আরেক রকম ● দ্বাদশ বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা ● ১-১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ● মাঘ ১৭-ফাল্গুন ২, ১৪৩০

প্রবন্ধ

রামমন্দিরের অযোধ্যায়

গৌতম হোড়


"এই সুদৃশ্য মহানগরী দ্বাদশ যোজন দীর্ঘ, তিন যোজন বিস্তৃত এবং প্রশস্থ মহাপথ ও রাজমার্গে সুবিভক্ত। এইসকল পথ বিকশিত পুষ্পে অলংকৃত ও নিত্য জলসিক্ত। রাজা দশরথ অমরাবতীতে ইন্দ্রের ন্যায় অযোধ্যায় বাস করতেন। এই নগরীতে কপাট, তোরণ ও বিপণিসমূহ উপযুক্ত ব্যবধানে স্থাপিত আছে।" (বাল্মিকী রামায়ণ, সারানুবাদ রাজশেখর বসু, বালকাণ্ড, পৃঃ ৮, এম. সি. সরকার প্রকাশিত সংস্করণ)।

সেদিন আকাশপথ থেকে অযোধ্যা দেখার কোনও উপায় ছিল না। কারণ, পুরোটাই ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। ফলে কুয়াশার জন্য দিল্লি থেকে ঘণ্টাছয়েক পরে ছাড়া বিমান রানওয়েতে নামার আগে উপর থেকে বিশেষ কিছু দেখা যায়নি। বিমানবন্দরে নেমে দ্বিতীয় চমকটা লাগলো। প্রথম চমকের কথা বিমানেই লেগেছিল, সেটা পরে বলব। দ্বিতীয় চমক হলো বিমানবন্দরের চেহারা। খুব বড় বিমানবন্দর নয়। কিন্তু একেবারে নতুন ও ঝাঁ চকচকে। বিমানবন্দরের ভিতরে বিশাল বিশাল ছবি আঁকা। অপটু হাতের ছবি নয়। রীতিমতো পাকা হাতে আঁকা রামায়ণের বিভিন্ন টুকরো ঘটনা। একটা দেওয়ালছবি তো ফুট চল্লিশেকের হবে। বিমানবন্দর থেকে বাইরে আসার পর সন্ধ্যায় আলো জ্বলা ভিতরের ফ্রেসকো অবশ্যই সুন্দর লাগে। বড় মায়াময় মনে হয়।

এই অবাক হওয়াটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। কারণ, বিমানবন্দরের পর যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিল তা যথেষ্ট প্রশস্থ। একটু পরে একের পর এক ফ্লাইওভার সম্বলিত লখলউ-অযোধ্যা এক্সপ্রেসওয়ে। চারপাশ আলোয় ভাসছে। ওই সন্ধ্যাতেও ঝাড়ু দেওয়ার কাজ চলছে। তাতে অবশ্য প্রবল ধুলো উড়ছে। রাস্তার দুপাশ যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন করে রাখার কাজ চলছে। রামায়ণের অযোধ্যার রাস্তা নিত্য জলসিক্ত থাকত বলে বাল্মিকী জানিয়েছেন। কিন্তু এখন প্রাচীন অযোধ্যাকে যে প্রায় আধুনিক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, তাতে রাজপথ জলসিক্ত করাটা খুবই শ্রম ও অর্থসাধ্য কাজ। আর তা করলে রাস্তা উল্টে কর্দমাক্ত হবে। তাই সম্ভবত সেই পথ নেওয়া হয়নি।

অযোধ্যায় ঢোকার পর চমকটা আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। এই তো ২০২২-এর শেষের দিকে এখানে কাজে এসেছি। তখন হনুমানগড়ির রাস্তা ছিল খুবই অপ্রশস্থ। দুই পাশের দোকান রাস্তায় নেমে তা আরও ছোট করে দিয়েছিল। দোকান বলতে হয় পেড়া, লাড্ডু অথবা পুজোর সামগ্রী এবং ছোট স্মারক। এখন যেমন সব দোকান রামমন্দিরের ছোট-বড় রেপ্লিকা শোভিত। এখন হনুমানগড়ির সেই রাস্তা দেখে চোখ কপালে উঠল। দুই পাশটা কেউ যেন চেঁছে ফেলে দিয়েছে। যে দোকানগুলি ছিল, সব ভাঙা হয়েছে। রাস্তা দ্বিগুণেরও বেশি চওড়া। দুই ধারে নতুন করে দোকান করে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। সব দোকানের আকার এক। তাদের বাইরের রং এক, তাদের দোকানের নাম একইভাবে, একই কায়দায় লেখা। দিল্লির জনপথেও একই জিনিস দেখেছি। একধাঁচে ফেলে দেওয়া দেখতে একটা একঘেঁয়েমি আসতে পারে, বৈচিত্রহীন মনে হতে পারে, কিন্তু পরিকল্পনাকাররা সম্ভবত ভেবেছেন, এই যে এক রকমের রং, দোকান, তার আয়তন-এর মধ্যে একটা সৌন্দর্য থাকে। হয়ত থাকে। মানুষভেদে মত তো আলাদা হতেই পারে। এখন অবশ্য ওই একের যুগ। একরকম ভাবনা ভাবাটাই ট্রেন্ড।

মন্দিরের চারপাশে আগে ছিল অবিন্যস্ত দোকানের সারি। সে সব ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চারপাশটা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল মন্দির প্রাঙ্গন। তার কাজ এখনও চলছে। কাজ শেষ হতে অন্তত ২০২৫ লাগবে। সেসব কথায় পরে আসছি। আপাতত একটু সরযূর তীরে যাওয়া যাক। নয়াঘাটের কাছে তৈরি হয়েছে 'লতা মঙ্গেশকর চক'। সেখানে বিশাল একটা বীনা রয়েছে। তার সামনে মেলা ভিড়। সকলে মোবাইল নিয়ে সেলফি বা ছবি তুলতে ব্যস্ত। সে কত রকমের ভঙ্গিমা, দেখে তাক লেগে যায়। কিছুদিন পরে যে ছবি হয়ত কেউ আর দেখবে না, তার জন্য কত কসরত, কত ভঙ্গি, বারবার ছবি তোলা। তার জন্যই তো এই বীনা ও তার পাশের পথে সুসজ্জিত হলুদ রংয়ের আলো।

সরযূর দুই তীর বাঁধানো। এখনও কিছু জায়গায় কাজ চলছে। লোহার জালি বিছিয়ে রাখা আছে। সিমেন্ট দেওয়া হবে। তারই পাশে বিশাল প্যান্ডেল বেঁধে চলছে নাচ ও গানের আসর। ভজন হচ্ছে। সামনেই একটা সিমেন্টের ব্রিজ। ব্রিজে দাঁড়ালেই দেখা যাবে লেজার শো। দুই পাশ থেকে ছুটে আসা হলুদ, লাল, নীল রংয়ের লেজার রশ্মি। নানান ছন্দে তা আবর্তিত হচ্ছে। সেই লেজার শো দেখতে ভিড় করেছে হাজারো মানুষ। হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে। সরযূর জলের ছোঁয়ায় তা রীতিমতো ঠান্ডা। কলকাতা থেকে যাওয়া সাংবাদিকের হাতে উঠে এসেছে উলের গ্লাভস। আর সরযূর পাশে বাঁধানো জায়গায়, ব্রিজের কাছে কেউ লেবু চা বিক্রি করছেন, কেউ মশলা মুড়ি, কেউ বা কপালে ‘জয় শ্রী রাম’ তিলক কেটে দেওয়ার সরঞ্জাম নিয়ে ঘুরছেন। কেউ খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলার মতো জায়গায় যা হয় আর কী। একসময় এই সরযূর তীরের বালি হাতে নিয়ে করসেবকরা 'প্রতীকী করসেবা' করতেন বলে অনেক রিপোর্ট হয়েছে। সেই করসেবা, করসেবক, বিতর্কিত কাঠামো সব অতীত। বাস্তব এখন নতুন রামমন্দির। আর অযোধ্যায় সমবেত হাজার হাজার মানুষের মুখে একটাই কথা, শ্রীরাম আবার তাঁর মন্দিরে ফিরছেন। তাঁর জন্মস্থানে মন্দিরে ফিরছেন। এই আবেগে ভেসে গেছে অযোধ্যা। ভেসে গেছেন পুরো ভারত থেকে অযোধ্যায় আসা মানুষরা। চারপাশে তাই আবেগের তীব্র বিস্ফোরণ।

আবার সরযূর তীরে, শহরের নানান জায়গায় বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনের হাসিমুখ সম্বলিত একটা বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে আছে। নতুন অযোধ্যায় একটি সাত তারা হোটেল সম্বলিত জমির প্রকল্পের বিজ্ঞাপন। সেখানে সুপারস্টার ওই বহুমূল্য প্রকল্পের কথা মানুষকে জানাচ্ছেন। শহর ঘুরলেই চোখে পড়বে নানান হোটেল। কোনওটা পাঁচ তারা, কোনওটা তিন তারা, কোনওটা সাধারণ। যেসব ধর্মশালা ছিল, ছোট হোটেল ছিল, সেগুলিরও ভোলবদল হয়েছে। আগে সাংবাদিকরা যখন অযোধ্যায় খবরের সূত্রে গেছেন, তখন তাদের পছন্দের জায়গা ছিল অযোধ্যায় 'শান এ অবধ' হোটেল। তখন অযোধ্যায় থাকার জায়গা ছিল না বললেই চলে। এখন অবশ্য ফৈজাবাদও অযোধ্যার মধ্যে। কিন্তু সেই মূল অযোধ্যায় এখন ঢালাও হোটেল। আরও কত যে হবে তার ঠিক নেই। ফৈজাবাদও বাদ পড়েনি। আমরা যে হোটেলে উঠেছিলাম, সেটা বিমানবন্দরের কাছে ফৈজাবাদেই। সেখানে ২৩টি ঘর সব আগে থেকে বুক হয়ে গেছে। তারপরেও পুলিশ এসে অনুরোধ করে যাচ্ছে, তাদের কিছু ঘর চাই।

তবে বিমানে ওঠার পরই রামমন্দির নিয়ে উন্মাদনার আবহটা টের পাওয়া গেছিল। নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা পাঁচ-ছয় পর বিমান ছাড়লো। যাত্রীরা অনেকেই আসনে বসে পড়েছেন। তখন একটি বছর ১৪-র কিশোর ধুতি ও গেরুয়া পা়ঞ্জাবি পরে, হাতে শ্রীরামের ছবি-সহ গেরুয়া পতাকা দোলাতে দোলাতে বিমানে ঢুকল। ঢুকেই জোরে জোরে বলতে থাকলো, ‘জয় শ্রী রাম’। সঙ্গে সঙ্গে প্লেনের প্রায় সব যাত্রী তার থেকেও জোরে বললেন ‘জয় শ্রী রাম’। একবার নয়, বারবার। মাঝখানে একবার প্লেনের যাত্রী এক সাধুর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন এক টিভি সাংবাদিক। তার পিছনে তখন শাঁখ বাজতে শুরু করল। সেই শঙ্খনাদের সঙ্গে ঘন ঘন রব উঠলো, ‘জয় শ্রী রাম’।

।। দুই ।।

"সেই অযোধ্যায় বেদজ্ঞ দূরদর্শী মহাতেজা প্রজাগণের প্রিয় রাজা দশরথ রাজত্ব করতেন। সেখানকার লোকেরা আনন্দিত, ধর্মপরায়ণ, শাস্ত্রজ্ঞ, নিজ নিজ সম্পত্তিতে তুষ্ট, নির্লোভ ও সত্যবাদী ছিল। …এমন লোক ছিল না, যে কুণ্ডল, মুকুট ও মালা ধারণ করে না, যার দেহ অপরিষ্কৃত, যে চন্দনাদি লেপন করে না, যার অঙ্গ সুবাসিত নয় এবং ভোগের অভাব আছে।" (বাল্মিকী রামায়ণ, সারানুবাদ রাজশেখর বসু, এম. সি. সরকার প্রকাশিত সংস্করণ)।

মন্দির উদ্বোধনের আগের অযোধ্যা দেখতে গেছি। অযোধ্যার সর্বত্র গিজ গিজ করছে মানুষ। আর তাদের প্রায় সকলের কপালে হলুদ রং-এর উপরে লাল রংয়ে লেখা ‘জয় শ্রী রাম’। কিছুটা দূর পরপর কিছু মানুষ হাতে একটা পাত্র নিয়ে ঘুরছেন। তাতে রয়েছে ওই হলুদ ও লাল রং। একটা 'জয় শ্রী রাম' লেখা স্ট্যাম্প। তারা কপালে লাগিয়ে দিচ্ছেন ওই চিহ্ন। বারাণসীর গঙ্গার ধারে দেখেছি, রীতিমতো পয়সা নিয়ে ব্রাহ্মণরা এই কাজ করেন। কিন্তু রামমন্দিরের অযোধ্যায় এর জন্য পয়সা দিতে হচ্ছে না। আট থেকে আশি, সকলের কপালেই তাই শোভমান ‘জয় শ্রী রাম’।

রাস্তায় জনস্রোত। আর তার মধ্যে ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সাধু। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি, সামনে একজন হাতটা নীচু করে সামনের দিকে বাড়িয়ে হাঁটছেন এবং অন্যদের সরে যেতে বলছেন। সামনে তাকাতেই দেখলাম এক সন্ন্যাসী তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে আসছেন। তাঁর জন্যই রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন এই শিষ্য। চোখাচোখি হতেই হাতজোড় করে বললেন, দয়া করে একটু সরে যাবেন। সরে গেলাম। কোনও কোনও সাধুর বা তাঁর সহযোগীর কাঁধে আছে কাপড়ে মোড়া দণ্ড। তাদের দিকে শ্রদ্ধাবনত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন পথচারীরা। দুই হাত উঠে আসছে বুকের কাছে। আবার ক্যামেরা দেখলে কিছু সাধু দুই হাত মাথার উপরে উঠিয়ে চিৎকার করে বলছেন ‘জয় শ্রী রাম’। রামমন্দিরের অযোধ্যা শুধুই রামময়। সচরাচর কুম্ভ, গঙ্গাসাগরের মতো মেলায় এত সাধুকে দেখা যায়। রামমন্দিরের অযোধ্যাও সাধুময়।

দুপুরের পর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিছিল। সব মিছিলের কেন্দ্রেই রাম। কোথাও দ্রুতলয়ে গান হচ্ছে। কোথাও সাধুকে কেন্দ্র করে মিছিল হচ্ছে। কোথাও কেন্দ্রে থাকছেন অন্যরা। এরকমভাবেই রাস্তায় দেখলাম কিন্নরদের মিছিল। তাদেরও কপালে ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা। সেই মিছিলে শুধু কিন্নররা নন, সাধুরাও ছিলেন, ছিলেন অন্যরাও, যারা এই মিছিলকে সমর্থন করেন। কিন্নরদের একজন বললেন, তাদের গোটা সমাজ, রামমন্দির হওয়ায় খুব খুশি। তাই তাঁরাও সেই আনন্দের কথা জানাতে পথে নেমেছেন। নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে কিন্নররা চলে গেলেন।

তবে মিছিলেন অন্ত নেই। কোনও মিছিলে দশজন, কোনও মিছিলে বিশজন, আবার কোনও মিছিলে কয়েকশ মানুষ সামিল। তবে সেরা মিছিলটা দেখেছিলাম সন্ধ্যাবেলায়। মন্দিরের গেটের পাশ থেকে বেরিয়ে হনুমানগড়ির রাস্তায় আসছিল সেই মিছিল। সেখানে একজন কাঁধে একটা স্পিকার নিয়েছেন। অন্যরা কেউ বাজাচ্ছেন, কেউ গাইছেন, "রঘুপতি রাঘব রাজা রাম, পতিত পবন সীতারাম"। ধীরে নয়, দ্রুত লয়ে। আর মাঝখানে ছয় ফিট লম্বা, মাথায় কাউবয় হ্যাট লাগিয়ে একজন নাচের ঘূর্ণি তুলছেন। সেই অসাধারণ নাচ ও গান দেখতে ভিড় জমে যাচ্ছে। মিছিল বড় হতে থাকছে।

জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, ওই মূল নাচিয়ে এসেছেন নেপাল থেকে। তাঁর নামটা মনে নেই। রামমন্দির ও রামের টানে এসেছেন। বেশ কয়েকদিন থাকবেন। আর রাম-নামে মাতোয়ারা হয়ে গান্ধীজির প্রিয় ভজনের সঙ্গে নাচছেন এবং নেচেই যাচ্ছেন। সেই মিছিল চলে গেল। যত মিছিল এগোল, ততই তাতে বেশি করে মানুষ যুক্ত হলো।

হনুমানগড়ির রাস্তা দিয়ে জনস্রোতের বিরাম নেই। গন্তব্য এক জায়গাতেই মিশছে। রামমন্দিরের দিকে। তবে নিরাপত্তার কারণে তখন রামমন্দিরের প্রধান ফাটক বন্ধ। সেখান পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আসছেন মানুষ। তার আগে দশরথমহলের থেকে ঘুরে আসছেন।

।। তিন ।।

"এই শ্রীসম্পন্ন অতুলপ্রভাবান্বিত পুরী উচ্চ অট্টালিকা ও ধ্বজসমূহে শোভিত এবং তা শতঘ্নী দ্বারা সংরক্ষিত।’’ (বাল্মীকি রামায়ণ, সারানুবাদ রাজশেখর বসু, এম. সি. সরকার প্রকাশিত সংস্করণ)।

এই নতুন অযোধ্যাও উচ্চ অট্টালিকা ও ধ্বজশোভিত। যেদিকে তাকান, শুধু গেরুয়া পতাকা। ছোট, বড়, মাঝারি পতাকা। তার সঙ্গে ফুলমালা দিয়ে সজ্জিত অযোধ্যা। একঝলক দেখলেই বোঝা যাবে, রামমন্দিরের অযোধ্যার রং গেরুয়া। বাড়ি, দোকান, মন্দির, গাড়ি, সাইকেল, মোটর সাইকেল, ল্যাম্পপোস্ট-সহ বিভিন্ন স্তম্ভ সর্বত্রই উড়ছে এই পতাকা।

এই অযোধ্যায় একের পর এক নতুন নির্মাণ হচ্ছে। আর এই অযোধ্যাকে সুরক্ষিত রাখছে হাজার হাজার নিরাপত্তা কর্মী। পুলিশ, সশস্ত্র পুলিশ, দাঙ্গারোধী পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী সকলেই মজুত। আর এসেছেন ভিভিআইপি-রা। রামমন্দিরের অযোধ্যা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বড় বেশি করে ভিভিআইপি-দেরও। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী তাঁর মন্ত্রীদের পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁদের এখনই অযোধ্যা যাওয়ার দরকার নেই। আগে সাধারণ মানুষকে রামমন্দির দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তারপর তাঁরা যাবেন।

রামমন্দিরের অযোধ্যায় তিনজনের ছবি বা কাট আউটের প্রাবল্য। প্রথমজন অবশ্যই শ্রীরাম। স্তম্ভে, দেওয়ালে, দোকানের সামনে সর্বত্রই তাঁর কাট আউট বা ছবি রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে আরও দুইজনের ছবি ও কাট আউট। একজন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যজন যোগী আদিত্যনাথ। লখনউ-অযোধ্যা হাইওয়ে অযোধ্যায় প্রবেশের পরই রাস্তার পাশে স্তম্ভে রামের ছবির পরই মোদীর ছবি, তারপর যোগীর ছবি শোভমান ছিল।

রামমন্দিরের পিছনে সবচেয়ে কাছের কাঠামো হলো 'রামকথা কুঞ্জ'। দুপুরে সেখানে পৌঁছতেই দেখি লম্বা লাইন। মানুষ শান্তভাবে অপেক্ষা করছেন। একটু পরে গেট খুলে গেল। ভিতরে থাকা মানুষরা বাইরে এলেন। আর অপেক্ষমান মানুষরা ভিতরে ঢুকলেন। মেঝেয় আসন পাতা রয়েছে। সবাই বসে পড়তেই শুরু হল খাবার দেওয়া। এখানে মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখানে দু'বেলার আহার গ্রহণ করছেন। একেবারে বিনা পয়সায়। শুধু এখানেই নয়, অযোধ্যা শহরে প্রচুর জায়গায় চারবেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ খাচ্ছেন। যে গরিব মানুষরা বাইরে থেকে এসেছেন, তাদের জন্য কম্বল ও শীতবস্ত্র দেওয়া হচ্ছে। তাদের ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এ এক বিপুল কর্মযজ্ঞ।

হনুমানগড়ির কাছে একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় এক সাধু এসে উপস্থিত। তাঁর আবদার, জুতো কিনে দিতে হবে। তার পরনে চটি আছে। তারপরেও জুতো চান তিনি। তাঁর এই কথা শুনে দোকানদারই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। বললেন, চাইলেই চারবেলা বিনা পয়সায় খাবার পাওয়া যাচ্ছে, গরম পোশাক পাওয়া যাচ্ছে, থাকার ব্যবস্থাও হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও চাওয়ার শেষ নেই। মনুষ্যচরিত্র তো বদলায় না। 

।। চার ।।

"শত্রুঘ্ন সুগ্রীবকে বললেন, আপনি অভিষেকের জল আনবার জন্য দূত প্রেরণ করুন। সুগ্রীবের আজ্ঞায় হনুমান জাম্বুমান, বেগদর্শী ও ঋষভ রত্নখচিত স্বর্ণকলস নিয়ে মহাবেগে যাত্রা করলেন এবং শীঘ্র চতুঃসাগরের জল নিয়ে ফিরে এলেন। পাঁচশ নদীর জলও আনা হ’ল।’’ (বাল্মীকি রামায়ণ, সারানুবাদ রাজশেখর বসু, এম. সি. সরকার প্রকাশিত সংস্করণ)।

অযোধ্যায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দপ্তরের নাম করসেবকপুরম। সেখানেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানান জিনিস আসছে। সেগুলি রাখা হচ্ছে একটা বেশ বড় ঘরে। সেই ঘরের সামনে এক কোণে রাখা আছে দুই হাজার চারশ কিলোর অষ্টধাতুর একটি ঘণ্টা। উত্তরপ্রদেশের একটি শহর থেকে তা এসেছে।

আর ঘরের ভিতরে সবচেয়ে বেশি আছে জল ও ঘি ভরা কলসি। বিভিন্ন নদী, কুণ্ড, সমুদ্রের জল। সবই ব্যবহৃত হয়েছে রামমন্দিরে শ্রীরামের প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে। সীতার স্থান নেপালের জনকপুরী থেকে এসেছে, জল, ঘি-সহ নানান জিনিস। দক্ষিণ, উত্তর, পূর্ব, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে এসেছে নানান জিনিস। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছে সুন্দরবনের মধু। মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল তুলসী গাছ।

সেখানেই দলে দলে মানুষ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসছেন। তাদের দু'টি ইচ্ছে। প্রথমটা রামমন্দির দর্শন এবং দ্বিতীয়টা, কিছু সেবা করা। কী সেবা তা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতারাই ঠিক করে দেবেন।

তাদের সঙ্গে কথা বলে একটু এগোতেই দেখা দুই সাইকেলধারীর সঙ্গে। তারা এসেছে কানপুর থেকে। সাইকেলে লাগানো দুইটি গেরুয়া পতাকা। শ্রীরামের ছবি। রডে ফুলের মালা জড়ানো। পিছনে একটা ছোট ব্যাগ। কানপুর থেকে গ্রামের রাস্তা ধরে অযোধ্যায় আগমন।

পরে এরকম অনেক সাইকেলধারীকে অযোধ্যায় দেখেছি। একজন তো নিউ ব্যারাকপুর থেকে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, আসার পথে বিপুল সাড়া পেয়েছেন। গ্রাম ও শহরের মানুষ খেতে দিয়েছেন, থাকতে দিয়েছেন। রামমন্দিরের জন্য এই যাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা সেই উন্মাদনার সাক্ষী। ওই যুবক অবশ্য আরএসএসের স্বয়ংসেবক। এই সাইকেল আরোহীরাও গ্রামে-গঞ্জে রামমন্দির নিয়ে উন্মাদনাটা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করেছেন।

রামমন্দিরের অযোধ্যায় আসা মানুষের অনেকের মধ্যেই রয়েছে এক একটা গল্প। অযোধ্যার মানুষের মধ্যেও আছে আলাদা আলাদা গল্প।

রামমন্দিরের ভিভিআইপি গেটের কাছেই ইকবাল আনসারির বাড়ি। অপ্রসস্থ বসার ঘরে দেওয়ালে রয়েছে তাঁর বাবা হাসিম আনসারির ছবি। যিনি চার দশক ধরে আদালতে বাবরি মসজিদের জন্য আইনি লড়াই লড়েছিলেন। ইকবাল জানালেন, অতীত নিয়ে আর ভাবছেন না তিনি। যা হওয়ার হয়ে গেছে। তাঁর কথায়, শোক তো একদিনের। ইকবালের দাবি, অযোধ্যায় হিন্দু-মুসলিমরা মিলেমিশে থেকেছে। এখানে যা গোলমাল হয়েছে, তা করেছে বহিরাগতরা। এখনও তাদের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক। 'রামমন্দির ট্রাস্ট'-এর তরফ থেকে রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তিনি সেই অনুষ্ঠানে যাবেন।

তাঁর বাবা চার দশক ধরে মামলা লড়েছিলেন, তারপর তাঁর এই অবস্থানের ব্যাখ্যা কী? প্রশ্নটা আসতেই ইকবালের জবাব, বাস্তবকে মেনে নিতে হয়। বাবরি মসজিদ ধ্বংস হতে কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু শোক তো একদিনই থাকে। এখন রামমন্দির হচ্ছে বাস্তব। ফলে তাকে মেনে না নেওয়ার কোনো কারণ নেই।

এই একই কথা অযোধ্যায় একটি মাজারের সঙ্গে যুক্ত মুসলিমদের মুখেও শুনেছি। তারাও বলেছেন, যা হয়ে গেছে, তা হয়ে গেছে। এখন রামমন্দিরই বাস্তব। তাঁরা পরিবর্তিত অবস্থাটা পুরোদস্তুর মেনে নিচ্ছেন। তবে তাঁরা একটাই আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন, মাঝে মধ্যে কেউ কেউ কিছু দলিল দেখিয়ে জমির দাবি করছেন। পুলিশের কাছে গেলে, তারা স্থিতাবস্তা বজায় রাখছে।

ফেরার পথে লখনউয়ের হোটেল থেকে বিমানবন্দরে আসছি। ওলাচালক অযোধ্যার মানুষ, হিন্দু। অযোধ্যায় তাঁর বাড়িতে পরিবার বাস করেন। বলছিলেন, তাঁর বাবার কাছে স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষ এসেছিলেন। বলেছেন, বিঘেপ্রতি ১০ লাখ টাকা দেবেন। তাদের কাছে যেন জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়। বছর চারেক আগে ওই জমির বাজারদর ছিল আড়াই লাখ টাকা। সেই হিসাবে চারগুণ দাম দেওয়া হচ্ছে। বাবা ছেলের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন কী করবেন? ছেলে সোজা চলে গেছেন সেই কর্তৃপক্ষের কাছে। গিয়ে বলেছেন, ইয়ার্কি হচ্ছে। এই জমি নিয়ে কোটি কোটি টাকা দিয়ে হোটেল বানানো হবে, বিত্তবানদের অন্য প্রকল্পে দেওয়া হবে। তাদের শুধু দশ লাখ টাকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। দশ লাখ টাকা তো দিতেই হবে। তার সঙ্গে দেড় হাজার বর্গফুটের বাড়ি ও দোকান চাই। বাড়ি ও দোকান দুটোই অযোধ্যার মধ্যে হতে হবে। আর তাঁরা এ'নিয়ে যোগীর সঙ্গেই কথা বলবেন। ওলাচালকের দাবি, আশপাশের সকলের একই মত। এইভাবে জমি নেওয়া যাবে না। জোর করলে বিক্ষোভ হবে। তখন লখনউ চলে এসেছি বলে, এই নিয়ে কিছু যাচাই করে দেখতে পারিনি।

আবার অযোধ্যার এক সাংবাদিক বলছিলেন, আগে তো এই অযোধ্যার মতো ছোট জনপদে জন্মদিনের উপহার দিতে গেলে ভাবতে হতো, কী দেবো। এখন নতুন নতুন দোকান হচ্ছে। নানান সামগ্রীতে তা উপচে পড়ছে। প্রচুর মানুষ আসছেন। যত মানুষ আসবেন, ততই নানান দিকে শহরের বিস্তার হবে । তবে চিন্তা একটাই, অযোধ্যা ঘিরে এই উন্মাদনা দশ, পনেরো, কুড়ি বছর পরেও থাকবে তো।

আমার এক সহকর্মী অযোধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে। সেখানে পড়ুয়ারা তাঁকে জানিয়েছেন, অয়োধ্যার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। আমূল ইতিমধ্যেই কারখানা করেছে। বিভিন্ন সংস্থা আসছে। ফলে এখানে চাকরি নিয়ে চিন্তা নেই। আগে চাকরির জন্য ভারতের অন্য জায়গায় যেতে হতো। এখন সারা ভারত থেকে চাকরির জন্য মানুষ অযোধ্যায় আসবেন। আরেক ছাত্র বি. ফার্মার কোর্স করতে ব্যাকুল। তাদের চটির কারখানা আছে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বড়সড় ওষুধের দোকান খুলতে চায়। সে জন্য আগে বি. ফার্মা পাস করতে চায়।

অযোধ্যা থেকে আমেঠির দূরত্ব বেশি নয়। ১০১ কিলোমিটারের মতো। একসময় রাজীব গান্ধীর নির্বাচনকেন্দ্র ছিল আমেঠি। রাজীব তখন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ডাকে বড় বড় শিল্পসংস্থা সেসময় আমেঠিতে কারখানা করেছিল। রীতিমতো রমরম করত আমেঠি। এখন আমেঠি গেলে দেখতে পাবেন একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পসংস্থা। কারখানায় গাছ গজিয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষরা যাকে 'খন্ডহর' বলেন। তবে অযোধ্যার অবস্থাও এরকমই হবে তার কোনও অর্থ নেই। অযোধ্যার রমরমা কতটা থাকবে, তার পরিকাঠামো কতটা ভালো থাকবে, তার উপরেও অনেককিছু নির্ভর করবে। 

।। পাঁচ ।।

অযোধ্যায় রামমন্দিরের দিকে যে রাস্তাটা চলে যাচ্ছে, যেখানে বড় তোরণ তৈরি করা হয়েছে, যার কাছ থেকেই প্রতিদিন অজস্র টিভি চ্যানেল সমানে লাইভ করেছে, তার পাশেই দেখা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। নাম রতন রঞ্জন। দিল্লির বাসিন্দা। একটা ভ্যানগাড়ি নিয়ে দিল্লি থেকে এসেছেন। সেখানে শোভা পাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর বিশাল কাট আউট। তার সামনে দুটি গেরুয়া পতাকা ক্রিসক্রস করে লাগানো। নীচে শ্রীরাম, যোগী আদিত্যনাথ ও মোদীর ছবি। মোদীর কাট আউটে গাঁদা ফুলের মালা। হাতে একটা থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে রতন রঞ্জন। থালায় নারকেল, ধূপ, প্রদীপ এবং ফুল। মোদীর কাট আউটের দিকে থালা ঘুরিয়ে ফুল ছড়াচ্ছেন তিনি। এভাবে সেই কাট আউটের, ছবির পুজো চলছে। সারাটা পথ এমনভাবেই এসেছেন তিনি।

কেন? রতন রঞ্জনের জবাব, "শ্রীরাম আমায় স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, মোদী ও যোগী নিজের জীবন সমাজ ও রাষ্ট্রকল্যাণের জন্য সমর্পণ করেছেন, তাতে তাঁরাও দেবতুল্য। শ্রীরাম যেমন প্রজার জন্য জীবন সমর্পণ করেছেন, তেমনই মোদী ও যোগীও তাই করেছেন। তারা শ্রীরামেরই দুই অবতার।’’

মনে পড়ে গেল দিল্লি বিমানবন্দরে একটি কথোপকথন। বিমানের জন্য আমরা অপেক্ষমান। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বিজেপি-র নেতা সমর্থকরাও প্রচুর সংখ্যায় যাচ্ছেন। তার মধ্যে জনা সাতেক মানুষ গল্প করছিলেন আমার পাশে। একজন বললেন, এখন তো আমার মনে কোনও সন্দেহ নেই, পুরাণে ভগবান বিষ্ণুর ২৪ অবতারের কথা আছে। মোদী হলেন ২৫তম অবতার। না হলে এভাবে রামমন্দির নির্মাণ করা সম্ভব? বাকিরাও সায় দিয়ে জানালেন, তাঁরাও একমত।

এটাও মনে পড়ে গেল অযোধ্যার রাজদ্বার মন্দিরের পুরোহিতের কথা। যিনি বলেছিলেন, "শঙ্করাচার্যরা তো ঠিক কথাই বলেছেন, কী দরকার ছিল এত তাড়াহুড়ো করে রামমন্দিরের উদ্বোধন করার। অসমাপ্ত মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার। গর্ভগৃহের মাথার চূড়াই তো সম্পূর্ন হয়নি। শঙ্করাচার্যরা বলার পর একটা কাঠামো খাড়া করে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গেই তিনি যোগ করলেন, বোঝাই তো যাচ্ছে কেন করা হলো"।

পুনশ্চঃ

আর একটা কথা না বললে এই নিবন্ধ অসমাপ্ত থেকে যাবে। অযোধ্যা থেকে দিল্লিতে পা দিয়েছি। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফিরছি। চারপাশে শুধু গেরুয়া পতাকা। সব বাড়ি থেকে, গাড়ি, অটো, টোটো, বারান্দা সর্বত্র সেই গেরুয়া পতাকা। যেদিন রামমন্দিরের উদ্বোধন ও শ্রীরামের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হলো, সেদিনই বাঙালিপ্রধান চিত্তরঞ্জন পার্কের দুটি বাজারে সবজি, মাছ, মাংস বিক্রেতারা নিজেদের দোকান বন্ধ রেখে, নিজেরা চাঁদা তুলে কচুরি, সবজি ও লাড্ডু খাইয়েছে মানুষকে। এমনকি তাদের গ্রাহকদের বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছে চারটি লাড্ডু সহ মিষ্টির বাক্স।

উন্মাদনাটা শুধু অযোধ্যায় ছিল না, দিল্লিতেও একইরকম তীব্র ছিল ওই উন্মাদনা।