আরেক রকম ● নবম বর্ষ একাদশ সংখ্যা ● ১-১৫ জুন, ২০২১ ● ১৬-৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

লাক্ষাদ্বীপ কি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের নয়া পরীক্ষাগার?

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়


আরব সাগরের শান্ত স্নিগ্ধ পর্যটন কেন্দ্র লাক্ষাদ্বীপ এই মুহূর্তে ক্ষোভে উত্তাল। ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপের বসবাসযোগ্য দশটি দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বর্তমান প্রশাসক প্রফুল কোডা প্যাটেলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে লাক্ষাদ্বীপের ভূমিপুত্ররা রাস্তায় নেমেছেন তাঁর অপসারণ চেয়ে। দ্বীপভূমির বাইরের মানুষদের সমস্ত রকম অগ্রাধিকার দেবার জন্যই তিনি দ্বীপবাসীদের জীবন-জীবিকা ও সমাজ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন, এই অভিযোগের তীব্রতা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারি ক্ষমতাকে হাতিয়ার করে তিনি কোনো আলোচনা ছাড়াই দ্বীপের মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষকে কর্মচ্যুত করে কর্পোরেটদের হাতে দ্বীপসমূহের সম্পদ তুলে দেবার চক্রান্ত শুরু করেছেন। সাধারণভাবে এতকাল লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক পদে বসতেন কেন্দ্রের যুগ্মসচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা। আপাদমস্তক আরএসএস-এর ঘরের লোক গুজরাটের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিজেপি নেতা প্রফুল কোডা প্যাটেল এই কেন্দ্রশাসিত দ্বীপপুঞ্জের বর্তমান প্রশাসক। তাঁর বিভিন্ন কাজকর্ম ঘিরে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ দ্বীপবাসীর বক্তব্য, উন্নয়ন এবং সংস্কারের নামে এই প্রশাসক দ্বীপভূমির সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্রের ওপর একের পর এক আঘাত নামিয়ে আনছেন। যা সাংবিধানিক কাঠামো এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে বিঘ্নিত করছে। কার্যত আরএসএস-বিজেপি-র রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা কার্যকর করার চেষ্টা হচ্ছে। আর সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘হ্যাশ ট্যাগ সেভ লাক্ষাদ্বীপ’ বা 'লাক্ষাদ্বীপ বাঁচাও' নামে দ্বীপবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে ডাক দেওয়া হয়েছে সেখানে শুধু দ্বীপবাসীদের প্রতিবাদের নয়, ক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষেরও। সেই সুরে সুর মিলিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে প্রশাসককে সরানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

কুখ্যাত সোহরাবুদ্দিন মামলায় যখন জেলে গিয়েছিলেন গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকা অমিত শাহ, তখন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রফুল প্যাটেলকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পারিবারিক পরম্পরাগতভাবেই আরএসএস-এর সঙ্গে থাকা এহেন প্রফুল প্যাটেল লাক্ষাদ্বীপের আগে দমন-দিউতে প্রশাসক হিসেবে বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ করেছেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে দায়িত্ব নিয়ে এই দ্বীপপুঞ্জে একাধিক অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি সেই ‘ধারাবাহিকতা’ বজায় রাখায় শুরু হয়েছে অশান্তি। ‘ইনি এসেছেন আমাদের দীর্ঘ লালিত ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে’ খোলাখুলি বলছেন লাক্ষাদ্বীপের মানুষ। কী কী করেছেন তিনি তার ফিরিস্তি লম্বা। তাঁর করা একাধিক আইন সংস্কারের ঘোষণা এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে -
• যে কোনো ব্যক্তিকে একবছর একতরফাভাবে আটক রাখার আইন,
• দ্বীপে নয়া কোস্টাল আইনের মাধ্যমে মৎসজীবীদের জীবিকায় প্রশ্নচিহ্ন,
• কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে পরিবেশের ভারসাম্য এবং জৈববৈচিত্র বিনষ্টকারী নির্মাণ,
• ভূমিপুত্রদের (মূলত স্থানীয় জনজাতি) জমি নামমাত্র মুল্য দিয়ে বা না দিয়ে অধিগ্রহণের নামে কেড়ে নেবার মতো আইন,
• বেসরকারিকরণের স্বার্থে নানা পদক্ষেপ ইত্যাদি বিভিন্ন দিক।

বিরোধী জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে এই প্রশাসককে অপসারণের দাবি করা হয়েছে। এবং তিনি যেসব নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলি বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। লাক্ষাদ্বীপের মানুষের লড়াইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে এই আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ প্রশাসককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে লাক্ষাদ্বীপের বিজেপি নেতা এবং কর্মীরাও দল ছাড়ছেন প্রশাসকের ভূমিকার প্রতিবাদে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁদের অনেকেই অংশ নিচ্ছেন প্রশাসক বিরোধী বিক্ষোভেও।

লাক্ষাদ্বীপে সাধারণভাবে প্রশাসকরা বিভিন্ন স্বশাসিত সংস্থার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন এতকাল। সেখানে এই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ প্যাটেল সম্পূর্ণ উলটো পথে হাঁটছেন। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্থা ভেঙে দিয়েছেন বা তার ক্ষমতা খর্ব করেছেন। সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে বাগে আনতে বিনা বিচারে এক বছর বন্দী করে রাখার মতো নয়া আইন করে গ্রেফতারিতে ব্যবহার, সরকারি স্কুলগুলির মিড ডে মিলে আমিষ খাবার বন্ধ করে দেওয়া, ১৫টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া, সরকারের বিভিন্ন স্তরের অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই, দ্বীপে বহিরাগতদের বাধ্যতামূলক কোভিড টেস্ট বন্ধ করা সহ একাধিক জনবিরোধী কেরামতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দেশ এবং সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করে প্রতিবাদের কাঠামোকেই ধ্বংস করতে চান তিনি।

লাক্ষাদ্বীপ পঞ্চায়েত রেগুলেশন ২০২১ (খসড়া)নামের একটি নতুন আইন চালু করতে চাইছেন প্রশাসক, যা চালু হলে স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসিত সংস্থার নির্বাচনে দুইয়ের অধিক সন্তানের বাবা-মায়েরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দ্বীপপুঞ্জের জনগোষ্ঠীর গরিষ্ঠ অংশ মুসলিম আদিবাসী হওয়াতেই তাঁর এই আইনি প্যাঁচ কষা যা কার্যত ঐতিহ্যের বিরোধিতা। প্রসঙ্গত, এখানে ফারটিলিটি রেট বা জন্মবৃদ্ধির হার ১.৯। যা দেশের জাতীয় হারের (২.২) থেকে নিচে।

এর পাশাপাশি রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তিকে তাঁর পরিচয় প্রকাশ না করে এক বছর পর্যন্ত বন্দী করে রাখার গুন্ডা অ্যাক্ট ২০২১ প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক প্রতিবাদকে দমন করতে প্রতিবাদকারীকে সমাজবিরোধী হিসেবে দেগে দেওয়ার জন্যই এই স্বৈরাচারী আইন আনা হয়েছে। কারণ, সমাজবিরোধী কাজকর্মের হার লাক্ষাদ্বীপে খুবই কম। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র তথ্যও সেকথা বলছে। ‘এই আইনের মাধ্যমে দ্বীপবাসী মানুষ যারা মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে এখানে বাস করেন তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রশাসক’ একথা বলেছেন কেরালার রাজ্যসভার সাংসদ এলামারাম করিম। তাঁর বক্তব্য, দ্বীপের অধিবাসীরা যাতে অন্য কোথাও বিচার চাইতে যেতে না পারেন তাই তাদের প্রতি এই বৈষম্য করা হচ্ছে কর্পোরেট স্বার্থে।

প্যাটেলের সম্পর্কে অন্যতম সমালোচনা হলো কর্পোরেটদের জন্য জমি দখল করার আগ্রাসী মনোভাব। এই দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত দ্বীপগুলি মিলিয়ে মোট স্থলভাগের পরিমাণ মাত্র ৩২ বর্গ কিলোমিটারের মতো। যেখানে গাড়ি খুব কম চলাচল করে। অধিকাংশই টু-হুইলার। অ্যান্ড্রট আইল্যান্ড, যা আয়তনে সর্বোচ্চ তা কোনো কোনো জায়গায় সর্বোচ্চ এক কিলোমিটারের সামান্য বেশি চওড়া। জাতীয় সড়কের মতো সড়ক গড়ার জন্য এখানে উদ্যোগ নিয়েছেন প্রফুলপ্যাটেল। সেখানে হাইওয়ে গড়ার জন্য হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে জৈব বৈচিত্র ধ্বংস করে নির্মাণ করার কী যৌক্তিকতা রয়েছে? কী যৌক্তিকতা আছে বুলডোজার দিয়ে এখানকার গরিব মানুষের মানুষের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার? এই ধরনের এবং আরো অনেক অযৌক্তিক কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল। বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে তার এইসব অগণতান্ত্রিক এবং অযৌক্তিক কাজের ফলে প্রাকৃতিক নিসর্গ এবং শান্তির মরুদ্যান লাক্ষাদ্বীপ এখন প্রতিবাদ মুখরিত।

আরও যে বিষয়টি লাক্ষাদ্বীপের মানুষকে এবং প্রতিবাদীদের অত্যন্ত ক্ষুব্ধ করেছে সেটা হল লাক্ষাদ্বীপ অ্যানিম্যাল প্রিজারভেশন অ্যান্ড রেগুলেশন ২০২১ আইন যা একেবারেই বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে কার্যকর করা গোহত্যা বিরোধী আইনগুলোর মতোই একপেশে। আইনে প্রাণী সংরক্ষণের কথা আসলে একটা ভাঁওতা বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা বীফ এবং গোমাংসের জোগান বন্ধ করার জন্যই আনা হয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিমত। কারণ, লাক্ষাদ্বীপে পাওয়া যায় 'সমুদ্র শসা'র মতো সামুদ্রিক জীব যার প্রজাতি এই মুহূর্তে বিলুপ্তির মুখে, তা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে প্রাণী হত্যার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। বোঝাই যাচ্ছে, প্রাণী সংরক্ষণের নামে এই লাইসেন্স মাংসের জন্য গোহত্যায় দেওয়া হবে না। গোমাংস বিক্রি, বহন করা, কেনা-সমস্ত কিছুই যে আইন বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার ভেতরে বলদ, মহিষ সমস্ত কিছুকেই রাখা হয়েছে। আইনে শাস্তি হিসেবে যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং ন্যূন্যতম ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সংস্থান রাখা হয়েছে। অথচ এই দ্বীপবাসীদের নিজস্ব জীবনচর্যা রয়েছে। আদিবাসী অংশের মানুষ এখানকার প্রাচীন অধিবাসী। ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁরা গো উৎপাদন করেন কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য, দুধের জন্য, মাংসের জন্য এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কারণে। নয়া আইনে এসবই অবদমিত করতে চাওয়া হয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরেই লাক্ষাদ্বীপের সমস্ত অধিবাসীরাই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে দ্বীপপুঞ্জে মদ্যপানের বিরোধী। সেখানে একটি মাত্র দ্বীপ বাঙ্গারাম, যা পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয়, সেখানে ছাড়া অন্যত্র সুরাসেবনে রয়েছে স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। স্থানীয়দের এই সেন্টিমেন্টকে অগ্রাহ্য করে নয়া প্রশাসক আরো তিনটি দ্বীপে চালু করতে চাইছেন মদের উন্মুক্ত ব্যবহার। তাঁর এই ঐতিহ্যবিরোধী পদক্ষেপে রীতিমতো ক্ষুব্ধ দ্বীপবাসীরা।

বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে তিনি আরও একটি চরম অগণতান্ত্রিক কাণ্ড করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন দ্বীপের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর। নির্দেশ দিয়েছেন বড়ো ডেয়ারি ফার্মগুলিকেও বন্ধ করার। তাঁর নির্দেশের জেরে সেখানকার অস্থায়ী কর্মীদেরও বরখাস্ত করা হয়েছে এবং নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে দপ্তরের প্রাণিসম্পদ। এর পাশাপাশি সেখানে গুজরাটকেন্দ্রিক আমুল সংস্থাকে দুধ এবং দুধজাত সামগ্রী বিক্রির জন্য একতরফা অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, গুজরাটের স্বার্থ দেখতেই তাঁর এই পদক্ষেপ। ফলে দ্বীপবাসীদের ক্ষোভের আগুনে এই ঘটনায় ঘি পড়েছে।

কোভিড সম্পর্কে তাঁর পদক্ষেপ গোটা দেশেই বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। করোনা পরীক্ষার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তুলে দেওয়া হয় তাঁর নির্দেশে। তাঁর দায়িত্ব নেবার আগে থেকেই দ্বীপে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে চালু ছিল কোভিড পরীক্ষার জন্য বাধ্যতামূলক নেগেটিভ আরটি-পিসিআর রিপোর্ট দাখিল। তা তুলে দেন তিনি। তুলে দেওয়া হয় বাধ্যতামূলক নিভৃতাবাসের নিয়ম। প্রতি বর্গ কিলোমিটার পিছু ২০১৩ জনঘনত্ব সম্পন্ন লাক্ষাদ্বীপের কোভিড পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি ঘটে এরপরই। যেখানে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অবধি কোনও কোভিড রোগী ছিল না, সেখানে এই তুঘলকিপনার জন্য কোভিড পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ।

প্রশাসকের আরও একটি নির্দেশ নিয়ে দ্বীপের মানুষ ক্ষুব্ধ। লাক্ষাদ্বীপের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার পর তা দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার দূরে কেরালার বেপোর বন্দরে নিয়ে যেতেন। এই মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কেরালার মানুষের এই বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া এক দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। নয়া প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল এসে বিজেপি শাসিত কর্নাটকের ফায়দার জন্য কেরালার সঙ্গে লাক্ষাদ্বীপের মানুষের দীর্ঘ পরম্পরা ভেঙে মৎস্যবাহী জলযানগুলিকে প্রায় ৯১৬ কিলোমিটার দূরের ম্যাঙ্গালোর বন্দরে নিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই দ্বীপের মানুষদের অন্যতম মূল জীবিকা‌ হল মাছ ধরা। প্রশাসকের নয়া কোস্টাল রেগুলেশন আইন বলে সমুদ্রের ধারে জাল শুকানো থেকে মাছ রাখার মৎস্যজীবীদের অস্থায়ী কাঠামো সহ যে ব্যবস্থা রয়েছে তা সমস্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো আগাম হুঁশিয়ারি না দিয়েই এই সমস্ত অপকর্ম করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এ-সমস্তই কোস্টাল আইনের বিরোধী। এর দরুন মৎস্যজীবি সম্প্রদায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। লাক্ষাদ্বীপের ৮৭ শতাংশ মানুষের মাছধরাটাই জীবিকা। জীবিকা নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন তাঁরা।

আরএসএস’র মুখপত্র অর্গানাইজার পত্রিকায় প্রশাসকের অগণতান্ত্রিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজকর্মের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদকে সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই দ্বীপভূমিকে হিন্দুত্ববাদীদের নিরীক্ষাগার করে তোলার জিগিরে জীবন-জীবিকা হারানোর যন্ত্রণা, ক্ষোভ আর আতঙ্কের জাঁতাকলে পড়ে দ্বীপবাসীদের এবারের ঈদের উৎসব ম্রিয়মান হয়ে গেছে।

দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপভূমিতে আয়োজিত এই পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করলে আগামী দিনে তা দেশের অন্যত্রও প্রয়োগ করা হবে না এমনটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। আগ্রাসনবাদী এই ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে এখনই রুখে দাঁড়ানো দরকার। অন্যথায় এই সমাজিক ভাইরাস দেশের সর্বত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।