আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ ঊনবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ● ১-১৫ পৌষ, ১৪২৭

প্রবন্ধ

অন্নদাতাকে রক্ষা করার লড়াই

হান্নান মোল্লা


গত ছ-মাস ধরে কৃষকরা দেশ জুড়েই তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা বলে চলেছেন। সরকারের তরফে যখন অধ্যাদেশ জারি করা হল, তখন কিন্তু কৃষকদের মতামত চাওয়াই হয়নি। গত ছ-মাসের ঘটনা পরম্পরাতেই আজকের কৃষক আন্দোলন তার ভরবেগ সঞ্চয় করেছে। কৃষকেরা যখন বুঝলেন যে সরকার তাঁদের কথায় আদৌ আমল দেবে না, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তখন আর কী-ই বা করা যায়। আমরা প্রথম থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই কৃষকেরা সিদ্ধান্ত নিলেন দেশের রাজধানীতে গিয়ে সরকারের সামনে তাঁদের সংকটের কথা তুলে ধরবেন। কারণ সরকার প্রথম থেকেই নতুন কৃষি আইনকে সর্বরোগহর মহৌষধি বলে চালাতে চাইছে। অথচ কৃষকেরা কখনোই এমন আইন চায়নি, কোনো কৃষক সংগঠনও কস্মিনকালে এমন দাবি জানায়নি।

আমরা নতুন কৃষি আইনকে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে চাই। আইনে যদি অল্পবিস্তর গলদ থাকত তাহলে হয়তো সংশোধনী এনে তা ঠিক করা যেত, কিন্তু এই আইন মূলগত ভাবে কৃষকস্বার্থবিরোধী। তাই কৃষকদের মূল বক্তব্য হল এতে প্রসাধনিক বদল এনে কোনো লাভ নেই।

সরকার প্রথম থেকেই গোটা ব্যাপারটাকে পাঞ্জাবের কৃষকদের বিক্ষোভ বলে চালাতে চাইছে, আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিডিয়াও সরকারের প্রচেষ্টায় ইন্ধন দিচ্ছে। আগস্টের ৯ তারিখ এই আইনের বিরুদ্ধে আমাদের জেল ভরো কর্মসূচি ছিল। সেদিন দেশের ২৫টি রাজ্যের ৬০০ জেলায় প্রায় এক কোটি কৃষক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাহলে কী করে বলা যায় এই আন্দোলন শুধুমাত্র পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের বিক্ষোভ! পাঞ্জাব অবশ্যই এই আন্দোলনের সামনের সারিতে আছে, কিন্তু পাঞ্জাবের কৃষকের আন্দোলন আসলে সর্বভারতীয় আন্দোলনেরই অংশ।

আর একটা ভুল ধারণাও আছে যে, এই কৃষকেরা অত্যন্ত শক্তিশালী, তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা আছে। আসলে কিন্তু তা নয়। অন্যদিকে সরকারও কিছু ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে এই আইন প্রণয়ন করেছে। কৃষকদের প্রয়োজন ছিল নির্দিষ্ট কিছু সুরক্ষার, যার সংস্থান এই নতুন আইনে নেই। দেশের ৮৬ শতাংশ কৃষকই ক্ষুদ্র-চাষি, যাদের হাতে গড়ে দু-একরের চেয়েও কম জমি আছে। এই সব অসহায় মানুষগুলো আদানি-আম্বানিদের আক্রমণের সামনে কীভাবে টিকে থাকবে! কৃষকেরা উৎপাদক। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দয়া করে তাদের উৎপাদকই থাকতে দিন। জোর করে তাদের ব্যাবসাদার বানাবেন না। এই অতিমারির পরিস্থিতিতে যখন কৃষি ছাড়া বাকি সমস্ত উৎপাদন ক্ষেত্র ভেঙে পড়েছে, কৃষকসমাজ টিকে আছে কোনো রকম সরকারি সাহায্য বা আর্থিক প্যাকেজ ছাড়াই। সরকারের উচিত কৃষককে বাঁচতে সাহায্য করা, তাদের ধ্বংস করা নয়। কেন সবসময় কৃষকের পেটেই লাথি মারা হবে? আপনি সব দাবি ছাড়তে পারেন, কিন্তু যদি দু-বেলা দু-মুঠো খাবার না-জোটে তাহলে বাঁচবেন কী করে?

আজকাল চাষবাস করা মানে লোকসান ঘরে টেনে আনা, তা সত্ত্বেও কৃষকসমাজ ওই কাজ এড়াতে পারে না, কেননা কৃষি তাদের জীবনযাপনের অঙ্গ। কেন আপনারা তাদের খুচরো ব্যাবসায়ী বানাতে চাইছেন, তাদের উৎপাদক হয়েই থাকতে দিন। দেশে চার লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। কেন কোনো কর্পোরেট-ধন্য সাংবাদিক বা বুদ্ধিজীবী একবারের জন্যও সে কথা তোলেন না? কৃষকেরা ন্যূনতম কিছু সুরক্ষা চায়। সরকারের দায়িত্ব সমাজের দুর্বল অংশের নাগরিককে সুরক্ষিত করা। কিন্তু ভারত আজকাল আর জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নয়। আমরা এখন নব্য-উদারতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছি। জনকল্যাণ ক্রমশ পিছু হঠছে। আমরা তাই জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ চাইছি, এছাড়া আমাদের বাঁচার রাস্তা নেই। কতজন ব্যাবসায়ী বা শিল্পপতির আত্মহত্যার খবর আপনারা পান? যদি তাঁরা আত্মহত্যা করেনও তাহলে তার কারণ কী ? হতে পারে হয়তো অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাগত কোনো জটিল কারণে। কিন্তু কৃষকের ভাগ্য সম্পূর্ণত নির্ভর করে প্রকৃতির ওপর। তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে না কোনো ক্ষতিপূরণ। রাষ্ট্র হিসেবে নিশ্চয় আমাদেরঅন্নদাতা-দের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।

ইদানীং কৃষকের সন্তান-সন্ততিরা আর চাষবাস করতে চায় না, কারণ তারা তাদের বাপ-ঠাকুরদার হাল তো দেখেছে। চাষাবাদ ক্রমশই লোকসানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত ? যদি সরকার এই অবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে তাহলে নতুন প্রজন্মও কৃষিতে আগ্রহী হবে। কিন্তু সরকারের এতে কোনো গা নেই। তারা চুক্তি-চাষ ছাড়া আর কোনো কিছুই যেন বোঝে না। গোটা দেশেই চুক্তি-চাষের রমরমা এখন। কিন্তু খানিকটা তো নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। এই নতুন আইনের বলে চুক্তি-চাষ একেবারে বলগাহীন হয়ে উঠবে। আর স্বাভাবিক ভাবেই যে-কোনো চুক্তিতে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অংশীদার গোটা প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করবে। ফসল কেনা, দাদন দেওয়া বা চাষের ব্যাপারে মতামত দিতে দিতে আপনার কি মনে হয় না একসময় ভূমির ওপর কেবল ধনী মানুষের অধিকারই বলবৎ হবে?

কোনো সরকারই পুরোপুরি কৃষকস্বার্থের কথা মাথায় রেখে আইন প্রণয়ন করে না। একজন কৃষককে মাঠে আঠারো ঘণ্টা খাটতে হয়। শীতেই হোক বা বর্ষায়, পরিবারের সবাই উদয়াস্ত খাটে কিন্তু তার পরিবর্তে তাদের ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে। সরকারকে তো কিছুটা দায়ভার পালন করতেই হবে। কিন্তু তারা সে-কথায় কর্ণপাত করতেই রাজি নয়। আমরা ঋণখেলাপিদের পিছনে ৬-৭ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করছি, যারা দেশটাকে লুটছে, ব্যাঙ্ক ও সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাহলে সরকারি কোষাগারের খানিকটা অংশ কেন কৃষকের বেঁচে থাকার জন্য ব্যয় করা হবে না? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যিটা হল এই যে, কৃষকেরা সমাজের নীচু তলার মানুষ হওয়ায় তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে কারুর কোনো হেলদোল নেই। একটা সময় ছিল যখন মধ্যবিত্ত মানুষ গরিবের অধিকার রক্ষার লড়াইতে পাশে থাকতেন। কিন্তু এখনকার এই নব্য-উদারপন্থী যুগে আমরা সবসময় চেষ্টা চালাচ্ছি মুষ্টিমেয় অংশের মানুষের উন্নতি, তাতে যত বড়ো অংশের মানুষেরই সর্বনাশই হোক না কেন, তা নিয়ে কেউ ভাবতে রাজি নয়। গরিবকে চিরকাল অশিক্ষার অন্ধকারে রাখা হয়েছে যাতে তাকে আরও বেশি করে শোষণ করা যায়। তাদের চেতনার মান উন্নত করার কথা কখনো ভাবিনি আমরা। তাদেরও নিজেদের হক বুঝে নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে তারা যখনই নিজেদের হক বুঝে নিতে চায় তখনই আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। আমাদের দেশের সরকার একটা ঐক্যমত্যের কথা বলতে চাইছে, কিন্তু এই ঐক্যমত্য ব্যাপারটা আদতে কী? এটা কোনো গণতান্ত্রিক ঐক্যমত্য, না কি ফাসিস্ত ঐক্যমত্য। গণতান্ত্রিক ঐক্যমত্য মানে সব পক্ষের কথা ধৈর্য ধরে শোনা, সবার মতামত ও স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তবেই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। আর ঐক্যমত্য বলতে যদি বোঝানো হয়, ‘আমি যেটা বললাম, তোমাদের সেটাই মানতে হবে’, তাহলে তাকে ফাসিস্ত ঐক্যমত্য ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সরকারকে কৃষকের কাছে আসতে হবে, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে, তাদের সমস্যার কথা শুনতে হবে, বোঝার চেষ্টা করতে হবে কীভাবে খানিকটা সরকারি সহায়তা আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেইসব সমস্যার নিরসন করা যায়। সংস্কার মানে এই নয় যে সব বোঝা একতরফা কৃষকের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হবে আর লাভের গুড় খেয়ে চলে যাবে ব্যাবসাদাররা।

আমরা অবশ্য এই সরকারের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করি না। এদের মনোভাব আদৌ কৃষকস্বার্থের অনুকূল নয়। আমি নিজে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে মিটিংয়েও বলেছি, ‘প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন এই তিনটি আইন না কি অসাধারণ, দেশে কৃষির প্রভূত উন্নতি ঘটাবে, তা আপনি আর আলোচনা করে কী করবেন! আপনার তো কোনো ক্ষমতাই নেই’। আসলে সরকার এখন সময় নষ্ট করতে চাইছে। লাখো মানুষ এই শীতের মধ্যে রাস্তায় বসে আছে, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন কৃষকের মৃত্যুও হয়েছে। গোটা সমস্যার মানবিক সমাধানের চেষ্টা না করে সরকার কথার খেলায় সময় নষ্ট করে কৃষকদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, যাতে তারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারে।

যে-কোনো দায়িত্বশীল সরকারই কৃষককে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ করে, কৃষক ও ছোটো ব্যাবসায়ীর মধ্যে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সরকারকে তো দেশের এই মুহূর্তের অবস্থাটা অনুধাবন করতে হবে, জোর করে থামাতে চাইলেই তো সব কিছু থেমে যাবে না। যে-কোনো নীতি প্রণয়ন করতে গেলে তাকে ভারতের বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই ভাবতে হবে। কৃষক ও ব্যাবসায়ীদের মধ্যে সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু সংস্কার দরকার। সরকারকে এটা ভাবতেই হবে। সরকার যদি কৃষকের কথা মাথায় রেখে কোনো নীতি প্রণয়ন করে, তাহলে সেই নীতি একরকম হবে, কিন্তু যদি সরকার কেবলই কৃষিপণ্যের উৎপাদন, লাভ, রফতানি, আমদানির কথা ভাবে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই নীতির রূপরেখা অন্যরকম হবে। বিগত কয়েকটি সরকার ধারাবাহিকভাবেই কৃষিনীতি প্রণয়ন করে চলেছে কৃষিপণ্যের উৎপাদন, লাভ, রফতানি আর আমদানির কথা মাথায় রেখে। তাই আমাদের দাবি হল কৃষকের স্বার্থকে স্থাপন করতে হবে কৃষিনীতির কেন্দ্রে এবং সমাজের ক্ষুদ্র অংশের মুনাফার জন্য বৃহত্তর মানুষের ওপর শোষণ বন্ধ করতে হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা দরকার পশ্চিমবঙ্গেও কিন্তু কৃষকেরা খুব স্বস্তিতে নেই। তৃণমূল সরকারের আমলে ২১৯জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আমরা এখানেও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ ও আন্দোলনমুখী করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছি। যে-কোনো আন্দোলনেই উত্থান পতন থাকে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরাও সারা ভারতের কৃষকদের মতোই একই রকম সমস্যার মুখোমুখি - জমির সমস্যা, উৎপাদন ব্যয় ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে আমাদের কিছু সমস্যা ছিল। মানুষ যেন ভুলেই গিয়েছিল যে তারা আসলে কৃষক। তারা হঠাৎ করেই হিন্দু-মুসলমানে বিভাজিত হয়ে যাচ্ছিল। আমরা ধীরে ধীরে বোঝাতে শুরু করলাম, তোমরা হিন্দুই হও বা মুসলমান, আসলে তো কৃষক। এখন যদি সেকথা ভুলে হিন্দু-মুসলমানে বিভাজন শুরু হয় তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তিরই হাত শক্ত করা হবে। শুরুর দিকে কৃষকরা বিপথগামী হয়ে সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়েছেন, ভারতের অন্য প্রান্তেও একই ব্যাপার ঘটেছে। কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতি বদলেছে, তাঁরা ফের সংগ্রামের রাস্তায় ফিরছেন। বাংলার কৃষকরাও অনুধাবন করেছেন লড়তে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়েই লড়তে হবে, আর কোনো পথ নেই।

আগে যখন বাম গণতান্ত্রিক দলগুলির সামনে সুযোগ ছিল তখন তারা সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেনি। তাদের অনেক দুর্বলতা ছিল। তখন শুধুই ভাবা হত যতটুকু অর্জন করা গেছে সেটাকে অটুট রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া জরুরি। এখন আমরা মনে করি গোটা বিষয়টা নতুন করে অনুধাবন করা জরুরি, আমাদের দুর্বলতাগুলি খুঁজে নিয়ে তার সংশোধন করা প্রয়োজন। আমাদের আরও বাস্তববাদী ও নৈর্ব্যক্তিক চিন্তার অধিকারী হতে হবে। এই ধরনের চিন্তাই ইদানীং বাম ও প্রগতিশীল গোষ্ঠীর চিন্তার নির্যাস।

আজকের কৃষক বিদ্রোহের প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নিরাপত্তার কথা তোলাটা একবারেই প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া। কৃষকেরা যখন প্রথম রাজধানী অভিমুখে যাত্রা শুরু করে তখনই সরকার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। হরিয়ানাকে ঘিরে ফেলা হয়, ঘোষণা করা হয় দিল্লির সীমান্ত সিল করে দেওয়া হবে। স্বাধীনতার পর কখনো শুনেছেন একটা রাজ্য অন্য রাজ্যের সীমানা সিল করে দিচ্ছে। খালিস্তানি আন্দোলনের সময়েও পাঞ্জাবের সীমানা সিল করা হয়নি। এই শীতে সরকার একদিকে সীমান্ত সিল করে দিচ্ছে, অন্য দিকে কৃষকের ওপর জলকামান চালাচ্ছে। কেউ সমস্যাটার মূলে যেতে চাইছে না। সবাই পরামর্শ বিলিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের কথাগুলো শোনার মানসিকতা নেই কারুর। তাই প্রতিবাদ ভিন্ন এখন আর কোনো পথ খোলা নেই।

কৃষকেরা এখন প্রত্যক্ষভাবে সংকটের মুখোমুখি। তাঁদের স্বার্থ একেবারে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। নইলে এই শীতে, আবার এখন ফসল বোনারও সময়, কেউ এভাবে প্রতিবাদে অংশ নিতে আসে? সরকার এই অতিমারির মধ্যে আমাদের ধ্বংস করার ব্যবস্থা করেছে। গোটা দেশেই এই কালাকানুন কৃষি ও কৃষককের সর্বনাশই করবে, মৃত্যুর সামনে হাঁটু মুড়ে বসতে বাধ্য করবে। আজ সমাজের এক অংশ আক্রান্ত হয়েছে আগামীকাল অন্য অংশের ওপর আক্রমণ নামবে। ধীরে ধীরে গোটা দেশটাকেই ওরা শেষ করে দেবে। এই আইন তো শুধু পাঞ্জাব, হরিয়ানা বা মহারাষ্ট্রের জন্য নয়, গোটা ভারতেই লাগু হবে। আমি আগেই বলেছি সরকার আর মিডিয়া কীভাবে এটাকে পাঞ্জাবের আন্দোলন বলে দেগে দিতে চাইছে। আমাদের আন্দোলন গোটা দেশ জুড়েই চলছে, তার তীব্রতার কম বেশি থাকতে পারে কিন্তু এর ব্যাপ্তি গোটা দেশ জুড়েই।


______________________________
৭ ডিসেম্বর ২০২০ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকার অবলম্বনে নিবন্ধ নির্মাণঃ ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত