আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ ত্রয়োবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ● ১৬-৩১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

প্রবন্ধ

স্থাপত্যে রঙবাজি

পল্লববরন পাল


ধন্যবাদ স্যার আইজ্যাক নিউটন, প্রিজমের মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলোর প্রতিসরণে আপনি আমাদের প্রথম রামধনুর সাত রঙ চেনালেন। এর আগে আমরা জানতাম রঙ হলো প্রকৃতির আবদার বা ইচ্ছের ফসলমাত্র, সে যে একটা পুরোদস্তুর বৈজ্ঞানিক বিষয়, জানতাম না। ১৬৬৬ সালে উদ্ভাবিত আপনার 'রঙচক্র' আমাদের প্রথম বোঝালো যে রঙ আসলে আলোর উৎসবের বিজ্ঞানসম্মত নাম। লাল কমলা হলুদ সবুজ আকাশী নীল আর বেগুনি - এই সাত রঙে রঙিন হয়ে উঠলো মানুষের সরল সাদা জীবন ও যাপন।

রেনেসাঁ যুগে অ্যারিস্টটল তাঁর ‘পোয়েটিক্স’এ শিল্প বনাম রঙ বিতর্ক উসকে দিয়ে বললেন - চিত্রশিল্পে রেখাই মূখ্য, রঙ তার সহায়কমাত্র।

রে রে করে উঠলেন বিখ্যাত স্থপতি লে কর্বুসিয়ের। ১৯১১ সাল - ধারাবাহিকভাবে লিখলেন বিভিন্ন রঙ নিয়ে তাঁর গভীর অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির কথা, যা নিবন্ধাকারে লেখা হলেও আদপে এক একটি মহৎ কাব্য। পিউরিজম নিয়ে লিখলেন ১৯২০-তে, যেখানে কর্বুসিয়ের চিত্রকলার সঙ্গে স্থাপত্যের তুলনা করে রঙের গুরুত্বকে উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠা করলেন। আর রেখার লেজুড়বৃত্তি নয়, এবার রঙ তার নিজস্ব আলাদা চরিত্র বা মাত্রা পেল চিত্রকলা থেকে স্থাপত্যে। নিজের পায়ে ভর দিয়ে শিল্প বা স্থাপত্যের ভাষা হয়ে উঠে দাঁড়ালো রঙ। ‘পলিক্রোম’ শব্দটির নবজন্ম হল, এককথায় যার অর্থ - যে কোনো স্থাপত্য বা ভাস্কর্যকে বিভিন্ন রঙে বিমূর্ত করে তোলার অনুশীলন। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৯, এই তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে কর্বুসিয়ের ৬৩টি রঙের চরিত্রায়ণ ও পারস্পরিক সম্পর্কের সমন্বয়সাধন করলেন। কর্বুসিয়ের বললেন, একটা আস্ত বাড়ির ক্ষেত্রে তার একতলাটি যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, বাড়ির রঙটাও ঠিক ততোটাই। ওঁনার মতে রঙ হল যেকোনো একটা নির্মাণের সুরেলা স্বরলিপি। দরজা জানলা দেয়াল কাঁচ রেলিঙের মতো নির্মাণের সমস্ত ছোট বড়ো উপাদানগুলি যেন সারেগামাপাধানির এক একটা সুর। আর সেইসব সুরের ঐকতানে সম্প্রীতির ঝঙ্কার তোলাটাই রঙের কাজ, স্থাপত্যের সার্থকতা। কর্বুসিয়েরের এই রঙের তত্ত্ব একটা ঐতিহাসিক দলিল - যা শিল্পী বা স্থপতির কাছে ধর্মগ্রন্থের মতো।


স্থপতির কাজ একটা নির্মাণ-ভাবনাকে শরীর দেওয়া বা মূর্ত করে তোলা। যে ইমারতটির নির্মাণ বা জন্ম হচ্ছে বা হবে, তার জমির চরিত্রই শুধু নয়, আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি, এমনকি বৃহত্তর সমাজেরও চাহিদা চরিত্র বিশ্লেষণের পরে তুমুল গর্ভযন্ত্রণা শেষে জন্ম হয় নকশার - স্থপতি যার একাধারে পিতা ও গর্ভধারিনী মাতাও - অবশ্য সারোগেট। নকশা হলো নির্মাণের প্রথম পর্ব - শিশুর জন্ম হওয়া। তারপর শুরু নির্মাণের দ্বিতীয় পর্ব - ইঁট সিমেন্ট বালি লোহা দিয়ে শিশুকে পূর্ণ মানুষ করে তোলা। এই নির্মাণ প্রক্রিয়ার একদম শেষ কাজ হল রঙবাজি। প্রাথমিক বিমূর্ত ভাবনা থেকে রঙবাজি - এই পুরোটাই একজন স্থপতির দায়িত্ব। সাহিত্যরচনার শেষে হয় তার নামকরণ, বই প্রকাশের শেষ কাজ যেমন তার মলাটনির্মাণ - ঠিক তেমনি। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বাসাবাড়ির নির্মাণের কাজই একজন স্থপতির কাছে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ বাসাবাড়ির ক্ষেত্রে আবাসিকের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সীমানার মধ্যে ঢুকে সমষ্টিগত সমাধানসূত্রের খোঁজ করতে হয় স্থপতিকে। একজন ডাক্তারের মতো।

এক মক্কেল এসে বললেন, অমুক বাড়িটা আপনার প্ল্যান? কী সুন্দর! আমারটাও ঐরকম হবে, একই ডিজাইন, শুধু বারান্দার টালির রঙটা গিন্নির ইচ্ছে লাল হবে।

যেন রুগি এসে ডাক্তারকে বললেন, জ্বর হয়েছে। ক্রোসিন নয়, প্যারাসিটামল লিখে দিন।


দুই বন্ধু, পাশাপাশি দুটো জমিতে বাড়ি করবেন। স্বামী স্ত্রী এক ছেলে - দুজনেরই। একজন স্কুলশিক্ষক, অন্যজনের ব্যবসা। একজনের পরনে পাঞ্জাবি পায়জামা, অন্যজন জিন্স টি-শার্ট। দুজনে একসাথে একটা ম্যাগাজিনের বাড়ির ছবি নিয়ে এসেছেন স্থপতির কাছে। ইচ্ছে একই ডিজাইনের দুটো যমজ বাড়ি হবে পাশাপাশি।

যেন দুই রুগি একসাথে পেটব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসে বললেন, আমাদের আমাশার ওষুধ লিখে দিন। অ্যান্টাসিডসহ। দুজনকেই।

ডাক্তার যেমন রুগির কথামতো ধাঁ করে খসখস করে কাগজে না লিখে দুজনেরই নাড়ি টিপে জিভ টেনে নল লাগিয়ে বুকপিঠের শব্দ শুনে প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে রোগনির্ণয় করে তারপর হাত উল্টে ওষুধ লেখেন, তেমনি স্থপতিকেও পরিবারের প্রতিটি সদস্যের দৈনিক রুটিন পেশা নেশা শখ রুচি সংস্কৃতি ইত্যাদি বিচার বিশ্লেষণ করে বাড়ির নকশা তৈরি করতে হয়। ভুল নকশা বা ঘর বা আসবাবের ভুল মাপ ভুল ওষুধের মতো অনেক সময়েই আবাসিকের মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানি করতে পারে। সহজবোধ্য কিছু উদাহরণ দিই - শোবার ঘরের জানলার মাপ প্রয়োজনের তুলনায় ছোটো হলে আবাসিকের শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা, বেশি বড়ো হলেও নিরাপত্তা সহ অন্য বিপদ আছে। রান্নার টেবিলের উচ্চতার কমবেশিতেও ঘাড় অথবা গোড়ালির সমস্যা হতে পারে - এ চিকিৎসাবিজ্ঞানের কথা। উল্টোটাও সত্যি, ঠিক বা ভালো নকশায় বিভিন্ন ঘরের বা আসবাবের ঠিক মাপ বা উচ্চতা ঠিক ওষুধের মতো শারীরিক ও মানসিক উন্নতিসাধনও করতে পারে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অন্যত্র হবে’খন।


রঙ একটা বিজ্ঞান। যদিও বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত রঙ সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা হল - যা হোক একটা হলেই হল, ও নিয়ে অত ভেবে কী হবে। কিন্তু বিবর্তনের শুরু থেকে আমাদের অজান্তেই শরীরে ও মনে রঙ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কররে চলেছে। পদার্থবিজ্ঞান সূত্রে আমরা জানি, প্রত্যেকটা রঙের আলোরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিভিন্ন। এই বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ আমাদের মস্তিষ্কে গিয়ে ধাক্কা মারে, কেউ জোরে কেউ আস্তে। সেই অনুযায়ী মস্তিষ্ক শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নির্দেশ পাঠায় শিরা বেয়ে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে, চোখকে নির্দেশ পাঠালে আমরা দেখি। বুককে নির্দেশ পাঠালে সেই রঙ নির্দেশিত অনুভূতি জাগে। অঙ্গে অঙ্গে বাঁশি বাজবে নাকি হৃদয় হারেরেরেরেরে বলে তেড়ে যাবে, সেটা নির্ভর করে রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর। তাই বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রঙের বিভিন্ন চরিত্র। সেগুলোকে বুঝতে হবে।

অধ্যাপক লিন্ডস্টর্মের মন্তব্য -
"মানুষের মনে যে কোনো স্থাপত্যকর্মের একটা স্বতঃস্ফূর্ত আবেগঘন প্রতিক্রিয়া হয়। সাধারণভাবে স্থাপত্যের রঙ সবচেয়ে বেশি মানবমনে প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব সরাসরি মন ও শরীরের সাইকোসোমেটিক্সের সঙ্গে যুক্ত। মনস্তাত্বিক চাপই অনেক সময় আমাদের অনেক শারীরিক রোগ ব্যাধির অন্যতম কারণ। অর্থাৎ রঙের প্রভাবে মানসিক চাপ থেকে মাথাব্যথা, উদ্বেগ, ক্রোধ, পরবর্তী ধাপে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ধড়ফড়ানি, মাইগ্রেনের ব্যথা, একজিমা এমনকি পুরুষত্বহীনতাও হতে পারে।"

অগত্যা জনা পঞ্চাশ স্থপতি, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, মনোবিদ এবং ১২টি দেশের রঙবিজ্ঞানীদের নিয়ে তৈরি হল 'ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কালার কন্সাল্টেন্টস্‌' (আইএসিসি) ১৯৫৭ সালে। উদ্দেশ্য, রঙ ব্যবহারের সঠিক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। জার্মানিতে 'ইন্সটিটিউট অফ কালার ফিলোজফি'র প্রতিষ্ঠাতা ডঃ হেইনরিখ ফ্রাইলিং-এর তত্ত্বাবধানে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অস্ট্রিয়ার সালজবুর্গে প্রথম শিক্ষাশিবির প্রতিষ্ঠা হলো, যা এখন পরিবেশ ও রঙের ওপর 'আইএসিসি একাডেমি' হিসেবে পরিচিত।


নিরন্তর গবেষণা চলছে। বিষয় রঙ। বিগত কয়েক দশক ধরে। একবার চোখ বুঁজে কল্পনা করুন তো, আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটা যদি রঙহীন হতো - ব্যাপারটা কী অসহ্য বিরক্তিকর! আমাদের প্রাত্যহিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর রঙের প্রভাব সম্পর্কে আমরা অনেকেই খুব অবগত নই। গবেষণা করে দেখা গেছে, মানুষের ওপর বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন ও বিচিত্ররকমের প্রতিক্রিয়া ঘটায়। যেমন, বিভিন্ন ফাস্টফুড দোকানে লাল, কমলা, হলুদ রঙ বেশি ব্যবহার হয়, কারণ এই রঙগুলো আমাদের খিদে বাড়ায়। বৃটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে – নীল রঙ মানুষের সৃষ্টিশীলতা সহায়ক। লাল স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, লক্ষ্যস্থির হতে সাহায্য করে ইত্যাদি। ২০০৯ সালে জাপানে টোকিওর ইয়ামানোতে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নীল রঙ নীল আলো লাগিয়ে ৭৪ শতাংশ আত্মহত্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। দেখাদেখি পৃথিবীর আরো অনেক আত্মহত্যাপ্রবণ রেলস্টেশনে একইরকম ফল পাওয়া গেছে। আরো মজবুত বিজ্ঞানভিত্তির জন্য পৃথিবীব্যাপী রঙ নিয়ে পুরোদমে গবেষণা চলছে। হ্যাঁ, রঙের শক্তি এতোটাই। ঠিক রঙ ঠিক পরিমাণে ঠিক জায়গায় ব্যবহার করলে মানুষের উপকারই হয়। তেমনি উল্টোটাও সত্যি।


আমাদের শরীরে ও মনে কয়েকটি প্রাথমিক রঙের এযাবৎ প্রতিষ্ঠিত সাধারণ প্রভাব কিরকম দেখা যাক।

লালঃ রঙের রাজা লাল। শরীরের এড্রেনাল গ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে। হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস বাড়ায়। কিন্তু লালের অত্যধিক ব্যবহারে হৃদস্পন্দন বেশি বেড়ে গেলে আবার ক্রোধ, স্নায়ুরোগ বা নৈরাশ্য বাড়ে।

নীলঃ সৃষ্টিশীল কাজের সঙ্গে এই রঙের নিবিড় সখ্যতা। মস্তিষ্ক শান্ত ও ঠাণ্ডা করে। অনেক কর্পোরেট অফিসে আনুগত্যের প্রয়োজনে এই রঙ ব্যবহার হয়। নীল রঙ খিদে কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, লাল বা হলুদ রঙের ঘরে বসে মানুষ যতটা খায়, নীল ঘরে তার এক তৃতীয়াংশ খেতে পারে। নীলের অত্যধিক ব্যবহার অহেতুক বিষাদ নিয়ে আসে।

হলুদঃ স্মাইলির রঙ হলুদ। কেন? তার কারণ, এই রঙ মস্তিষ্কে সেরোটনিন নামের একটা রাসায়নিক ক্ষরণ ঘটায়, যা আমাদের খুশি থাকতে সাহায্য করে। হলুদ রঙ একাগ্রতা বাড়ায়। পরিপাকে সাহায্য করে। যদিও বাড়তি হলুদ ক্লান্তি আনে।

সবুজঃ প্রকৃতির রঙ সবুজ। সবুজ স্নায়ু শীতল করে, শরীরকেও আরাম দেয়। মানসিক চাপ দূর করে। চোখের পক্ষে সবুজ রঙ খুবই আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর, যে কারণে ক্লাশঘরের বোর্ডে এবং হাসপাতালে ইদানিং এই রঙ খুব ব্যবহার হয়। দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়। সবুজ রঙা দোকানে ক্রেতার ভীড় অপেক্ষাকৃত বেশি। সবুজ রঙা অফিসে চাকুরেরাও তুলনামূলকভাবে বেশি সন্তুষ্ট।

গোলাপিঃ সবচেয়ে রোমান্টিক ও নরম রঙ গোলাপি। নারীর রঙ। শিশুর রঙ। উদ্বেগ বা ক্রোধ পরিহারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত রঙ। 'আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ বায়োসোশ্যাল এন্ড মেডিক্যাল রিসার্চ' বলছে, এই রঙের সামনে কোনো মানুষ ক্রুদ্ধ বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে না, কারণ, তার হৃদয়ের পেশি অত দ্রুত দৌড়তে পারে না।

কালোঃ ক্ষমতা কর্তৃত্বের রঙ কালো। জ্ঞান বুদ্ধির রঙ কালো। যে কোনো দ্রব্য কালো বাক্সে বা প্যাকেটে থাকা মানে ক্রেতার সমীহ আদায় করে, অর্থাৎ ভ্যালু বাড়ে। কালো ফ্যাশন দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় রঙ। ভারি চেহারা কালো পোষাকে অপেক্ষাকৃত হালকা দেখায়। আবার অতিব্যবহৃত কালো রঙের মধ্যে একটা আক্রমণাত্মক কিন্তু শীতল হিংস্রতা আছে।

সাদাঃ সব রঙের জনক হলো সাদা রঙ। সবচেয়ে নিরপেক্ষ পবিত্র এবং নিরীহ রঙ। ডাক্তার নার্সদের পোষাক, পাদ্রীর পোষাক, শিশুদের উপযোগী পণ্যের রঙ সাদা। সাদা রঙের মধ্যে একটা সম্ভ্রান্ত শান্ত পবিত্র নীরবতা আছে।




এখানে অধিকাংশ মানুষের এখনও ধারণা, বাসাবাড়ির ক্ষেত্রে স্থপতির আসল কাজ বাড়ির বাইরের সাজুগুজু বা দেখনদারিটা ঠিক করে দেওয়া। রঙ-টঙ? ও আর এমন কী ব্যাপার? শেডকার্ড দেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো করে নিলেই হয়। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই একটি গবেষণা সংস্থা তৈরি হয়েছে, যারা এই রঙ ও রঙের সঙ্গে সম্পর্কিত বস্তুর গড়ন, অবস্থা্‌ পরিবেশ, সংস্কৃতি, তার প্রতীকি উচ্চারণ ও অনুভুতিকে শুধু স্থাপত্যই নয়, আরো বৃহত্তর পর্যায়ে আর্বান ডিজাইনের ক্ষেত্রেও পুরো প্রক্রিয়াটার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তোলার কাজ করছে। রঙ আমাদের জীবন ও যাপনে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ রঙ আর নির্মাণের শেষ পাতের পানমশলা হিসেবে বিবেচ্য নয়, গোড়া থেকে শেষতক আস্ত ভাবনাটার সঙ্গেই সে পুরো অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।


বিনীত অনুরোধ, আর ভুল করবেন না। অমুক দিকে মাথা দিয়ে ঘুমোলে অর্থাগম, আর তমুক দিক হলেই বিনাশ, এ ধরনের বিচক্ষণ পরিকল্পিত ভাঁওতা-বিজ্ঞানের তাবিজবাজিতে না ভুলে প্রকৃত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করুন। বাসাবাড়ি বা নার্সারি স্কুল থেকে বৃদ্ধাবাস তো বটেই, শপিং মল থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত সর্বত্রই ঠিক রঙ ঠিক পরিমাণে ঠিক করতে পারেন কোনো মন্ত্রী বা আমলা নয়, একজন স্থপতিই।

ভরসা রাখুন। সামনে পা ফেলুন।