আরেক রকম ● একাদশ বর্ষ পঞ্চদশ সংখ্যা ● ১-১৫ আগস্ট, ২০২৩ ● ১৬-৩২ শ্রাবণ, ১৪৩০

প্রবন্ধ

স্মরণে সমর বাগচী

তুষার চক্রবর্তী



সমর বাগচী (১৯৩৩-২০২৩)

বিজ্ঞান বিষয়ে বক্তৃতা দেবার বা কলম ধরবার লোক যদিও বা মেলে - বিজ্ঞানে ভালবাসা জাগাবার মতো লোকের দেখা সহজে পাওয়া যায়না। আমাদের সৌভাগ্য, সমর বাগচী বিজ্ঞানকে ভালবাসার সেই যাদুকাঠি আবিষ্কার করে এবং তা প্রয়োগ করে শিশু কিশোর সহ অগণিত মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে তোলবার এক অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা জাগাবার ফর্মুলা তিনি মূলত দুটি উপকরণ দিয়ে তৈরী করেন। একটি সহজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অন্যটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাকে যুক্ত করা।

আমাদের স্কুল-কলেজের বিজ্ঞানশিক্ষা শুধু নয়, সার্বিক শিক্ষাভাবনার মধ্যেই গলদ আছে। তা বিমূর্ত, তাত্ত্বিক ও সমাজ বিচ্ছিন্ন। সমর বাগচী মনে করতেন, “শিক্ষাই হচ্ছে সমাজের বুনিয়াদ। পৃথিবীর সমাজ ও প্রকৃতি ভেঙ্গে পড়ছে। গতানুগতিকতার দিন শেষ হয়েছে। এক নতুন পৃথিবী গঠন সম্ভব এই বিশ্বাস নিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নূতন পদক্ষেপ নিতে হবে।” শুধু মনে করা নয় - শিক্ষাকে বদলাবার জন্য তিনি অনেকগুলি স্কুলের সঙ্গেই যুক্ত হন। অভিজাত দুন স্কুল থেকে শুরু করে একেবারে পথশিশুদের নিয়ে তৈরী স্লাম-স্কুল, সর্বত্র সমর বাগচী তার শিক্ষাভাবনার পরীক্ষা চালিয়েছেন। এই রাজ্যেই শুধু নয়, সারা ভারতে ঘুরে ঘুরে শিক্ষকদের দিয়েছেন হাতেকলমে নতুন জীবনমুখী বিজ্ঞান শিক্ষার ট্রেনিং।

বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির তফাৎ নেই বললেই চলে। মুশকিল হল, প্রযুক্তি মানবিক ও দানবিক যে কোনো ভূমিকাতেই স্বচ্ছন্দ। শুধু যুদ্ধ ও হিংসা নয় - প্রযুক্তি লালিত অপরিমিত বিলাসের ফাঁসে আমাদের বাস্তুগ্রহ এই পৃথিবীর এখন হাঁসফাঁস দশা। সভ্যতা, ধংসের কিনারায়! অথচ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ফেলে দিলে বা একেবারে বর্জন করলে যে বিপদমুক্তি হবে - তাও নয়। যদিও, সেই ভ্রান্ত বা উদভ্রান্ত অভিমত ছড়াচ্ছেন অনেকেই। প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি ভালবাসা থেকে উৎসারিত দায়বদ্ধ যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি - তাকে বাদ দিয়ে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আজ আর নেই। সেই কারণেই, জীবনের উপান্তে গত কয়েক দশকে সমর বাগচী তাঁর সমস্ত জীবনীশক্তিকে উজার করে দিয়েছিলেন বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা গড়ে তোলবার নানাবিধ কাজে। আপাতদৃষ্টিতে নানা কাজ, কিন্তু আসলে লক্ষ্য একটাই।

কখনো হাতেকলমে বিজ্ঞান শিক্ষার কাজ, কখনো প্রকৃতি ও পরিবেশের সংকট সকলকে অবহিত করাবার কাজ, কখনো শ্রমজীবি মানুষের অধিকারের আন্দোলনের কাজ। কিন্তু, তিনটি নয় - সমর বাগচীর কাছে তা মিলেমিশে হয়ে উঠেছিল একটাই কাজ, একটাই ব্রত। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী ও মার্কসীয় ভাবনার মধ্য থেকে তিনি খুঁজে আনতে চাইছিলেন - সভ্যতার এই অভূতপূর্ব সংকটে বিহ্বল না হয়ে, এক সফল উত্তরণের পথ।

কেমন ছিল সেই গতেবাধা ছকের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞান শিক্ষণের কাজ? আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিখরচার বা নিতান্ত কম খরচার নানা উপকরণ, যেমন কাগজের থালা, ঠান্ডা পানীয়ের স্ট্র, সেফটিপিন, বেলুন, জল, মাটি এমন নানা টুকরোটাকরা জিনিস দিয়েই হাতে কলমে বিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা করা যায়। এইভাবে, প্রকৃতির নিয়মকে জেনে প্রাকৃতিক কার্যকারণের অন্দরমহলে দিব্যি উঁকিঝুঁকি মারা যায়। ঘটানো যায় ম্যাজিকের মতো আপাত অসঙ্গতির ব্যাপার - যার কারণ বিজ্ঞানের নিয়ম দিয়ে মেলে। সমরবাবু দক্ষ হাতে নিপুণভাবে তা করতে ও করাতে জানতেন। কৌতুহল জাগানিয়া সেইসব কাজের মধ্যে দিয়েই জন্মায় বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা। বিজ্ঞানে আস্থা। ঘটে যুক্তিবুদ্ধির ব্যবহার। যা শুধু যে মগজে শান দেয় তাই নয় - মগজের মধ্যে থাকা অজস্র স্নায়ুকোষ বা নিউরনের সংযোগকে জাগ্রত করে, বলশালী করে। সেই সংযোগ তৈরি করাটাই সুস্থায়ী বিজ্ঞান-মনস্কতা তৈরির বস্তুগত ভিত্তি। শুধু বক্তৃতা, পঠন-পাঠন ও প্রদর্শনের সঙ্গে যার তফাৎ আকাশ-পাতাল।

ভারতে সত্তরের দশক থেকে এই জাতীয় বিকল্প ধারার বিজ্ঞানশিক্ষার প্রয়াস অনেকে করতে শুরু করেন। যাদের মধ্যে কানপুর IIT-র কিছু ছাত্র, শিক্ষক এবং TIFR-এর বিজ্ঞানী অনিল সদগোপালের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীকালে দেশ ও বিদেশে এই ধারাতেই অপ্রথাগত বিজ্ঞানশিক্ষার এক প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন সমর বাগচী। ১৯৮০-র দশকে দূরদর্শনে 'কোয়েস্ট' শিরোনামের একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমর বাগচী ও পার্থ ঘোষ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

সমর বাগচীর জন্ম বিহারের পুর্নিয়ায়। তাঁর বাবা ছিলেন হেলথ ইন্সপেক্টর। বাবার কর্মসূত্রেই প্রবাস যাপন। সতীনাথ ভাদুড়ি ও ফনীশ্বরনাথ রেনুর সাহিত্যিক অনুসঙ্গে পুর্নিয়ার মৈথিলি জনসংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালি নিতান্ত অপরিচিত নয়। যাঁরা সমর বাগচীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছেন তারাই জানেন যে খানিকটা সেই সতীনাথ-রেনুর মেজাজ টের পাওয়া যেত সমর বাগচীর সরস ও তির্যক জনদরদী চিত্তে। বাংলা ও সর্বভারতীয় জনসংস্কৃতির এক মেলবন্ধন সমর বাগচীর মধ্যে অল্প বয়সেই ঘটে গিয়েছিল। বিহারে পুর্নিয়ার বাইরে মুঙ্গেরেও তাঁর কৈশোরের কিছু সময় কাটে।

বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের পরিবার পাকাপাকিভাবে কলকাতায় ফেরে। প্রথমে স্কটিশ চার্চ কলেজে ফিজিক্স নিয়ে পড়ার পর, ধানবাদে 'স্কুল অফ মাইনস' থেকে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সমর বাগচী কর্মজগতে প্রবেশ করেন। ঝাড়খন্ডে এক কয়লাখনিতে বছর দুই কাজের পর, একটি দুর্ঘটনায় আহত হন। সে সময় তিনি ছিলেন খেলাধুলা অন্তপ্রাণ। খেলার মাঠেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। কোমরে চোট। সারা জীবন যা তাঁকে ভুগিয়েছে। অথচ, তা উপেক্ষা করেও তিনি অপরিসীম জেদে - হাঁটা, পাহাড়ে ট্রেকিং ইত্যাদি চালিয়ে গেছেন আজীবন।

দুর্ঘটনার পর, খনিতে কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধে দেখা দিল। বিকল্প কাজ খুঁজতে গিয়ে, বিজ্ঞাপন দেখে, সম্ভবত ১৯৬২ সালে কলকাতায় গুরুসদয় দত্ত রোদে সদ্য গড়ে ওঠা বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড টেকনোলজিকাল মিউজিয়াম-এ (BITM) কিউরেটর হিসেবে যোগ দিলেন। পরে এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা হিসেবে তিনি উন্নীত হন।

BITM-এ যোগ দেওয়া ছিল সমর বাগচীর জীবনের একটা মোড় ঘোরার মুহূর্ত। এই কাজটাকে শুধু পেশা হিসেবে নয় - নেশা হিসেবেই তিনি গ্রহণ করেন। বলা যায়, এই নতুন বিষয়ে তিনি নিজেকে স্বশিক্ষিত করেন। একদিকে বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে চর্চা - অন্যদিকে বিজ্ঞানের জনপ্রিয়করণ - দু দিকেই অসামান্য পটুত্ব অর্জন করলেন। ইউরোপের বিজ্ঞানের ইতিহাস চর্চা করতে গিয়েই তিনি আবিষ্কার করলেন মানবতাবাদ ভিত্তিক রেনেসাঁস ও আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম রহস্য। এতটাই গুলে খেয়েছিলেন সেই ইতিহাস যে - দেকার্ত, স্পিনোজা, কোপার্নিকাস, রজার বেকন, ফ্রান্সিস বেকনকে নিয়ে যখন আলোচনা করতেন - মনে হতো, এদের সঙ্গে তিনি যেন কথাবার্তা বলেছেন, এরা সবাই যেন তাঁর চেনাজানা বন্ধু!

সমর বাগচীর কাছে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিয়াম হয়ে উঠল বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এক খোলামেলা কর্মশালা। কাজটা একা একা করলেন এমন নয়। এখানেই সমর বাগচীর স্বকীয়তা। কলকাতা শহরে এই কাজে যারা যুক্ত হতে পারেন, সবাইকেই জড়িয়ে ফেললেন এই নতুন কর্মযজ্ঞে। ফলে, BITM ছাত্র-ছাত্রী সহ আম জনতার কাছে, নিছক সংগ্রহশালা বা প্রদর্শনশালা নয়, জীবন্ত ও সংযোগ-স্থাপনকারী interactive মিউজিয়ামের প্রথম সফল দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে সক্ষম হলো। পশ্চিমের দেশগুলির বাইরে যার তেমন কোনো নিদর্শন ছিলনা।

কাজটা সহজে সাধিত হয়নি। এর জন্য যে মুক্তমন, গনতান্ত্রিক ও গণমুখী আচার আচরণ দরকার, ভারতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং আচরণ ছিল তার পথের কাঁটা। সেইসব কাঁটা, সমর বাগচী সাহসের সঙ্গে উপড়ে ফেলেছিলেন। তিনি যখন অধিকর্তা, যে কোনো বাইরের ব্যক্তি, কোনো এপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই তাঁর ঘরে ঢুকে, সরাসরি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারত। এই খোলামেলা ভাবের জন্যই তিনি এমন বহু গুনবান মানুষের সহায়তা পেয়েছিলেন - যাঁরা সচরাচর প্রতিষ্ঠান এড়িয়ে যান। সমর বাগচীর মুখে শুনেছি যে BITM ও কলকাতার কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করেন। খানিকটা সেই কারণেই BITM- এ সমর বাগচী গড়ে তোলেন এক নতুন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি।

মুক্ত মন ও খোলা দরজার নীতি পালনের ফলে এই পর্বে সমর বাগচী প্রতিদিন বহু মানুষের সান্নিধ্যে আসতেন। বহু সংস্থার বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণও পেতেন। ফলে, বিজ্ঞান ও সমাজের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ মেলবন্ধন গড়ে তোলা যে সম্ভব এর প্রমাণ তিনি পেলেন হাতেনাতে। হয়ে উঠলেন সেই মেলবন্ধনের অনুঘটক। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই নোডাল এজেন্ট বা বহুমুখী-সংযোজকের ভূমিকা সমর বাগচী পালন করে গেছেন।

BITM থেকে অবসর গ্রহণের পরেও সমর বাগচীর বন্ধুবর্গ ও মেইলিং লিস্ট ক্রমশ বিরাট আকার ধারণ করে। নানা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আদান প্রদান ও যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মেধা পাটকরের জন আন্দোলনের রাষ্ট্রীয় সমন্বয়ের পরামর্শদাতা শুধু নয়, তিনি ছিলেন এক প্রধান সেনাপতি। যদিও তিনি ব্যক্তিগত স্তরে খুব দুঃখের সঙ্গেই বলতেন, যে তাঁর অবসরের পর BITM জনসংযোগের তাঁর প্রদর্শিত সফল ও ফলপ্রসু ধারা বা সংস্কৃতি আর সেভাবে রক্ষা করেনি। ব্যক্তিগতভাবে BITM এবং NCSM কিন্তু সমর বাগচীকে তাঁর কাজ, নিষ্ঠা ও জ্ঞানের জন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত।

বিশ্বায়নের শুরুতেই দেশকে যে এক নতুন চ্যালেঞ্জ-এর মুখোমুখি হতে হবে - বিশেষত গরিব মানুষ ও পরিবেশকে যে পুঁজির প্রবৃদ্ধি ও 'উন্নয়ন'-এর নামে উচ্ছেদ, ধ্বংস ও অভূতপূর্ব বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে এটা যাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন - তাঁদের মধ্যে ছিলেন কলকাতার তিন ব্যতিক্রমী বিজ্ঞানী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনার্জি স্টাডিস-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সুজয় বসু। বসু বিজ্ঞান মন্দিরের বিজ্ঞানী ও অধিকর্তা মেহের ইঞ্জিনিয়ার। এবং জীবনমুখী বিজ্ঞান সংযোজক সমর বাগচী। নদী-বাঁধ নির্মাণও নানা ধরনের শিল্পায়ন ও পরিকাঠামো নির্মাণের আড়ালে বেছে বেছে আদিবাসী ও গ্রামবাসী গরিবদের উচ্ছেদ, হরিপুর সহ ভারতের সর্বত্র উপকূল বরাবর ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ, কৃষিতে জিন পরিবর্তিত (GM) ফসলের চাষ, একচেটিয়া দেশিবিদেশী পুঁজির কৃষি, খাদ্য বাণিজ্য ও খুচরো ব্যবসায় প্রবেশ; এককথায় - জল জমি জঙ্গল ও উপকূল দখল করে বিশ্বপুঁজির বহুবিধ আগ্রাসন ও ভারত-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে জনআন্দোলনে এই তিন বিজ্ঞানী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলেন। প্রশ্ন করলেন পুঁজিবাদী উন্নয়নের মডেলকে। যার ফলে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ হল। রাষ্ট্রশক্তি ও একচেটিয়া পুঁজির আগ্রাসন সেই সময় অংশত পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও সেই আগ্রাসন এখন আবার নতুন করে এ রাজ্য ও দেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। রাজনৈতিকভাবেও আজ পরিস্থিতি হয়ে উঠছে আরো ভয়ংকর ও অমানবিক। ফ্যাসিবাদের ছায়া দেশের সর্বত্র নজরে পড়ছে।

এই নিয়ে নব উদ্যমে নব্বই উত্তীর্ণ সমর বাগচী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কাজ, কাজ আর কাজে। ভারতজুড়ে যুক্তি, বিজ্ঞান-মনস্কতা ও গণতন্ত্রকে কোণঠাসা করছে, বিপন্ন করছে যে অবিজ্ঞান, অবিদ্যা ও অমানবিকতা তাঁকে চিহ্নিত করেছিলেন। অধ্যাপক সুজয় বসু ও বিজ্ঞানী মেহের ইঞ্জিনিয়ার মারা গেছেন আগেই। তাতে ভেঙ্গে না পড়ে, এবার সমর বাগচী সেই লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাহসী সেনাপতির মতো। স্থাপন করছিলেন সংঘর্ষ ও নির্মাণের একের পর এক দৃষ্টান্ত। তাই, এই সেদিন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির মুহূর্তেও রাষ্ট্রের পরিচালকদের জনবিরোধী নীতির দিকে একের পর এক প্রশ্নবান ছুঁড়ে দিতে ভোলেননি সমর বাগচী। নব্বই বছর বয়েসেও যোগ দিয়েছেন পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে, পুঁজি ও স্বৈরাচারী আগ্রাসন বিরোধী প্রতিটি মিটিং-এ মিছিলে। বড় অসময়ে, দুঃসময়ে তাঁকে হারালাম আমরা।