষ্ট্র রিকগনিশন অফ ট্রেড ইউনিয়নস অ্যান্ড প্রিভেনশন অফ আনফেয়ার লেবার প্র্যাক্টিসের অ্যাক্ট, ১৯৭১-এর ধারা ২২ অনুসারে, স্বীকৃত ইউনিয়নের কর্মকর্তারা একজন নিয়োগকর্তা বা তার প্রতিনিধির সাথে দেখা করতে এবং ডিসচার্জ, অপসারণ সম্পর্কিত যে কোনও বিষয়ে তেমন ইউনিয়নের সদস্যে কর্মচারীর দ্বারা বা তেমন কর্মচারীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে, অন্যান্য সাধারণ সদস্যদের এই অধিকার নেই আইনে। ছাঁটাই বা পরিষেবা বন্ধ করা, অথবা অভ্যন্তরীণ বা বিভাগীয় অনুসন্ধানে সদস্যদের পক্ষে উপস্থিত হওয়ার অধিকার তো সকল ট্রেড ইউনিয়নেরই আছে। ব্যবস্থাপনা/নিয়োগকর্তা স্বতন্ত্র সদস্যদের পরিষেবা শর্তাবলী এবং অন্যান্য বিষয়ে কোন অ-স্বীকৃত ইউনিয়নের সাথে কোন আলোচনা করতে যথাযথভাবে অস্বীকার করতে পারেন না। কোনো নির্দিষ্ট ইস্যু সম্পর্কিত আলোচনা শুধুমাত্র স্বীকৃত ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সাথে করা আবশ্যক। তবে, তেমন শ্রমিক কোনো অ-স্বীকৃত ইউনিয়নের সদস্য হলে সেই অ-স্বীকৃত ইউনিয়নের শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্পর্কিত আলোচনা ম্যানেজমেন্ট-পক্ষ তথা মালিকপক্ষের জন্যও ফলপ্রসূ হতেই পারে। অন্ততঃ, শিল্প শ্রমে কর্মনিয়োগের ক্ষেত্রে শ্রমিকপক্ষ ও মালিকপক্ষের মধ্যেকার বিবাদ ও বিরোধ নিরসনে তাই স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়নগুলির পাশাপাশি অ-স্বীকৃত কিন্তু নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়নগুলির ভূমিকাও তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহারণস্বরূপ, মারুতি সুজুকি কোম্পানির মানেসর কারখানার শ্রমিকদের প্রতিবাদে সম্মিলিত ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলো যে সকল ট্রেড ইউনিয়ন, তাদের মধ্যে কিছু ছিলো অ-স্বীকৃত, যদিও, অনুমোদিত। এছাড়াও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, চুক্তিমারফৎ নিযুক্ত ঠিকাশ্রমিকদের ইউনিয়ন স্বীকৃত করার দায়বদ্ধতা থাকে না কোম্পানিদের। এর পিছনে যে আইনি যুক্তিটা দেওয়া হয় তা হলো এই, যে, যেহেতু ঠিকাশ্রমিকদের নিয়োগকারী ঠিকাদার, কোম্পানি সরাসরি নয়, সেহেতু এই চুক্তিশ্রমিকদের ইউনিয়ন স্বীকৃত করার দায়বদ্ধতা নেই কোম্পানিদের। তবে, তার মানে এই নয় যে ঠিকাশ্রমিকদের বৈধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কোনো অধিকার নেই। ঠিকাশ্রমিকদের এই অধিকার সাংবিধানিক তথা মৌলিক। তবু, যেহেতু কোম্পানিদের উপর দায়বদ্ধতা নেই এই ধরণের ইউনিয়ন স্বীকৃত করার, সেহেতু ঠিকাশ্রমিকদের গঠিত ইউনিয়নগুলিকে সচরাচর অ-স্বীকৃত অথচ নিবন্ধিত ইউনিয়ন হিসেবেই তাদের কাজ করে যেতে হয়।