আরেক রকম ● অষ্টম বর্ষ ঊনবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ● ১-১৫ পৌষ, ১৪২৭

প্রবন্ধ

জাদু, বাস্তবতা ও দিয়েগো মারাদোনা

ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়


‘‘God is only being who in order to reign doesn’t need to exist’’.

সার্বিয়ান পরিচালক এমির কুস্তুরিকার ডকুমেন্টারি ফিল্ম ‘ম্যারাডোনা বাই কুস্তুরিকা’ শুরু হয় চার্লস বুডলেয়ার-এর এই উদ্ধৃতি দিয়ে।

গত ২৫ নভেম্বর দিয়েগো মারাদোনার মৃত্যুর পর ফুটবল জগৎ যেভাবে তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে, তাতে চার্লস বুডলেয়ার-এর উদ্ধৃতিটি দিয়েগোর জন্য সত্যি সুপ্রযোজ্য মনে হয়। আর্জেন্টিনায় তিন দিন জাতীয় শোক পালন হয়। লিওনেল মেসি ওসাসুনারর বিরুদ্ধে প্রায় পুরো খেলাটাই বার্সেলোনা ক্লাব এর জার্সির নিচে দিয়েগোর নিউয়েল’স ওল্ড বয়স ক্লাব এর জার্সি পড়ে খেলে দিলো, খেলার চতুর্থ গোলটি দেয়ার পর বার্সার জার্সিটা খুলে দিয়েগোকে স্মরণ করল লিও আকাশের দিকে তাকিয়ে। কার্লোস তেভেজ ঠিক একইভাবে দিয়েগোর ১৯৮১ সালের বোকা জুনিয়র্স-এর জার্সি দেখিয়ে দিয়েগোকে শ্রদ্ধা জানালো। একাধিক প্রজন্মের ফুটবল প্লেয়াররা, পৃথিবীর নানান ফুটবল সংস্থা সবাই মর্মাহত দিয়েগোর প্রয়াণে। নাপোলি ফুটবল ক্লাব তাদের ফুটবল স্টেডিয়াম স্তাদিও সান পাওলোর নাম পাল্টে স্তাদিও দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা রেখে দিল।

আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স ক্লাব-এর স্টেডিয়াম এর নাম অবশ্য আগে থেকেই স্তাদিও দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। বুয়েনোস এইরেস শহরের এই ক্লাবে দিয়েগোর ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু, ১১ বছর বয়েসে। ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর ক্লাবের সিনিয়র দলের হয়ে দিয়েগো প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে যেদিন সেদিন তার বয়েস ১৬ বছর হতে ১০ দিন বাকি, সেই ম্যাচেই জুয়ান ডোমিঙ্গ কাবরেরাকে যেভাবে নাটমেগ করেছিল দিয়েগো তা পরবর্তীকালে কিংবদন্তি হয়ে যায়। দিয়েগোর আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স-এর পাঁচ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাবের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে। অনেকের মতে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স-এর দিয়েগোকে না দেখলে দিয়েগো অনেকটাই অধরা থেকে যায়। আমরা একটা ভিডিও ফুটেজ অনেকবার দেখেছি যেখানে ছোট্ট দিয়েগো বলছে, “আমার জীবনের সব থেকে বড় স্বপ্ন বিশ্বকাপে খেলা, এবং দ্বিতীয় হল সেটা জেতা।” আমরা ভাবি ছোট থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল বলেই হয়তো ১৯৮৬-তে আমার দিয়েগো ম্যাজিক দেখতে পেয়েছিলাম। দিয়েগো কিন্তু আসলে বিশ্বকাপের কথা বলেই নি ওই সময়। স্বপ্ন বলতে যা ছিল সেই সময়ে দিয়েগোর, সেটা হলো আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স-এর হয়ে মাইনর লীগ জেতা। ভিডিও ফুটেজটা ৭০ দশকের গোড়ার দিকের, তখন বিশ্বকাপ কি তাই নিয়েই বিশেষ ধারণা ছিল না দিয়েগোর কিন্তু ফুটবল খেলার এবং জেতার একটা অদম্য ইচ্ছে সেই সময়েই প্রকাশ পায়।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে ছিল। কিন্তু একজন আর্জেন্টাইন-এর জাতীয় পরিচয় কী হবে সেটা নিয়ে একটা সংশয় ছিল। ১৯২০-র দশকে এই নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়। এল গ্রাফিকো পত্রিকার সম্পাদক বোরোকোটো ১৯২৮ সালে লিখেছিলেন, যদি একজন আদর্শ আর্জেন্টাইনের আত্মার মূর্তি স্থাপন করা হয় তার চিত্রায়ন হবে এরকম - ‘‘a pibe [urchin] with a dirty face, a mane of hair rebelling against the comb; with intelligent, roving, trickster and persuasive eyes and a sparkling gaze that seem to hint at a picaresque laugh that does not quite manage to form on his mouth, full of small teeth that might be worn down through eating yesterday’s bread.’’

‘‘His trousers are a few roughly sewn patches; his vest with Argentinian stripes, with a very low neck and with many holes eaten out by the invisible mice of use … His knees covered with the scabs of wounds disinfected by fate; barefoot or with shoes whose holes in the toes suggest they have been made through too much shooting. His stance must be characteristic; it must seem as if he is dribbling with a rag ball.’’

১৯৬০ সালে জন্ম হয় দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার কিন্তু বোরোকোটো যেন তার বর্ণনাই করেছিল ৩২ বছর আগে। দিয়েগোর জীবন আর্জেন্টিনার অন্তরাত্মার প্রতিমূর্তি।

আর্জেন্টিনা-র সব থেকে বড়ো দুই ফুটবল ক্লাব বুয়েনোস এইরেস শহরের বোকা জুনিয়র্স এবং রিভার প্লেট। দুই ক্লাবই দিয়েগোকে সই করাতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স থেকে। কিন্তু দিয়েগোর ইচ্ছে ছিল বোকা জুনিয়র্স-এর হয়ে খেলার, তার ইচ্ছেপূরণ হয় ১৯৮১ তে এবং আর্জেন্টিনায় দিয়েগোর প্রথম এবং একমাত্র লীগ খেতাব বোকা জুনিয়র্স এর হয়েই ১৯৮১-৮২ সালে।

এরপর ইউরোপ পাড়ি দেওয়া এবং দুবার রেকর্ড ট্রান্সফার বার্সেলোনা এবং নাপোলিতে। বয়স কম বলে ১৯৭৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে দিয়েগোকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত যিনি নিয়েছিলেন সেই সেজার লুইস মেনোত্তির তত্ত্বাবধানেই দিয়েগো ১৯৭৯ তে যুব বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করে এবং তার হাত ধরেই বার্সেলোনা ক্লাবে যাওয়া ১৯৮২ তে।

দক্ষিণ ইতালির পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত নেপলস দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হলেও রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক এবং ফুটবলের ক্ষমতা মূলত রোম, মিলান আর তুরিন শহর কেন্দ্রিক। নেপলস-এর বাসিন্দাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবেই দেখে আসতে অভ্যস্ত ছিল উত্তর এবং কেন্দ্রীয় ইতালির লোকজন। দিয়েগো শুধু ফুটবল মাঠেই না, নেপোলিটানদের জীবনযাপনে একটা বিশাল প্রভাব এনেছিল। যে নাপোলি ফুটবল ক্লাব কোনোদিন সেরি-এ (ইতালির সর্বোচ্চ ফুটবল লীগ) জেতার কথা ভাবতেও পারে নি, দিয়েগোর নাপোলি ১৯৮৬-৮৭ এবং ১৯৮৯-৯০ এ দু বার লীগ শিরোপা স্কুডেটো জেতে। নেপোলিটানদের কাছে দিয়েগো সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং হয়তো কিছুটা ধার্মিক আইকন।

।। ২ ।।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের স্মৃতি বলতে বেশ আবছা হলেও ১৯৮২-র স্পেন বিশ্বকাপ। এই লেখা যখন লিখছি তখন সেই বিশ্বকাপের নায়ক পাওলো রোসির মৃত্যু সংবাদে মন বেশ ভারাক্রান্ত। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রোসির হ্যাটট্রিক ছাড়াও যেটা মনে আছে সেটা ওই আর্জেন্টিনা - ব্রাজিল ম্যাচে দিয়েগোর লাল কার্ড দেখার দৃশ্যটা।

১৯৮৬-র বিশ্বকাপের স্মৃতি অনেক বেশি স্পষ্ট। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বাড়িতে আলোচনা চলতো জোড় কদমে। যৌথ পরিবাবের সব থেকে ছোট সদস্য আমি, আমার ভূমিকা মূলত শ্রোতার ছিল। বাড়ির প্রায় সকলেই ব্রাজিলের সমর্থক, শুধু এক কাকা প্লাতিনির ফ্রান্সকে সমর্থন করবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল। তখন আমার আবার সেই দিয়েগোর লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা মনে পড়ে। বড়দের কথার মাঝে একদিন ঘোষণা করে দিলাম যে আমি আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করব। সেই বিশ্বকাপের গল্প কারোরই অজানা না কিন্তু আশ্চর্য ভাবে যেটা ঘটলো সেটা হল বিশ্বকাপ শেষে প্রায় পুরো কলকাতা শহর দিয়েগোর ফ্যান হয়ে গেল। আজ ৩৪ বছর হয়ে গেছে সেই বিশ্বকাপের। কলকাতার দিয়েগো প্রীতি বেড়েছে বই কমে নি। আজ লিওনেল মেসির জন্য হয়তো সারা পৃথিবীর মতো কলকাতাতেও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থক হয়েছে অনেকে, কিন্তু আর্জেন্টিনা ফুটবলকে বিশ্ব মানচিত্রে প্রথম নিয়ে আসেন দিয়েগো মারাদোনা। দিয়েগো কলকাতা শহরের আবেগ এবং উন্মাদনার মধ্যমণি ছিল, আছে আর থাকবেও। শহরে দিয়েগো এলে রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে তাকে একবার চাক্ষুস দেখতে। ২৬শ নভেম্বর বাংলা খবরের কাগজের সামনের পাতা জুড়ে তাই ছিল দিয়েগো।

২০১৩ সালে কর্মূসূত্রে আমাকে বুয়েনোস এইরেস-এ যেতে হয়েছিল মাস খানেকের জন্য। কাজের মাঝে সময় করে দিয়েগোর জন্মস্থান, বোকা জুনিয়র্স ক্লাব ঘুরে, অনেকের সঙ্গে কথা বলে সন্ধান পেয়ে গেলাম সেই তিন জনের মধ্যে একজনের কাছে যারা ১৯৯৮ সালে ইগ্লেসিয়া মারাদোনিয়ানা (মারাদোনার চার্চ) স্থাপন করে রোসারিও শহরে। এই রোসারিও শহরেই মেসির জন্ম, আরেক বিখ্যাত মানুষও জন্মেছিলেন এই শহরে যার নাম আর্নেস্তো ‘চে’ গুয়েভারা। যাইহোক, এক সহকর্মী মারফত কথা হল ইগ্লেসিয়া মারাদোনিয়ানার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এর্নান আমেসের সঙ্গে। সপ্তাহান্তে বাস ধরে রওনা দিলাম রোসারিও-র পথে। আমেস ইংরেজী প্রায় বোঝে না বলাই ভালো, বলতে পারা তো দূরের কথা। স্প্যানিশ ভাষায় আমার দক্ষতাও শুন্য বলা চলে। তা সত্বেও দিয়েগো, ফুটবল, লিওনেল নিয়ে বেশ কেটে গিয়েছিল গোটা দিনটা। প্রথমে একটা অবিশ্বাস ছিল এদের যে ভারত থেকে আসা একজন কী করে মারাদোনার চার্চ-এর কথা জানে। তারপর ধীরে ধীরে আড়ষ্টতা কাটিয়ে নিউয়েল’স ওল্ড বয়স ক্লাব ঘুরে দেখা থেকে শুরু করে মারাদোনার চার্চ নিয়ে নানান ভাব বিনিময় করে বুঝেছিলাম দিয়েগো এদের কাছে শুধু একজন ফুটবল খেলোয়াড় না। দিয়েগো এদের চেতনায় এবং অবচেতনে ধারণ করে, সেই কারণেই দিয়েগো অনেকের কাছেই ধর্মীয় আইকন। আর্জেন্টিনার অনেক দম্পতি দিয়েগোর আত্মজীবনী এল দিয়েগো হাতে নিয়ে শপথ করে বিয়ে করে, এদের কাছে এল দিয়েগো বাইবেলের মতো একটা ধর্মগ্রন্থ। নেপলস শহরেও দিয়েগো এই ভাবেই এক আরাধ্য দেবতা হয়ে রয়ে গেছে।

।। ৩ ।।

প্যালেস্টাইনেও দিয়েগোর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ২০১২ সালে দিয়েগো নিজেকে প্যালেস্টাইনের মানুষদের এক নম্বর ফ্যান বলে ঘোষণা করে। ২০১৪-তে ইসরায়েল গাজা এলাকায় বড় আকারের আক্রমণ শুরু করার পর দিয়েগো সোচ্চার হয়ে তার প্রতিবাদ করে। তার রাজনৌতিক সত্তা বরাবর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, সমাজতান্ত্রিক এবং দিয়েগো প্রগতিশীল আন্দোলনকে সব সময় সমর্থন করেছে। তার ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে ছিল ভেনেজুয়েলার প্রয়াত নেতা হুগো চাভেজ, কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রো, বলিভিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস। চাভেজের সাথে একাধিক অনুষ্ঠানে দিয়েগোকে দেখা গেছে অ্যান্টি-জর্জ বুশ শার্ট পরে। ২০০৭ সালে চাভেজের সাথে টক্-শোতে যোগদান করে সেখানে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়ে দিয়েগো বলেছিলো, ‘‘আমি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সমস্ত কিছুকে আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঘৃণা করি”। এই আমেরিকা বিরোধী মনোভাব পোষণ করা নতুন কিছু না দিয়েগোর কাছে। এর খেসারতও দিতে হয়েছে তাকে, ১৯৯৪ বিশ্বকাপে যে কারণে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল, সেটা হয়তো তার নাম দিয়েগো মারাদোনা এবং তার রাজনৈতিক অবস্থানের জন্যই।

ফুটবলার দিয়েগো সাফল্যের চূড়ায় যেমন থেকেছেন, মানুষ হিসেবে এমন অনেক কাজ করেছে সে যেটা বলার বা লেখার যোগ্য না। তবে ১৯৯৪-এ দিয়েগোর নিষেধাজ্ঞার পেছনে এফিড্রিন ছাড়াও আরো অনেক কারণ ছিল যার সাথে ফুটবলের সম্পর্ক নেই বললেই চলে।

দিয়েগোর বড় হওয়া চূড়ান্ত দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে, সেখান থেকে উঠে আসা মানুষটা খ্যাতি এবং গৌরবের চূড়ান্ত পৌঁছে নিজেই তার শিকার হয়েছে। দিয়েগোর ফিটনেস কোচ ফার্নান্দো সিগনোরিনী বলতেন, ‘‘I would follow Diego to the end of the earth; I wouldn’t follow Maradona to the corner.’’ জীবনের এই বিচ্যুতি শুরু ইতালি যাওয়ার সময় থেকেই। নেপলস-এ দিয়েগো ছিল আট বছরের জন্য, কিন্তু ওই সময়ে যে তীব্র ভাবে জীবন কাটিয়েছে তার প্রভাব খুব বেশি। তার ফুটবল নাপোলিকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল যে তারা আগে কখনও কল্পনাও করেনি আর তার নিজের জীবনে যে গৌরব আসে সেটা কাছেও জন্য নতুন ছিল। আনন্দ - যন্ত্রনা, সুখ - দুঃখ, আলো - অন্ধকার সব মিলে দিয়েগোর জীবন এমনভাবে সংক্রামিত হয়ে ওঠে যে ফুটবল মাঠের বাইরে মানুষটা বড় বেশি রকমের অত্যাচারিত হয়। কুস্তুরিকা তার ডকুমেন্টারিতে বলেছেন, দিয়েগো তার প্রথম ছবি ‘‘Do You Remember Dolly Bell?’’-এর নায়ক হতেই পারতো। তার দ্বিতীয় ছবি ‘‘When Father Was Away on Business’’-এর বাবার চরিত্রেও দিয়েগোকে কল্পনা করে নেওয়া যায়। তবে সব থেকে সহজ হবে তার ‘‘Black Cat, White Cat’’ ছবির জাদুকর ফুটবলার-এর চরিত্রে দিয়েগোকে ভেবে নিতে যে নিজেই তার সব থেকে বড় শত্রু।

মৃত্যুর দু সপ্তাহ আগেই একটা ব্রেন অপারেশন হয় দিয়েগোর। সেটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট নিজের বাড়িতে। গত বছর লা প্লাটার জিমনাসিয়া ক্লাব-এর ম্যানেজার হিসেবে আর্জেন্টিনায় ফেরে দিয়েগো। অন্য ক্লাব এর স্টেডিয়াম এ জিমনাসিয়ার খেলা থাকলে তাদের সমর্থকরাও দিয়েগোর জন্য আলাদা কিছু করত। জীবনের শেষ কয়েকটা মাস লোকটা একটা অন্যরকম জীবন যাপন করলো। নিউয়েল’স ওল্ড বয়স ক্লাব-এর হয়ে দিয়েগো মাত্র ৭টা ম্যাচ খেলেছে, তাও ফুটবল জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। সেই নিউয়েল’স ওল্ড বয়স ক্লাব-এর মার্সেলো বিয়েলসা স্টেডিয়াম এ জিমনাসিয়ার খেলার দিন দিয়েগোর জন্য ক্লাবের সদস্য সমর্থকরা একটা সিংহাসন তৈরি করে রেখেছিল। মাঠের ধারে বেঞ্চে না বসে দিয়েগোকে সেই সিংহাসনে বসতে হয় খেলার সময়।

এই করোনা ভাইরাস অতিমারীর সময়েও দিয়েগো তার শিকড়ের টান ভোলেনি। বুয়েনোস এইরেসের উপকণ্ঠের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য তহবিল গড়ে তুলতে দিয়েগো আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সিতে সই করে তা নীলামে বিক্রি করে। সেই জার্সি তে সই করে দিয়েগো লিখেছিলো, ‘‘আমরা এই অতিমারী উত্তীর্ণ করে এগিয়ে যাবো।’’

দিয়েগো চিরন্তন। দিয়েগো বুয়েনোস এইরেসের, দিয়েগো নেপলস-এর, দিয়েগো কলকাতার। দিয়েগো ফুটবল-এর, দিয়েগো নিপীড়িত মানুষের।