আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ● ১৬-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ● ১-১৫ ফাল্গুন, ১৪২৯

প্রবন্ধ

আমেরিকায় ধর্ম-বিজ্ঞান অশান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

আশীষ লাহিড়ী


যিশু খ্রিস্ট বলেছিলেন, ‘একজন ধনী ব্যক্তির ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং সূচের ছিদ্রপথে একটি উটের পেরিয়ে যাওয়া সহজ’। আমেরিকার পিউরিটানরা বিরিঞ্চি বাবার কায়দায় সে'কথাটাকে বদলে নিয়ে বললেন, তা কেন, চার হাতে অর্থ উপার্জন করে দু'হাতে দান করলেই ধন উপার্জনের পাপ কেটে যাবে। আমেরিকার ধর্মচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা, বাণিজ্য, শিল্পবিকাশ এবং রাজনীতির ওপর এই পিউরিটান জীবনদর্শনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল।

হার্ভার্ডঃ ধর্ম-বিজ্ঞান সহাবস্থান

১৬৩৬ সাল নাগাদ নিউ ইংল্যান্ডে পিউরিটান অভিবাসীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ হাজার। তাঁদের ধর্মাচরণের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক যাজকের জোগান দেবার লক্ষ্যে স্থাপিত হল একটি ধর্মীয় কলেজ।


হার্ভার্ড কলেজ

১৬৩৯ সালে তার নাম দেওয়া হল হার্ভার্ড কলেজ, যেহেতু জন হার্ভার্ড নামে একজন যাজক তাঁর ইচ্ছাপত্রে কলেজটির জন্য কিছু টাকা আর বই বরাদ্দ করে যান। পরে কলেজ রূপান্তরিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ১৬৫৪ সালে সমস্যা দেখা দিল। কলেজের প্রথম সভাপতি হেনরি ডানস্টার ব্যাপটিস্ট মত গ্রহণ করায় পিউরিটানরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলেন। তাঁদের মতে এটা বিশ্বাসঘাতকতা। প্রবল অশান্তির মুখে ডানস্টার পদত্যাগ করলেন। আরও কিছু ঝঞ্ঝাট সামলে ১৬৯২ সালে হাওয়া ঘুরল। ঘোর পিউরিটানপন্থী ইনক্রিস ম্যাথের হলেন হার্ভার্ডের সভাপতি। তাঁর কাছে সবার ওপরে সত্য বাইবেল। বহু-ঈশ্বরবাদী সাহিত্য পড়ানো নিষিদ্ধ হল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এই হার্ভার্ডেই প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানের অঙ্কুরোদগম হল আমেরিকায়। সভাপতি ইনক্রিস ম্যাথের-এর পুত্র কটন ম্যাথের (১৬৬৩-১৭২৮) ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক বিষয়ে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চললেও, একই সঙ্গে চাইলেন, বিজ্ঞানচর্চায় বৃত্তিনৈপুণ্য আসুক।


কটন ম্যাথের

পরীক্ষাভিত্তিক বিজ্ঞানে তাঁর খুব উৎসাহ ছিল। ১৭১৩ সালে রয়্যাল সোসাইটি তাঁকে ফেলো করার প্রস্তাব নিলেও কিছু প্রকরণগত ভুলে ১৭২৩ সালে তিনি কাগজে কলমে ওই সম্মান লাভ করেন। পরীক্ষাভিত্তিক বিজ্ঞানের প্রতি ম্যাথের-এর এই আগ্রহ জেগে উঠেছিল রবার্ট বয়েল-এর বই পড়ে। তিনি বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে নামেন এবং চার্চের উপদেশমালায় কোপার্নিকাস-এর সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের তত্ত্ব প্রচার করেন।

অথচ অন্য সব ব্যাপারে তিনি ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল। ক্রীতদাস প্রথা নিয়ে তাঁর আপত্তি ছিল না। সবচেয়ে বড়ো কথা, তিনি মনে করতেন শয়তানের প্রভাবে সত্যি সত্যিই ডাইনি বলে একটা কিছুর অস্তিত্ব আছে। 'Memorable Providences Relating to Witchcrafts and Possessions' (1689) নামে বই লিখে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, শয়তানের প্রভাবে শ্রমজীবী ঘরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ‘প্রবল ডাইনিপনা’ ভয়ংকরভাবে ছড়িয়েছিল। কুখ্যাত সালেম ডাইনি মামলায় (১৬৯২-৯৩) অভিযুক্তদের শাস্তিদানের পিছনে কটন ম্যাথের ও তাঁর বাবা ইনক্রিস ম্যাথের-এর বইগুলির প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। সেই মামলায় দুশোরও বেশি লোককে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাঁদের বেশির ভাগই মহিলা বা বালিকা। তার মধ্যে ৩০ জন দোষী সাব্যস্ত হয়, ১৯ জনকে (১৪ মহিলা, ৫ পুরুষ) ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।


১৬৯৩ সালে কটন ম্যাথার রচিত 'দ্য ওয়ান্ডারস অফ দ্য ইনভিজিবল ওয়ার্ল্ড'

ধর্ম-বিজ্ঞান বৈরিতাঃ কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়

বাণিজ্য আর ম্যানুফ্যাকচারের তাগিদে পিউরিটান ধর্মের ছত্রচ্ছায়ায় কেজো বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অবধারিতভাবে মাথা চাড়া দিল ধর্ম-বিজ্ঞান দ্বন্দ্ব। প্রশ্ন উঠল, বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মকে মেলানো যায় কি? জন ড্রেপার আর অ্যান্ড্রু হোয়াইট একদিকে, অন্যদিকে চার্লস হজ আর জেমস ম্যাক্‌কশ-এর তর্ক-বিতর্কে উনিশ শতকে মুখরিত হল আমেরিকার চিন্তাজগত।


জন উইলিয়াম ড্রেপার (১৮১১-১৮৮২)

বিখ্যাত ডাক্তার, রসায়নবিদ, ইতিহাসবিদ এবং ফটোগ্রাফার জন উইলিয়াম ড্রেপার (১৮১১-১৮৮২) ছিলেন বহু-গুণান্বিত মানুষ। অন্যান্য অনেক কাজের মধ্যে ১৮৪০ সালে তিনি প্রথম চাঁদের বিস্তারিত ছবি তোলেন।


ড্রেপারের তোলা চাঁদের ছবি

১৮৭৪ সালে 'History of the Conflict between Religion and Science' বইতে ধর্ম আর বিজ্ঞানের স্বভাব-বৈরিতার তত্ত্ব খুব জোরের সঙ্গে উপস্থিত করেছিলেন তিনি। বইটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল। আমেরিকায় এর পঞ্চাশটি সংস্করণ হয়েছিল, অনুবাদ হয়েছিল দশটি ভাষায়। ধর্ম আর বিজ্ঞানের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা আমূলে বাতিল করে দিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞানের ইতিহাস তো ‘কেবল কিছু বিচ্ছিন্ন আবিষ্কারের খতিয়ান নয়, তা হল দুটি বিপরীতমুখী শক্তির সংঘাতের ইতিবৃত্তঃ একদিকে মানুষের মননক্রিয়ার প্রসারণ-শক্তি, অন্যদিকে যুগবাহিত বিশ্বাস আর স্বার্থ থেকে উদ্ভূত সংকোচন-শক্তি’। প্রাচীন গ্রীসে বিজ্ঞানের উৎপত্তির বর্ণনা করে তিনি দেখান, কীভাবে রোমক যুগে খ্রিস্টধর্মের উদ্ভব ইউরোপে বিজ্ঞানের বিকাশকে থামিয়ে দিয়েছিল। নিজে ক্যাথলিক-বিরোধী প্রোটেস্টান্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি স্বীকার করেন যে খ্রিস্টধর্মের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাখা কিন্তু ‘একটা ব্যাপারে একমত ছিলঃ বিজ্ঞানের যেসব তত্ত্ব তাঁদের মতে শাস্ত্রের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়, সেগুলি ছাড়া আর কোনো বিজ্ঞান গ্রাহ্য নয়’।

ড্রেপারের পথ ধরেই এগিয়ে এসেছিলেন অ্যান্ড্রু ডিকসন হোয়াইট (১৮৩২-১৯১৮)। নিউ ইয়র্ক স্টেটের সেনেটর, জার্মানি আর রাশিয়াতে আমেরিকার কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বেশ প্রভাবশালী মানুষ ছিলেন।


অ্যান্ড্রু ডিকসন হোয়াইট

তবে তাঁর সবচেয়ে বড়ো পরিচয়, তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে “বিজ্ঞানের এক আশ্রয়-শিবির, যেখানে সত্যের অনুসন্ধান চলবে সত্যের খাতিরেই, ঈশ্বর-প্রত্যাদিষ্ট ধর্মের ছাঁচ মাফিক সত্যকে কেটেছেঁটে নেওয়ার জন্য নয়”। মনে রাখতে হবে, কর্নেল-এর আগে অব্দি আমেরিকার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল। সেসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণভাবে মানবিকী বিদ্যা আর ধর্মীয় প্রশিক্ষণের ওপরেই জোর দেওয়া হত, যুক্তিশীলতা কিংবা বিজ্ঞানের ওপরে নয়। ১৮৬৫ সালের ২৭ এপ্রিল কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও, পঠনপাঠন শুরু হয় ১৮৬৮-র অক্টোবর মাস থেকে। হোয়াইট স্বয়ং ঘুরে ঘুরে এর জন্য ছাত্র ও শিক্ষক সংগ্রহ করেছিলেন।


কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিরূপ

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হওয়ার পরেই, অর্থাৎ ড্রেপারের বই বেরোবার পাঁচ বছর আগেই, ১৮৬৯ সালে হোয়াইট ‘বিজ্ঞানের রণক্ষেত্র’ শীর্ষক একটি বক্তৃতায় বলেন, “ইতিহাস এই কথাই জানায় যে ধর্ম যখনই বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে রোধ করতে চেয়েছে তখনই ফল হয়েছে নেতিবাচক।” এই নিয়ে সুদীর্ঘ গবেষণার পর তিনি লেখেন দু খণ্ডে সম্পূর্ণ 'A History of the Warfare of Science with Theology in Christendom' (1896)। তাতে তিনি ইতিহাস থেকে নজির তুলে তুলে মতান্ধ ধর্মতত্ত্বর সঙ্গে বিজ্ঞানের চির-সংঘাতের তত্ত্ব প্রতিপন্ন করেন।

তাঁর বই যদিও প্রথম দিকে ড্রেপারের বইয়ের মতো অত জনপ্রিয় হয়নি, তবু ধর্ম আর বিজ্ঞানের সম্পর্ক বিষয়ে এটি এক উল্লেখযোগ্য রচনা বলে স্বীকৃত।

প্রিন্সটন, ডারউইনঃ ধর্ম-বিজ্ঞান সমন্বয়

আদিতে প্রিন্সটন কলেজ তৈরি হয়েছিল প্রেসবিটারিয়ান সম্প্রদায়ের পাদ্রিদের প্রশিক্ষণের জন্য। কিন্তু কিছুকাল পরে যখন দেখা গেল, খাঁটি ধর্মীয় মতাদর্শ থেকে কলেজ সরে যাচ্ছে, তখন কট্টর প্রেসবিটারিয়ানপন্থীরা প্রিন্সটন ধর্মমহাবিদ্যালয় (সেমিনারি) নামে একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেন। প্রিন্সটন কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে বেরোনো মাত্রই ১৮১৬-য় চার্লস হজ (১৭৯৭-১৮৭৮) সেই সেমিনারিতে যোগ দিলেন। পরে তার অধ্যাপক এবং অবশেষে অধ্যক্ষ (১৮৫১-১৮৭৮) হন। ইউরোপের বহু দেশ ভ্রমণ করেন, হয়ে ওঠেন ‘প্রিন্সটনীয় ধর্মতত্ত্বে’র মুখ্য প্রবক্তা।


চার্লস হজ

এই মহাপণ্ডিত বহুভাষাবিদ মানুষটি বাইবেলকে সাক্ষাৎ ঈশ্বরের বাণী বলে মানতেন, ঠিক-বেঠিকের বিচারে বাইবেলই ছিল তাঁর কাছে একমাত্র অভ্রান্ত নিরিখ। তিনি ক্রীতদাসদের ওপর অত্যাচারের নিন্দা করলেও দাসপ্রথার বিরোধী ছিলেন না, নিজে বেশ কয়েকটি দাসের মালিকও ছিলেন; এবং দাসপ্রথার সপক্ষে যুক্তি খুঁজে পেতেন বাইবেলে। যতক্ষণ না বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্ব বা তথ্য বাইবেলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, ততক্ষণ বিজ্ঞান নিয়ে, এমনকী বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তি তো ছিলই না, বরং সমর্থন ছিল। ঝামেলা পাকল ডারউইনকে নিয়ে। কারণ বিবর্তন-তত্ত্ব, বিশেষ করে প্রাকৃতিক চয়ন বা নির্বাচনের ধারণা, সরাসরি বাইবেলের কর্তৃত্বকেই আঘাত করল।


১৮১৬য় চার্লস হজ লিখলেন 'What is Darwinism?'

১৮৭৪ সালে, ড্রেপারের বইয়ের প্রায় সমসময়ে হজ লিখলেন What is Darwinism? তাঁর মতে ডারউইনবাদ ঐশ্বরিক পূর্বপরিকল্পনা স্বীকার করে না, সুতরাং তা নিরীশ্বরবাদী, সুতরাং বর্জনীয়। কলেজে কলেজে ডারউইনের মত প্রভাব বিস্তার করছে দেখে তিনি আতঙ্কিত হলেন। ঠিক এই সময়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি জন ম্যাকলিনও প্রকাশ্যে ডারউইনের বিবর্তনবাদকে প্রত্যাখ্যান করলেন। হজ-এর হাত কিছুটা শক্ত হল। প্রিন্সটন সেমিনারি আর প্রিন্সটন কলেজ উভয়েই হয়ে উঠল ডারউইন-বিরোধিতার আর কট্টর বাইবেল-পন্থার ঘাঁটি।


স্কটিশ দার্শনিক জেমস ম্যাক্‌কশ

কিন্তু ১৮৬৮ সালে হাওয়া খানিকটা ঘুরল। জন ম্যাকলিন অবসর নেওয়ার পর স্কটিশ দার্শনিক জেমস ম্যাক্‌কশ হলেন প্রিন্সটন কলেজের সভাপতি। তিনি ডারউইনবাদের সঙ্গে ঐশ্বরিক পূর্বপরিকল্পনার একটা আপোশরফার উদ্যোগ নিলেন। তাঁর যুক্তি, বিবর্তনই তো প্রমাণ করে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূলে আছে এক প্রাক-পরিকল্পনা, এক বিশেষ দক্ষতা আর উদ্দেশ্যমুখিতা। তা যদি হয়, তাহলে বিবর্তনবাদকে কেন নিরীশ্বরবাদী বলা হবে? বাইবেলের সঙ্গে সে-তত্ত্বের যেটুকু দ্বন্দ্ব তা আদৌ অসমাধেয় নয়, মোটেই বৈরিতামূলক নয়। তিনি এক নতুন তত্ত্ব দিলেনঃ আপত্তিটা বিবর্তনবাদ নিয়ে নয়, প্রাকৃতিক চয়নের প্রক্রিয়া নিয়ে।

আজ আমাদের কাছে বিবর্তনতত্ত্ব আর প্রাকৃতিক চয়ন একাত্ম, একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির কথা আমরা ভাবতেই পারি না। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, বিবর্তনের ধারণা আর প্রাকৃতিক চয়নের ধারণা এক নয়। বিবর্তন মানে ধীরেসুস্থে ধাপেধাপে পরিবর্তন; আর প্রাকৃতিক চয়ন হল সেই ধীরগতি পরিবর্তন কোন প্রক্রিয়ায় ঘটে তার ব্যাখ্যা। ম্যাক্‌কশ-এর যুক্তিঃ যেহেতু ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো কিছুই ঘটতে পারে না, অতএব ঈশ্বর নিশ্চয়ই সেইসব ধীরগতি পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কিন্তু সেটা মানলে আবার ডারউইনের তত্ত্ব মিথ্যা হয়ে যায়। তিনি তো এটাই দেখিয়েছিলেন যে, বিবর্তন ঘটে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে, ঈশ্বর নামক কোনো এজেন্সির ভূমিকা ছাড়াই। কাজেই প্রাকৃতিক চয়ন আর স্রষ্টা ঈশ্বরের ধারণা কখনো সহাবস্থান করতে পারে না। তাই শ্যাম এবং কুল, দুদিকই বজায় রাখবার জন্য ম্যাক্‌কশ বললেন, বিবর্তন নিশ্চয়ই একটা বাস্তব ঘটনা, কিন্তু প্রাকৃতিক চয়ন ডারউইনের কপোলকল্পিত একটা গালগল্প ছাড়া আর কিছুই না।

এইভাবে প্রিন্সটন থেকে বিবর্তনবাদ সম্পর্কে দুটি ঘরানার উদ্ভব হল। প্রিন্সটন সেমিনারি হজ-এর কট্টর বিবর্তনবাদ-বিরোধী অবস্থান আঁকড়ে রইল (পরে ১৯২৯ সালে তাঁর সমর্থকরা অবশ্য সেখান থেকে উৎখাত হয়ে গিয়েছিলেন)। অন্যদিকে বাইবেল আর বিবর্তনের নির্বিরোধী সহাবস্থান-তত্ত্বর সুবাদে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমে হয়ে উঠল বিবর্তনী জীববিজ্ঞানের এক বিশ্বমানের চর্চাকেন্দ্র।

জিতল কিন্তু আপোশপন্থাই; অর্থাৎ বিবর্তনবাদ নিরীশ্বরবাদী নয়, বরং বিবর্তনবাদ বাইবেল-কথিত সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গত - এই মতবাদ।

______________________________
১) লুকঃ ১৮/২৫, পবিত্র বাইবেল, পুরাতন ও নূতন নিয়ম, ভারতের বাইবেল সোসাইটি, বাঙ্গালোর ২০১২, (নূতন নিয়ম) পৃষ্ঠা ১২৫।
২) https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Harvard_University#Founding_and_Colonial_era
৩) https://en.wikipedia.org/wiki/Andrew_Dickson_White#Conflict_thesis
৪) https://en.wikipedia.org/wiki/Charles_Hodge