আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ● ১৬-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ● ১-১৫ ফাল্গুন, ১৪২৯

প্রবন্ধ

গুজরাত, হিন্দুরাষ্ট্র এবং মানবাধিকার (পর্ব ১)

রঞ্জন রায়


হিন্দুরাষ্ট্র

পশ্চিম ভারতের আরব সাগর ঘেঁষে গুজরাত রাজ্যের জনতা বিগত ডিসেম্বর মাসে বিধানসভা নির্বাচনে তাদের নতুন সরকার তৈরি করেছে। শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে বিপুল ভোটাধিক্যে জয়ী হয়েছে, বিজেপি এবং জয়ী হয়েছে 'হিন্দুত্ব'র রণধ্বনি। এবারের নির্বাচনে মূল ইস্যু ছিল উন্নয়ন বা বিকাশ নয়, বরং ‘হিন্দুত্বে’র জয়গান।

গোধরা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক চন্দ্রসিং রাওজি এবারও ওই কেন্দ্র থেকে ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের ঠিক মুখেই যে কমিটি গোধরা এলাকার বিলকিস বানোর ধর্ষক ও শিশুহত্যাকারী দলটিকে মুক্তির সুপারিশ করে তিনি ছিলেন তাঁর প্রধান। তিনিই ওই দলটিকে উঁচু ব্রাহ্মণকুলে জন্ম নেওয়ার এবং আদর্শ সংস্কার পেয়ে বেড়ে ওঠার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন।

নিউজ লন্ড্রি পোর্টালের প্রতিনিধি গুজরাতের নির্বাচন কভার করতে গিয়ে দুটি জিনিস লক্ষ্য করেনঃ

১) গুজরাতে জনৈক সি.আই.এস.এফ. (সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স)-এর জওয়ান বলছেন, আমাদের শুধু হিন্দুধর্ম নিয়ে চিন্তা। রাম মন্দির হয়েছে, এবার হিন্দু রাষ্ট্র।

২) গুজরাতের দীব থেকে উনা যাওয়ার পথে বেশ কিছু গাঁয়ে (যেমন, ১২ কিমি দূরের দেলবাড়া) ঢোকার মুখে চোখে পড়ছে একটা নোটিস বোর্ড, ‘হিন্দুরাষ্ট্রনু গাঁও মেঁ আপনুঁ হার্দিক স্বাগত করে ছে’। অর্থাৎ হিন্দুরাষ্ট্রের এই গাঁয়ে আপনাকে স্বাগত জানাই। এই নোটিসগুলো লাগাচ্ছে কম বয়সী ছেলের দল, কিন্তু প্রবীণদেরও সম্মতি রয়েছে। [১] কথা বললে বোঝা যাচ্ছে যে এদের দৃঢ় বিশ্বাস মোদীজি আগামী ২০২৯ নাগাদ এই দেশকে 'হিন্দুরাষ্ট্র' ঘোষণা করবেন।

উন্নয়ন ও পুলিশরাষ্ট্র

নিঃসন্দেহে গুজরাত ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প ইত্যাদির পাটিগণিতে ভারতের সামনের সারির একটি রাজ্য। মিডিয়ায় হরদম শোনা যায় গুজরাত মডেলের গুণগান। গুজরাত মডেলের গুণগান করবার সময়ে আরও কিছু তথ্য জানলে সামগ্রিক বিচারে সুবিধা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো অগুনতি ভিডিও’র মধ্যে একটি ইদানীং অনেকের নজর কেড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গুজরাতের কোনো এক রাস্তায় চার-পাঁচজন লোককে, একের পর এক, ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হচ্ছে। যাদের পেটানো হচ্ছে তারা ক্রমাগত হাত জুড়ে অনুনয় বিনয় করছে, আর মেরো না! আর উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ছে, হাততালি দিচ্ছে।

জায়গাটা কোথায়? যারা মারছেন তাঁরা কে? যাঁদের পেটানো হচ্ছে তাঁরাই বা কারা?

একটা ব্যাপার সবার নজরে এলো যে যাঁরা পেটাচ্ছেন তাঁদের একজনের কোমরের বেল্ট সংলগ্ন হোলস্টারে রিভলবার। তবে কি এঁরা সাদা পোষাকের পুলিশ? সন্দেহ পোক্ত হল যখন দেখা গেল খানিকক্ষণ পেটানোর পর তাঁরা বন্দীদের টেনে নিয়ে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে দিলেন।

সংবাদমাধ্যমের সূত্রে যদ্দুর জানা গেছেঃ

জায়গাটা গুজরাত রাজ্যের খেড়া জেলার মাতার তালুকের উন্ধেলা গাঁয়ের একটি চৌমাথার চত্বর। তারিখ ৪ অক্টোবর। ওই চৌমাথায় রয়েছে একটি মন্দির, যার গায়ে লাগা আছে একটি মাদ্রাসা এবং উল্টোদিকে মুখোমুখি একটি মসজিদ। 
লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিলেন যিনি তাঁর পরিচয় পুলিশ ইন্সস্পেক্টর এ ভি পরমার; আর যিনি মারখাওয়া লোকদের পকেট থেকে ওয়ালেট এবং মোবাইল বের করে নিচ্ছিলেন তিনি হলেন সাব-ইন্সপেক্টর ডি বি কুমাওত। দুজনেই খেড়া জেলার স্থানীয় ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের সঙ্গে যুক্ত। রাজ্যের ডিজিপি জানিয়েছেন যে, তদন্ত শুরু হয়েছে, দোষ প্রমাণিত হলে নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে। যারা মার খেয়েছে তাঁদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে তারা সবাই মুসলমান সম্প্রদায়ের। [২]

৬০০০ জনসংখ্যার এই গাঁয়ে হিন্দু-মুসলিম অনুপাত প্রায় সমান সমান। এরা আলাদা পাড়ায় বসবাস করেন।

ঘটনা সম্পর্কে গাঁয়ের নবনির্বাচিত সরপঞ্চ ইন্দ্রবদন সিং বলেন যে, চৌমাথায় সোমবার একটি গরবা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। শান্তিভঙ্গের আশংকায় আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। বলা হয় যে, কিছু দুষ্কৃতি গরবা চলার সময় সেখানে ঢিল ছোঁড়ে।

স্থানীয় নিবাসী রবীন্দ্র প্যাটেলের কথায়, যখন জানা গেল যে কিছু উপদ্রবকারী ধরা পড়েছে, তখন ভিড় হয়। আমরা পুলিশকে বলি ওদের শিক্ষা দিতে। ওদের মধ্যে অন্ততঃ আটটা এমন লোক আছে যারা সবসময় অন্যদের ভয় দেখায়। তাই পুলিশ ওদের পেটালে সবাই খুশিতে হাততালি দেয়।এত বছরের অপমান সহ্য করে ভেতরে ভেতর ফুঁসছিলাম, কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ন্যায় পেলাম।

এবার দেখুন গুজরাতের গৃহমন্ত্রী ওই ঘটনাটির প্রেক্ষিতে কী বলছেন।

গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনা সভায় তিনি বলেন, মানবাধিকার কি শুধু যারা পাথর ছোঁড়ে তাদের জন্যে? যারা ওই পাথরের ঘায়ে আহত হল সেই শিশু ও মেয়েদের কি মানবাধিকার নেই? সময় এসেছে এ নিয়ে ভাববার। গুজরাত পুলিশ কঠিন পরিশ্রম করেছে যাতে আমাদের বোনেরা, আমাদের তরুণেরা অনেক রাত পর্য্যন্ত গরবা নাচতে পারে, দোকানদারেরাও তাদের জীবিকা অনুযায়ী মাঝরাত্তির পর্য্যন্ত তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে।যদি ওরা যা করেছে সেটা দেখে আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নয়, গুজরাত পুলিশকে ধন্যবাদ দিন। [৩]

স্বয়ং গৃহমন্ত্রী যদি বেঁধে পেটানোর ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে তাহলে ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তার অধীনস্থ পুলিশ বিভাগ নিরপেক্ষ তদন্ত করবে এবং দোষীদের শাস্তি দেবে - এটা কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি? 
সংবাদসূত্রে জানা গেছে ওই ঘটনায় উন্ডহেলা গ্রামের ৪৩ জন মুসলিম বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে এফ আই আর রুজু করা হয়েছে। গ্রেফতারের আশংকায় অনেক ঘরেই তালা ঝুলছে।পরে তদন্তে দেখা গেছে যে পুলিশ আগে যাদের গ্রেফতার করে থানায় পুরেছে, স্থানীয় জনতার দাবিতে তাদেরই কয়েকজনকে বার করে এনে মাঝরাত্তিরে চৌমাথায় বেঁধে পিটিয়েছে।

এর ফলশ্রুতিতে গৃহমন্ত্রী হর্ষ সাংভি মাজুরা কেন্দ্র থেকে ৮৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এবং অনায়াসে তিনি পুলিশের মানবাধিকার নিয়ে নীতিবাক্য বলে থাকেন।

সবিনয়ে বলতে চাই যে মানবাধিকার নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের ব্যখ্যাটি সর্বৈব ভুল।

কেউ পাথর ছুঁড়ে আহত করলে সেটা অপরাধ, মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন নয়। সেই অপরাধের জন্যে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডে শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র যদি আইন অনুমোদিত পদ্ধতি পালন না করে কোনো ব্যক্তির শরীর বা সম্পত্তির ক্ষতি করে - সেটা মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন। মানবাধিকারের প্রশ্নটি কেবল রাষ্ট্র ও ব্যক্তি নাগরিকের সুরক্ষার প্রেক্ষিতেই অর্থবহ হয়, অন্যথা নয়।

মানবাধিকার কারে কয়?

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনটে প্রশ্ন উঠে আসে -

এক, মানবাধিকার ব্যাপারটা কী?

দুই, সরকারের কোনো বিভাগ, বিশেষ করে পুলিশ কি আইনসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন না করে যা খুশি তাই করতে পারে?

তিন, আমাদের সংবিধান কি পুলিশকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার দিয়েছে?

তিনটে প্রশ্ন নিয়েই কথা বলতে চাই, কিন্তু শুরু করব রিভার্স অর্ডারে, মানে আগে তিন নম্বর।

সংবিধান কি পুলিশকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার দিয়েছে?

বিগত ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে হায়দ্রাবাদের কাছে পশু চিকিৎসক দিশাকে চারজন গণধর্ষণ করে হত্যা করে। মিডিয়ায় দেশজুড়ে কভারেজের পর জনমানস ক্রোধ এবং আবেগে উদ্বেল। সাইবেরাবাদ পুলিশ অপরাধীদের পরের দিনই গ্রেফতার করে এবং আটদিন পর ৬ ডিসেম্বর ভোরে হায়দ্রাবাদের উপকণ্ঠে কথিত এনকাউন্টারে চারজনকেই মেরে ফেলে, তাদের মধ্যে দু’জন নাবালক।

নাগরিকেরা খুশি, পুলিশ প্রকাশ্যে সম্মানিত হলেন; কিছু সাংসদ এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও ‘ত্বরিত ন্যায়’ প্রদানের জন্য পুলিশের প্রশংসা করলেন। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট নিযুক্ত জাস্টিস শিরপুরকর কমিশন তদন্তের পর এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, ওই এনকাউন্টারের ঘটনাটি সাজানো। তিনি তাঁর রিপোর্টে ওই সাজানো এনকাউন্টারের জন্য দোষী ১০ জন পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা চালানোর সুপারিশ করেছেন। মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন।

শিরপুরকর কমিশন এমন রায় কেন দিল? অভিযুক্তরা কি একটি অসহায় মেয়েকে বর্বর অত্যাচার ও হত্যার অপরাধে দোষী নয়?

আমার পালটা প্রশ্নঃ তাহলে বিচারব্যবস্থা, এতগুলো আদালত, সেশন ও জেলা কোর্ট, দুই স্তরের আপিল করার কোর্ট, হাইকোর্ট এবং সুপ্রীমকোর্ট, থাকার দরকার কি? শুধু পুলিশ থাকলেই হল। ওদের যাকে মনে হবে অপরাধী, সেই অপরাধী। ওরাই বিচার করবে এবং শাস্তি দেবে।

আমাদের দেশ কি তাহলে ক্রমশঃ একটি আদিম সমাজের কৌম আইনের অধীন হয়ে যাবে না? কোনো সভ্যদেশে এমন হতে পারে? আসলে কমিশনের রায়ের ভিত্তিতে রয়েছে আমাদের সংবিধান এবং ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্সের কিছু মৌলিক নীতি। পুলিশের কাজ শাস্তি দেয়া নয়। আর প্রত্যেক অভিযুক্তেরই বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

তাহলে পুলিশের কাজ কি?

পুলিশের দায়িত্ব দুটো।প্রথমতঃ পাহারা এবং নজরদারির মাধ্যমে অপরাধ ঘটিত হবার সম্ভাবনাকে আটকানো।

দ্বিতীয়তঃ অপরাধ ঘটিত হলে তদন্ত করে অভিযুক্তদের প্রমাণ সহ আদালতের সামনে পেশ করা। বিচার বিভাগের কাজ সেই প্রমাণগুলো খতিয়ে দেখা এবং অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনা; তারপর তুল্যমূল্য বিচার করে সিদ্ধান্তে আসা যে অপরাধী দোষী কিনা এবং অপরাধের গুরুত্ব বুঝে তার শাস্তির পরিমাণ ঠিক করা।

আমাদের দেশের ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্স অনুযায়ী আদালতে প্রমাণ না হওয়া পর্য্যন্ত কেউ দোষী বা অপরাধী নয়, অভিযুক্ত মাত্র। কাউকেই তার বক্তব্য না শুনে শাস্তি দেওয়া যায় না। ‘ত্বরিত ন্যায়’ আধুনিক রাষ্ট্রের এবং সংবিধানের গোড়ায় কুড়ুলের কোপ দিচ্ছে।

রাষ্ট্র, তিনটে অঙ্গ, ডিউ ডিলিজেন্স বা আইনসম্মত উপায়

যে কোনো সভ্য দেশে এবং আধুনিক রাষ্ট্রে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার অধিকার কেবল মাত্র রাষ্ট্রের। কোনো নাগরিক অন্য নাগরিকের গায়ে হাত তুললে সেটা আইনতঃ অপরাধ। তাই আজকে শিক্ষক ছাত্রকে বেধড়ক পেটালে জেলে যাবেন। এমনকি বাবা ছেলেকে ঠ্যাঙালে বা স্বামী স্ত্রীর গায়ে হাত তুললে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

এর ব্যতিক্রম শুধু আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে। তাই পুলিশও নকল এনকাউন্টারের সময় বলে যে অপরাধী পালাতে চেষ্টা করছিল এবং পুলিশের উপর পালটা হামলা করছিল। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।

রুল অফ ল মানে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি অঙ্গ - আইনসভা, প্রশাসন (পুলিশ সমেত) এবং বিচারব্যবস্থা সংবিধান নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিজের নিজের দায়িত্বপালন করবে। কেউ অন্যের এক্তিয়ারে দখল দেবে না।

পুলিশ আইন প্রণয়ন করতে পারে না, সেটা আইনসভার মানে সংসদ ও বিধানসভার কাজ। পুলিশ শাস্তি দিতে পারে না, সেটা বিচারবিভাগের কাজ।

পুলিশের মাধ্যমে ত্বরিত ন্যায় বাস্তবে সেই বেড়া ভেঙে বিচার বিভাগের এলাকায় প্রবেশ করা মাত্র। পুলিশ তার খেয়ালখুশি মত কাজ করতে পারে না।

রুল অফ ল’এর আরেকটি অর্থ, নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপ আইন নির্ধারিত পদ্ধতিতে হতে হবে। পুলিশও তার ব্যতিক্রম নয়।

তদন্তের খাতিরে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে, কারও শরীর বা ঘর বা অফিস তল্লাসি করতে হলে তাদের ক্রিমিনাল প্রসিডিতার অ্যাক্ট নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। তাই সার্চ ওয়ারেন্ট লাগে, গ্রেফতারের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ লাগে, তল্লাসি করে জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে হোলে সিজার লিস্ট বানাতে হয় এবং পঞ্চনামা করে নিরপেক্ষ সাক্ষীর দস্তখত নিতে হয়।

গুজরাতের ঘটনাটির ভিডিও এবং বাসিন্দাদের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে এখানে পুলিশ আইনসম্মত উপায়ে তার দায়িত্ব পালন করেনি। পাথর ছোঁড়ার জন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং থানায় জেরা করা যথেষ্ট ছিল।

এখানে রাষ্ট্রের একতরফা আচরণের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত মুসলিম যুবকদের সম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে বাঁচার সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। পুলিশ মন্ত্রীর বয়ান আদৌ রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের ছবি উজ্বল করেনি।

কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল জনতার পুলিশকে আইন হাতে নিতে উসকে দেওয়া এবং সেটাকে মহিমামণ্ডিত করা।


তথ্যসূত্রঃ

১) নিউজ লন্ড্রি, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২।
২) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৭ অক্টোবর, ২০২২।
৩) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৮ অক্টোবর, ২০২২।