আরেক রকম ● নবম বর্ষ দশম সংখ্যা ● ১৬-৩১ মে, ২০২১ ● ১-১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

প্রদীপশিখার গান

প্রবুদ্ধ বাগচী


জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় ব্যবহার করার আগে 'পাখির নীড়' যে কোনো চোখের গভীরতার আশ্রয়বাহী রূপক হতে পারে এই কথা সম্ভবত কোনো কবি কল্পনাও করে উঠতে পারেননি। ঠিক যেমন ত্রিনয়নী দুর্গার দেবী ইমেজকে ভেঙে দিয়ে শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য ওই ত্রিনয়ন স্থাপন করেছিলেন উত্তর কলকাতার সাবেকী পাড়ার এক আটপৌরে গৃহবধূর ক্লিন্ন ছবিতে। একজন ভাষাশিল্পী বা চিত্রশিল্পী এতটাই পারেন। 'পাখির নীড়'কে উপমা হিসেবে জীবনানন্দ যা করে দেখালেন বলতে পারা যায়, তার একরকম পাকাপাকি কপিরাইটই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা কবিতায়। অন্য কোনো তৃতীয় শ্রেণির কবিও ওই উপমা ব্যবহারের নির্বুদ্ধিতা কোনোদিন দেখাবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু এই অনবদ্য জীবনান্দীয় উপমাকে স্মরণে রাখলেও অন্য একটা দৃষ্টান্ত আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তাঁর এক গানে 'পাখির নীড়' কে কিন্তু চরিত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সে গানের সুর আজ হারিয়ে গেছে, ফলে আমাদের শ্রুতিতে তার কোনো ছাপ নেই। কিন্তু ছাপার অক্ষরে সেই গান আজও পড়া যায়, যেখানে পাখির নীড় আসলে একটি চরিত্র। সুরহারা গানের প্রথম দু ছত্রেই তার ইঙ্গিত আছেঃ
পান্থ পাখির রিক্ত কুলায় বনের গোপন ডালে
কান পেতে ওই তাকিয়ে আছে পাতার অন্তরালে।

আসলে রবীন্দ্রনাথের গানের কথা নিয়ে, তার বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা নিয়ে, চারিত্র্য নিয়ে এত এত কথা বলা হয়ে যাওয়ার পরেও থেকে যায় এমন অনেক অন্তরালে থাকা ঝিলিক দেওয়া উপাদান। যে অনিঃশেষ উন্মোচনের সামনে নতজানু হওয়া ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। পাখির নীড়ের মতোই একটি প্রদীপশিখাও যে গানের চরিত্র হয়ে উঠতে পারে তার নীরবতার ভাষা নিয়ে - এমনই এক উদাহরণ আছে রবীন্দ্রনাথের একটি বসন্তের গানে। বসন্তের গান কথাটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা, এই গানের সঙ্গে বসন্তের সংযোগ তেমন প্রত্যক্ষ বলে মনে হয় না। গানের শুরুতে 'উতল হাওয়া'র উল্লেখ এবং তাকে ধীরে ধীরে বইতে বলার আর্তিটুকু বাদ রাখলে বসন্তের অন্য কোনো উপাদান, সচরাচর যা রবীন্দ্রনাথের গানে হাজির থাকে, এখানে তা নেই। সেদিক দিয়েও এই গান খানিকটা ব্যতিক্রমী। বরং গানটা এমনভাবে আরম্ভ হয়, মনে হতে থাকে 'উতল হাওয়া'ই যেন এই গানের উপজীব্য। ঠিক যেমন এক গান ভাবুক অনেক দিন আগে ধরিয়ে দিয়েছিলেন 'ওগো নদী আপন বেগে পাগল পারা' গানটা আসলে নদীর গান নয়, ওটা আসলে স্তব্ধ চাঁপার তরুর স্বগত ভাষণ। আমাদের আলোচ্য গানের ক্ষেত্রেও এমন এক ভ্রান্তি স্বাভাবিক। আসলে যা নয়। একবার পড়ে নেওয়া যাক গানটাকে।

ধীরে ধীরে বও, ওগো উতল হাওয়া
নিশীথ রাতে বাঁশি বাজে - শান্ত হও গো শান্ত হও
আমি প্রদীপশিখা তোমার লাগি ভয়ে ভয়ে একা জাগি,
মনের কথা কানে কানে মৃদু মৃদু কও।
তোমার দূরের গাথা তোমার বনের বাণী -
ঘরের কোণে দেহ আনি
আমার কিছু কথা আছে ভোরের বেলার তারার কাছে
সেই কথাটি তোমার কানে চুপি চুপি লও।

২.

গানের যদি কোনও জ্যামিতিক চিত্র তৈরি করা যেত, তাহলে এই গানটাকে সামনে রেখে নির্মিত হতে পারে কতগুলো সেতু। একেবারে প্রথম দুটি ছত্র (স্থায়ী) থেকে যে নির্মাণের সূত্রপাত। গানটার অন্তরায় এসে আমরা প্রথম বুঝতে পারি, গোটা গানের কথাটাই আসলে প্রদীপশিখার ভাষ্যঃ 'আমি প্রদীপশিখা, তোমার লাগি ভয়ে ভয়ে একা জাগি'। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে এমন কিছু প্রয়োগ আমরা এর আগে অনেকবার পেয়েছি যা পাঠককে কিছুতেই স্বস্তি দিতে চায় না (গায়কদের দেয় কি না জানি না!)। এই গানের প্রথম চারটে লাইনের কথাই যদি ধরি, সেখানেও এই অসোয়াস্তির চোরাটান আমাদের পিছু নেয় ওই 'ভয়ে ভয়ে' শব্দ দুটিকে ভর করে। সাধারণভাবে প্রদীপশিখার অস্তিত্বের পক্ষে 'ভয়' হতে পারে ওই উতল হয়ে-ওঠা হাওয়া, যার আঘাতে মুহূর্তেই সে নির্বাপিত হতে পারে। কিন্তু এই সহজ যুক্তি অন্য একটা ভাবনার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে গানের দ্বিতীয় লাইনেঃ 'নিশীথ রাতে বাঁশি বাজে - শান্ত হও গো শান্ত হও'। মানে, হাওয়া উতল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু 'নিশীথ রাতে বাঁশি'র সুরে তাকে শমিত করার অনুরোধ এসে পৌঁছাচ্ছে প্রদীপশিখার পক্ষে। কিন্তু নিশীথের অন্ধকারে কে বাজাচ্ছে বাঁশি? কোন নিশীথিনী?

গানের গভীরে তার কোনো ইশারা নেই ঠিকই, কিন্তু সেই আড়ালে থাকা নিশীথিনীর এই বাঁশির সুরে যে স্তব্ধতার আভাস সেই ইঙ্গিতকে প্রদীপশিখাই যেন প্রতিনিধি হয়ে সঞ্চারিত করে দিতে চাইছে উতল হাওয়ার কাছে! অন্য একটা গানে 'মুখর কবি'কে নীরব করে দেওয়ার অভিপ্রায়ে নিশীথ রাতের নিবিড় সুরে বাঁশিতে তান পুরে দেওয়ার আর্তির কথা আমাদের মনে পড়তে পারে (নিশীথ রাতের নিবিড় সুরে বাঁশিতে তান দাও হে পুরে / যে তান দিয়ে অবাক কর গ্রহশশীরে)। এখানে অবশ্য বাঁশির সুরকে ভাবা হয়েছে উতল হাওয়াকে শান্ত হওয়ার প্রণোদন হিসেবে, আর সেই প্রণোদনাটুকু যখন প্রদীপশিখা পৌঁছে দিতে চায় উতল হাওয়ার কাছে তখন আমাদের ভাবতেই হয় প্রদীপশিখা এখানে নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে এই ভূমিকা নিতে চাইছে না। এখানে আসলে সে তৈরি করে দিতে চাইছে একটা সেতু, যে সেতু জুড়ে দেবে সেই অজ্ঞাত নিশীথিনীর বাঁশির সুরের সঙ্গে শান্ত হয়ে আসা উতল হাওয়াকে!

এই গানের প্রথম সেতু যদি হয় এইটা, তবে অন্তরার দ্বিতীয় লাইনেই পেয়ে যাচ্ছি অন্য এক যোগাযোগের আভাস। উতল হাওয়াকে ধীরে ধীরে বইতে বলার পরেই প্রদীপশিখার পরের প্রার্থনা হল 'মনের কথা কানে কানে মৃদু মৃদু কও'। কার মনের কথা? হাওয়ার মনের কথা। (এই পর্যন্ত লিখে মনে হল, হাওয়ার মনের কথা - শুধু এই ভাবনাটুকু ভেবে উঠতে পারলেই বাংলা ভাষায় আর কোনো লেখালিখি ছেড়ে দেওয়া যায় অনায়াসেই, এমন একটা কল্পনার বিস্তার অমর করে রাখতে পারে যে কোনো ভাষাশিল্পীকে!)। কিন্তু মনের কথা, সে তো কেবল কানে কানে মৃদু স্বরেই হতে পারে। কিন্তু 'কানে কানে' শব্দ দ্বৈতের মধ্যে নিবিড় নৈকট্যের যে ছবি তার জন্য তো উতল হাওয়াকে কাছে আসতেই হবে প্রদীপশিখার আর খুব নমিত বাচনে জানাতেও হবে সেই কথা। বোধহয় রবীন্দ্রনাথই পারেন হাওয়ার মনের কথাকে এইভাবে প্রকাশের পরিসর দিতে। পাশাপাশি, এটাও তো ভাবতে হবে, উতল হাওয়া কীভাবে কাছে আসবে প্রদীপশিখার? গানের সঞ্চারী জানাচ্ছে হাওয়া আসলে আছে দূরে ('তোমার দূরের গাথা...') - তবে তো তার একটা আসার পথ চাই! হ্যাঁ, নিজের মনের কথা জানাতে প্রদীপশিখার কাছে ঘন হয়ে আসতে গেলে তাকে আবারও পেরিয়ে আসতে হবে একটা সেতু। এইটে গানের ভিতরকার সেই দ্বিতীয় সেতু।

কিন্তু এই সেতু পেরিয়ে হাওয়া যখন নিবিড় হতে চাইবে প্রদীপশিখার গায়ে সেখানে এক বিরোধাভাস। হাওয়ার প্রাবল্য একদিকে যেমন নিভিয়ে দিতে পারে প্রদীপশিখার আলো, অন্য দিকে প্রদীপশিখাই তো হাওয়ার কাছে সেই একমাত্র আশ্রয়, যার কাছে নিজের মনের কথা বলা যেতে পারে নিচু স্বরে, আশ্লেষে, গাঢ়তায়। গানের এই পর্বে মুখোমুখি দাঁড়ানো দুটি চরিত্র যে এমন এক দ্বন্দ্বময় অস্তিত্বের ফ্রেমে আটকে গেল, এমন উদাহরণ রবীন্দ্রনাথের গানে খুব বেশি নেই। গানের ভাবনার মধ্যে প্রণয়ী-প্রণয়িনী অথবা ভক্ত-ঈশ্বর বা বন্ধু-প্রভু পরস্পরের দিকে চলাচল করছেন বা কখনও নেমে আসছেন একই সমতলে এমন ছবি অনেকবার আমরা পেয়েছি। এই কথাও আমরা এমন জেনে গেছি, তাঁর দার্শনিক মননে এই সব কিছুরই একটা পরিপূরক অবস্থান আছে। কিন্তু এই গানে সেতু বেয়ে পরস্পরের কাছে যারা পৌঁছে যায় তাদের একের অস্তিত্ব অপরের পক্ষে অনস্তিত্বের দ্যোতক। অথচ তাদের সম্মেলক উপস্থিতি গানের টেনশনকে বেঁধে দিয়ে ভিন্ন এক স্বরে। এইখানে এসে আবার ভাবতে হবে ওই 'ভয়' কথাটাকে নিয়ে। একটা ভয় এইরকম যে, হাওয়া তার দমিত অস্তিত্ব নিয়ে কাছে আসতে পারবে কি না প্রদীপশিখার; অন্যদিকে, 'উতল' শব্দের মধ্যে উচাটন আর মন কেমন করা একটা কুয়াশার আবছায়া ভরে দিলে মনে হতে পারে 'উতল হাওয়া' তার সেই মন-কেমন-করা বিধুর বেদনা কি সত্যিই কানে পৌছাতে পারবে প্রদীপশিখার? এ যেন এক আশ্চর্য ভয়ের দ্বিমাত্রিক অবস্থান। আমাদের চারপাশের প্রতিদিনের বেঁচে থাকায় যার কোনো প্রতিবিম্ব বোধহয় খুঁজে পাই না আমরা।

৩.

রবীন্দ্রনাথের গানের ট্র্যাডিশন ভাঙার অন্যতম উপাদান হল তার সঞ্চারী। বাংলা গানের তিন তুকের কাঠামোর মধ্যে এই চতুর্থ তুক রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব সংযোজন, যা শুধু গানের কাঠামো নয়, গানের ভাবনাগত বিন্যাসকেও নতুন বাঁধুনিতে বেঁধে রাখে। রবীন্দ্রনাথের গানের সঞ্চারী আসলে সেই একটুকরো খোলা আকাশ, গানের মুক্তি, গানের ছুটি। আমাদের সামনে রাখা এই প্রদীপশিখা আর উতল হাওয়ার বিনিময় আখ্যানেও এই ঘরানার ব্যতিক্রম নেই। এখানে সঞ্চারীর ভূমিকা গানের একটা পর্বান্তর ঘটানোর। কেমন সেই পর্বান্তর?

প্রদীপশিখার কানে কানে হাওয়ার যে কথা বলা, তার অবসান ঘটে গানের অন্তরায়। অবসান এই কারণেই বলব, ব্যবহৃত ক্রিয়াপদ 'কও' হলেও এই কথাবলা যে শেষ হয়েছে তার ইঙ্গিত আছে সঞ্চারীতে। কারণ, এবারে ওই উতল হাওয়ার কাছে অন্য এক বার্তা নিয়ে হাজির হয় প্রদীপশিখাঃ
তোমার দূরের গাথা তোমার বনের বাণী -
ঘরের কোণে দেহ আনি

আগের পর্বে যার বিনতি ছিল হাওয়ার কথা শোনার, সে কথা ছিল মনের কথা, যা বলতে হয় মৃদু স্বরে; আর এইটা হল 'দূরের গাথা' আর 'বনের বাণী' যা হয়তো অকপটের বলা যায়। বলা যায় ঘরের কোণে থাকা প্রদীপশিখাকে। এই ঘরের কোণ একই সঙ্গে জানিয়ে দিল প্রদীপশিখার স্থানাঙ্কটুকুও, যা আভোগে অন্য একটা চিত্রকল্পকে বুঝে নিতে সাহায্য করবে আমাদের। উতল হাওয়া যদি নিজের মনের কথা উন্মুক্ত করতে না পারে, তবে কি সে পারবে তার পরের কথাগুলো শিখাকে জানাতে? তাই অন্তরায় অবসানের একরকম ধারণা আমাদের না মেনে নিয়ে উপায় নেই। আর, দূরের হাওয়া যখন তার গাথা ও বাণী নিয়ে এসে দাঁড়াল ঘরের ভিতর, তখন প্রদীপশিখা, গানের এক চূড়ান্ত বাঁকে প্রকাশ্য করল তার ভিন্ন এক আকুতি - 'আমার কিছু কথা আছে ভোরের বেলার তারার কাছে'। নিবিষ্ট পাঠক এইখানে এসে খেয়াল করতে পারেন স্থায়ী থেকে আভোগের অবসরে কীভাবে সময়ের এক গতি সূক্ষ্ম ভাবে বর্ণিত হল গানের শরীরে। নিশীথ রাতের বাঁশির সুর থেকে ভোরের বেলার তারা - গানের পাশে পাশে এগিয়ে চলেছে সময়। সত্যজিতের 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' ছবিতে এরকম এক সময়ের খেলা দেখেছিলাম আমরা চলচ্চিত্রের শর্তে।

কিন্তু ভোরের তারার কাছে কী কথা থাকতে পারে প্রদীপের? না, এই গানে সেই কথার কোনো আভাস নেই, আছে শুধু এই কথা-থাকার কথা। তবে অন্য একটা গানে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন সন্ধ্যা তারার একরকম ইচ্ছের কথা। সেই গানের প্রথম দু'লাইনঃ 'মাটির প্রদীপখানি আছে মাটির ঘরের কোলে / সন্ধ্যাতারা তাকায় তারই আলো দেখবে বলে।' মাটির প্রদীপ আর ভোরের তারার অবস্থান আমাদের এই গানে প্রায় এক। অনুমান করা যায়, ঘরের কোণের মাটির প্রদীপ এখানেও যেন চেয়ে আছে ভোরের তারার দিকে - যার কাছে সে পৌঁছে দিতে চায় কোনো অনন্তের বাণী। এখানে এসে কিছু সংগত কল্পনায় ভর করে বলতে ইচ্ছে করে কিছু কথা। অস্তিত্বের প্রাসঙ্গিকতার দিক দিয়ে ভাবলে ভোরের তারা আর সারারাত নিবিড় জ্বলে থাকা প্রদীপশিখার অবস্থান প্রায় একরকম। অল্প পরেই প্রথম দিনের ঊষা এসে ঢেকে দেবে ভোরের তারার আলো, আর, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়া শিখা স্বভাবত স্তিমিত হয়ে আসবে সময়ান্তরে। কিন্তু সত্যিই কি এই দুই অস্তিত্ব একদম এক?

না। কেননা, ভোরের তারা আবার দিন ফুরোলে ফিরে আসবে সন্ধ্যাতারা হয়ে, কিন্তু প্রদীপশিখার কি এমন কোনও নিশ্চিত ফিরে আসা আছে? তাই কি সে তার এই সীমায়িত অস্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে চায় অসীম কালসাগরে ছুটে চলা নক্ষত্রের আবর্তন? এইটুকুই কি আসলে তার কথা? যে কথা ঘরের কোণ থেকে দুরের আকাশে সঞ্চারিত করতে চায় সে!

এই প্রশ্নের জবাব গানে নেই। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি না, আভোগে এসে যেখানে গান শুরু হয় সেখানে প্রদীপশিখার ঘরের কোণে এসে দাঁড়িয়েছে স্তিমিতগতি উতল হাওয়া। আর, সেই হাওয়ার কানেই চুপি চুপি তার কথা সঞ্চারিত করে দিতে চায় প্রদীপ্তশিখা, ভোরের আলোর কানাকানি যাকে এনে ফেলেছে প্রায়-নির্বাপণ মুহূর্তের কিনারে। শুরুতে যে সেতুর কথা বলে ধরতে চাইছিলাম এই গানের কাঠামোকে সেই সেতু এইখানে এসে পৌছাল তার তৃতীয় মাত্রায়। প্রথম স্তরে উতল হাওয়ার কাছে নিজেকে সেতু করে মেলে ধরতে চেয়েছিল যে দীপশিখা, এইবার তার বিপতরীতে সে অতিক্রম করতে চাইল ভোরের তারার সঙ্গে তার যোজন দুরত্ব - মাঝখানে এই উতল হাওয়া রচনা করে দিল সেই অনিবার্য যোজক।