আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ পঞ্চম সংখ্যা ● ১-১৫ মার্চ, ২০২৩ ● ১৬-৩০ ফাল্গুন, ১৪২৯

প্রবন্ধ

গুজরাত, হিন্দুরাষ্ট্র এবং মানবাধিকার (পর্ব ২)

রঞ্জন রায়


একটি উলটো ঘটনা

কর্ণাটকের বিদার জেলায় একটি মহম্মদ গওয়ান নামের সুপ্রাচীন মাদ্রাসা রয়েছে। ১৪৬০ সালে নির্মিত দক্ষিণের বাহমণী সুলতানেতের সময়কালীন এই মাদ্রাসাটি ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে প্রসিদ্ধ। এটি হেরিটেজ বিল্ডিং এবং ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এর রক্ষণাবেক্ষণ করে।

গত ৬ই অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর একটি মিছিল গিয়ে সেখানে নারকেল ফাটিয়ে পুজা অর্চনা করে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ন’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে কিন্তু এখন অবধি কেউ গ্রেফতার হয়নি। [১]

পুলিশের অধিকার নিয়ে জনমানসে নিহিত কিছু ভুল ধারণা

পুলিশ কথা বের করার জন্যে তদন্তের স্বার্থে কোনো অভিযুক্তকে টর্চার করতে পারে?

না, সেটা অপরাধ। তাই পুলিশ কাস্টডিতে নেওয়ার সময় এবং কোর্টে পেশ করার সময় অভিযুক্তের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আর থানায় জোর করে কোনো স্বীকারোক্তি নিলে সেটা আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে না (এভিডেন্স অ্যাক্টের সেকশন ২৫ এবং ২৬)।

শুধুমাত্র যে বয়ান অভিযুক্ত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বেচ্ছায় ক্রিমিনাল প্রসিডিতার অ্যাক্টের ধারা ১৬৪ নির্ধারিত পদ্ধতিতে দিয়ে সাইন করেছে সেটাই আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রাহ্য হবে।

কারণ, এ না হলে পুলিশ ভয় দেখিয়ে বা যন্ত্রণা দিয়ে কাউকে এমন অপরাধ স্বীকার করিয়ে নেবে যা সে করেনি। এছাড়া কেউ চাইলে নিজের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে স্বীকারোক্তি দিতে অথবা কোনো দলিল দিতে এই বলে অস্বীকার করতে পারে যে ‘কাউকে নিজের বিরুদ্ধে প্রমাণ বা স্টেটমেন্ট দিতে বাধ্য করা যায় না। এটি সংবিধান প্রদত্ত অধিকার' - আর্টিকল ২০(৩)।

পুলিশ এবং প্রশাসনের দায়িত্ব আইনসম্মত উপায়ে অপরাধ প্রমাণ করা, জোর করে স্বীকারোক্তি লিখিয়ে নয়। তার বৈজ্ঞানিক উপায় আছে। তাই কাউকে সন্দেহের বশে গ্রেফতার এমনকি জেরা করতে হলেও আইনসম্মত পদ্ধতি মেনে করতে হবে। যেমন মহিলাদের রাত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে পাঠানো যায় না। [২]

পুলিশের মাধ্যমে ‘ত্বরিত ন্যায়’-এর ধারণাটির উৎস কী?

ভারত সরকারের প্রাক্তন স্পেশাল ডায়রেক্টর (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) এবং ভূতপূর্ব সেন্ট্রাল ইনফর্মেশন কমিশনার যশোবর্ধন আজাদ জানাচ্ছেন যে এই ধারণাটি কলোনিয়াল। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিবাদীদের দমন করতে এটির প্রয়োগ শুরু করেছিল। প্রায় এক শতাব্দী আগে (১৯২৪ সালে) রাম্পা বিদ্রোহী নেতা আল্লুরি সীতারাম রাজু্র হত্যা তার মধ্যে একটি। রাজু তখন মাদ্রাজ ফরেস্ট অ্যাক্ট ১৮৮২-র বিরুদ্ধে ইস্টার্ন ঘাট পার্বত্য এলাকার আদিবাসীদের সংগঠিত করছিলেন। পুলিশ তাঁকে বন্দী করে আদালতে পেশ না করে গুলি করে হত্যা করে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ই অগাস্টে সমস্ত কলোনিয়াল ঐতিহ্য মুছে ফেলার ডাক দিয়েছেন। তবে তাঁর রাজ্য গুজরাতের গৃহমন্ত্রী এ’ব্যাপারে ঠিক অবহিত ন’ন মনে হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, স্বাধীন ভারতে পুলিশ এনকাউন্টারে কথিত অপরাধীর মৃত্যুর ঘটনা বড় কম নয়। যশোবর্ধন আজাদ জানাচ্ছেন যে ১৯৫০ থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে - ডাকাত দমনে, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী এবং বিভিন্ন রাজ্যে মাওবাদী দমনে সাজানো এনকাউণ্টারের অভিযোগ উঠেছিল। কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রকের বয়ান অনুযায়ী ১ জানুয়ারী ২০১৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত পুলিশ এনকাউন্টারে মৃত্যুর খতিয়ান নীচে দেওয়া হলঃ [৩]

রাজ্য মৃত্যুর ঘটনা
ছত্তিশগড় ১৯১
উত্তরপ্রদেশ ১১৭
অন্য ১৩টি রাজ্য ৩৪৭
  -----------
মোট ৬৫৫

জনতার নিজের হাতে বিচার এবং শাস্তির কিছু ঘটনাঃ

• অভিজিৎ নাথ এবং নীলোৎপল দাস আসামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরা গুজবের ভিত্তিতে উন্মত্ত জনতা তাদের গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এবং সেই দৃশ্য ভিডিও করে গর্বের সঙ্গে মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। [৪]

• ত্রিপুরা পুলিশ বলছে, গত ২৭ এবং ২৮ জুন, ২০১৮, একইভাবে গুজব ছড়িয়ে ছেলেধরা সন্দেহে চার জনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মহিলাও আছেন।

• বিবিসি বাংলার রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮ সালের মে এবং জুন মাসের ভিতর ছেলেধরা সন্দেহে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অন্ততঃ ১৪ জন মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। [৫]

• ১৯৮২ সালে কলকাতার বিজন সেতুতে উন্মত্ত জনতা ছেলেধরা সন্দেহে ১৭ জন আনন্দমার্গীকে পুড়িয়ে মারে।

• এবার কর্ণাটকের গল্প। ঝাড়খণ্ড থেকে বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে আসা ৩৩ বছরের আদিবাসী যুবক সঞ্জয় টুডুকে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, দরগা মহল্লার কাছে ছেলেধরা সন্দেহে বেধড়ক ঠ্যাঙানো হয়। ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের বয়ান অনুযায়ী হয়সালা থানার পুলিশ তাকে জীবিতাবস্থায় থানায় নিয়ে গিয়ে কমপ্লেইন করতে বলে ও হাসপাতালে ভর্তি করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সে রাজি না হয়ে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। পরের দিন ২৪ তারিখে তাকে আইটিআই কলোনির ফুটপাথে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এখন কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। [৬]

জনতা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়?

নিঃসন্দেহে এটা অবশ্যই দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার প্রকাশ। ভারতে বিচারব্যবস্থা এবং পদ্ধতি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১২ সালের গণধর্ষণের নির্ভয়া কাণ্ডে অপরাধীরা দ্রুত গ্রেফতার হয়েছে। অথচ, বিচার শেষ করে তাদের শাস্তি দিতে সময় লেগে গেল ৬ বছর।

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইণ্ডিয়ার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধর্ষণের মামলায় ৭০% বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১০% কেসে বিচার প্রক্রিয়া ২০১৮ নাগাদ শেষ হয়েছে। তার মধ্যে আবার ৭৩% ছাড়া পেয়ে গেছে।

দিশা কেসটিতে সুপ্রীম কোর্টের গঠিত কমিটি প্রশাসন এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের তাঁদের ঢিলেমির জন্যে তিরস্কার করেছে। [৭]

সেজন্যেই ৬ অগাস্ট ২০২২ নাগাদ সুপ্রীম কোর্টে ৩৪টি পদের তিনটি শূন্য, হাইকোর্টের অনুমোদিত ১১০৮ পদের মধ্যে শূন্য পদ ৩৮০। আর জেলা এবং নিম্ন আদালতে ২৪,৬৩১ পদের মধ্যে ৫,৩৪২টি খালি পড়ে রয়েছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে সর্বস্তরে অনুমোদিত পদের সংখ্যাই যে অনেক কম।

কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী কিরেন রিজ্জু বিগত ১৬ জুলাই তারিখে জয়পুরে এক সেমিনারে বললেন, দেশের বিচারালয়ে ৫ কোটি কেস ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি কেস নিম্ন আদালতের। এর মধ্যে ক্রিমিনাল কেসের সংখ্যা ৩ কোটি। সুপ্রীম কোর্টে লম্বিত রয়েছে প্রায় ৭১,০০০ কেস। [৮] সেখানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রমন্না বলেন যে, এর কারণ সর্বস্তরে পদ খালি পড়ে থাকা এবং বিচারব্যবস্থার অপ্রতুল পরিকাঠামো।

ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায় পেতে অনেক সময়ই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের কাছে সাহায্য চাইতে যান। এর ফলে গড়ে ওঠে মাফিয়া এবং সন্দিগ্ধ নায়ককে কেন্দ্র করে কিছু মিথ এবং প্রভামণ্ডল। সোশ্যাল মিডিয়া ও সিনেমায় এরকম চরিত্রকে মহিমামণ্ডিত করা হয়।

এর থেকে এক ধাপ এগোলেই জনমানসে পুলিশের এনকাউন্টারকে 'ন্যায়োচিত' বলে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। গড়ে ওঠে ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ বলে নতুন নায়কের কিংবদন্তী। আমরা খেয়াল করি না যে আসলে আমরা সিভিক সোসাইটির ধারণার বিরুদ্ধে এক সমান্তরাল মাফিয়া সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছি, তাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলছি।

এর বিষময় ফল দেখা যায় দেশের আইন প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রোফাইলে।

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এ.ডি.আর.) সাংসদ এবং বিধায়কদের এফিডেভিট অধ্যয়নের ভিত্তিতে বলছে যে তাদের নিজেদের ঘোষণা অনুযায়ী ৩৬৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস চলছে। এর মধ্যে বিধায়ক ২৯৬ জন এবং সাংসদ ৬৭। এদের মধ্যে ৪ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং ৩৫ জন বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী। তাদের মামলা ৭ থেকে ১০-১১ বছর ধরে বিচারাধীন, তাই তারা নির্বাচনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা হারাননি। [৯]

দু’দশকের লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে বিজয় প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস থাকার হার বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সালে ৫৪৩ জন বিজয়ী সাংসদের মধ্যে ১৬২ জনের (৩০%) ক্রিমিনাল কেস ছিল, যার মধ্যে ৭৬ জনের (১৪%) বিরুদ্ধে ছিল খুন, রেপ গোছের সিরিয়াস চার্জ। ২০১৯ সালের ফল বেরোলে দেখা গেল উপরোক্ত দুটো অনুপাত বেড়ে হয়েছে ৪৩% এবং ২৯%।

আরও চিন্তার বিষয়, যাঁর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস চলছে তাঁর জেতার সম্ভাবনা ১৫.৫%, অথচ যাঁর প্রোফাইল নিষ্কলঙ্ক ভালোমানুষের তাঁর চান্স মাত্র ৪.৭%! [১০]

ত্বরিত ন্যায়, বুলডোজার এবং মানবাধিকার

ত্বরিত ন্যায়ের মানসিকতা একদিক থেকে দেখলে ভীড়ের হিংস্র মানসিকতা, এর বশবর্তী হয়ে রাস্তায় পকেটমার চিৎকার শুনে ভিড়ের মধ্যে অজানা অচেনা লোকের গায়ে হাত তুলতে কারোর দ্বিধা হয় না। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হয় না। এই আদিম হিংস্রতার বশেই মর্যাাল পুলিশ হয়ে সত্যি অথবা কাল্পনিক অপবাদে প্রকাশ্য রাস্তায় কোনো মহিলার গায়ে হাত ওঠাই। ঘরে গয়না বা দামি জিনিস হারালে প্রথমেই কাজের দাদা বা মাসিকে নিজেরাই শারীরিক নিগ্রহ করতে শুরু করি।

এই মানসিকতা আমাদের অবচেতনে গেড়ে বসা পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রকাশ। আমরা মনে করি রাষ্ট্র আমাদের পিতাসম। তার কাছ থেকে আমরা চাই সুরক্ষা এবং ন্যায়। পুলিশ আমাদের চোখে সেই পিতৃতন্ত্রের ক্ষমতার প্রতীক। আমরা চাই কড়া রাষ্ট্র, কড়া পুলিশ। যদি ছাত্রদের কষে বেত না লাগাবে তবে কিসের মাস্টার! যদি অপরাধীদের না পেটাবে তো কিসের পুলিশ! রাষ্ট্র এর সুযোগ নেয়। পুলিশ যাকে ধরে আমরা মেনে নিই যে সে অপরাধী।

খেয়াল করি না যে পুলিশ যাদের রাষ্ট্রবিরোধী এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত বলে জেলে ভরছে তাদের মধ্যে কতজন পরে নির্দোষ প্রমাণিত হয়! মিথ্যে অভিযোগে জেল খেটে বিনা ক্ষতিপূরণে মাথা নীচু করে ঘরে ফেরে কতজন? [১১]

মানবাধিকার খায় না মাথায় দেয়?

মানবাধিকার কোনো আকাশ থেকে খসে পড়া আলাদা আইন নয়। এ হল রাষ্ট্রের একতরফা বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে একা ব্যক্তিমানুষের সুরক্ষার গ্যারান্টি।

রাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দেওয়া যে কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে সমষ্টির স্বার্থরক্ষার অজুহাতে তুমি আমার মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে পার না। তোমাকে নিজের আচরনের জন্যে জবাবদিহি করতে হবে ন্যায়ালয়ের কাছে।

আমার সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার, রোজগার করার, যাতায়াত করার, নিজের ইচ্ছে মত ধর্মপালনের, পরিবার প্রতিপালনের যে গ্যারান্টি সংবিধান দিয়েছে আমি কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলেও তা স্বতঃ খারিজ হয়ে যায় না।

আমি যেমন নাগরিক হিসেবে আইন মেনে চলতে বাধ্য, রাষ্ট্রও আইন নির্ধারিত পথে চলতে বাধ্য। তা না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। মানবাধিকার সবার রয়েছে; পুলিশেরও আছে। পুলিশ হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবে। কিন্তু কেউ পাথর ছুঁড়ে আহত করলে সেটা অপরাধ, মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন নয়। সেই অপরাধের জন্যে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডে শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।

বুলডোজার দিয়ে কারও পৈতৃক ঘর বিনা বিচারে ভেঙে দেওয়া একইভাবে ত্বরিত ন্যায়ের একটি প্রকাশ। এখানে প্রশাসন বিচারবিভাগের এক্তিয়ারে ঢুকে পড়ছে। শাস্তি নির্ধারণের অধিকার তো পুলিশ কেন, প্রশাসনেরও নেই। আদালত সেটা ঠিক করলে প্রশাসন তার প্রয়োগ করবে মাত্র।

এছাড়া একজনের দোষে তার পরিবার মায় বাচ্চাদের গৃহহারা করা অবশ্যই সেই মহিলা ও শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন। ওরা কোনো দোষ না করেও রাষ্ট্রের হাতে শাস্তি পাচ্ছে। রাষ্ট্রকেও বিধিসম্মত ভাবে কাজ করতে হবে।

মানবাধিকারের অবধারণা রাষ্ট্রকে স্বেচ্ছাচারী হতে বাধা দেয়।


তথ্যসূত্রঃ

১) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৭ অক্টোবর, ২০২২।
২) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২ জুন, ২০২২।
৩) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২ জুন, ২০২২।
৪) এনডিটিভি বাংলা, ১০ জুন, ২০১৮।
৫) বিবিসি বাংলা, ১ জুলাই, ২০১৮।
৬) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৮ অক্টোবর, ২০২২।
৭) যশোবর্ধন আজাদ, তাঁর ‘দ্য স্কার অফ ইন্সট্যান্ট জাস্টিস’ প্রবন্ধে।
৮) স্ক্রোল ডট ইন, ৬ অগাস্ট, ২০২২।
৯) ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ২৩ অগাস্ট, ২০২১।
১০) হিন্দুস্থান টাইমস্, ১১ অগাস্ট, ২০২১।
১১) দ্য ক্যুইন্ট, ‘বাইজ্জত বরী’, ২৫ জানুয়ারি, ২০২২।