আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ ত্রয়োবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ● ১৬-৩১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
প্রবন্ধ
ভাষিক শূন্যমার্গে ভাসমান পশ্চিম-বাঙালি
আশীষ লাহিড়ী
১৯৩৬ সালে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন -
ইংরেজি ভাষায় প্রকাশের শক্তি অসাধারণ পরিণতিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিক রচনাশক্তি এবং ওই ভাষায় অধিকার থাকলে সিদ্ধিলাভ সহজে হয়।... বাংলা ভাষার নিজের মধ্যে অজস্র গতিশক্তি আজও সম্পূর্ণ উদ্ভাসিত হয়নি। এই ভাষায় কোনো উচ্চ লক্ষ্যের দিকে কলম যদি চালাতে হয়, তবে দরকার হয়ে পড়ে চলা এবং সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা পরিমাণে পথ কেটে নেওয়া। (দিলীপকুমার রায়, তীর্থংকর, জেনারেল প্রিন্টার্স, কলকাতা ১৯৮২, পরিবর্ধিত সংস্করণ, পৃষ্ঠাঃ ২৮৪)
বেশ গোলমেলে কথা। কেউ বলতে পারেন, শ্যামবাজার থেকে কলেজ স্ট্রীট যেতে গেলে যদি স্টীমরোলার সঙ্গে রাখতে হয়, তবে যাওয়ার ইচ্ছেটাই হয়তো উবে যাবে।
একথা তো অনস্বীকার্য যে, আধুনিক বিদ্যাচর্চার দৌড়টা আমরা শুরুই করেছিলুম একটা বিরাট হ্যান্ডিক্যাপ নিয়ে। মুশকিল হচ্ছে, হ্যান্ডিক্যাপটা কমেনি, বেড়েছে। ১৯৪৭ সালে ক্ষমতা-হস্তান্তরের মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক পরাধীনতা চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। ভাষার সঙ্গে কোনো আত্মীয়তা আজ আর আমরা, মানে পশ্চিম বাঙালিরা, অনুভব করি না। বরং সেটা করে হিন্দিভাষীরা, কেননা সরকারি দাক্ষিণ্য ও পোষণে হিন্দি ভাষা এখন হিন্দিভাষীদের চাকরিবাকরির জগতে স্বয়ং-সুবিধা এনে দেয়। হিন্দি ভাষার ব্যবহারিক উন্নতিও দেখবার মতো। বাংলা টিভি চ্যানেলের রিপোর্টিং আর হিন্দি চ্যানেলের রিপোর্টিং শুনলেই সেটা মালুম হবে। হিন্দি পরিভাষাও প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে এখন রীতিমতো মান্য ও ব্যবহার্য হয়ে উঠেছে। হামেশাই দেখা যায়, 'সর্বভারতীয়' বলে পরিচিত ইংরেজি টিভি চ্যানেলে আলোচকরা অনায়াসেই ইংরেজি ছেড়ে হিন্দির আশ্রয় নিচ্ছেন এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষ হিন্দি বচনের কোনো ইংরেজি সাব-টাইট্ল দেবার প্রয়োজন বোধ করছেন না।
ভাষা কিংবা সংস্কৃতি নিয়ে আদিখ্যেতা দেখানোর দায় থেকে আমরা পশ্চিম বাঙালিরা সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েছি। বাংলা আমাদের প্রয়োজনের ভাষাও নয়, আবেগের ভাষাও নয়। আমাদের মধ্যে উচ্চাভিলাষীরা তাই রবীন্দ্রনাথের ঐ প্রথম দুটি বাক্যের ('ইংরেজি ভাষায় প্রকাশের শক্তি অসাধারণ পরিণতিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিক রচনাশক্তি এবং ওই ভাষায় অধিকার থাকলে সিদ্ধিলাভ সহজে হয়।') সারবত্তা অন্তরে গেঁথে নিয়ে সিদ্ধির শুভ কর্মপথে হৈ-হৈ করে এগিয়ে চলেছেন। ইন্টারনেট বিপ্লবোত্তর অধিকাংশ তরুণ শিক্ষিত বাঙালির কাছে বাংলা একটা বর্জ্য, একটা আপদ, কেরিয়ার গড়ার পথে বাধা। যাঁরা তা মনে করেন না, তাঁরা সংখ্যালঘু, ব্যতিক্রম। তাঁদের কথা ভেবেই এত কথা বলা।
অপরদিকে মধ্যাভিলাষী যারা এগোতে পারছে না, তারা উঠতে বসতে গালাগালি দেয় তাদের বাংলা-মাধ্যমিক অপটুতাকে। যুক্তিটা এই যে ইংরেজি মাধ্যম ইস্কুলে পড়লে তারা ইংরেজি শিখতে পারত। একই যুক্তিতে বলতে হবে, তাহলে বাংলা মাধ্যমে পড়ে তারা নিশ্চয়ই বাংলাটা শিখেছে। ঘটনা কিন্তু একেবারেই তা নয়। এঁদের যদি বলা যায়, ঠিক আছে, আপনি বাংলাতেই আপনার বক্তব্য পেশ করুন দেখা যাবে, অবস্থাটা আরো করুণ। এঁরা বাংলাও জানেন না; কারণ বাংলা যে একটা জানার মতো জিনিস, এ বোধটাই তাদের মধ্যে কেউ সঞ্চার করে দেয়নি। আজকের গড়পড়তা শিক্ষিত বাঙালি তাই একটা ভাষিক শূন্যতায় ভাসমান।
অথচ বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে যে-জিনিসগুলো সত্যি সত্যিই বর্জ্য, সেগুলো কিন্তু বিপুলভাবে 'কামব্যাক' করেছে। জ্যোতিষ, গ্রহরত্ন, তন্ত্রমন্ত্র, বশীকরণ (বিফলে মূল্য ফেরত), এইসব নিয়ে বিবিধ বাবা-মায়ের ব্যবসার রমরমা দেখলে বাঙালি হিসেবে মাথা হেঁট হয়ে যায়, নিজেদের অসহায় অস্তিত্বের প্রতি ঘৃণা জন্মায়। মনে হয় শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে ব্যাপক জনগণের কাছে কুসংস্কার প্রচারই যেন বাংলা ভাষার অন্তিম উপযোগিতা। কুসংস্কার আগেও ছিল, কিন্তু এখন তা আক্রমণাত্মকভাবে বাজারে বিপণনযোগ্য পণ্য হয়ে উঠেছে। আর বাংলা ভাষাবাহিত এই জঞ্জালের আন্ডিল মাথায় ঢুকিয়ে মধ্যাভিলাষী বাঙালি বলছে, ইংরেজিতে থ্যাংকইউ-ওয়েলকাম বলতে শিখলেই নাকি সে জীবনযুদ্ধ জিতে ফেলবে।
আসল কথাটা বাজার। আজকের এই উইকিপিডিয়া, মোবাইল আর অ্যাজি-নো-মোটো মেশানো দো মিনটকা খেল-এর যুগে ক'জন বাঙালির আর দায় পড়েছে বাংলা ভাষায় উচ্চলক্ষ্যের দিকে কলম চালাতে। উচ্চাভিলাষীদের সিদ্ধিলাভের জন্য ইংল্যান্ড-আমেরিকার সর্বজাতিক অভিধান সংস্থাগুলো অবিরাম সাজিয়ে চলেছেন বিনামূল্যে সিডি সংস্করণ সহ নিত্যনতুন ডালি। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট-বিপ্লব অভিধানরচনা শাস্ত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। কোনো এক বিশ্বজোড়া ইংরেজি প্রকাশন সংস্থার পরিচালক অনেক দিন আগে বলেছিলেন, 'ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ইন্ডাস্ট্রি' তাঁদের সবচেয়ে ফলফলে শিল্প। উচ্চাভিলাষী ভারতীয়রা বাঙালিরা সমেত তাঁদের প্রধান 'টার্গেট'গুলির অন্যতম। মধ্যাভিলাষীরা অবশ্য অভিধান-টভিধানের ধার ধারেন না। এঁরা অনেকে অভিধান দেখতেই জানেন না; যদিচ মোবাইলে স্মার্ট।
উচ্চাভিলাষী ও মধ্যাভিলাষী বাঙালিদের এত রকমের বায়নাক্কার মুখে বাংলা ভাষা এখন দিশাহারা। এ সমস্যার তীব্রতা কিছুটা প্রশমিত করতে পারে কি ইংরেজি-বাংলা দ্বিভাষিক অভিধান? ঘুরিয়ে নাকে হাত দেওয়ার মতো, অবশ্য-শিক্ষণীয় ইংরেজির হাত ঘুরেই না হয় আজকের বাঙালি বাংলা শিখল। সে হেন নাকেরও কিছু কম নহে দাম।
ইংরেজি-বাংলা দ্বিভাষিক অভিধান রচনার ক্ষেত্রে বিশ শতকের প্রথম পদে একক বিদ্যোৎসাহিতার অনন্য নজির রেখে গেছেন চারুচন্দ্র গুহ। ১৯১৬-১৯১৯ সালের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মাঝখানে ঢাকা থেকে তিন খণ্ডে বেরিয়েছিল তাঁর 'The Modern Anglo-Bengali Dictionary'। অর্থের যাথার্থ্যে, উপযুক্ত ব্যবহারযোগ্য শব্দের প্রয়োগে, মননশীলতার গভীরতায় এই অভিধানটির গুণমান আজও অনতিক্রান্ত। কয়েকটি উদাহরণ দিই। Propulsion-এর বাংলা পুরশ্চালন, প্রণোদনা, প্ররোচনা। Mensurable-এর যে-কটি বাংলা প্রতিশব্দ তিনি দিয়েছিলেন তার অনেকগুলিই আজ একশো বছর পরেও ব্যবহারযোগ্যঃ পরিমেয়, প্রমেয়, মাপনীয়, মেয়, মাপনক্ষম, সসীম। Aberrant-এর অব্যর্থ বাংলাঃ সন্মার্গত। Maim ক্রিয়ার ন-টি প্রতিশব্দ দিয়েছিলেন চারুবাবু, যার অন্তত আটটি আজও স্বচ্ছন্দে ব্যবহারযোগ্যঃ ছিন্নবিচ্ছিন্ন/ক্ষতবিক্ষত/বিকলাঙ্গ/অঙ্গহীন/হীনাঙ্গ/বিকল/পঙ্গু করা। নির্ভেজাল বাংলা বাগধারার বিরুদ্ধে তাঁর কোনো সেকেলে পণ্ডিতসুলভ পক্ষপাত ছিল না। তাই Who will bell the cat?-এর নিতান্ত প্রাকৃত বাংলাটি পেয়ে যাই তাঁর কাছেঃ ম্যাও ধরে কে? এখানেই শেষ নয়, ঈশপের গল্পটির একটি সারসংক্ষেপও সঙ্গে দিয়ে দেন তিনি।
এমন একটি অসাধারণ ইংরেজি-বাংলা অভিধান বাঙালি জাতির গর্বের ধন হতে পারত, কিন্তু হয়নি। এর দ্বিতীয় কোনো সংস্করণ হয়নি। আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিধানও যদি কয়েক বছর অন্তর অন্তর সংশোধিত না হয়, তা উপযোগিতা হারাতে বাধ্য। কেননা ভাষার চেয়ে পরিবর্তনশীল আর কী আছে? আজ তাই চারুচন্দ্র গুহর অভিধানটি ইতিহাসের অঙ্গ, দৈনন্দিনতার নয়।
কিন্তু এমন অভিধানের কোনো সংস্করণ হল না-ই বা কেন? কারণ বাজার। শিক্ষিত বাঙালিদের সংখ্যা একে কম, তার ওপর এই অভিধানটি এতই উচ্চমানের যে খুব সম্ভব গড়পড়তা শিক্ষিত বাঙালির তা মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কাজেই চাহিদা যেটুকু ছিল তা সম্ভবত এক সংস্করণেই নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। বাজারের এই সমস্যাটার কথা আজ অনেক খোলাখুলিই স্বীকার করা হয়। ২০১৫-এ প্রকাশিত 'সংসদ ইংরেজি-বাংলা অভিধান'-এর ষষ্ঠ সংস্করণের ভূমিকা থেকে এই সমস্যার একটা আন্দাজ পাওয়া যায় -
বিগত শতাব্দীর উপান্তে প্রকাশিত একটি ইংরেজি অভিধানের ভূমিকায় দেখা গেল, সেটি নির্মাণ করেছেন ৩২০ জন 'বিশেষজ্ঞ সম্পাদক ও পরামর্শদাতা'; তাঁদের সহায় হয়েছে 'তথ্যসঞ্চার ও গবেষণায় ইন্টারনেট প্রযুক্তির অভূতপূর্ব ব্যবহার'। নতুন শতাব্দীর শুরুতে ২০০৮ অব্দে একটি পুরোনো অভিধানের পরিমার্জিত নতুন সংস্করণেও ৫৫ জন সম্পাদকের যৌথ কর্মপ্রয়াসের স্বীকৃতি আছে।
আর সংসদের এই অভিধানটি সংকলন করেছেন চার জন সম্পাদক, সেটাও তাঁদের সর্বসময়ের কাজ ছিল না। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত 'এভরিম্যান্স ডিকশনারি' সংকলন করেছিলেন পাঁচ জন লোক। তার পাশে ইংরেজি অভিধানগুলোর বিপুল আয়োজন দেখলে মাথা সত্যিই ঘুরে যায়। কিন্তু কীসের জন্য তাঁদের এই আয়োজন এমন বিপুল কলরবে?
২০০৫ সালের খবর দিয়েছেন ভাষাবিজ্ঞানী ডেভিড ক্রিস্ট্যাল -
কমিয়ে হিসেব করলেও, ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা তাদের সংখ্যাটা এখন প্রায় ৪০ কোটি, কিন্তু সে-সংখ্যাটাকে বহুগুণে (প্রায় তিনগুণ) ছাপিয়ে গেছে তারা যারা দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বা বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শিখেছে। ২০০৫ সালের বিভিন্ন হিসেব বলছে, সারা পৃথিবীতে ইংরেজি-বলা লোকের সংখ্যাটা ১৫০ থেকে ২০০ কোটির মধ্যে অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার সিকিভাগ থেকে এক-তৃতীয়াংশ ইংরেজি বলে। ভারতে (যেখানে ২০০৫ সালে প্রায় ৩৫ কোটি লোক ইংরেজি বলত) আর চীনে (প্রায় ২২ কোটি) ইংরেজি শেখার হারের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। (David Crystal, How Language Works, Penguin, 2006, pp. 427-28)
আরো সুনির্দিষ্টভাবে তিনি জানাচ্ছেনঃ
বই, খবরের কাগজ, বিমানবন্দর ও বিমান-চলাচল নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও সারস্বত অধিবেশন, চিকিৎসা, কূটনীতি, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, পপ মিউজিক আর বিজ্ঞাপন - এসবেরই প্রধান ভাষা ইংরেজি। পৃথিবীতে যত বিজ্ঞানী আছেন তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ ইংরেজিতে লেখেন। বিশ্বের ইলেকট্রনিক রিট্রিভ্যাল সিস্টেমে যত তথ্য আছে তার ৮০ শতাংশ এখন ইংরেজিতে সঞ্চিত হয়। (Crystal, p. 427)
এই বিপুল বাজারের খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ইংরেজি প্রকাশকরা।
প্রশ্ন হচ্ছে, ইংরেজির এই মেগা-বাজারটা তৈরি করল কে? ইংরেজ লেখকরা? মোটেই না। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশের শক্তি যে অসাধারণ পরিণতিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, যার দৌলতে এই বিশাল বাজারটা তৈরি হয়েছে, সেটা তৈরি করেছে ইংরেজ বুর্জোয়ারা। তারা একদা দুনিয়া দখল করেছিল, এখন তাদের জ্ঞাতি আমেরিকার বুর্জোয়ারা দুনিয়া শাসন করছে, আর তারই ফায়দা তুলছে ইংরেজি প্রকাশকরা। আমাদের ব্যর্থ বাঙালি মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ারা ওদের খিদমত খেটেই, ওদের আউটসোর্সিং করেই ধন্য। তারও ছবি ধরা পড়ে 'সংসদ ইংরেজি-বাংলা অভিধান'-এর ষষ্ঠ সংস্করণের ভূমিকায় দেওয়া আজকের পশ্চিমবঙ্গের (বাংলাদেশের হিসেব জানি না) এই পরিসংখ্যান থেকে -
সাম্প্রতিকতম জনগণনায় তার জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭ শো ৩৬, তার মধ্যেও সরকারি হিসেবমতো সাক্ষরের সংখ্যা কেবল শতকরা ৭৭.০৮ ভাগ। এই রাজ্যে অন্য রাজ্যের বা অন্য দেশ তথা জাতির মানুষের সংখ্যাও যথেষ্ট, তাঁদের নির্ভরযোগ্য হিসেব যেমন পাওয়া যায় না, তাঁদের মধ্যে কতজন বাংলা পড়েন তারও তেমনই হিসেব নেই। আর বাংলা পড়তে বা বলতে না চাইলে তো দ্বিভাষিক অভিধানের কোনো প্রয়োজনই পড়বে না। বিদেশেও বাংলা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তেমন তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বিদেশে অধিবাসী বাঙালিদের নতুন প্রজন্মের মধ্যেও বাংলার চল ক্রমক্ষীয়মান। কলকাতার কোনো প্রকাশক এই পরিস্থিতিতে কতটা খরচ করে কতটা ঝুঁকি নিতে পারেন?
হক কথা। অর্থনৈতিক বনিয়াদই বহুলাংশে সাংস্কৃতিক উপরিকাঠামোর চরিত্র গড়ে দেয় - মার্কসের এই মন্তব্যের এত চমৎকার ও অকাট্য প্রমাণ দুর্লভ।
আর্থিক ও রাজনৈতিক অধীনতা যে শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অধীনতায় পর্যবসিত হয়, তার প্রমাণ ভাষিক শূন্যমার্গে ভাসমান আজকের পশ্চিম বাংলার বাঙালি ও বাংলা।