আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ● ১৬-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ● ১-১৫ ফাল্গুন, ১৪২৯

প্রবন্ধ

সঞ্জয় উবাচ


বিদ্বেষ বিষ

সঞ্জয় বললেন, মহারাজ আপনাকে আমি সেদিন মার্কিন অর্থসচিব জ্যানেট ইয়েলেনের সেনেগালের গরি দ্বীপে অবস্থিত ‘দাস ভবন’-এ সফরের কথা বলেছিলাম। বলা চলে সেই সূত্রেই আরো কিছু ঘটেছে। এবারে মার্কিন দেশের টেনেসি রাজ্যের অন্তর্গত মেম্‌ফিস শহরে।

সেকি সঞ্জয়, দাস শ্রমিকের সূত্রে এখনো ঘটনা ঘটে চলেছে এই একুশ শতকেও। আর তাও কিনা মার্কিন দেশে?

অবাক হবেন না, মহারাজ। সভ্যতার রক্ত যেদিন প্রথম দূষিত হয়েছিল সেদিনই আমাদের বোঝা উচিত ছিল রক্তের এই দূষণ সহজে ঘুচবে না। এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে এই রক্তদোষ প্রবাহিত হয়ে চলবে। এখন ঠিক আর তা ওইভাবে সহজে দূর করা যাবে কিনা জানি না, মহারাজ। মানবমনে কোনো কোনো ভাবনা দিনের পর দিন বাসা বেঁধে থাকলে তা একটা সময়ের পরে প্রেজুডিসের চেহারা ধারণ করে। তখন তার মোকাবিলা দারুণ শক্ত কাজ, মহারাজ। একটা সংস্কার তৈরি হয়ে যায়, তার রেশ সহজে কাটতে চায় না। এই যেমন আমাদের সংস্কৃতিতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক। পারস্পরিক অবিশ্বাস, ঘৃণা ও বিদ্বেষের হাত থেকে এখন আমাদের মুক্তি কি আর সহজে মিলবে। বরঞ্চ এ সম্পর্ক আরো বিষিয়ে তোলার দুর্মতি আপনার এই ধর্মরাজ্যে আজ ক্ষমতায় আরো সুপ্রতিষ্ঠিত বলেই মনে হয়, মহারাজ।

সেনেগাল থেকে মার্কিন দেশের মেম্‌ফিস নগরী, সেখান থেকে যেন এক বিনি সুতোর মালা গাঁথার মতো তুমি আমার ধর্মরাজ্য পর্যন্ত গেঁথে ফেলতে চেয়েছ। তোমাদের এই দুনিয়ার রকমসকম আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো সঞ্জয়। আমার এই অন্ধ দু-চোখে অনেক পাপ দেখেছি আমি, কিন্তু তোমাদের পৃথিবী তাও যেন আমার কাছে নিতান্ত অপরিচিত মনে হয়। তুমি আমার অন্ধের যষ্টি। আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলো সঞ্জয়। এ সবই আমি আমার সন্ততিদের কাহিনী বলে গণ্য করি।

জানি, মহারাজ। আর তাই আপনার বেদনাকে একদিকে আমি যেমন স্পর্শ করতে পারি, অন্যদিকে তা আমাকে সংকোচে পীড়িত করে। নতুন করে বেদনা জাগানো নিরর্থক শুধু নয়, তা কিছুটা নিষ্করুণও বটে।

তুমি সংকোচ কোরো না। চৈতন্যকে জাগ্রত রাখার জন্য এই বেদনা জেনো সঞ্জীবনীর কাজ করে। বলো, মেম্‌ফিস নগরের কাহিনী বলো আমাকে।

বছর খানেক বাদে এই আধুনিক আমেরিকায় আবার ফিরে এসেছে জর্জ ফ্লয়েডের স্মৃতি।

জর্জ ফ্লয়েড আমার কোনো পরিচিত নাম নয়। তার কথা সংক্ষেপে বলো আমাকে।

জর্জ ফ্লয়েড আমেরিকার একজন কালো নাগরিক। ওই যে সেনেগালের দাস ভবনের ইতিহাস। এমনি অনেক কালো আমেরিকান নাগরিকের ইতিহাস লুকিয়ে আছে ওই রকমই কোনো-না-কোনো আফ্রিকার মুলুকে। আর তাই তাঁদের সাধারণ বর্ণনা আফ্রিকান-আমেরিকান। এককালে এঁদের সরাসরি 'নিগ্রো' বলেই বলা হত। ওই শব্দটা এখন খানিকটা এড়িয়ে চলার রেওয়াজ আছে। আধুনিক কানে জাতি-বর্গের পরিচয় ওইভাবে প্রকট করে বলা ভালো শোনায় না। এই নিয়েই আধুনিক কালো আমেরিকার গল্প।

তার মানে তোমার জর্জ ফ্লয়েডের পূর্বপুরুষরা কেউ না কেউ দাস শ্রমিক হিসেবে ওইভাবেই একদিন চালান হয়েছিলেন।

নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি সম্বন্ধে এই ‘চালান’ জাতীয় শব্দ প্রয়োগ করা খুব বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু আপনি জানেন এখন এ পৃথিবীর যা পরিস্থিতি তাতে কোনো বিপরীত ভাবনা যাঁর যাঁর নিজের মাথায় ঠাঁই দেওয়াও খুব মুশকিল। আবার তা খানিক বিপজ্জনকও বটে।

তুমি পৃথিবীর কোন অবস্থার কথা বলতে চাইছ, সঞ্জয়। আর তাতে বিপদের কারণই বা কি?

অনেক কথাই হয়তো বলা চলে, কিন্তু আপাতত আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির কথা বলছি। মাথার ভিতরের কথা উঠেছে মহারাজ। এমন প্রযুক্তির জল্পনা কল্পনার কথা শোনা গেছে যার প্রয়োগে মানুষের মনের ভাবনার ধরন খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি, কৃত্রিম মেধা ও জিন গবেষণা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে ওই ভাবনার মানচিত্র তৈরি করার চিন্তা নিতান্ত আজগুবি কল্পনা আর থাকছে না। ইতিমধ্যেই চ্যাটবট, চ্যাট জিপিটি নামে যেসব আপ চালু হচ্ছে তাতে আমাদের শিক্ষা ধারণার গোড়ায় কোপ পড়তে চলেছে। গ্যাসলাইটিং প্রভৃতি ধারণার মধ্যে মানুষের ভাবনা অনুভব ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের যে-সম্ভাবনা উঁকিঝুঁকি মারছে তাতে অনেকেই আতঙ্কিত বোধ করছেন। কয়েক বছর আগে ক্লোন প্রযুক্তির উদ্‌ভাবনে এমনি আতঙ্কের চেহারা দেখা গিয়েছিল।

তোমার কথাবার্তা আমার কানে একেবারে হিং টিং ছটের মতো শোনাচ্ছে, সঞ্জয়।

তা আদৌ অসম্ভব নয়, আমি বুঝি। আপনি প্রাচীন মানুষ। নবীনেরাই এ প্রযুক্তির দাপটে হিমশিম খাচ্ছে। যাক যে কথা বলছিলাম। জর্জ ফ্লয়েড। সেই কালো মার্কিন নাগরিক। রাস্তায় কোনো সাধারণ অপরাধে মিনিয়াপোলিসের পুলিশ তাঁকে রাস্তায় ফেলে নৃশংসভাবে মেরেছিল। শ্বাসরোধ করার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল। ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে নানা দিকে তীব্র বিক্ষোভ। ‘ব্ল্যাক লাইভ্‌স ম্যাটার’ এই নামে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন শহরে। কালো মানুষেরও জীবনের দাম আছে, এই সরল বার্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। মার্টিন লুথার কিং-এর আন্দোলনের পরে অর্ধ শতক পেরিয়ে এসেও আবারও সেই চেষ্টা।

তা এত সবের পরে খুব কি সদর্থক ফল কিছু দেখা গেছে? যাকে তুমি প্রেজুডিস বলছিলে বা সংস্কারের রেশ, তা কি কিছুমাত্র প্রশমিত হয়েছে?

মনে হয়, না মহারাজ। এই যে টায়ার নিকলস-এর ঘটনা। অনেকের কাছেই এ সেই পুরোনো কুনাট্যেরই পুনরাবৃত্তি বলে মনে হচ্ছে। উপরন্তু অনেকেই এবার যে-কথাটা খেয়াল করছেন তা এই যে, ফ্লয়েডের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনীর সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। নিকলস-এর বেলায় সব ক-জনই কৃষ্ণাঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ বাহিনীর হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মৃত্যু। তবে কি শুধু বর্ণ বিদ্বেষ নয়। অন্য রকমের কোনো ঘৃণা ও বিদ্বেষ কি কাজ করছে এর মধ্যে? সন্দেহের কারণ আছে। যে-পুলিশ বাহিনীর হাতে এই মৃত্যু তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ অপরাধপ্রবণ এলাকার অপরাধ দমন। যে অঞ্চলের ঘটনা সে এলাকা ‘অপরাধপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত। এই ঘটনার কথিত অপরাধ ছিল ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করা। চ্যালেঞ্জ করার পরে সে নাকি কোনো পর্বে পালানোর চেষ্টা করেছিল। বেশ কয়েক মিনিটের ভিডিয়ো ফুটেজ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নির্যাতনের তীব্রতায় বিশ্ব থমকে গেছে। মেম্‌ফিস পুলিশের এই শাখা বাহিনীর নাম স্করপিয়ন। খবরে প্রকাশ এই বিশেষ স্করপিয়ন শাখার অবলুপ্তি ঘটানো হয়েছে এখন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিছু জানা নেই।

তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে বর্ণবিদ্বেষের সংস্কার মার্কিন সমাজকে বড়ো দীর্ঘদিন পীড়িত করে রেখেছে।

আপনি যথার্থ অনুমান করেছেন, মহারাজ। ইতিহাসের কত কত পর্ব পেরিয়ে এসেও এই বর্ণবিদ্বেষের বিষ এখনো কাটেনি। ১৮৬০-এর দশকে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ আর তার শ-খানেক বছর বাদে ঘটা তীব্র পৌর স্বাধীনতার সংগ্রাম ও আন্দোলন। এর মাঝখানে উল্লেখ করতে হয় এক জরুরি গবেষণা কর্মের কথা। গুনার মিরডাল। সুইডিশ অর্থনীতিবিদ্‌ ও সমাজতাত্ত্বিক। নোবেল স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত এই গবেষকের তত্ত্বাবধানে আমেরিকার বর্ণপ্রশ্ন নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণাকর্ম সাধিত হয়। তারই ভিত্তিতে রচিত বইয়ের নাম এন আমেরিকান ডাইলেমা, প্রকাশ হয় ১৯৪৪ সালে। এমনকি বর্ণ সংক্রান্ত মামলায় আমেরিকার আদালতেও এই বইয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছিল।

এই বইয়ের কথায় আমার কৌতূহল জাগ্রত হচ্ছে। এই বইয়ের কোনো বিশেষ কথায় কি তুমি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাও?

হ্যাঁ, মহারাজ। আমি প্রেজুডিস বা সংস্কারের রেশ জাতীয় যেসব কথা বলেছি আপনাকে, সেই প্রসঙ্গে বলতে চাই আমেরিকার বর্ণ সমস্যায় মিরডালের একটা বলার কথা শ্বেতাঙ্গের সংস্কার। নানা ঐতিহাসিক কারণে কালো আমেরিকা অনগ্রসর, শিক্ষায় ও জীবনের অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের প্রতি শ্বেতাঙ্গের মন বিরূপ। বিরূপ বলেই মনোযোগও কম। তাই পিছিয়ে থাকাই কালো মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। তা এ প্রসঙ্গে তোমাদের গবেষকের পরামর্শ কী?

যতটা মনে হয় ওঁর একটা চিন্তা সম্ভবত এই যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ মানুষকে আরো বেশি করে উদার মনোভাব আয়ত্ত করতে হবে। বুঝতে হবে সংস্কারগত বিরূপতার কারণ হয়তো আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সংখ্যায় কম কালো মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নতি ছাড়া অন্য অংশের জীবনও প্রকৃত অর্থে বিপন্ন। অসম জীবন নৈতিক অর্থেই অ-সুখের।

তুমি যাকে অসম বলছ আমি হয়তো তাকে বলব অসমঞ্জস। জীবনের সামঞ্জস্য জীবনের শ্রী সাধনের পক্ষে জরুরি। এক অংশ আরেক অংশের সঙ্গে যদি না কোনোখানে মিলতে পারে, দুটো জীবন যদি ভিন্ন তালে চলে, তাহলে জীবনের পূর্ণতা দূরের কথা, জীবনের সমগ্রতাই আমাদের হাতে ধরা দেবে না। আমাকে অনেক কঠিন পথ পেরোতে পেরোতে তবে এসব কথায় পৌঁছোতে হচ্ছে, সঞ্জয়।

আপনার মহান শ্রম ও অন্তরের বেদনাকে আমি প্রণাম জানাই, মহারাজ। বর্ণ বিভাজনের মতো ধর্ম বিভাজন আপনার ধর্মরাজ্যে কী আকার নিচ্ছে তার কিছু আন্দাজ আপনার ইতিমধ্যেই আছে। তবু সেই প্রসঙ্গে আরো এক কাহিনী আমি আপনাকে শোনাতে চাই আজ। মানুষের মনের নিহিত সংস্কার, মতামত ও তথ্যের স্বাধীন প্রচার ও প্রকাশ এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ চিন্তা, এইসব মিলেমিশে আর এক সমস্যা নতুন করে আবার আমাদের সমাজ পরিস্থিতি ঘুলিয়ে তুলেছে একেবারে।

তোমার কণ্ঠস্বর থেকেই তোমার উদ্‌বেগ আমি টের পাচ্ছি। তুমি শীঘ্র আমার কৌতূহল নিবারণ করো, সঞ্জয়।

মহারাজের স্মরণে আছে কিনা জানি না। আজ থেকে দু-দশকেরও বেশি আগে এই ধর্মরাজ্যের অন্তর্গত গুজরাত রাজ্যে এক বিকট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল। ঘটনাক্রমে তখন ওই রাজ্যে নির্বাচিত নেতা ছিলেন আজ যিনি ধর্মরাজ্যে আপনার প্রধান অমাত্য।

তুমি কি এ কথার দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাও যে, একটি অঙ্গরাজ্যের শাসনে ও কেন্দ্রীয় শাসনাধীন সমগ্র দেশের ক্ষেত্রে এই অমাত্য সন্নিপাত বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

অবশ্যই এ সন্নিপাতের দিকে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আবার একই সঙ্গে অন্য একটি কথাও আপনার গোচরে আনতে চাই।

কী সেই কথা, বলো সঞ্জয়।

আপনি জানবেন আপনার ধর্মরাজ্যে এখন প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্রের যুগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশ শাসনে এখন রাজতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। পূর্ণবয়স্ক সব নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত সরকার এখন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। আমি যে-কথা আপনাকে এখন জানাতে চাই তা এই যে, দু-হাজার দুইয়ের সেই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরেও আপনার বর্তমান প্রধান অমাত্যের নেতৃত্বাধীন দল গুজরাত অঙ্গরাজ্যে পরপর বেশ কয়েক বার সাধারণ নির্বাচনে নিশ্চিত জয়লাভ করে সেখানে সরকার গঠন করে। বস্তুত সেই সফলতাই এক অর্থে তাঁর প্রধান অমাত্যের পদলাভের বড়ো কারণ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। দাঙ্গার পরেও বারো বছর তিনি ওই অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। রাজ্যের মানুষ তাঁকে সমর্থন করেছিল তো।

তুমি যেভাবে বলছ তাতে মনে হয় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে সরকারি প্রশাসনের কোনো ভূমিকা ছিল। নইলে আমার প্রধান অমাত্যের সফলতার কথা উঠছে কেন।

কথাটা বলতে আমার সংকোচ হচ্ছে, মহারাজ। তা ছাড়া আইনি বিচারের নিরিখে এই প্রস্তাবের সমর্থনে যুক্তি দাঁড় করানো শক্ত। তবু জনমন বলে যদি কোনো বস্তু থাকে, তাহলে সেখানে কান পাতলে আপনি টের পাবেন তদানীন্তন গুজরাতের শাসক দল সম্পর্কে দেশের মানুষ কী ভাবত। অবশ্যই এসব কথা বিতর্কিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি আর একটা বিতর্কিত তথ্য চিত্রের কথাও আপনাকে জানানো যেতে পারে।

কীরকম?

বিলেতের বি বি সি একটা তথ্যচিত্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। ছবির নাম ইণ্ডিয়াঃ দ্য মোদী কোয়েশ্চেন। সেই ছবিতে নাকি এমন সব দৃশ্য আছে যা ওই শাসক দলের পক্ষে নিতান্ত অস্বস্তিকর। তাই এ ছবি তাঁরা খুব ভালো চোখে দেখছেন না। এমনকি এও বলা হয়েছে, এত দিন বাদে এসব জিনিস দেখানো হচ্ছে, মতলবটা কী? একটা সহজ উত্তর দেওয়া যায়। পুরোনো জিনিসের তথ্যভিত্তিক বর্ণনা দেখাতে গেলে তো পুরোনো ছবিই দেখাতে হবে। ছবিটার প্রতি সরকারি দৃষ্টি প্রসন্ন নয়। কিন্তু দর্শক মহলে অসীম উৎসাহ। তাই নানা জায়গায় দেখানো হয়েছে এবং হচ্ছে। বিভিন্ন কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছবির প্রদর্শন নিয়ে মারামারি ও উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে।

পাপ কর্ম যদি সংঘটিত হয়েই থাকে তবে প্রদর্শন বন্ধ করে তাকে আর কতটুকু চাপা দেওয়া যাবে।

শাসক দলের মার্গদর্শী বরিষ্ঠ নেতা তখনই বলেছিলেন প্রশাসনের রাজধর্ম পালন করা উচিত ছিল।


[সৌরীন ভট্টাচার্য]