আরেক রকম ● নবম বর্ষ একাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ জুন, ২০২১ ● ১৬-৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

"যদি আলো না ধরে"

রত্না রায়


‘তখন কৈশোর। নবম শ্রেণিতে পড়ি। ইতিহাস বইতে চৌরিচৌরা উপাখ্যান পড়ে খুবই আহত হলাম। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি স্ফূলিঙ্গকে এইভাবে নিভিয়ে দিলেন ঐ মানুষটি! আজ ষাটের চৌকাঠ পেরিয়ে এসে নীরবে ভাবছি পৃথিবীর সব বিক্ষোভকে প্রশমিত করতে না পারলেও, তিনি আগুনকে অগ্নিতে উত্তরণের সাধনা করে গিয়েছেন সারাজীবন। জটিল রাজনীতির অন্ধ গোলকধাঁধায় আত্মদীপ জ্বেলে এগিয়ে গিয়েছেন মানবতার মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রকে আবাহন করে! তিনি গান্ধীজী - নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সম্বোধনে 'জাতির জনক'। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'মহাত্মা', কেননা সকলের হৃদয়ে তাঁর স্থান, তাঁর হৃদয়ে সকলের স্থান’।

‘গান্ধীঃ দৃষ্টির বিচিত্রতায়'’গ্রন্থে অধ্যাপক অভ্র ঘোষ রবীন্দ্রনাথ সহ বহু বিশিষ্ট দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, গান্ধীজীর সহধর্মিনী সহ বহু সম্ভ্রান্ত ও কৃতী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীতে এই মহামানবকে উপস্থাপিত করেছেন। ‘সূচনাকথা’ পর্বে শ্রী ঘোষ সখেদে বলেন ঋষি টলস্টয়ের কাছে অহিংসাব্রতে দীক্ষিত এই মানুষটি যিনি সারাজীবন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে ছুটে বেড়িয়েছেন, জঙ্গী হিন্দুত্ববাদ তাঁরই পাঁজর গুঁড়িয়ে দিল পরপর চারটি বুলেটে! আজকের রাজনীতির হিংসাদীর্ণ সংকীর্ণতার প্রেক্ষিতে অভ্র ঘোষের এই আয়োজন ভারতবাসীর গান্ধীতর্পনে একটি মূল্যবান উপচার হিসেবে গণ্য হবে সংশয়াতীতভাবে।

'গুরুদেবের মহাত্মাজী' এই গ্রন্থের প্রথম পর্যালোচনা। শ্রী ঘোষ প্রথমেই পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন 'মহাত্মা' উপাধি রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চলে আসার সময় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গান্ধীজীকে মহাত্মা সম্বোধন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় তখন গান্ধীজীর সমর্থনে একটি প্রতিবেদনে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সহ রবীন্দ্রনাথও স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তাঁদের পরিচয় আরো পরে। ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে গান্ধীজী ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। তাঁর ফিনিক্স স্কুলের ছাত্র ও শিক্ষকদের তার আগেই শান্তিনিকেতনে থাকার ব্যবস্থা করেন এন্ড্রুজ সাহেব। সবরমতী আশ্রম তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এরপর থেকে গান্ধীজীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এক নিবিড় সম্পর্কের সূত্রপাত।

গান্ধীজী শান্তিনিকেতনে এলেন পরের বছর। কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবদ্ধ অনাড়ম্বর জীবনযাপন ছিল গান্ধীজীর 'নঈ তালিম' শিক্ষাব্যবস্থার মূল কথা। গান্ধীজীর প্রিয় শিষ্যা মীরা বেন-কে লেখা এক পত্রে কবিগুরু জানান '...Mahatmaji is the prophet of tapasya and I am the poet of Ananda'। এই চমৎকার উক্তিটির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজীর শিক্ষাদর্শের মিলন ও বিরহ দুটো দিকই ফুটে ওঠে। সাধাসিধে জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী হয়েও বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি চাননি রবীন্দ্রনাথ।

কবির সাথে মহাত্মার সম্পর্কের মূল ভিত্তি ছিল পারস্পরিক এক গভীর শ্রদ্ধাবোধ; যদিও মতের অমিল ছিল পদে পদে। পণ্ডিত নেহেরু, দীনবন্ধু এন্ড্রুজের মতো ব্যক্তিত্বরা এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। এই সব বিশিষ্ট মানুষকে লেখা গুরুদেবের পত্র থেকে তথ্যগুলি আহরণ করেছেন অভ্র ঘোষ।

ইংরাজী শিক্ষা বিষয়ে গান্ধীজীর মতামত গুরুদেবকে পীড়া দিত। রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিক আধুনিকতাবাদ গান্ধীজীকে স্পর্শও করেনি। বিদেশী বস্ত্র পুড়িয়ে ফেলার বিরুদ্ধতা করেন কবি। 'ঘরে বাইরে' বা 'চার অধ্যায়' উপন্যাসে তার প্রতিফলন লক্ষ্য করি আমরা। কিন্তু মহাত্মার অস্পৃশ্যতাবিরোধী আন্দোলনকে সর্বতোভাবে গ্রহণ করেন কবিগুরু। 'চন্ডালিকা' নৃত্যনাট্য তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদকে গান্ধীজী সময়োপযোগী বলে মনে করেননি। অসহযোগ আন্দোলনকে রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেননি; এইজন্য তিনি ঘরে বাইরে নিন্দিত হয়েছেন। গান্ধীজীর মত খাদিনির্ভর অর্থনীতিতে তাঁর আস্থা ছিলনা। যদিও শিক্ষাসত্রে স্বনির্ভরতার শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

১৯৩১ সালে পুণায় জেলে থাকাকালীন পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মহাত্মার অনশনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন গুরুদেব। তিনি সেখানে উপস্থিত হলে মহাত্মা তাঁর হাতটি জড়িয়ে ধরে 'জীবন যখন শুকায়ে যায়' গানটি গাইতে অনুরোধ করেন। এরপর আম্বেদকর এই দাবি প্রত্যাহার করলে গান্ধীজী কস্তুরবার হাত থেকে লেবুর রস গ্রহণ করেন। 'মহাত্মাজীর পূণ্যব্রত' বলে নিজের লেখায় ঘটনাটি উল্লেখ করেন কবিগুরু।

১৯৩৭ সালে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারানোর পর থেকে বিশ্বভারতী নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গান্ধীজীকে চিঠিতে লেখেন 'জাতীয় সম্পদকে আপনি রক্ষা করুন'। স্বাধীনতার পর সেই চিঠি মৌলানা আজাদের হাতে তুলে দেন গান্ধীজী। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রূপে স্বীকৃতি পায়।

আজ রবীন্দ্রনাথ নেই, গান্ধীজীও নেই, নেই সেই আগের বিশ্বভারতীও। কিন্তু পারস্পরিক সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধার যে ছবি মনে গাঁথা হয়ে যায় তা অবিনাশী।

রম্যাঁ রলাঁর গান্ধীজী

ফরাসী সাহিত্যিক ও দার্শনিক রম্যাঁ রলাঁ সংগীতজ্ঞ দিলীপকুমার রায়-এর কাছেই গান্ধীজী সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ করেন। মানবতার পূজারী এই মানুষটি সম্পর্কে অপার শ্রদ্ধাবোধ তাঁকে একটি গ্রন্থ লিখতে বাধ্য করে - "Mahatma Gandhi: the Man who became one with the universal being."

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা থেকে জার্মানবিরোধী ফরাসী বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম রলাঁ দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত হলেন। ১৯১৯ সালে রুশ বিপ্লব তাঁকে নাড়া দিয়ে যায়। বিশিষ্ট সাম্যবাদী রোজা লুক্সেমবার্গের হত্যার প্রতিবাদে তিনি একটি প্যামফ্লেট রচনা করেন... 'Declaration of Independence of the spirit'। পরবর্তীতে বলশেভিকদের সহিংস নীতির প্রতি রলাঁর মনে বিতৃষ্ণা জন্মায়। মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন তাঁকে প্রভাবিত করে। অভ্র ঘোষ মনে করিয়ে দেন গান্ধীজীর ভাবাদর্শের সঙ্গে খ্রীষ্টধর্মের অন্তর্লীন সম্পর্ক খুঁজে পান রম্যাঁ রলাঁ। গান্ধীজীর প্রিয় গ্রন্থ ছিল 'ভগবৎ গীতা ' ও ' দ্য নিউ টেস্টামেন্ট'। গান্ধীজীর অহিংসা যে ভীরুতা নয়, বরং তার জন্য প্রয়োজন সাহস ও পৌরুষ তা নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন রলাঁ।

রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজীর মধ্যেকার নীতিগত বিরোধ রলাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। রবীন্দ্রনাথের কাছে অসহযোগ আন্দোলন ছিল নেতির সাধনা। এ ব্যাপারে দীনবন্ধু এন্ড্রুজের মন্তব্য উল্লেখ করেন রলাঁ - "বিদেশী কাপড় না পুড়িয়ে জনতার মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারতো।"

রবীন্দ্রনাথকে মুসোলিনি বিপাকে ফেলেছিলেন - তাঁকে পরে একথা বোঝানো গিয়েছিল। এরপরেও কেন গান্ধীজী মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন - এ নিয়ে অনেক বাদানুবাদ হয়। কিন্তু রলাঁ ব্যর্থ হন। গান্ধীজী মনে করেছিলেন শান্তির বাণী তাঁদের শুনিয়ে তাঁদের বশ করবেন।

তবে রম্যাঁ রলাঁ বিশ্বাস করতেন রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজী উভয়ের মধ্যে ছিল গভীর শ্রদ্ধা ও নির্ভরতার সম্পর্ক, উভয়েই নৈতিক শক্তির উপর আস্থা রেখেছেন, ভারতবর্ষকে নিয়ে উভয়েই ছিলেন আশাবাদী। রলাঁ উপলব্ধি করেন, সিন্ধু ও গঙ্গার মতো ভারতের দুটি মহান নদী গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ। আশা করতেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্যকে তাঁরা একই আলিঙ্গনে বাঁধুন।

জিন্না ও গান্ধী

বিশিষ্ট চিত্রকর দিনকর কৌশিক গান্ধী জীবন আধারিত তাঁর একটি গ্রন্থে মন্তব্য করেন সারাজীবন গান্ধীজী দুজন মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি - এক হরিলাল, তাঁর পুত্র, দ্বিতীয় মহম্মদ আলি জিন্নাহ। অভ্র ঘোষ 'জিন্না ও গান্ধী' শীর্ষক প্রবন্ধে অত্যন্ত তথ্যনিষ্ঠভাবে দেখিয়েছেন কীভাবে তাঁদের সম্পর্ক নিয়তিচালিত হয়ে দুটি ভিন্ন মুখে প্রবাহিত হয়।

১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে গান্ধীজীর সংবর্ধনাসভায় তাঁকে চোস্ত ইংরিজীতে অভিনন্দিত করেন জিন্না। দুজনেই গুজরাটী, তাহলে ইংরাজী কেন? প্রতিভাষণে গান্ধীজী মৃদু আপত্তি জানান।

গান্ধীজী ধর্মাচরণে একনিষ্ঠ, কিন্তু জিন্না রোজা নামাজ কিছুর ধার ধারেন না। আচার আচরণেও সাহেবী কেতা। হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে জিন্নাকে মনোনীত করেন গোখলে, সরোজিনী নাইডু প্রমুখেরা। জিন্না সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচন ব্যবস্থার নিন্দাও করেন।

গান্ধীজী খিলাফৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও জিন্না মনে করতেন প্যান-ইসলামিক আগ্রাসন ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করবে। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলন মেনে নিতে পারেননি জিন্না। হোমরুল লীগে গান্ধীজীর ভূমিকাতে বীতশ্রদ্ধ হন এবং ধীরে ধীরে তাঁর প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়ে ওঠেন জিন্না। নাগপুর কংগ্রেস থেকে গান্ধীজীকে মহাত্মা না বলে মি. গান্ধী বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন।

সাইমন কমিশনের পরবর্তীতে জিন্না কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশ আসন দাবি করলেন, কিন্তু তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে জিন্নার দাবিগুলি মানা হয়নি এবং প্রাধান্য পান গান্ধীজী। ধীরে ধীরে মুসলিম লীগের সংগঠনকে পোক্ত করার কাজে মনোযোগী হলেন জিন্না। কবি ইকবাল পাকিস্তানের ধারণাকে তাঁর মনে গ্রথিত করেন। নেহরু ও জিন্নার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। গান্ধীজী খাদি, চরকা, অস্পৃশ্যতা নিয়ে ব্যাপৃত থাকলেন। কিছুটা পরিস্থিতির চাপে, কিছুটা আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিন্নার চরিত্র আমূল পরিবর্তিত হল।

শেষ পর্বে মুম্বাইতে জিন্নার বাড়ীতে চোদ্দবার গান্ধী-জিন্না সাক্ষাৎকার ঘটে। গান্ধী পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাধীনতা মানতে রাজী ছিলেন না। জিন্নাও 'মথ ইটন' বাংলা ও পাঞ্জাব নিয়ে পাকিস্তান গড়তে রাজি নন। পনেরোই আগস্ট গান্ধী কলকাতায় দাঙ্গাপীড়িত এলাকায় একা কাটালেন, জিন্নাও কীটদষ্ট পাকিস্তান নিয়ে ভিন্ন হলেন।

জওহরলালের বাপু

১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে অ্যানি বেসান্ত ও বাল গঙ্গাধর তিলক 'হোমরুল লীগ' গঠন করে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে চাঙ্গা করতে চাইলেন। গান্ধীজীও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এলেন। বিলেত ফেরত জওহরলাল বাবা কংগ্রেসি নেতা মতিলাল নেহেরুর কর্মকান্ডে প্রভাবিত হন। জওহরলালের রাজনৈতিক জীবনের প্রেক্ষাপট হিসেবে এই ঘটনাগুলিকে তুলে ধরেছেন অভ্র ঘোষ।

মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ তাঁকে উৎসাহিত করলেও পিতার অনিচ্ছায় সক্রিয় হতে পারেননি জওহরলাল। পরবর্তীকালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের অভিঘাত নেহেরুকে রাজনীতিতে নিয়ে এল। গান্ধীজী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করলেন। মহাত্মার মতাদর্শে প্রভাবিত হলেন স্বয়ং মতিলাল নেহেরু। জওহরলাল কিষানসভায় বক্তৃতা দিতে শুরু করলেন।

গান্ধীজীর ভাবশিষ্য বাবা রামচন্দ্র কিষানদের একজোট করার কাজে নিবিষ্ট হলেন। মহাত্মা কিছু নিয়মাবলী আরোপ করে এই আন্দোলনকে জনতার দরবারে পৌঁছে দিলেন। ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে চৌরিচৌরা ঘটনার পর গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন। কংগ্রেসি নেতারা বিস্ময়ে হতবাক! ধীরে ধীরে মহাত্মা অস্পৃশ্যতা ও চরকা আন্দোলনে নিজেকে ব্যাপৃত করে ফেললেন।

গান্ধীজীর এই সিদ্ধান্তকে কেউ স্বাগত জানাননি এবং জওহরলালও বিরক্তি প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে নেহেরু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে প্রস্তাব পেশ করেন। মহাত্মা জওহরলালকে লিখলেন "you are going too fast.." নেহেরু জানতেন মহাত্মা ছাড়া ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো অসম্ভব। সাইমন কমিশন এলে নেহেরুর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ অহিংসভাবে কমিশনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হয়। খুশী হয়ে মহাত্মা নেহেরুকে চিঠি লেখেন - "May Godmake you the chosen instrument for freeing India..."।

জওহরলাল সমাজতন্ত্রের সমর্থক, কিন্তু গান্ধীজী তাঁর ভাবনা মেনে নিতে পারেননি সবক্ষেত্রে। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের পারস্পরিক দোলাচলকে বিভিন্ন পত্রাদি ও জীবনীকারদের মতামত উদ্ধৃত করে চমৎকার পর্য্যালোচনা করেছেন অভ্র ঘোষ।

মহাত্মার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রবল নেহেরুকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। গান্ধীজীর মৃত্যুর পর, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে জওহরলাল বলেছিলেন, "The light has gone out of our lives and there is darkness everywhere."।

সুভাষচন্দ্রঃ গান্ধীর দ্বৈত সত্তা

দেশে বিদেশে উচ্চপ্রশংসিত, মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে প্রকাশিত, সুভাষচন্দ্রের 'দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল' গ্রন্থে, ভারতবর্ষে গান্ধীজীর অপরিহার্যতা বিষয়ে একটি চমৎকার বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করেছেন নেতাজী। রাজনীতির ভিন্নপথের পথিক হয়েও মহাত্মার অনপনেয় ছায়াতে স্নিগ্ধ হতে পেরেছেন এই বীর মহানায়ক। অভ্রঘোষ এইভাবেই সূত্রপাত করেছেন তাঁর - 'সুভাষচন্দ্রঃ গান্ধীর দ্বৈত সত্তা' - শীর্ষক প্রবন্ধের।

প্রথম সাক্ষাতে গান্ধীজী সুভাষকে ততটা অনুপ্রাণিত করতে পারেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন সারা ভারতবর্ষে জাতীয় কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠা করেছেন মহাত্মা। দিকে দিকে গণ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন তিনি। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক গুরু চিত্তরঞ্জন দাশ-ও মহাত্মার অসহযোগ আন্দোলনের মূল কান্ডারি ছিলেন।

কিন্তু গান্ধীচরিত্রের মধ্যে এক দ্বৈত সত্তার পরিচয় পেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। চৌরিচৌরার ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এতে করে গণআন্দোলনের স্বতস্ফূর্ত আবেগকে রুদ্ধ করা হয় বলে তিনি মনে করতেন। রাজনীতিকে কূটনীতিও বলা যেতে পারে একথা মহাত্মা ভাবতেও পারতেন না। ১৯২৮ সালে জওহরলালের মত সুভাষচন্দ্রও স্বায়ত্তশাসনের বদলে 'পূর্ণ স্বরাজ'-এর দাবি তোলেন। গান্ধীজী তখনও প্রস্তুত নন। তবে ১৯২৯ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে উক্ত দাবি মেনে নেন গান্ধীজী।

কারারুদ্ধ অবস্থাতেই সুভাষচন্দ্র উপলব্ধি করলেন অহিংস আন্দোলনের শক্তি কতটা - ১৯৩০ সালে 'লবণ আইন আন্দোলন' তথা 'ডান্ডি অভিযান'-এর মাধ্যমে। আমাদের দেশেই যখন পর্যাপ্ত নুনের ভাণ্ডার আছে তাহলে বিদেশ থেকে টাকা দিয়ে কেন নুন কিনতে হবে? এই ডান্ডি অভিযানে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ গান্ধীজীর সঙ্গে যোগ দিলেন।

এই ঘটনার পরে পরেই মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ঘটনা ঘটল। গান্ধীজী সহ প্রায় ষাট হাজার মানুষ কারাগারে আটক হলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগের মুহূর্তে গান্ধীজী সবরমতী আশ্রমের ভারপ্রাপ্ত ইমাম সাহেবকে ধরসোনার লবণগোলা লুঠ করতে নির্দেশ দেন। পুলিশ বর্বরোচিত লাঠিচালনা করে সত্যাগ্রহীদের ওপর। এই আন্দোলনের ভূয়সী প্রশংসা করেন সুভাষচন্দ্র। গান্ধীজীর সেবাধর্ম,অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলন সুভাষকে মুগ্ধ করে। গান্ধীজীও যৌবনের প্রতীক সুভাষকে প্রাণভরে ভালোবাসেন, সমীহ ও করেছেন। এই অদ্ভুত আকর্ষণ ও বিকর্ষণের দোলাচলে বাঁধা ছিল তাঁদের সম্পর্ক।

১৯৩৯ সালে ইওরোপে নির্বাসনে থাকাকালীন সমাজতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠেন নেতাজী। মহাত্মার আপোষমূলক রাজনীতির প্রতি সুভাষচন্দ্রের অনাস্থা জোরালো হয়ে ওঠে। দুজনের মতাদর্শের ফারাক স্পষ্টতর হয়। জাতীয় কংগ্রেসকে মজবুত করতে 'কিষান মজদুর সংগঠন'-এর প্রস্তাব আনেন হরিপুরা কংগ্রেসে। গান্ধীজী তা নাকচ করে দেন।

ত্রিপুরী কংগ্রেসে তাঁদের দূরত্ব আরো বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ 'দেশনায়ক' প্রবন্ধ লিখে সুভাষচন্দ্রকে সম্মান জ্ঞাপন করেন। গান্ধীজী প্রকাশ্যে সুভাষবিরোধী মন্তব্য করেন। ক্ষুব্ধ নেতাজী পদত্যাগ করেন। জওহরলাল নিরাপদ দূরত্ব তৈরি করেন।

১৯৪১ সালে সুভাষ শেষবারের মতো দেশত্যাগ করেন। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ভিত্তিতে গড়া আজাদ হিন্দ ফৌজকে আরো শক্তিশালী করে তুললেন। ১৯৪২ সালে গান্ধীজীর 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' দেশকে খেপিয়ে তুলল। এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানালেন সুভাষ। ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে 'আজাদ হিন্দ সামরিক সরকার' গঠনের কথা ঘোষণা করলেন নেতাজী। ১৯৪৩ সালে গান্ধীজীর চুয়াত্তরতম জন্মদিনে ব্যাংকক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজীর অসামান্য অবদানের কথা জানালেন বেতারে। ১৯৪৪ সালে আরো একবার বেতারবার্তায় মহাত্মাকে প্রণাম জানান ও তাঁকে 'জাতির পিতা' বলে সম্বোধন করেন। পরিশেষে বলেন আপনার আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা প্রার্থনা করি। ১৯৪৫ সালে তাইপে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যুসংবাদ গান্ধীজীকে স্তব্ধ করে দেয়। তিনি একথা বিশ্বাস করতে চাননি। কেননা স্বাধীনতা আসার আগেই কি সুভাষ চলে যেতে পারে!

আম্বেদকর ও গান্ধী

'যদি অস্পৃশ্যতা বেঁচে থাকে তাহলে হিন্দু ধর্মের মৃত্যু হবে' ...১৯৪৭ সালের আঠাশে সেপ্টেম্বর 'হরিজন' পত্রিকায় গান্ধীজী লিখেছেন। গান্ধীর স্বরাজ আন্দোলনে অস্পৃশ্যতা বিরোধী সংগ্রাম গুরুত্ব পেয়েছিল। গঠনমূলক সামাজিক আন্দোলন ছাড়া রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে উঠতে পারেনা। বর্ণাশ্রমকে কিন্তু তিনি মেনে নিয়েছিলেন। তাঁর মতে বর্নাশ্রম মূলতঃ বৃত্তিভিত্তিক। অপরপক্ষে মাহার সম্প্রদায়ভুক্ত আম্বেদকর অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সারাটি জীবন অপমানিত হয়েছেন। সহপাঠী ও সহকর্মীরা তাঁকে অস্পৃশ্য করেই রেখেছিল। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে বিনাশ করতে না পারলে শূদ্রদের কোন মুক্তি নেই তা তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। এইখানেই তাঁর গান্ধীজীর সাথে বিরোধ।

আম্বেদকর তাঁর 'অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট' গ্রন্থে হিন্দু বর্ণাশ্রমের মূলোচ্ছেদ করতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয় দলিত ও নিম্নশ্রেণির জন্য আলাদা নির্বাচকমণ্ডলীর দাবিতেও সোচ্চার হন। গান্ধীজী মনে করতেন এতে করে হিন্দুসমাজ খণ্ডিত হয়ে যাবে। এর বিরুদ্ধে তিনি অনশন করেন। দেশব্যাপী গান্ধীআবেগের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হলেন আম্বেদকর। 'পুনে চুক্তি' সম্পাদিত হল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজীর অনশনভঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

পরবর্তীকালে অত্যন্ত রূঢ়ভাবে মহাত্মাকে আক্রমণ করেন আম্বেদকর। 'গান্ধীজীঃ দ্য ডুম অফ আনটাচেবলস্' গ্রন্থে তিনি বলেন "ln my judgement there can not be a greater tragedy for a leader to be distrusted by everybody as Mr. Gandhi is today."।

এই মূল্যায়ন কতটা সঠিক তা সুধীজনরাই নির্ণয় করবেন। লক্ষ্যনীয় এই যে আম্বেদকর কট্টর হিন্দুত্ববাদীরের কথা বলেননি, যদিও গান্ধীজীর মৃত্যু হয় তাদেরই একজনের হাতে।

হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় গান্ধীজী গোটা ভারতবর্ষে ছুটে বেরিয়েছেন। কিন্তু আম্বেদকর তাঁর কনস্টিটিউশনে s.c./s.t./o.b.c.-দের তালিকায় মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত করেননি। একটি কমিউনিটিকে পিছিয়ে রাখার জন্য সংবিধানের রূপকার হিসেবে কিছুটা দায়ভার কি তাঁকে নিতে হবে না?

জয়প্রকাশ নারায়ণের গান্ধী

কলেজে পড়ার সময় অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। আন্দোলন মাঝপথে থেমে যাওয়ায় আমেরিকায় পাড়ি দেন। সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে সাত বছর বাদে দেশে ফেরেন। বিদেশে থাকাকালীন মার্কসবাদে আকৃষ্ট হন। জওহরলালের সাথে তাঁর পরিচয় হয় - দুজনেই সাম্যবাদে অনুরক্ত। তৈরি হল কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি (সি .এস.পি.)। কিন্তু তিরিশের দশকে রুশ সমাজতন্ত্রের নিষ্ঠুরতা দেখে গান্ধীজীর প্রতি নতুন করে আকৃষ্ট হলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাতে বিপ্লবীদের আহ্বান জানালেন। পরিণামে তাঁর ন'মাসের জেল হয়। ১৯৪২ সালে গান্ধীজীর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এলেন জয়প্রকাশ।

মহাত্মা শহীদ হওয়ার পর, ১৯৫১ সালে গান্ধীজীর 'সর্বোদয়' আন্দোলনের স্মরণে প্রবন্ধ লিখলেন 'সোস্যালিজম অ্যান্ড সর্বোদয় '। ১৯৫৯ সালে গান্ধীশিষ্য বিনোবা ভাবে ভূদান আন্দোলন শুরু করলেন - জোতদারদের উদ্বৃত্ত জমি গরীব চাষীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার কাজ। জয়প্রকাশ সেই আন্দোলনে যুক্ত হলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন 'জরুরি অবস্থা' চালু করেন বিনোবা ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেন না, ফলতঃ জয়প্রকাশ ভূদান আন্দোলন ত্যাগ করলেন।

গান্ধীদর্শনের ওপর তাঁর একটি চমৎকার প্রবন্ধ 'গান্ধী অ্যান্ড দ্য পলিটিকস অফ ডিসেন্ট্রালাইজেশন' প্রকাশ পায় ১৯৭০ খ্রীষ্টাব্দে। গনতন্ত্রে বিকেন্দ্রীকরণের কথা গান্ধীজী বহুবার বলেছেন। জয়প্রকাশ নারায়ণ ও রাষ্ট্রবিহীন সমাজব্যবস্থার প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করেন।

গান্ধীজীর ভাবনাকে কখনও অবাস্তব মনে করেননি জয়প্রকাশ নারায়ণ। মানবিকতা ও অহিংসায় আস্থাশীল হয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত একজন প্রকৃত গান্ধীবাদী হয়েই থেকে ছিলেন।

মানবেন্দ্র রায় ও গান্ধীজী

মানবেন্দ্র রায় তথা নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা বিপ্লবী বাঘা যতীনের সান্নিধ্যে। বুড়িবালামের তীরে যতীন্দ্রনাথ শহীদ হওয়ার পর আমেরিকা চলে যান মানবেন্দ্র রায় ছদ্মনামে। এরপর মেক্সিকোতে থিতু হন। বিশ্বের দিকে দিকে গড়ে ওঠা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাঁকে প্রভাবিত করে।

১৯২০ সালে মস্কোতে অনুষ্ঠিত কমিনটার্নে লেনিনের সঙ্গে মানবেন্দ্র রায়ের প্রস্তাব ও আলোচিত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মানবেন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক দর্শন মার্ক্সীয় নীতি থেকে অপসৃত হয়। তাঁর উদ্ভাবিত রাডিক্যাল হিউম্যানিজম উদারনীতিবাদ ও কমিউনিজমের মাঝখানে অবস্থান করে। এই দর্শন কর্তৃত্বপরায়ণ পার্টিতন্ত্রের চরম বিরোধী। গান্ধীজীর সার্বভৌম অবস্থান থেকে চাপিয়ে দেওয়া রণকৌশলকেও এক ধরনের কর্তৃত্বপরায়ণতা বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।

বহু ক্ষেত্রে গান্ধীজীর সঙ্গে মানবেন্দ্র রায়ের চিন্তার সাযূজ্য ও লক্ষ্যনীয়। প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রসভ্যতাকে উভয়েই বর্জন করেছেন। অহিংসা যে কেবল একটি নীতি নয়, বরং রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে একটি রণকৌশলও বটে একথা পরবর্তীকালে মেনে নিয়েছিলেন মানবেন্দ্র রায়।

হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গান্ধীচর্চা

মহাত্মা গান্ধীকে 'পুরুষোত্তম' আখ্যা দেন বামপন্থী দার্শনিক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় যখন বামপন্থীরা, বিশেষতঃ রজনী পাম দত্ত গান্ধীজীর সংগ্রামকে বুর্জোয়া পরিচালিত আন্দোলন বলেই ব্যাখ্যা করেন। হীরেন্দ্রনাথ গান্ধীমায়ায় আচ্ছন্ন ছিলেন বলে মন্তব্য করেন অভ্র ঘোষ। গান্ধী মতাদর্শ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গীর ফারাক থাকলেই কোনো অশালীন, উদ্ধত মন্তব্য করাকে অপরাধ বলে গণ্য করতেন হীরেন্দ্রনাথ।

তাঁর 'তরী হতে তীর' গ্রন্থে হীরেন্দ্রনাথ লেখেন, 'ভগীরথের মতোই যেন গান্ধী এই ঊষর দেশে নতুন গঙ্গা জীবনের সব খাতে প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন'। গান্ধীজী ছাড়া ভারতে কোনো জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব ছিলনা বলেই মনে করতেন লেখক। তবে সত্যাগ্রহ যে স্বাধীনতা সংগ্রামের একমাত্র চালিকা শক্তি তা তিনি ভাবতেন না। সুভাষচন্দ্রের আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন, বামপন্থী কৃষক শ্রমিক আন্দোলন, বাঘা যতীন, ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং - এঁদের সকলেই এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

দুঃখ করে বলেছেন হীরেন্দ্রনাথ, গান্ধী চেয়েছিলেন কৃষিনির্ভর ভারত, কুটির শিল্পের উন্নয়ন, বিকেন্দ্রীভূত গ্রামস্বরাজ ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে ঘটল এর বিপরীত। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা, ঔপনিবেশিক শিক্ষাকাঠামো, ক্ষমতার রাজনীতি। অহিংসার বদলে হিংসাই এখন সর্বাত্মক আকার নিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে গান্ধীজীই সাম্যবাদের চর্চা করে গেছেন, হীরেন্দ্রনাথ একথা বিশ্বাস করতেন। গান্ধীর আশ্রমগুলিতে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মসূচী, একসাথে শিক্ষাগ্রহণ নির্দিষ্ট ছিল। নারীশক্তিকে নানা ভাবে কাজে লাগানোর অনুশীলন চলত। ব্যক্তি মানসিকতার পরিবর্তনসাধন গান্ধীজীর গোটা জীবনের সাধনা ছিল। বামপন্থী হীরেন্দ্রনাথ গান্ধীজীকে যেমনভাবে বুঝেছিলেন তা প্রায় দুর্লভ বলে মনে করেন অভ্র ঘোষ।

নির্মলকুমার বসুর গান্ধীজী

নির্মলকুমার বসু গান্ধীচর্চায় আগ্রহী শুনে গান্ধীজী নিজেই তাঁকে আশ্রমে ডেকে পাঠান যাতে তাঁর সম্পর্কে কোনো ভুল তথ্য বাইরে না যায়। অভ্র ঘোষ শুরুতেই এই অসাধারণ তথ্যটি জানিয়ে আমাদের সমৃদ্ধ করেন।

সত্যের প্রতি গান্ধীজীর নিরলস আগ্রহ নির্মলকুমারকে মুগ্ধ করেছিল। 'My Days with Gandhi' বইটিতে গান্ধীজীর সচিব হিসেবে তাঁর প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার কথা শ্রী বসু লিপিবদ্ধ করেন।

গান্ধীজীর প্রার্থনাসভায় তিনি কখনোই উপস্থিত থাকতেন না। কিন্তু আত্মশক্তিতে বলীয়ান তেজোদৃপ্ত মানুষটিকে অপরিসীম শ্রদ্ধা করতেন। অহিংস আন্দোলন ভারতের রাজনীতিতে গান্ধীজীর শ্রেষ্ঠ দান বলে মনে করেন শ্রী বসু। অহিংস গণতন্ত্রের চর্চা সত্যাগ্রহের একটি স্তম্ভ। তাঁর 'গান্ধী মানস' গ্রন্থের প্রারম্ভিক লেখাটির নাম 'সত্যাগ্রহের মূলসূত্র'।

নোয়াখালির বীভৎস দাঙ্গার পর গান্ধীজীর সফরসঙ্গী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিপিবদ্ধ করেছেন শ্রী বসু। মহিলাদের স্পর্শ না বাঁচিয়ে ব্রহ্মচর্য রক্ষার যে নিরীক্ষা গান্ধীজী করেন তা নিয়েও লিখেছেন শ্রী বসু।

মহাত্মাকে নিয়ে নির্মলকুমার বসু তিনটি ইংরেজী গ্রন্থ ও ছ'টি বাংলা গ্রন্থ এবং অগণিত প্রবন্ধ লেখেন। গান্ধীজীর রাজনীতি, জীবনদর্শন, ব্যক্তিজীবন প্রভৃতি বিষয়ে গ্রন্থগুলি প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে।

পান্নালাল দাশগুপ্তের গান্ধী গবেষণা

পান্নালাল দাশগুপ্তের বহুবর্ণময় কর্মমুখর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান তাঁর 'গান্ধী গবেষণা' গ্রন্থটি - একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তাঁর আর একটি অবদান হল কোপাই নদীর তীরে স্থিত 'আমার কুটীর' প্রতিষ্ঠান... যার হাত ধরে আঞ্চলিক কুটীরশিল্প, গ্রামোন্নয়নের কাজ সংগঠিত হয় রবীন্দ্রনাথের আদর্শে।

কৈশোর থেকেই নানাবিধ বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এগারো বছর কারাগারে থাকাকালীন বিশিষ্ট গান্ধীবাদী নির্মল কুমার বসুর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়ে তিনি সারা ভারত ঘুরে বেড়ান। তাঁর 'গান্ধী গবেষণা' গ্রন্থে পান্নালাল দেখিয়েছেন ঈশ্বরবাদী হলেও রাজনীতি ভাবনায় গান্ধীজী ছিলেন চরম ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ। বিপ্লবীদের পথ সমর্থন না করলেও তাদের আত্মত্যাগের কথা উচ্চকণ্ঠে বলেছেন গান্ধীজী। তাঁর সেবাধর্ম ও গঠনমূলক কাজের ও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল।

একদা মার্কসবাদী পান্নালাল গান্ধীর সঙ্গে মার্কসবাদীদের সাদৃশ্য ও বিরোধের কথা অতি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর 'গান্ধী গবেষণা' গ্রন্থে।

অন্নদাশংকরের গান্ধীজী

অন্নদাশংকরের গান্ধীভাবনাকে অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠভাবে উপস্থিত করেছেন অভ্র ঘোষ। মার্কসবাদের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও গান্ধীবাদ-এর দ্বান্দ্বিক আদর্শবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন অন্নদাশংকর রায়।

মার্কসবাদে মনে করা হয় 'end justifies means', কিন্তু দ্বান্দ্বিক আদর্শবাদে হিংসার কোনো স্থান নেই। এই দুই মতবাদই মানুষের শোষণমুক্তির কথা বলে। বস্তুবাদে নাস্তিক্য প্রতিষ্ঠিত, আদর্শবাদ ঈশ্বরপ্রেমে বিভাসিত। গান্ধীজীর মৃত্যুর পরেও দ্বান্দ্বিক আদর্শবাদের মৃত্যু হয়নি। মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা তা প্রমাণ করেছেন। সহিংস বিপ্লবেই জারশাসিত রাশিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিংসা ছারখার করে দেয় গোটা বিশ্বকে।

রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মার মতাদর্শ নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন অন্নদাশংকর। গান্ধীজীর গ্রামীন শিল্প প্রতিষ্ঠা ও স্বাবলম্বনের আদর্শকে স্বাগত জানিয়েছেন কবি, কিন্তু বিদেশী জিনিষ বর্জন তাঁকে মোটেই খুশী করেনি। আধুনিক পাশ্চাত্ত্যকে বাদ দিয়ে এগোনো অসম্ভব বলে মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ। আধুনিক সভ্যতাকে গান্ধীজী 'শয়তানের সভ্যতা' বলে মনে করতেন।

কিন্তু গান্ধীজীর অস্পৃশ্যতা বিরোধী আন্দোলন, সেবাধর্ম তাঁকে আসমুদ্র হিমাচল সকলের নেতা করে তুলেছিল। গান্ধীজীকে 'নীলকণ্ঠ' বলে উল্লেখ করেছেন অন্নদাশংকর। কংগ্রেসি ও মুসলিম লিগের নেতাদের ক্ষমতা লিপ্সার গরল কণ্ঠে ধারণ করে একলাটি পথ হেঁটেছেন তিনি।

অম্লান দত্ত ও অশীন দাশগুপ্তের গান্ধীচর্চা

আধুনিক কালের দুজন বিশিষ্ট গবেষকের গান্ধীচর্চা নিয়েও যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা করেছেন অভ্র ঘোষ।

অম্লান দত্ত গান্ধীজীর গ্রামস্বরাজ ভাবনাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। তুলনায় রাষ্ট্রকে একটি 'হৃদয়হীন যন্ত্র' বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি এও লিখেছেন - গান্ধীজী যখন বিদেশীদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলছেন রবীন্দ্রনাথ তখন বিশ্বভারতী গড়ে তুলছেন - যত্র বিশ্ব ভবত্যেকনীড়ম।

মহাত্মা হিংসাত্মক গোপন আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু লেনিন মনে করতেন বিপ্লব ঘটাতে গেলে গুপ্তঘাতক বাহিনী গড়তেই হবে। পরবর্তীকালে স্টালিন জমানায় সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু হয়। এইখানেই গান্ধীজীর অহিংসা ব্রতের জয়।

অশীন দাশগুপ্তের 'মনিয়া ও অন্যান্য গান্ধী' এই গ্রন্থের এ পর্যন্ত না চেনা এক গান্ধীকে আমাদের সামনে উপস্থিত করে। ছোট্ট মনিয়া অর্থাৎ মোহনদাসের সব দুষ্টুমিকে পুতলিবাঈ সামাল দিতেন, কিন্তু মায়ের যখন তাকে প্রয়োজন সে ছুটে গেছে। গান্ধীজীর সেবাব্রতের শুরুয়াৎ এইখান থেকেই। শ্রী দাশগুপ্তর গান্ধীচর্চার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ 'জড়ভরতের হরিণঃ গান্ধী এবং কংগ্রেস'। পুরাণের গল্পে আছে রাজা ভরত অসহায় হরিণকে আশ্রয় দেন, কিন্তু বড় হয়ে হরিণটি রাজাকে ছেড়ে চলে যায়। কংগ্রেস দল প্রয়োজনমতো গান্ধীজীকে ব্যবহার করেছে। আসলে গান্ধীজী ছিলেন একা, নিঃসঙ্গ।

ডেভিড হার্ডিম্যানের গান্ধীজী

সমাজবিজ্ঞানী হার্ডিম্যান গান্ধীজীর রাজনীতি সম্পর্কে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ খুঁজে বার করেছেন। সংলাপ অর্থাৎ মত বিনিময়ের সংস্কৃতি, যাকে হার্ডিম্যান 'ডায়ালজিক' বলে চিহ্নিত করেছেন। ডায়ালগস শক্তিনির্ভর নয়, পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সত্যানুসন্ধান। হার্ডিম্যান ধণ্ডক উপজাতির উদাহরণ দিয়েছেন - যেখানে রাজাকে প্রজার অভিযোগ শুনতেই হবে এবং প্রতিকারের আশ্বাস দিতেই হবে। এছাড়া 'হিজরাট' বলে একটি পদ্ধতির উল্লেখ করেছেন যেটি গান্ধীজীর ডায়ালজিক পদ্ধতির নামান্তর।

পাশ্চাত্ত্য সভ্যতার বিরুদ্ধে গান্ধীজীর 'হিন্দ স্বরাজ' এক প্রবল জেহাদ বলে হার্ডিম্যান মনে করতেন। গাছকাটার বিরুদ্ধে 'চিপকো 'আন্দোলনে সর্বোদয় কর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরে যে 'নর্মদা বাঁচাও' আন্দোলন হয় তা গান্ধীভাবনার ফলশ্রুতি বলে হার্ডিম্যান মনে করতেন।

নারীদৃষ্টিতে গান্ধীজী

এই গ্রন্থের শেষতম কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় 'নারীদৃষ্টিতে গান্ধী'। অভ্র ঘোষ গান্ধীজীর আত্মজীবনী থেকে স্ত্রী কস্তুরবার সঙ্গে গান্ধীজীর সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করেছেন। গান্ধীজী নিঃসঙ্কোচে তাঁর স্ত্রীর প্রতি কর্তৃত্বপরায়ণতা এবং 'cruelly kind' ব্যাবহারের উল্লেখ করেছেন। কস্তুরবা সহনশীলতার চূড়াবিন্দুতে পৌঁছেও প্রতিবাদ করেননি। তাঁর এই আত্মত্যাগ গান্ধীর জীবনেও পরিবর্তন এনেছিল। কস্তুরবা ছিলেন আশ্রমজননী।

সরলা দেবী চৌধুরানীর সঙ্গে গান্ধীজীর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সবরমতী আশ্রমে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপচারিতায় মেতে উঠতেন গান্ধীজী। এ নিয়ে আশ্রমে গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। অবশেষে এই সম্পর্ক ত্যাগ করেন মহাত্মা। এরপর থেকে চিঠিপত্রে গান্ধীজী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেন সরলা দেবী।

অভ্রবাবু উল্লেখ করেন সরোজিনী নাইডুর কথা, যিনি ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভানেত্রী। গান্ধীজীর সকল কাজে বিশেষতঃ ডান্ডী অভিযানে অন্যতম শরিক ছিলেন সরোজিনী দেবী। গ্রেফতার হওয়ার আগে গান্ধীজী ধরসোনা লবনগোলা লুন্ঠনের নির্দেশ দেন। নেতৃত্বে ছিলেন সরোজিনী ও সবরমতী আশ্রমের ইমামসাহেব। সম্পূর্ণ অহিংস আন্দোলনটিকে ইংরেজ সরকার গুলি চালিয়ে রক্তাক্ত করে দেয়।

রম্যাঁ রলাঁর মাধ্যমে মাডলিন স্লেড নামের ইংরেজ মহিলা গান্ধীজীর সেবাব্রতে যুক্ত হন। তিনি মীরা বেন নামে পরিচিথ হন। ওয়ার্ধার সেবাশ্রমে তিনি নিযুক্ত হন। গান্ধীজী অসম্ভব নির্ভর করতেন এই মহিলার ওপর।

নাতনী মনু বেন ও ডঃ সুশীলা নায়ার সর্বক্ষণ গান্ধীজীর সঙ্গে থাকতেন। নারীকে স্পর্শ করেও ব্রহ্মচর্য পালন করার নিরীক্ষার কাজে মনু বেন গান্ধীজীর সহযোগী হন। কস্তুরবাও এ কাজে সম্মতি দেন।

নোয়াখালি অভিযানের সময় সুচেতা কৃপালনী, অশোকা গুপ্তা, কমলা দাশগুপ্ত প্রভৃতি বহু মহিলা গান্ধীজীর সাথে পথ চলেছেন। গণ আন্দোলনে মহিলারা যে দলে দলে যোগ দেন ঐতিহাসিক তনিকা সরকার এর চমৎকার ব্যাখ্যা দেন। বঙ্কিমচন্দ্র দেশকে 'মা' বলে ডেকেছেন। যেন দেশমাতৃকার সেই শক্তিরই বিকাশ সাধন করেছেন গান্ধীজী।

শেষকথা

তিনশো ছাপ্পান্ন পাতার এই গ্রন্থটি রচনা করতে শুধু তত্ত্বের সমাহার বা তথ্যানুসন্ধান নয়, লেখক তাঁর বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও গভীর বিস্ময়বোধের পরিচয় রেখেছেন প্রতিটি ছত্রে ছত্রে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিধা কখনো বা ভ্রান্তির কারণে গান্ধীজীকে সমালোচিত হতে হয়েছে। 'ভণ্ড তপস্বী'র অপবাদ ও শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু আপামর ভারতবাসী এই অপরাজেয় পৌরুষের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছেন, ভালবেসেছেন তাঁর চরিত্রের সারল্য ও মাধুর্যকে; কেননা তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা যে কানে শোনবার নয়, প্রাণে শোনবার। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, "এক অপরাজেয় সংকল্পশক্তি কর্ণের কবচের মতো তিনি ধারণ করেছেন।" তাই মানুষের ইতিহাসে এক বিরলতম ব্যাক্তিত্ব হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবেন তিনি অনন্তকাল।

ধন্যবাদ অভ্র ঘোষকে।
 

গ্রন্থ সমালোচনাঃ
'গাঁধীঃ দৃষ্টির বিচিত্রতায়'
অভ্র ঘোষ
সিগনেট প্রেস