আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ পঞ্চম সংখ্যা ● ১-১৫ মার্চ, ২০২৩ ● ১৬-৩০ ফাল্গুন, ১৪২৯

সম্পাদকীয়

প্রবল শীতেও উত্তপ্ত ইয়োরোপ


প্রবল শীতের দাপটে জবুথবু ইয়োরোপের জনজীবন। প্রতি বছর শীতকালে ইয়োরোপের বেশিরভাগ দেশে এমনটাই হয়ে থাকে। কাজেই এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। তবে অন্যান্য বছরের সঙ্গে এবারের পরিস্থিতি কিঞ্চিৎ ভিন্ন। শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে জন আলোড়ন। সামাজিক আবহ হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত।

বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলনের ঢেউ প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। কোথাও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার, অন্য কোথাও আবার বেতন বাড়ানোর জন্য চলছে ধারাবাহিক ধর্মঘট। কোনো দেশে অভিবাসী উৎখাতের জন্য জনগণ রাস্তায় নেমেছে, পাশাপাশি অন্য কোনো দেশে কর্মজীবন বাড়ানোর বিরুদ্ধে চলছে আন্দোলন। সবমিলিয়ে সংগঠিত গণ আন্দোলনের উত্তাপে থমকে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের জনজীবন।

অবসর জীবনের সীমারেখা ৬২ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত করে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে পথে নেমেছে ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ। ২০২৩-এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্সের শ্রমিক ইউনিয়নগুলি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দু'বার একদিন করে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের কথা ঘোষণা করে। দু'বারই সর্বাত্মক ধর্মঘট। প্যারিস মেট্রো সহ সমস্ত গণপরিবহণ স্তব্ধ। দশ লক্ষের বেশি মানুষ সংস্কারের বিরুদ্ধে মিছিলে অংশ নেয়।

সফল ধর্মঘটের পর জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলি ঘোষণা করে দাবি মানা না হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দেবেন। আরও বলা হয়েছে যে সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে তেল শোধনাগারের কর্মীরা ধর্মঘটে যাবেন। সাথে অত্যাবশ্যক পরিষেবার সঙ্গে জড়িত সমস্ত শ্রমিকও ধর্মঘটে যোগ দেবেন।

গ্রেট ব্রিটেনে জ্বলছে অসন্তোষের আগুন। অর্থনীতিতে মন্দা। এরই মধ্যে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে প্রায় সমস্ত সরকারি পরিষেবা বড়দিন ও নববর্ষের ছুটির মরশুমে ধর্মঘট ডেকেছে। বড়দিনের আগের শনিবার থেকে রেল, বিমানবন্দর, জাতীয় সড়ক, সীমা সুরক্ষার প্রহরী, হাসপাতালের নার্স, অ্যাম্বুলেন্স এবং ডাক দপ্তর - সকল কর্মী ইউনিয়নের ধর্মঘটে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা ব্রিটেন। ২৭শে ডিসেম্বর মঙ্গলবার অবধি ধর্মঘট চলার পর সাময়িক বিরতি। পরের সপ্তাহান্তে বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের উৎসবমুখর দিনগুলিতে আবার ধর্মঘট শুরু হবে আর তা গড়িয়ে যাবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।

বিশেষজ্ঞদের মতে কোভিড পরবর্তী ব্রিটেন ব্রেক্সিট এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মাশুল গুনছে। ঊর্ধ্বমুখী মূল্যবৃদ্ধিতে হাসফাঁস করছেন ব্রিটিশ জনগণ। বেড়েছে আয়কর, সুদের হার, পেট্রোলের দাম, রেলের ভাড়া সহ সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। সেই তুলনায় সরকারি কর্মক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি হয়নি। কোভিডের জন্য সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে দেশে গণপরিবহণ ব্যবস্থা। এ কারণে ২০২২-এর মার্চ থেকে লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড বা মেট্রো পরিষেবা ও জাতীয় রেলের কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে ধর্মঘট শুরু করেন। তারপর লন্ডনের বাস কোম্পানিগুলোর কর্মচারীদের চাক্কা জ্যাম শুরু হয়। তাদের দাবি, এমনিতেই গণপরিবহণ সামান্য কর্মী নিয়ে চলছে। টাকার অভাবে সরকার নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতনবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৯% এবং সরকারি ক্ষেত্রে হয়েছে ২.৭%৷ অসন্তোষ সৃষ্টির যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই ব্যবধান ঘোচাবে কে?

সরকারি হস্তক্ষেপের দাবিতে ২০২২-এর মার্চ মাস থেকেই ব্রিটেনে সড়ক, রেল, নৌবাহিনী সহ বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়ন ছুটির সময়গুলোতেই ধর্মঘট ডাকছিল। বছর শেষের উৎসবে জল ঢালতে সেই ধর্মঘটে যোগ দেয় হাসপাতাল এবং ডাক যোগাযোগের কর্মীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যাপক ধর্মঘট আর্থিক বৃদ্ধির হার ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সমস্ত ইউনিয়নের দাবি মেনে বেতন বৃদ্ধি করতে হলে সরকারি কোষাগারে অন্ততঃ ২,৮০০ কোটি পাউন্ডের বাড়তি সংস্থান করতে হবে।

সরকারের পক্ষে যথারীতি জানানো হয়েছে, আলোচনার জন্য দরজা সবসময় খোলা। কিন্তু বিভিন্ন পেশার ইউনিয়ন নিজেদের দাবি থেকে একচুলও নড়ছে না। যার ফলে অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ১০৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বিক্ষোভ ধর্মঘটে সামিল হয়েছে রয়্যাল নার্সিং কলেজের নার্সরা। তাদের দাবি, ‘সরকারের তিন শতাংশ বেতন বৃদ্ধি মানা যায় না।’‌ কমবেশি ১ লক্ষ নার্স ৭৬টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নার্সরা বিক্ষোভ শুরু করায় জরুরি অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসার তারিখ পিছিয়ে গিয়েছে। সদ্যই প্রথম দফার ধর্মঘট করেছেন নার্সরা। এবার অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন প্যারামেডিক্যাল কর্মী এবং পরিচালনা বিভাগের কর্মীরাও।

কোভিডের সময় হোটেল - ছোটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত স্বল্প আয়ের পরিবারগুলিকে সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে রাজকোষ থেকে নাকি ৫৫৫০ কোটি পাউন্ড বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। তার উপর ইউক্রেন যুদ্ধ জাতীয় আয়ের উপর বড়ো প্রভাব ফেলেছে। ফলে সরকারি ক্ষেত্রে বেতন বাড়ছে না। এ'সবকিছুর মধ্যে বিপাকে সাধারণ মানুষ।

অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। ২১ এবং ২৮ ডিসেম্বর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ব্রিটেনের অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীদের তিন প্রধান ইউনিয়ন। ধর্মঘটের জেরে পরিস্থিতি কঠিন হতে পারে বলে আগেই জানিয়ে দেয় ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস্ (এনএইচএস)’র প্রধান। বাস্তবে তেমনই ঘটেছে। হাসপাতালের জরুরী পরিষেবা চালু রাখার জন্য ১২০০ ফৌজি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা এনএইচএস্-এর অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সরব। মূল্যবৃদ্ধির চড়া হার প্রায় দু’অঙ্কে পৌঁছেও যাচ্ছে। সরকার অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীদের ৪.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছে। কর্মীদের দাবি মূল্যবৃদ্ধির হার হিসেবে রেখে বাড়াতে হবে বেতন। অ্যাম্বুলেন্স কর্মীদের পাশাপাশি ওয়েলস্ ও ইংল্যান্ডে কর্মবিরতিতে নেমেছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী ও টেকনিশিয়ানরা। গত তিন দশকে এটাই তাঁদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মঘট। আন্দোলনকারীদের কাছে আর্জি রাখা হয়েছিল, যাতে তাঁরা মুমূর্ষু রোগীদের ফিরিয়ে না দেন। কর্মীরা কথা রাখলেও সরকার মাথা নিচু করেনি।

স্পেনের প্রায় ১৬০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ৩০ জানুয়ারী থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতি সোমবার একটি ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজেই তাঁদের প্রাথমিক দাবি পুরোনো বেতন কাঠামো ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি তাঁদের ইউনিয়নের দাবি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ানো হোক ভোক্তা মূল্য সূচক বা কনজিউমার্স প্রাইস ইনডেক্স, যার ফলে তাঁদের মহার্ঘ ভাতা বাড়বে। সরকারি বয়ানে সাপ্তাহিক ধর্মঘটের জেরে স্পেনের বিমান পরিবহণ ব্যবস্থার অন্ততঃ তিরিশ শতাংশ বিপর্যস্ত।

নেদারল্যান্ডসের গণপরিবহণ ব্যবস্থার ১৩ হাজার কর্মী সারা দেশ জুড়ে একটানা পাঁচ দিনের ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের ইউনিয়নের দাবি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বেতন কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। তাঁদের আরও উষ্মার কারণ সরকার এ বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি নয়। ধর্মঘটের কারণে নেদারল্যান্ডসের প্রায় ৪০ শতাংশ গণপরিবহণ বিভিন্ন অঞ্চলে বাতিল হয়ে গেছে।

গ্রিসের সর্বত্র মিউনিসিপ্যাল কনস্ট্রাকশন সার্ভিসের কর্মীরা ফেব্রুয়ারি মাসে একদিনের জন্য কর্মবিরতি পালন করেন। তাঁদের ইউনিয়নের প্রধান দাবি বেতন বৃদ্ধি হলেও অন্যান্য দাবিগুলিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কর্মী সংকোচনের বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন। বেসরকারিকরণ এবং আউটসোর্সিং বন্ধ করার দাবিতে গ্রিসের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বিমান কর্মীদের একদিনের ধর্মঘটে বন্ধ হয়ে যায় জার্মানির সাতটি বিমান বন্দর। মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্ট সহ সাতটি বিমানবন্দরে আটকে পড়েন তিন লক্ষ যাত্রী। বাতিল হয় ২৩৪০টি ফ্লাইট। ধর্মঘটীদের দাবি অন্ততঃ ১০.৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা অচিরে এই সমস্যার সমাধান না হলে আগামী গ্রীষ্ম সমস্যাসঙ্কুল হয়ে যাবে।

বিমান কর্মীদের ধর্মঘটের এক সপ্তাহ পরেই বার্লিনে আয়োজিত হল সরকার বিরোধী এক অন্য মাত্রার আন্দোলন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দিনে জার্মানি-সহ পশ্চিমি শক্তিগুলি কিভকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা আরও অস্ত্র পাঠাবে ইউক্রেনে। ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার বিরুদ্ধে বার্লিনের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখালেন অন্তত দশ হাজার মানুষ। তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিলেন জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে। অস্ত্র পাঠানো নয়, যুদ্ধ থামানোর দাবি জানাল বিক্ষুব্ধ জনতা। বার্লিন পুলিশের তরফে জানানো হয়, সেন্ট্রাল বার্লিনে ‘ব্র্যানডেনবার্গ গেট’-এর সামনে জড়ো হন দশ হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে ১৪০০ পুলিশকর্মীকে নামানো হয়েছিল রাস্তায়। সমাবেশটির আয়োজন করেছিলেন এক বামপন্থী জার্মান রাজনীতিক, সাহরা ওয়াগেননেক্ট। অর্থাৎ অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া আদায়ের আন্দোলন ক্রমশঃ রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হতে চলেছে।

ইতালি, হাঙ্গেরি এবং পর্তুগাল সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতেও ২০২৩-এর শুরুতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

সমগ্র ইউরোপে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম বেড়ে চলেছে। গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত নয়। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। রাষ্ট্র আদৌ চিন্তিত নয়। পক্ষান্তরে চলছে ব্যাপক হারে ছাঁটাই এবং বেতন সঙ্কোচন। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে এই পরিস্থিতি অনেকদিন ধরেই বিরাজ করছিল। করোনা মহামারির সুবাদে 'সামাজিক দূরত্ব' বজায় রাখার শ্লোগানের আড়ালে পুরো সামাজিক বিন্যাসকে এলোমেলো করে দেওয়া হয়। সুখে দুঃখে মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর চিরায়ত প্রবৃত্তির অবসান ঘটিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা হয় ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনযাপন ব্যবস্থা। ভেঙে পড়ে সমস্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠান, প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মচ্যুতি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সমস্যা নিয়ে জেরবার প্রতিটি মানুষ এতদিন একাকী সোচ্চার হতে পারছিলেন না। হয়নি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আন্দোলন। এহেন সঙ্কটকালে ট্রেড ইউনিয়ন দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হয়ে সমস্ত রকমের ক্ষোভ একত্রিত করে গড়ে তুলেছে গণ আন্দোলন। প্রয়োজনে ডাকা হচ্ছে সাধারণ ধর্মঘট। দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য ট্রেড ইউনিয়নগুলি গণ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। হয়তো সেই কারণেই সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকাই সঙ্গত মনে করছে। নব উদারিকরণের অর্থনীতিতে ট্রেড ইউনিয়নের কোনো ভূমিকা নেই বলে গত তিন দশক ধরে যে প্রচার চলছিল তার যোগ্য জবাব বোধ হয় ২০২২ ও ২০২৩-এ ইয়োরোপের দেশগুলির আন্দোলন দিতে পেরেছে।

আটলান্টিকের ওপারে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে নিয়মিত কর্মী ছাঁটাই হলেও সেখানে কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। বরং এইসব সংস্থার তথাকথিত 'হোয়াইট কলার জব'-এ কর্মরতরা অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে অভ্যস্ত ছিলেন। কর্মচ্যুতদের অধিকাংশই এখন আতঙ্কগ্রস্ত। কারণ, তাঁরা মূলতঃ অভিবাসী। কাজ চলে গেলে তো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্ভব নয়। কাজেই তাঁদের জন্য এ এক আতঙ্কগ্রস্ত সঙ্কটজনক সময়। শোনা যাচ্ছে তাঁরাও এখন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। চূড়ান্ত বিচারে আবারও প্রমাণিত হচ্ছে যে সম্মিলিত ও সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ-প্রতিরোধই শ্রমজীবী মানুষের দাবিদাওয়া আদায়ের এক এবং একমাত্র অস্ত্র।