আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ নবম সংখ্যা ● ১-১৫ মে, ২০২৩ ● ১৬-৩১ বৈশাখ, ১৪৩০

প্রবন্ধ

নৃতত্ত্বের চোখে অজানা আম্বেদকর

অভিজিত গুহ


মুখবন্ধ

স্বাধীন ভারতের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা এবং দলিত মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার যোদ্ধা হিসেবে ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর-এর (১৮৯১-১৯৫৬) নাম প্রায় সকলেরই জানা। এই মহান মানুষটির সম্বন্ধে যেটা আজও লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে গেছে সেটা হল আম্বেদকরের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। সাম্প্রতিককালে এ বিষয়ে পণ্ডিতবর্গের মধ্যে সচেতন প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও ভারতীয় নৃতাত্ত্বিকরা আজও আম্বেদকরের নৃতাত্ত্বিক গবেষণা বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। ভারতবর্ষের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নৃতত্ত্বের পাঠক্রমে আম্বেদকর আজও উপেক্ষিত এবং অবহেলিত। অথচ নৃতাত্ত্বিকরা দাবি করেন যে তাঁদের গবেষণার মূল বিষয়বস্তুই হল আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর সমাজ সংস্কৃতি ও জীবনচর্যা। এরকম একটা পটভূমিকায় আমার প্রবন্ধ লিখতে বসেছি। শুরু করব আম্বেদকরের জীবনে ১৯২৯ সালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার বর্ণনা সহযোগে। ১৯২৯ সালে ড. বি. আর. আম্বেদকর তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের আমলে গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটির একজন সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। এই কমিটির নাম ছিল 'Starte কমিটি'। এর উদ্দেশ্য ছিল তদানীন্তন বোম্বাই প্রেসিডেন্সির ভৌগলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী আদিম জাতি ও অস্পৃশ্য শ্রেণীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে ওদের উন্নয়ন বিষয়ে উপদেশ প্রদান। এই কমিটির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আম্বেদকর হিন্দু উচ্চবর্ণের মানুষদের কাছ থেকে নানারকম বাধার সম্মুখীন হন। উক্ত কমিটির একজন উচ্চবর্ণের সদস্য আম্বেদকরের পর্যবেক্ষণগুলি 'ব্যক্তিগত পক্ষপাত দ্বারা দুষ্ট' এরকম অভিযোগ করেন। সম্প্রতি ম্যাঞ্চেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Jesus F. Chairez-Garza তাঁর এক প্রবন্ধে অননুকরণীয় ভাষায় এ বিষয়ে যা লিখেছেন সেটি অনুবাদ করে দিলামঃ

"১৯২৯ সালে কমিটির কাজে আম্বেদকর চল্লিশগাঁও গ্রামে হিন্দু উচ্চবর্ণের জাতিসমূহ অস্পৃশ্য জাতিগুলির বিরুদ্ধে যে সামাজিক অসহযোগ ঘোষণা করেছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। সেসময়ে দলিত শ্রেণীর একজন নেতা হিসেবে তিনি স্বীকৃত। এর কয়েক বছর আগেই আম্বেদকর প্রাচীন হিন্দু আইন গ্রন্থ 'মনুস্মৃতি' পোড়ানো এবং দলিত সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। রেল ষ্টেশনে পৌঁছনোর পরই স্থানীয় দলিত শ্রেণীর মানুষরা আম্বেদকরকে মালা পরিয়ে অভিবাদন করেন এবং তদানীন্তন মারাঠাওয়াদা রাজ্যে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। আম্বেদকর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন যদিও বেশ খানিকটা সময় টাঙ্গা আসার অপেক্ষায় আম্বেদরকে ষ্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এরপর টাঙ্গা আসে কিন্তু টাঙ্গাটি চলতে শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যে আম্বেদকর টাঙ্গা থেকে ছিটকে পড়ে যান এবং জ্ঞানহীন হয়ে পড়েন। ওঁর পা ভেঙ্গে যায় এবং দেহের বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাত লাগে। বেশ কিছুদিন যাবৎ উনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেননি। আম্বেদকর তখন বুঝতে পারেননি যে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। পরে উনি দুর্ঘটনার কারণ বুঝতে পারেন। আসল ঘটনা হল এলাকার সমস্ত টাঙ্গাচালক দলিত শ্রেণীভুক্ত আম্বেদকরকে তাদের টাঙ্গায় বসিয়ে বহন করতে অস্বীকার করার পর চল্লিশগাঁওয়ের মাহারদের (আম্বেদকর দলিত মাহার ছিলেন) মধ্যে একজন টাঙ্গাচালক হিসেবে আম্বেদকরকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর দায়িত্ব নেয় এবং তার ফলেই বিপত্তি ঘটে। আম্বেদকরের ভাষায়ঃ

আমার সম্মান রক্ষার জন্য চল্লিশগাঁওয়ের মাহাররা যে ব্যবস্থা করেছিল তাতে আমারই জীবন বিপন্ন হয়েছিল। আর তখনই আমি জানতে পেরেছিলাম যে নিম্নশ্রেণীর হিন্দু টাঙ্গাওয়ালারাও একজন দলিত মানুষের চেয়ে নিজেকে উচ্চবর্গীয় মনে করে, এমনকি দলিত মানুষটি যদি ব্যারিষ্টার হন তাহলেও! (Chairez-Garza, ২০২১)।"

আম্বেদকরের নৃতাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা

আম্বেদকর অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। আইন শাস্ত্রেও ওঁর যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল। বিশ্বের দুটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যথা, কলম্বিয়া এবং লণ্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে উনি 'ডক্টরেট' উপাধি লাভ করেন। কিন্তু আম্বেদকর যে নৃতত্ত্ব বিষয়েও যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন এবং পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন এ খবরটা হয়ত অনেকেই জানেন না। এমনকি ভারতীয় নৃতাত্ত্বিকরাও এপর্যন্ত আম্বেদকরের নৃতাত্ত্বিক অবদানের কথা নিয়ে খুব একটা আলোচনা করেননি। অবশ্যই ব্যতিক্রমী নৃতাত্ত্বিকও আছেন। যদিও এদের সংখ্যা হাতে গোনা যায়। যেমন নৃতাত্ত্বিক সুভদ্রা মিত্রচান্না এবং জোয়ান মেনচার। সাম্প্রতিককালে এই দুই নৃতাত্ত্বিক ২০১৩ সালে প্রকাশিত ওঁদের সম্পাদনায় প্রকাশিত গ্রন্থের (Life as a Dalit Views from the Bottom on Caste in India) শুরুতেই আম্বেদকর ভারতবর্ষের সংবিধান ও সামাজিক বাস্তব অবস্থার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান সম্পর্কে যে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তা মেনে নিয়েই বলেছেনঃ

স্বাধীনতার ছয় দশক পরেও ভারতের গণতন্ত্রের অবস্থা দেখে মনে হয় যে আম্বেদকরের সন্দেহ যথার্থ। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও পাঠ্যক্রম কিংবা শিক্ষকদের শিক্ষাদানে দলিত সম্প্রদায় ভারতীয় সমাজে প্রায় অনুপস্থিত।

চলে আসি নৃতত্ত্বে। অনেকদিন থেকেই পশ্চিমের নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিকদের গবেষণায় ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় জাতিপ্রথা বিষয়টি অপরিসীম গুরুত্ব পেয়ে আসছে। বিখ্যাত ফরাসী নৃতাত্ত্বিক লুই দুমো-র (১৯১১-১৯৯৮) মতে ভারতীয় সমাজ মূলত মানবজাতির মধ্যে উঁচু-নীচুর ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সমাজ জাতি-ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয়েছিল। এখানে ধারণাটাই এমন যে সব মানুষ কখনই সমান নয়। অতএব প্রত্যেকের সমান অধিকার ভারতীয় সমাজে, অন্তত প্রাচীন সমাজে, নীতিগতভাবেই স্বীকৃত ছিল না। ফলে গোটা ভারতীয় সমাজে চতুর্বর্ণ প্রথা যুগ যুগ ধরে টিকে ছিল। পশ্চিমের ফরাসী বিপ্লবের হাওয়া বর্ণাশ্রম ধারণার এই বটবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করতে পারেনি। দুমো-বিরোধী নৃতাত্ত্বিকরা, যেমন আমেরিকান নৃতাত্ত্বিক ম্যারিয়ম মারিয়ট (১৯২৪--) জাতিপ্রথায় বিভিন্ন জাতির অবস্থান যে ভারতবর্ষের সর্বত্র একরকম না তার উপর জোর দিয়েছেন। এক প্রখ্যাত ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক এম. এন. শ্রীনিবাস (১৯১৬-১৯৯৯) দেখিয়েছেন যে জাতিপ্রথার মধ্যেও একটা গতিময়তা ছিল। বর্ণাশ্রম থেকে উদ্ভূত জাতিপ্রথা অনড়, অচল ছিল না। মূল কাঠামো পরিবর্তিত না হলেও নিম্নবর্ণের বহু জাতি নানা ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে। উনি এই সামাজিক প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছিলেন সাংস্কৃতায়ণ (Saskritization)।

বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক নির্মল কুমার বসু (১৯০১-১৯৭২) অনেকটা মার্কসীয় চিন্তার আলোকে ভারতীয় জাতি ব্যবস্থাকে একটি অর্থনৈতিক শ্রমবিভাজন ব্যবস্থা হিসেবে দেখেন। বসুর মতে উক্ত শ্রমবিভাজন ব্যবস্থা নিম্নবর্ণের জাতিসমূহকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও দিয়েছিল। অবহেলিত মার্কসবাদী নৃতাত্ত্বিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৯০-১৯৬১) জাতি ব্যবস্থাকে একধরণের শ্রেণী-ব্যবস্থা হিসেবেই দেখেছেন। ভূপেন্দ্রনাথ ভারতে জাতি ব্যবস্থা সম্পর্কিত গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে এই ব্যবস্থার উৎপত্তি এবং পরিবর্তন হয়েছিল বিচিত্র শ্রেণী সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে। এ বিষয়ে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল নানা ধরণের দেশী এবং বিদেশী পণ্ডিতদের ভারতে জাতি ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিচিত্র গবেষণায় ড. বি. আর. আমবেদকরের অবদান উপেক্ষিত। উপরে আলোচিত পণ্ডিতবর্গের মধ্যে কেউই জাতি-বর্ণ ব্যবস্থার উৎপত্তি সম্পর্কে আদেকরের অবদান নিয়ে আলোচনা করেননি। অন্য দিকে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের নৃতত্ত্বের পাঠক্রমেও আম্বেদকর বিশেষ কোন স্থান অধিকার করতে পারেননি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নৃতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, রাজনেতিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও ইতিহাস বিষয়ে লুই দুমো, জে. এইচ. হাটন, এল. এস. এস. ও'ম্যালী, জি. এস. ঘুরে, ডি. ডি. কোসাম্বী, নির্মল কুমার বসু, এম. এন. শ্রীনিবাস, সুরজিৎ সিংহ, আন্দ্রেঁ বেতেই, রজনী কোঠারী, ম্যাকিম ম্যারিয়ট, রোমিলা থাপার, বার্নার্ড কোহন ইত্যাদি আরও অনেকের অবদান সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে হয়। কিন্তু বাদ পড়ে মান আম্বেদকর। বিশেষ করে নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের পণ্ডিতবর্গের আলোচনায়। এঁদের চোখে আম্বেদকর শুধুই একজন দলিত গোষ্ঠীর নেতা। যেমন ভারতীয় সমাজতত্ত্বের প্রখ্যাত পণ্ডিত জি. এস. ঘুরে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ 'Caste and Class in India' (১৯৫৭) গ্রন্থে একবারমাত্র আম্বেদকরের নাম উচ্চারণ করেছেন ২২৬ পৃষ্ঠায়। ঘুরে আম্বেদকরকে ‘তপশীলি জাতির নেতা' হিসেবে উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন। যদিও ঘুরে অন্তর্বিবাহ (endogamy) বা সমজাতির মধ্যে বিবাহের প্রথাই যে জাতি ব্যবস্থার মূলে বিরাজ করে সে বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আম্বেদকরই সম্ভবত প্রথম গবেষক যিনি জাতি ব্যবস্থায় অন্তর্বিবাহের গুরুত্ব যে অপরিসীম সেবিষয়ে ১৯১৬ সালে আলোকপাত করেন। বিখ্যাত আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী এবং জনসংখ্যাবিদ কিংসলে ডেভিস জাতিপ্রথায় বিবাহ সম্পর্কিত ১৯৪১ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধেও এবিষয়ে আম্বেদকরের মৌলিক অবদান সম্পর্কে উল্লেখ করেননি। ডেভিসের প্রধান তথ্যসূত্র ছিল ব্রিটিশ নৃতাত্ত্বিক ও ভারতবর্ষের প্রথম জনগণনাকারী হেনরি হার্বার্ট রিসলে লিখিত ১৯১৫ সালে প্রকাশিত পুস্তক। এককথায় ভারতীয় ও পশ্চিমী নৃতাত্ত্বিক ও সমাজবিজ্ঞানীরা জাতিব্যবস্থা সম্পর্কে আম্বেদকরের মৌলিক গবেষণামূলক অবদানকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছেন। ভারতীয় নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বে আম্বেদকর উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অচ্ছুৎ এক চরিত্র। এরপর আমরা জাতিব্যবস্থা সম্পর্কে আম্বেদকরের অবদান নিয়ে আলোচনা করব।

ভারতের জাতিব্যবস্থা সম্পর্কে আম্বেদকরের গবেষণা

ড. বি. আর. আম্বেদকর ১৯২৩ সালে লণ্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে অর্থনীতি বিষয়ে ডি.এস.সি. ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর উনি ১৯২৭-এ আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আম্বেদকরকে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী প্রদান করে অর্থনীতি বিষয়ে। কিন্তু এটা অনেকেরই জানা নেই যে, আম্বেদকর প্রথমে আমেরিকায় পড়াশুনো করতে যান এবং ১৯১৩-১৬ সাল পর্যন্ত উনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময় নৃতত্ত্ব বিষয়েও পড়াশোনা করেন এবং সেটা ছিল আমেরিকান নৃতত্ত্বের স্বর্ণযুগ। তখন আমেরিকান নৃতত্ত্বের প্রবাদপুরুষ ফ্রানজ বোয়াস (১৮৫৮-১৯৪২) ও তাঁর সুবিখ্যাত ছাত্র-ছাত্রীরা কলম্বিয়ায় তাঁদের যুগান্তকারী গবেষণাগুলি করে চলেছেন। বোয়াস ছিলেন জর্মন এবং পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট। পরবর্তীকালে উনি আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং আধুনিক নৃতত্ত্ববিদ্যার চর্চা শুরু করেন। তদানীন্তন উগ্র জাতীয়তাবাদী ও বর্ণবিদ্বেষী নাৎসী দর্শন ও ক্রিয়াকলাপের তীব্র বিরোধী ছিলেন ফ্রানজ বোয়াস। তথাকথিত মেকী বিজ্ঞানবাদী জাতি-বর্ণ বিদ্বেষী (Scientific racism) ভাবধারার বিরুদ্ধে বোয়াস সারাজীবন অক্লান্তভাবে লড়াই করেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই কলম্বিয়ায় পড়াশোনা করার সময়ে আম্বেদকর বোয়াসের গবেষণা ও দর্শন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও নৃতত্ত্বের দুটি পাঠ্যক্রম অধ্যায়নের জন্য বেছে নেন। যদিও আম্বেদকর বোয়াসের একজন অন্ধ অনুরাগী ছিলেন না। বোয়াসের যুগান্তকারী গবেষণাগুলিকে কাজে লাগিয়ে আম্বেদকর ভারতের বর্ণ-জাতি ব্যবস্থার উৎস সন্ধান শুরু করেন। ১৯১৬ সালে কলম্বিয়ায় প্রখ্যাত নৃতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার গোল্ডেনওয়াইজারের (১৮৮০-১৯৪০) ক্লাস সেমিনারে আম্বেদকর ভারতের জাতি ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণাপত্রটি উপস্থাপিত করেন। তখন আম্বেদকরের বয়স মাত্র ২৫ বছর। আম্বেদকরের গবেষণাপত্রটির শিরোনাম ছিলঃ 'ভারতে জাতি ব্যবস্থাঃ পদ্ধতি, উৎস এবং বিবর্তন'। আঠারো পৃষ্ঠার এই মৌলিক গবেষণাপত্রটি ১৯১৭ সালে 'Indian Antiquary' জার্নালে প্রকাশিত হয়। এর অনেক পরে ১৯৭৯ সালে আম্বেদকর রচনাবলীর প্রথম খন্ডে উক্ত গবেষণাপত্রটি পুনরায় প্রকাশিত হয়। অথচ তাবড় তাবড় ভারতীয় এবং বিদেশী নৃতাত্ত্বিকদের জাতি ব্যবস্থা সম্পর্কিত আলোচনায় আম্বেদকরের এই মৌলিক নৃতাত্ত্বিক গবেষণাপত্রের উপর কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি মার্কসবাদী নৃতাত্ত্বিকদের আলোচনায়ও আম্বেদকর অনুপস্থিত!

ফিরে আসি আম্বেদকরের প্রবন্ধে। প্রবন্ধের প্রথম অংশে আম্বেদকর তদানীন্তন পণ্ডিতবর্গ ভারতের জাতি ব্যবস্থা সম্বন্ধে যে আলোচনা করেছিলেন তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেই সেগুলির সমালোচনা করেন। যে সমস্ত পণ্ডিতদের গবেষণা নিয়ে আম্বেদকর আলোচনা করেছিলেন, তাঁরা হলেন এমাইল সেনারট (১৮৪৭-১৯২৮), জন নেসফিল্ড (১৮৩৬-১৯১৯), এস. ভি. কেটকার (১৮৮৪-১৯৩৭) এবং এইচ. এইচ. রিসলে (১৮৫১-১৯১১)। আম্বেদকর বলেছেনঃ

"জাতি সম্পর্কিত এইসব সংজ্ঞাগুলি লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে কোন সংজ্ঞাই সম্পূর্ণ নয় এবং জাতি ব্যবস্থার মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সংজ্ঞাগুলির মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। এরা সকলেই জাতিগুলিকে যেন আলাদা এক একটি একক হিসেবে দেখেছেন। প্রতিটি জাতি আসলে গোটা জাতি-সমাজ-ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত।" (আম্বেদকর, ১৯১৭)

জাতিগুলিকে গোটা জাতি-সমাজ-ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করে দেখার এই দৃষ্টিকোণ নিঃসন্দেহে তদানীন্তন সমাজ-সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানে নতুন চিন্তার পরিচায়ক। এমনকি পরবর্তীকালের যেসমস্ত নৃবিজ্ঞানী জাতি ব্যবস্থাকে একধরণের সামাজিক শ্রমবিভাগ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন আম্বেদকর তাদের সঙ্গেও একমত নন। যেমন প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী নির্মল কুমার বসু মনে করতেন যে জাতি ব্যবস্থা এমনই একটি শ্রম বিভাজন (Division of Labour) যা কিনা বিভিন্ন পেশার জাতিগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা কমিয়ে দিয়ে প্রতিটি জাতিকে সুরক্ষিত করে। আম্বেদকরের মতে, জাতি ব্যবস্থা আসলে শ্রমজীবী শ্রেণীগুলির মধ্যে শ্রম বিভাজন। জাতি ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে শ্রেণী সমাজের শোষণের হাতিয়ার ছাড়া আর কিছুই নয়। আম্বেদকর জাতি ব্যবস্থাকে সমাজ বিবর্তনবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা করেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন যে নিকট আত্মীয়বর্গের গন্ডীর বাইরে বিবাহের প্রথাই (exogamy) হল মানবসমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং ভারতবর্ষে এই নিয়ম সভ্যতার যুগেও টিকে আছে। যদিও সমাজ বিবর্তনের নিয়মে অত্যন্ত নিকট আত্মীয় (কোনো সহোদর ভাই-বোন) ছাড়া অন্যান্য আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক নিষেধাজ্ঞা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ জাতি ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি (পুরুষ এবং মহিলা) নিজের জাতির বাইরে বিবাহ করলে তা একটি সামাজিক অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয়। জাতি ব্যবস্থা টিকে থাকে অন্তর্বিবাহের (endogamy) উপর। আম্বেদকর প্রশ্ন করেছেন এই ব্যতিক্রমের কারণ কি? এরপর আম্বেদকর অনেকটা মার্কসবাদী ইতিহাস চিন্তার আলোকে দেখিয়েছেন যে কিভাবে প্রাচীন ভারতীয় সমাজের প্রধান চারটি শ্রেণী (জাতি নয়, বর্ণ) (১) ব্রাহ্মণ, (২) ক্ষত্রিয়, (৩) বৈশ্য ও (৪) শূদ্র ক্রমে জাতিতে পরিণত হল। প্রথমে উক্ত বর্ণগুলি ছিল সামাজিক-অর্থনৈতিক পেশাভিত্তিক কতগুলি শ্রেণী। তারও পূর্বে এই শ্রেণীরও সৃষ্টি হয়নি। তখন সমাজ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত সরল এবং সাম্যবাদী। আম্বেদকর অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ আলোচনা করেননি। সে যাই হোক, বর্ণভিত্তিক শ্রেণী সমাজে দুটি শ্রেণী - ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় ক্রমে অধিকতর ক্ষমতাশালী ও সুবিধাভোগী হয়ে ওঠে। হিংসা ও যুদ্ধবিগ্রহই ছিল তাদের প্রধান হাতিয়ার। এবং এতে সাহায্য করেছিল ধর্ম। সমাজ বিবর্তনবাদী, বিশেষ করে মার্কসবাদী ঐতিহাসিকদের মতে এটাই ছিল সারা বিশ্বে বিবর্তনের চেহারা। ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ভারতে এই বিবর্তনের পথ একটা বিশেষ চেহারা নেয়। আর এই বিশেষ পথটির কথাই আম্বেদকর আলোচনা করেছিলেন তাঁর ১৯১৬ সালে লেখা নৃতাত্ত্বিক প্রবন্ধে। আম্বেদকর দেখালেন যে ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয় শ্রেণী শুধুই অধিকতর আর্থিক ও সামাজিক সুবিধা কুক্ষিগত করে ক্ষান্ত থাকেনি। একইসঙ্গে সমশ্রেণীর বাইরে বিবাহ (যা আগে প্রচলিত ছিল) নিষিদ্ধ করতে শুরু করে। অর্থাৎ একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি শুধুমাত্র সেই শ্রেণীর মধ্যেই বিবাহ করবে। এটাই হয়ে দাঁড়াল সামাজিক অনুশাসন। ফলে শুরু হল শ্রেণীভিত্তিক অন্তর্বিবাহ (endogamy) যদিও নিকট আত্মীয়, সপিন্ড ও বংশগুলিকে বহির্বিবাহ করতে হবে। যা ছিল শ্রেণী তা পরিণত হল জাতিতে। আম্বেদকর বলেছেন ভারতে শ্রেণী ব্যবস্থাই সমাজ বিবর্তনের প্রথম ধাপ। পরবর্তী পর্যায়ে বা রূপান্তরিত হল অন্তর্বিবাহ সমন্বিত জাতি ব্যবস্থায়। এবার আম্বেদকর প্রশ্ন করেছেনঃ ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা না হয় ক্ষমতাবলে এবং নানা কৌশলে জাতিতে পরিণত হল, কিন্তু বাকি দুটি শ্রেণী এই ব্যবস্থা মেনে নিল কেন? আম্বেদকরের সোজাসাপ্টা উত্তর বাংলায় তর্জমা না করে উদ্ধৃত করাই ভালঃ

"The question we have to answer in this connection is: why did these sub-divisions or classes, if you please, industrial, religious, or otherwise become self-enclosed or endogamous? My answer is because the Brahmins were so."

একটি মৌলিক নৃতাত্ত্বিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে আম্বেদকর দেখিয়েছিলেন যে কিভাবে আদিবাসী সমাজের বংশভিত্তিক বহির্বিবাহ প্রথার (Tribal clan exogamy) উপর জাতিভিত্তিক অন্তর্বিবাহ (caste endogamy) অধিষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় জাতি ব্যবস্থাকে একটা চরম ও চূড়ান্ত ধরণের শ্রেণীবিভাজন হিসেবে সম্ভবত প্রথম আম্বেদকরই দেখেছিলেন তাঁর ১৯১৭ সালের দিকনির্দেশকারী প্রবন্ধে। অথচ মার্কসবাদী নৃতাত্ত্বিক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং গান্ধীবাদী নৃতাত্ত্বিক নির্মল কুমার বসু জাতি ব্যবস্থার উপর তাঁদের গবেষণাপত্রগুলিতে আম্বেদকরের ১৯১৭ সালে লিখিত এই যুগান্তকারী প্রবন্ধের কোনও উল্লেখ করেননি (দত্ত ১৯৪২: ১২-৬৩ এবং বসু ১৯৬৫ : ১৩৩৭-১৩৪০)। সাম্প্রতিককালে কয়েকজন দেশী ও বিদেশী নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিকদের লেখায় জাতি ব্যবস্থার উৎপত্তি বিষয়ে আম্বেদকরের মৌলিক অবদানের কথা নিয়ে আলোচনা দেখতে পাওয়া যায়। নারীবাদী সমাজ তাত্ত্বিকরাও এখন আম্বেদকরের লেখায় তাঁদের গবেষণার উপাদান খুঁজে পাচ্ছেন (মস ২০১৬ : রেগে ২০১৩)।

আম্বেদকরের লেখায় জাতি ও ভূমি ব্যবস্থা

আম্বেদকর জাতি প্রথা নামক শোষণমূলক ব্যবস্থাটিকে একটি চূড়ান্ত রকমের শ্রেণী বিভাজনকারী সামাজিক বৈষম্যমূলক প্রথা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে কোনো শ্রেণী ব্যবস্থার একটা বাস্তব ভিত্তি (material basis) প্রয়োজন। অস্পৃশ্যতা (untouchability) একটি নিরালম্ব বায়ুভুক সামাজিক ধারণা নয়। আম্বেদকর মনে করতেন অস্পৃশ্যতার বাস্তব ভিত্তি হল জমির উপর মালিকানার অধিকার। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক সত্য হল যে সমস্ত রকম জমির মালিক হল ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা। জাতি ব্যবস্থায় দলিত, অস্পৃশ্য ও নিম্নবর্গের জাতিগুলি সর্বত্রই ভূমিহীন অথচ তারাই লাঙ্গল চালায়, ফসল ফলায়। সে কারণেই ১৯৫৪ সালে তপশীলি জাতি ও আদিবাসী সংক্রান্ত জাতীয় কমিশনের রিপোর্টের উপর বক্তব্য রাখার সময় আম্বেদকর জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অসাম্যের প্রতি লোকসভার সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একজন নৃতাত্ত্বিকের মতই আম্বেদকর জমিকে শুধু জীবনধারণের একটি প্রধান অবলম্বন হিসেবে দেখেননি। জমি শুধুই অর্থনৈতিক সুরক্ষা দেয় না, জমি একইসঙ্গে একজন মানুষের সামাজিক অবস্থানও নির্ণয় করে। আর সেকারণেই ভারতে উচ্চজাতির মানুষরা কোনদিনই নিম্নবর্গের জাতিগুলিকে জমির উপর মালিকানার অধিকার দেয়নি। আর এভাবেই ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা জাতি ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের শোষণ বজায় রাখতে পেরেছিল। আম্বেদকর এরকমই ভাবতেন। কাজেই 'লাঙ্গল যার জমি তার' এই মার্কসবাদী শ্লোগান, আম্বেদকরের চোখে, দলিত শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার পক্ষে যথেষ্ট নয়। কারণ তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করতেন যে, জাতি ব্যবস্থার বিনাশ ছাড়া কখনই নিম্নবর্গের মানুষ ও দলিতদের হাতে জমির মালিকানার অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সম্প্রতি 'রিভিউ অব অ্যাগরারিয়ান ষ্টাডিস' নামে এক গবেষণামূলক পত্রিকায় আওনিস কুমার ভারতের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে ড. বি. আর. আম্বেদকরের মৌলিক চিন্তাভাবনার উপর একটি চমৎকার প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। আমি উক্ত প্রবন্ধটির সারাংশ বর্ণনা করছি।

আম্বেদকরের চিন্তায় ভারতের কৃষি ব্যবস্থা সংস্কারের তিনটি মৌলিক উপাদান হলঃ (১) ভারতে কৃষি কখনই দারিদ্র্য সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে সক্ষম হবে না, (২) একই সঙ্গে শিল্পায়নও সম্পূর্ণ দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্য লাভ করতে পারবে না, (৩) সুতরাং সরকারের উচিত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমস্ত কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেই সমস্ত জমি কৃষকদের দ্বারা সংগঠিত সমবায়ের হাতে পাকাপাকিভাবে তুলে দেওয়া। আম্বেদকর কৃষিকে একটি 'রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প' হিসেবে ঘোষণা করার সপক্ষে সওয়াল করেছিলেন। ওঁর মতে সরকারের উচিত কৃষকদের সমবায় ভিত্তিক কৃষিকাজ ও কুটিরশিল্প বিষয়ে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করা।

উপসংহার

ভারতের জাতি ব্যবস্থার উৎপত্তি এবং কার্যকারিতা (functioning) বিষয়ে আম্বেদকরের নৃতাত্ত্বিক অবদান আজও নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের চৌহদ্দির মধ্যে প্রবেশাধিকার পায়নি। আজও আম্বেদকর বোধহয় নাকউঁচু উচ্চবর্ণের নৃতাত্ত্বিকদের কাছে অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য। তবে দিন পাল্টাচ্ছে এবং আরও পাল্টাবে এবং সেটা গবেষণা ও লেখালেখির চাপে। উপরন্তু, ভারতবর্ষের অন্যতম চিন্তাবিদ ও নতুন ভারত গঠনের নিরলস কর্মী ড. বি. আর. আম্বেদকরের কৃষি ও শিল্পায়ন সংক্রান্ত মৌলিক চিন্তা আজও গবেষকদের আকর্ষণ করে চলেছে, এটা কম কথা নয়। গান্ধী, জহরলাল ও মার্কসবাদীদের পাশাপাশি বাবাসাহেব আম্বেদকর তাঁর নিজস্ব জায়গা করে নেবেনই এটাই আমার দৃঢ় প্রত্যয়।


তথ্যসূত্রঃ

● Ambedkar, B. R. (1916). Castes in India: Their Mechanism, Genesis and Development. Paper presented at an Anthropology Seminar taught by Dr. A. A. Goldenweizer at Columbia University, 9th May 1916. Text first printed in: Indian Antiquary Vol. XLI (May 1917).

● Dr. Babasaheb Ambedkar: Writings and Speeches. (1979). Vol. I. Edited by Vasant Moon, Education Department, Government of Maharastra, Mumbai.

● Ambedkar, B. R. 1946. The Shudras - Who they were and how they came to be the Fourth Varna of the Indo-Aryan Society. Bombay: Thacker & Thacker Co. Ltd.

● Ambedkar, B. R. 1948. The Untouchables: Who were they and why they became untouchables? New Delhi: Amrit Book Company.

● Ambedkar, B. R. (1990) Waiting for a visa,
http://drambedkar.co.in/wp-content/uploads/books/category2/6waiting-for-a-visa.pdf (accessed on 09.06.2022).
Interested readers may visit the website maintained by Professor Frances W. Pritchett of Columbia University at

http://www.columbia.edu/itc/mealac/pritchett/00ambedkar/txt_ambedkar_waiting.html (accessed on 09.06.2022).

● Bose, N. K. (1953). [First delivered as a lecture in the Anthropology Section of the Indian Science Congress Association at Benares on January 3, 1941] The Hindu method of tribal absorption in cultural anthropology and other essays, pp.156-170. Calcutta: Indian Associated Publishing Company Ltd.

● Bose, N. K. (1953). Caste in India in cultural anthropology and other essays, pp.171-191. Calcutta: Indian Associated Publishing Company Ltd.

● Bose, N. K. (1965). Class and Caste. Economic Weekly. 17(35) : 1337-1340.

● Chairez-Garza, J. (2014). Touching Space: Ambedkar on the spatial features of untouchability. Contemporary South Asia, 22(1) : 37-50.
DOI: https://doi.org/10.1080/09584935.2013.870978

● Chairez-Garza, J. (2018). B. R. Ambedkar, Franz Boas and the Rejection of Racial Theories of Untouchability. South Asia: Journal of South Asia Studies, 41(2) : 281-296.
DOI:
https://doi.org 10.1080/00856401.2018. 1431855

● Chairez-Garza, J. (2021). Ambedkar and the production of anthropological knowledge: The case of the Depressed Classes and Aboriginal Tribes (Starte) Committee.
https://www.theotherfromwithin.com/post/ambedkar-and-the-production-of-anthropological-knowledge (accessed on 09.03.2022).

● Chairez-Garza, J. (2022). Moving untouched: B. R. Ambedkar and the racialization of untouchability. Ethnic and Racial Studies, 45(2) : 216-234.

● Channa, S. M. & J. P. Mencher (eds.) Life as a Dalit: Views from the Bottom on Caste in India. New Delhi: Sage Publications.
DOI:
https://doi.org/10.1080/01419870.2021.1924393

● Datta, B. N. (1942) Origin and Development of Indian Social Polity, Man in India. 22 : 22-63.

● Davis, K. (1941). Intermarriage in Caste Societies, American Anthropologist (NS), 43 : 376-395.

● Krishnamurty, J. (2019). Ambedkar's Educational Odyssey, 1913-1927. Journal of Social Inclusion Studies. 5(2) : 147-157.

● Guha, A. (2016). Understanding caste by B. R. Ambedkar and Nirmal Kumar Bose: a comparison. Paper presented in a National Conference on 'Caste, Culture, Power: Indian Society' held during 14-16 December 2016, organized by the Anthropological Survey of India, North-West Regional Centre, Dehradun on the occasion of 125th Birth Anniversary of Dr. B. R. Ambedkar.

● Guha, A. (2017). Ambedkar's Untouchability in Indian Anthropology, Forward Press.
https://www.forwardpress.in/2017/06/ambedkars-untouchability-in-indian-anthropology/ (accessed on 23.03.2022).

● Katulkar, R. (2017). Understanding Ambedkar's view on Caste in context of Justice and National Unity. Social Action, 67 : 327-342.

● Kumar, A. (2020). B. R. Ambedkar on Caste and Land Relations in India, Review of Agrarian Studies, 10(1) : 37-56.

● Marriott, M. (1976). Interpreting Indian Society: A Monistic Alternative to Dumont's Dualism, The Journal of Asian Studies, 36(1) : 189-195.

● Mosse, D. (2016) The Relevance of Dr Babasaheb Ambedkar - Today and Tomorrow".
https://blogs.soas.ac.uk/ssai-notes/2016/05/23/the-relevance-of-dr-babasaheb-ambedkar-today-and-tomorrow/ (accessed on 09.03.2022).

● Patel, A. K. (2022). Spatial Inequality and Untouchability: Ambedkar's Gaze on Caste and Space in Hindu Villages, Journal of Social Inclusion Studies, 7(2) : 186-198. First Published February 1, 2022,
https://doi.org/10.1177/23944811221075441

● Rege. S. (2013). Against the Madness of Manu: B. R. Ambedkar's Writings on Brahmanical Patriarchy, selected and introduced by Sharmila Rege, Delhi: Navayana.

● Siddharth (2019) Columbia University teaches Ambedkar's biography, but few in India have even read it. Print, 14 April 2019,
https://theprint.in/opinion/columbia-university-teaches-ambedkars-biography-but-few-in-india-have-even-read-it/221442/ (accessed on 09.06.2022).

● Srinivas, M. N. (1956). A Note on Sanskritization and Westemization, The Far Eastern Quarterly, 15(4) : 481-496.


কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

এই লেখা তৈরীর পেছনে দুটি মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। একজন 'আরেক রকম'-এর সম্পাদক শুভনীল চৌধুরী এবং দ্বিতীয়জন আমার স্ত্রী প্রীতিলতা গুহ। ঘরে বাইরে এদের সাঁড়াশী আক্রমণের ফলে নানা কাজের চাপের মধ্যেও শেষ করতে হল লেখাটি।

অলমিতি বিস্তরেণ।