আরেক রকম ● নবম বর্ষ দশম সংখ্যা ● ১৬-৩১ মে, ২০২১ ● ১-১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

বাংলার বামপন্থা - স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ

শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার


সময়ের কী পরিহাস! ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বাংলার পরিষদীয় রাজনীতিতে কমিউনিস্টদের প্রথম প্রবেশ। এখন ৭৫ তম বর্ষে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে পরিষদীয় রাজনীতিতে সেই বামপন্থীরা শূন্য হয়ে গেল। যাঁরা বামপন্থীদের ভোট দেন নি, তাঁরাও অবাক। এমনই একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় কোনো বামপন্থী কন্ঠস্বর থাকবে না, এটা দলমতনির্বিশেষে অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য। এমন একটি বিপর্যয়ের ঘটনার পর বামপন্থীদের অন্দর মহলে যথেষ্টগুরুত্ব দিয়ে আত্মমন্থন শুরু হবে, এটাই কাম্য। পৃথিবীর দেশে দেশেই এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে বামপন্থীরা গভীর আত্মসমীক্ষার মন্থন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই উত্তরণের পথ খুঁজেছে। কখনো নেতৃত্বের আগাপাশতলা বদল করে, কখনো দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে নেতৃত্ব। এমন ঘটনা ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনেও ঘটেছে। ১৯৪৮ এর দ্বিতীয় কংগ্রেস থেকে রণদিভের নেতৃত্বে ‘ইয়ে আজাদী ঝুঠা হ্যায়’ এর রাজনৈতিক লাইন পার্টির সাংগঠনিক বিপর্যয় ডেকে আনার পর রণদিভে পদত্যাগ করেছিলেন। এক গভীর আত্মমন্থন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ভারতের রাজনীতিতে আবার একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হয়ে ওঠে কমিউনিস্টরা। রণদিভে নিজেও নিজের অতীতের রাজনৈতিক লাইনের কঠোর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে নিজেকে সংশোধন করে আবার সংগঠনেরসম্মুখসারিতে ফিরে আসেন।

এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জয় পেয়েছে। এই ফলাফলকে কে কীভাবে দেখছে? সিপিআইএম পলিটবুরো এই ফলাফলেবিপুল অর্থশক্তি ও অপকৌশল সত্ত্বেও বিজেপি’র পরাজয়কেই প্রধান বিষয় হিসেবে দেখেছে। এই ফলাফলে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতির পরাজয় হয়েছে।বিজেপিকে পরাস্ত করতে চাওয়ার মানুষের প্রবল ইচ্ছার মুখে পশ্চিমবঙ্গে ভোট তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে মেরুকরণ হয়ে সংযুক্ত মোর্চার শোচনীয় ফলাফল ঘটেছে। বিজেপি’র তরফে‘মানুষকে আমরা বোঝাতে পারি নি’ গোছের সাধারণ কথা ছাড়া এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য শোনা যায় নি। যদিও বিগত বিধানসভার সাপেক্ষে এবার আসনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধিকে তারা ক্ষমতা দখলের পথে অগ্রগতি হিসেবেই দাবি করেছে। আরএসএস তাদের পর্যালোচনায় বিজেপি’র অগ্রগতির দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। তারা এই ফলাফলকে বিজেপির পক্ষে বিপর্যয় হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছে।মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়কে হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে বাঙালিত্বের বিজয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

আমার ধারণা, তৃণমূলের জয়ে শুষ্ক রাজনীতির চেয়ে, প্রকৌশলী ভোট-ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অনেক বেশি। ২০১৯ সালে নির্বাচনী ফলাফলে ধাক্কা খাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেশাদার সংস্থা নিয়োগের মাধ্যমে নিজের দলের দুর্বলতা ও শক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা গ্রহণের পথে হেঁটেছে। অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিজেদের হৃত অবস্থানকে তৃণমূল শুধু পুনরুদ্ধার করে নি, অত্যুৎসাহী বিজেপি’র পালের হাওয়াও অনেকটাই কেড়ে নিতে পেরেছে।সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত থেকে সরকারি কর্মসূচি, নির্বাচনী রাজনীতি থেকে নির্বাচনী রণসজ্জা- এই সমস্ত ক্ষেত্রেই পেশাদারি পরামর্শদাতাদের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তুলে দিয়ে ২০১৯ সালের কোণঠাসা অবস্থা থেকে ২০২১ সালে একটি সদর্থক জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। তুলনায় বলা যেতে পারে, ১০ বছর আগে ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ঠিক এধরনের একটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েও বামপন্থীরা মধ্যবর্তী সময়পর্বে নিজেদের দুর্বলতার জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে ২০১১ সালের পরাজয়কে ঠেকাতে পারে নি। ২০০৯ থেকে ২০১১ বামফ্রন্টের ভোট ৪৩.৩ শতাংশ থেকে কমে ৪১.০৮ শতাংশে দাঁড়ায়।

এবার বিজেপি-র ব্যর্থতার মূল কারণ, তাদের তরফে ২০১৯ এর ফলাফলের ভুল মূল্যায়ন।২০১৯ এ বিজেপির যে ভোটপ্রাপ্তি হয়েছিল সেখানে মেরুকরণের যত না প্রভাব ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল জনগণের তৃণমূল বিরোধী মনোভাব। ২০১৭ সালের পুর নির্বাচন ও ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের লাগামছাড়া সহিংসতার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায়, সাধারণ মানুষ তৃণমূলের হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে বিজেপিকে একটি সম্ভাব্য বিকল্প ভেবে সমর্থন জানিয়েছিল। তৃণমূলের রাজনীতিকে মুসলিম তোষণের রাজনীতি হিসেবে বর্ণনা করে ২০১৯-এ ওই ভোটে একটা মেরুকরণের ছায়াও পড়েছিল। কিন্তু ওটাই সব ছিল না। বিজেপি মেরুকরণকেই ভেবে নিয়েছিল সর্বরোগহর দাওয়াই। নিজেদের যত দুর্বলতা রয়েছে সব এটা দিয়েই ঢাকা পড়ে যাবে। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে দলের ভেতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সমস্ত প্রভাবশালী নেতাদের ডানা ছাঁটতে শুরু করেন, তাদেরকে বিনাবাক্যে বিজেপিতে তুলে নেওয়া বিজেপির জন্যে সবচেয়ে বড় ভুল। বিজেপি ভেবেছিল, যোগদান মেলার মাধ্যমে ধুমধাম করে তৃণমূলের নেতাদের দলে দলে বিজেপিতে অন্তর্ভুক্ত করলে তৃণমূল দলীয়ভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। ওরা বোঝে নি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের লক্ষ্য ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, বরং তৃণমূল নেতামন্ত্রীরা। এই নেতা মন্ত্রীদের প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে মমতা সংগঠনে তাদের গুরুত্ব কমাতে শুরু করেন। এরা যখন বিজেপিতে গেছে তখন তাদের সম্পর্কে মানুষের ক্ষোভও বিজেপিতে চালান হয়ে গেছে। দিলীপ ঘোষ যতই বলেছেন, বিজেপি গঙ্গার মত, এখানে এলে সবাই শুদ্ধ হয়ে যায়। এসব কেউ বিশ্বাস করে নি। বরং যত বেশি তৃণমূলের নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে ততই তৃণমূলের বিকল্প হওয়ার অধিকার বিজেপি হারিয়েছে। বিজেপি হিন্দুত্বের পরিচিতির ভিত্তিতে ২০২১ সালে হিন্দুদের ভোট আরো সংহত করতে চেয়েছে। আদিবাসী অনুসূচিত জাতি উপজাতিদের মধ্যে ২০১৯ সালে হিন্দুত্বের প্রচারে সমর্থন ভিত্তি তৈরি করেছিল।

প্রশান্ত কিশোর এই হিন্দুত্বের পরিচিতির মধ্যে অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে দিয়েছেন দু’টি দিকে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড যা তৈরি হয়েছেপরিবারের প্রধান মহিলাদের নামে। প্রথম থেকেই তৃণমূলের গোটা প্রচারে নারীসত্তার একটা সুপরিকল্পিত ব্যবহার ছিল। ‘দিদিকে বলো’, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ ইত্যাদি শ্লোগানের সুচতুর ব্যবহারের ফলে নারীসমাজের এক বড় অংশ এর মধ্যে নিজেদেরকে দেখতে পেয়েছে। এর প্রতিপক্ষে মোদী শাহ এবং নাড্ডা যখন কথায় কথায় ‘দিদি দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন, তখন সেটা নারীর আত্মাভিমানেই ঘা দিয়েছে। এই গোটা ব্যাপারটা এতটাই বুদ্ধিমত্তার সাথে নির্মিত হয়েছে যা অভাবনীয়। আমার এক বন্ধু বলছিলেন, প্রশান্ত কিশোর ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ শ্লোগানটি তৈরির সময় কপিরাইটারকে বলেছিলেন এমন একটি শ্লোগান হবে যেখানে কোনো যুক্তাক্ষর থাকবে না, রেফ,ঋ-কার, র-ফলা বা য-ফলা থাকবে না। যাতে স্বল্পস্বাক্ষর মানুষ সহজেই সেই শ্লোগান পড়তে পারেন। নির্বাচনী কৃৎকৌশল কোন পর্যায়ে গেলে এমনভাবে রাজনৈতিক প্রচার সজ্জিত হতে পারে। ২০১৯ সালে জঙ্গল মহলে আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপি যে সমর্থন লাভ করেছিল ২০২১ তার অনেকটাই খুইয়েছে। জঙ্গল মহলে বিজেপি-র হিন্দুত্বের অভিযান আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্মের স্বীকৃতির দাবির মুখে দম হারিয়ে ফেলে। তবে তৃণমূলের বিজয় সুনিশ্চিত হয়েছে, শুধু বিজেপির হিন্দুত্বের ভেতরে নারীসত্তা ও আদিবাসী সত্তার পালটা বয়ান নির্মানের মাধ্যমেই নয়। বিজেপির উগ্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের আগ্রাসী অভিযানকে তুলে ধরে মুসলিম ভোটকে তৃণমূল নিজেদের স্বপক্ষে মেরুকরণ ঘটিয়েছে। এই মেরুকরণই তাদেরকে বীরভূম, মালদা, মুর্শিদাবাদ ও দুই দিনাজপুরে কংগ্রেস ও বামেদের পরম্পরাগত সমর্থনভিত্তিতে থাবা বসাতে সাহায্য করেছে। ফলে তৃণমূলর জয় একদিকেবিজেপির মেরুকরণে অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে, অন্যদিকে মুসলিম ভোটে মেরুকরণ ঘটিয়ে অর্জিত হয়েছে।তৃণমূলের জয়কে সরাসরি মেরুকরণ বিরোধী বিজয় হিসেবে ব্যাখ্যা করাটাও কিছুটা হলেও সরলীকরণ। তবে এটাও মনে রাখা উচিত, ২০১১ সালে তৃণমূল যখন ক্ষমতায় এসেছিল বামবিরোধী নেতিবাচক ভোটে। কিন্তু বিগত ১০ বছরের শাসনে একটি নিজস্ব জনভিত্তিও নানা কারণে গড়ে নিতে সমর্থ হয়েছে তৃণমূল। ওই জনভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই ভোট ব্যবস্থাপনার প্রকৌশলী পদক্ষেপগুলির সুফল পেয়েছে।

বামপন্থীদের জন্যে এই ফলাফল অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও অসম্ভব ছিল কি? সম্ভবত না। ২০১৯ এর নির্বাচনের ফলাফলের সাথে তুলনা করলে এমন হওয়াটা অপ্রত্যাশিত নয়। প্রকৃতপক্ষে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেই লোকসভা ও বিধানসভায় বামপন্থীরা শূন্য হয়ে আছে। এই নির্বাচনে তাতে সিলমোহর পড়েছে মাত্র। সংখ্যাগত বিচারে হয়ত বলা হবে ২০১৯ এর ফল থেকে সামগ্রিকভাবে নতুন করে আর কোনো রক্তক্ষরণ হয় নি। বরং বিধানসভা কেন্দ্র পিছু বামপন্থীদের গড় ভোটপ্রাপ্তি ২০১৯ এর তুলনায় সামান্য বেড়েছে। ২০১৯ এ ছিল ১৪,৩০০। ২০২১ এ হয়েছে ২১,৮৭৫। আরেকটি দিক রয়েছে, মীনাক্ষীকে বাদ দিলে বহুল আলোচিত তরুণপ্রার্থীদের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। মীনাক্ষীর ভোট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ওর আত্মপ্রকাশকে ব্যাখ্যা করা ভুল হবে। এগুলো পরিসংখ্যানের ভুলভুলাইয়া। এর ওপর অতিনির্ভরতা বিপজ্জনক। কারণ ভুলভুলাইয়ার মতই পরিসংখ্যানের কোন্ হিসেব বেরোবার রাস্তা দেখাবে, আর কোনটা আরো বেশি করে গোলকধাঁধার ভেতরে নিয়ে যাবে, তা ঠাওর করা খুবই কঠিন। সিপিআইএম কর্মী সমর্থকদের এক বড় অংশ মনে করে, বামপন্থীদের বিপর্যয়ের মূল কারণ জোট। কারো ধারণা কংগ্রেসের সাথে জোট করা ভুল। কারো ধারণা আইএসএফ-এর সাথে জোট করা ভুল। কারো ধারণা কংগ্রেস আইএসএফ কারো সাথেই জোট করা উচিত হয় নি। ২০১১ সালে বামফ্রন্টের পরাজয়ের জন্যে বাম কর্মী সমর্থকদের এক বড় অংশের ধারণা ছিল, ভারত মার্কিন সামরিক চুক্তি নিয়ে ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার না করলে কংগ্রেস তৃণমূলের সাথেজোট করত না। ওই জোট না হলে বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হত না। বলা বাহুল্য, এই ধারণাগুলির বাস্তবতার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।

এবার বামেদের শূণ্য হয়ে যাওয়ার কারণ শুধু এই নির্বাচনে খুঁজতে গেলে সম্ভবত ভুল হবে।বামেরা ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মূলত দু’টি অংশের মানুষের মধ্যেশক্তিশালী গণভিত্তিরসুবাদে। এই দু’টি অংশ উদ্বাস্তু সমাজও কৃষক জনসাধারণ। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশভাগের বলি হয়ে আসা উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিল বামপন্থীরা। এই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফলেই উদ্বাস্তুদের মধ্যে বামপন্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়। অন্যদিকেঅবিভক্ত বাংলার কৃষক আন্দোলনের পরম্পরায় ছয়ের দশকের বেনামী ও খাস জমি দখলের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কৃষক সমাজের মধ্যে বামপন্থীদের শক্তিশালী গণভিত্তি গড়ে ওঠে। বামফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৭৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গ্রাম বাংলার পঞ্চায়েতগুলিতে বাস্তুঘুঘুর বাসা ভেঙে গরিবের ক্ষমতায়ন হয়। ওই সময়পর্বেই অপারেশন বর্গা কর্মসূচির মাধ্যমেও কৃষকদের অধিকারের সীমা সম্প্রসারিত হয়। বামপন্থীরা কৃষকদের মধ্যে দুর্ভেদ্য শক্তি হয়ে ওঠে।২০০৬ সালের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে উদ্বাস্তু সমাজ ও গ্রামীণ কৃষকদের মধ্যে বামপন্থীদের সমর্থন ভিত্তির ক্ষয় স্পষ্ট হতে থাকে এবং সেই জায়গা দখল করে নেয় তৃণমূল। ২০১১ সালে বামফ্রন্টের বিদায় সুনিশ্চিত হয় মূলত এই দু’টি অংশের সাথে বামপন্থীদের সামগ্রিক বিচ্ছিন্নতার ফলেই।

বিগত ১০ বছরে বামপন্থীদের এই পরম্পরাগত সমর্থন ভিত্তির পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় নি।পরিবর্তিত সময়ে উদ্বাস্তু সমস্যা শুধুমাত্র কলোনির স্বীকৃতি বা পাট্টা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বিশেষ করে ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব বিধির সংশোধন পরবর্তী সময়ে, তা বামপন্থীরা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। এই সময়পর্বে নাগরিকত্বের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল উদ্বাস্তু সমাজে। বামপন্থী উদ্বাস্তু আন্দোলন এই উদ্বেগকে ভাষা দিতে ব্যর্থ হল। একইভাবে নয়ের দশকের পর থেকে কৃষক আন্দোলন বা সামগ্রিকভাবে কৃষির বিষয়টি কোন পথে এগোবে এ নিয়ে স্পষ্টতা ছিল না। ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর তৃণমূল সরকারের নতুন কৃষি আইন নিয়ে বা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৃষক সমাজের নতুন নতুন সমস্যাকে কৃষক আন্দোলনে তুলে আনা সম্ভবপর হয় নি। এমনকী সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে তিনটি কৃষি আইন নিয়ে শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠলেও এই আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায় নি। অন্যান্য রাজ্যে পিছিয়ে পরা সমাজের মানুষের সামাজিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে পৃথক গণসংগঠনবা কৃষক সভার বাইরে ক্ষেতমজুরদের জন্যে আলাদা গণসংগঠন তৈরি হলেও পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় নি বাম শাসনের ৩৪ বছরে। ফলে অনুসূচিত জাতি, উপজাতিদের পরিচিতি সত্তার আর্তি অথবা কৃষক সমাজের মধ্যেকার দরিদ্রতম অংশের কন্ঠস্বর স্বতন্ত্র স্বীকৃতি পেলো না বামপন্থী রাজনীতিতে। নয়ের দশক থেকে কৃষক সংগঠনের গুরুত্ব কমে এলো বামপন্থী রাজনীতির সামগ্রিক পরিসরে। অন্য রাজ্যে কৃষক সংগঠনের নেতৃত্বে ছাত্রযুব সংগঠকদের নিয়ে আসার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বের স্তরে তারুণ্যের অভিষেক ঘটানো হয় নি। নয়ের দশকের শেষ থেকেই গ্রামীণ সমাজের দরিদ্রতর অংশের সাথে কৃষক সভার সংযোগ দুর্বল অথবা যান্ত্রিক হয়ে গেল। গ্রামাঞ্চলের রাজনৈতিক সংগঠন হয়ে পড়ল কার্যত সরকারি ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।

২০১৯ সালের নির্বাচনে উদ্বাস্তু সমাজের মধ্যে প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে বিজেপি। কেন এমন হল? মূলত নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে পূর্ব ইউরোপ ও সোভিয়েতের ভাঙনের পর যখন বিশ্বব্যাপী নয়া উদারবাদী অর্থনীতির হাত ধরে পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন সারা পৃথিবী জুড়ে প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে, সমস্যাটা তখন থেকেই। সারা পৃথিবী জুড়েই বামপন্থীরা প্রথম অবস্থায় মতাদর্শগত দিক থেকে খানিকটা দিশেহারাই হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র সংশোধনবাদী বিচ্যুতি কিংবা বামপন্থী হঠকারিতার যুক্তি দিয়ে সোভিয়েত থেকে পূর্ব ইউরোপ, যুগোশ্লাভিয়া থেকে আলবেনিয়ার কার্যতবিনা বাধায় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়াকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। এমন একটি পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বুর্জোয়া সংবিধানের আওতায় একটি অঙ্গরাজ্যের কমিউনিস্ট পার্টির সরকার কোন পথে এগোবে, এ নিয়ে কোনো নতুন ভাবনাও প্রত্যক্ষ হচ্ছিল না।বিশ্বায়নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বামপন্থীদের পথ কী হবে? বিশ্বায়নের সাথে বোঝাপড়ার, নাকি কোনো সম্ভাব্য বিকল্পের সন্ধানের? কেরলের বামপন্থীরা ইএমএস-এর উদ্যোগে ‘কংগ্রেস ফর কেরালা স্টাডিজ’ আয়োজনের মাধ্যমে দেশবিদেশের গবেষক, বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের এক বিশাল সম্মেলনে বিকল্প পথের সন্ধান শুরু করেন। কেরালা স্টাডিজ নামে এক নতুন বিদ্যাচর্চার ভুবন উন্মোচিত হল যার মাধ্যমে কেরলের বামপন্থীরা নয়া উদারবাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আবহে একটি বিকল্পের পথে হাঁটতে শুরু করে।দেশভাগ-উত্তর পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সমস্যা, কৃষি সমস্যা, দার্জিলিং পাহাড় ও উত্তরবঙ্গের পরিচিতি সত্তার সমস্যা, পশ্চিমাঞ্চলের অনগ্রসরতা ও আদিবাসী সমস্যা, পিছিয়ে পড়া সমাজের বঞ্চনার আর্তি, শিল্পায়নের সমস্যা, নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সমস্যা - এ ধরনের বহুধাবিস্তৃত প্রত্যাহ্বানগুলিকে মোকাবিলা করার জন্যে গবেষক, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক কর্মীদের সমন্বয়ে কোনো গভীর চর্চার পথে হাঁটে নি বামপন্থীরা। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আমলাতন্ত্র নির্ভর সরকার পরিচালনার ধারা পরিবর্তিত সময়ের প্রত্যাহ্বনকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হল। সরকার, প্রশাসন ও দলীয় স্তরে গণতান্ত্রিক পরিসরের প্রসার না ঘটানোর ফলে স্থানে স্থানে অগণতন্ত্র ও দলবাজির সংস্কৃতি গ্রাস করে বসল।

একটি প্রাণবান বামপন্থী আন্দোলন কেন এমন অবস্থায় এসে পৌঁছয়? এর কারণ শুধু স্থানিক নয় বা কৌশলগত বিষয় নয়, এটা মূলত তাত্ত্বিক সমস্যাও। অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্তের মত মার্ক্সবাদী পণ্ডিতদের অভিমত, মার্ক্সবাদের তাত্ত্বিক ভুবনে ক্ষমতা দখলের পন্থা নিয়ে যত চর্চা হয়েছে, সেই তুলনায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর জনসাধারণের ব্যাপক অংশের সাথে জীবন্ত যোগসূত্র অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে শাসন পরিচালিত হবেএই বিষয়ে চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই দেখা যায় পৃথিবীর দিকে দিকে একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি, ক্ষমতায় আসার পর জনসাধারণের সাথে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার বিপর্যয় তাত্ত্বিক দিক থেকে একসূত্রে গ্রথিত।সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পূর্ব ইউরোপের পতন নিয়ে সিপিআইএম দলীয় পর্যায়ে গভীর পর্যালোচনামূলক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিল।অথচ নিজেদের ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ ঘটল না। সোভিয়েত ধারার রাজনীতির অন্তর্নিহিত দুর্বলতাকে বুঝতে পেরে আটের দশক থেকেই কিউবা ভিন্নতর পথের সন্ধান করলেও বা একবিংশ শতক থেকে লাতিন আমেরিকার বামপন্থীরা সোভিয়েত ধারার বাইরে বিকল্প পথে বামপন্থার পুনর্নিমাণের পথে হাঁটলেও পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতেবামপন্থী রাজনীতিতে সোভিয়েত ধারাকেই এখনওপ্রশ্নহীন আনুগত্যে গ্রহণ করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক নীতিমালায় এখনও সেই সোভিয়েতের পন্থারই অনুসরণ। একবিংশ শতকে এসে বামপন্থী রাজনীতি শুধু অর্থনীতি সর্বস্বতার পথে বা শ্রেণি রাজনীতি সর্বস্বতার পথে হাঁটলে চলবে না, তাকে নানা ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রশ্নকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া অংশের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পরিচিতি সত্তার রাজনীতির সাথে শ্রেণি রাজনীতির মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। শুধুমাত্র পার্টিজানদের অভ্যন্তরীণ আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মত পথের নির্মাণ না করে সমান্তরাল সংযোগের পরিবর্তিত পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের সাথেরক্তমাংসের সম্পর্কে আবদ্ধ বুদ্ধিজীবী সমাজের সাথে পাবলিক কনসালটেশন বা গণপরামর্শের মধ্য দিয়ে চিন্তাচর্চার প্রতি মুহূর্তে নবীকরণ প্রয়োজন। উপর থেকে নীচে কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব বিকেন্দ্রীকৃত করে সংশ্লিষ্ট সকল অংশের কন্ঠস্বরকে শ্রুতিগ্রাহ্য করতে হবে। তাত্ত্বিক এই পুনরুজ্জীবন ব্যতীত বামপন্থার ভবিষ্যৎ অপেক্ষমান থেকে যাবে।

এই তাত্ত্বিক বিষয়গুলির নিষ্পত্তি ছাড়া শুধু জোট নির্মাণ আর রণনীতি, রণকৌশলের চর্চার মাধ্যমে নির্বাচনী বিপর্যয়কে বোঝা সম্ভব নয়। এই বিপর্যয় একান্তভাবে নির্বাচনী নয়, এর মধ্যে একটি রাজনৈতিক বিপর্যয়েরও ইঙ্গিত রয়েছে। এবারের নির্বাচনে বরং অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে অনেক বিষয়েই। কংগ্রেস ও আইএসএফ-এর সাথে জোটকে শুধু দলীয় বোঝাপড়া হিসেবে না দেখে এর বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্যের দিকটি বিবেচনায় আনতে হবে। যে রাজনৈতিক ও সামাজিক মিত্রশক্তির সাথে মৈত্রীবন্ধনের মাধ্যমে বামপন্থীদের নতুন করে দাঁড়াতে হবে, এবারের জোটে সেই লক্ষ্যেই একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৫ বা ২০১৮ সালের ভারত এবং ২০২১ এর ভারত এক নয়। এই মুহূর্তে হিন্দুত্বের শক্তি ভারতের অবশিষ্ট গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিটি প্রতীককে নিশ্চিহ্ন করার মধ্য দিয়ে একটি পরিপূর্ণ ফ্যাসীবাদ কায়েম করতে উদ্যত হয়েছে। ২০১৫ কিংবা ২০১৮ সালের পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত প্রস্তাবে উগ্র দক্ষিণপন্থার পাশাপাশি নয়া উদারবাদের প্রশ্নে বিভিন্ন দলের অবস্থানকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেরাজনৈতিক জোট নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। এই মুহূর্তে হিন্দুত্বের রাজনীতি এবং নয়া উদারবাদ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। দিল্লি সীমান্তের কৃষক জমায়েত থেকে বিরোধী দলগুলির রাজনীতিতে একই সাথে হিন্দুত্ব ও নয়া উদারবাদ বিরোধিতা বেশি বেশি করে সমভাবে উঠে আসছে। অতিমারী ও লকডাউন এর ভারতে এটা স্পষ্টতর হয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৮-র রাজনৈতিক মূল্যায়নে আটকে থাকলে চলবে না। অসাম্প্রদায়িক সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাম্প্রদায়িক ধার্মিকতা কখনো শত্রু হতে পারে না। আইএসএফ এর মধ্যে রয়েছে সমাজের সমস্ত পিছিয়ে পড়া সামাজিক অংশকে সংগঠিত করবার আবেগ। আইএসএফ প্রধান যে ধর্মীয় উপধারার সাথে যুক্ত তারা মূলগতভাবে অভিজাত শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতাধন্য সুবিধাবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরীত ধারা। সমাজের দরিদ্র অংশই মূলত তার অনুগামী। ব্রাহ্মণ্যবাদের সাথে মতুয়া ধর্মের যে সম্পর্ক, ওয়াহাবি মুসলিম ভাবধারার সাথে আব্বাসীর ধারারও একইসম্পর্ক।এই জোটের মধ্যে রয়েছে আগামীর বামপন্থার ইঙ্গিত। একটি নির্বাচনের ফলাফল দেখে জোট ভেঙে ফেলাটা আত্মঘাতী হবে। প্রার্থী নির্বাচনে তারুণ্যের অভিষেক, রাজনৈতিক প্রচারে নতুন ভাষা ও সামগ্রিক ভাবে নির্বাচনী রাজনীতিতে এক সাহসী পদক্ষেপেরই ইঙ্গিত রয়েছে। এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক স্তরেও নিয়ে আসতে হবে।শুধুমাত্র নির্বাচনী রাজনীতিতে বদল ঘটিয়ে বামপন্থার পুনর্নির্মাণ সম্ভব নয়। বামপন্থীদের ফলাফল যাইহোক, বামপন্থার একটি পুনর্নির্মাণের সম্ভাবনা কিন্তু ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ২০১১ সালে বামপন্থীদের সম্পর্কে জনমানসে যে প্রত্যাখানের মনোভাব ছিল, তা এই মুহূর্তে নেই। অতিমারী, আমফান, লকডাউনের সময়ে বামপন্থীদের ভূমিকায় সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট। ২রা মে নির্বাচনী বিপর্যয়ের দিনেও তরুণ রেড ভলান্টিয়াররা যে ভাবে সমস্যা পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তা অভাবনীয়।২০১১ সালের নির্বাচনী ফলাফলের দিনটিতে বামপন্থী কর্মীদেরকে সারারাজ্য জুড়ে এই ভূমিকায় দেখতে পাওয়ার কথা কি কল্পনাও করা যেতো। আক্রান্ত হয়েও রেড ভলান্টিয়ার্সরা মানুষের পাশ থেকে সরে আসেন নি। নির্বাচনী ফলাফলের দিন রেড ভলান্টিয়ার্সের সংখ্যা ছিল ২,০০০। এখন সেটা ১,০০,০০০ অতিক্রম করে গেছে। এর কোনো রাজনৈতিক তাৎপর্য নেই ভাবলে ভুল হবে। এই প্রাণশক্তিই বামপন্থার পুনর্নির্মাণের প্রধান ভিত্তি। আগামী বছর সিপিআইএম-এর পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, তাত্ত্বিক আত্মমন্থনের এটাই প্রকৃষ্ট সময়। চিন্তায় ও কাজে তারুণ্যের অভিষেকের এটাই সময়।দেশ আন্দোলনমুখর হয়ে উঠছে।জোটের যোগ বিয়োগের কারাগারে বন্দী না থেকে বৃহত্তর সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও তাত্ত্বিক নবায়নে মনোনিবেশ করুক বামপন্থী আন্দোলন।বৃহত্তর বামপন্থী জনসাধারণকেও যুক্ত করে নিক এই প্রক্রিয়ায়।