দশম বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা ● ১৬-৩১ মার্চ, ২০২২ ● ১-১৫ চৈত্র, ১৪২৮

প্রবন্ধ

ইউক্রেনে রুশ সেনা

গৌতম লাহিড়ী


নতুন এক খলনায়ক পাওয়া গেল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ - নিরীহ ইউক্রেনের উপর তিনি সামরিক আক্রমণ শুরু করেছেন। রাশিয়ার এই 'আগ্রাসন' সম্পর্কে সকলেরই ধারণার ভিত্তি মূলত পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহ এবং তাদের গণমাধ্যমের তথ্যের লাগাতার প্রচারের বোমাবর্ষণ। অনেকটা একতরফা। জানার প্রয়োজন ছিল পুতিনের যুক্তি কি? 'ডেভিলস আর্গুমেন্ট' কি? দু'তরফের বক্তব্য শুনে একটা সিদ্ধান্ত তৈরি করা সমীচীন। কেন পুতিন বিশ্বে একঘরে হবেন জেনেও যুদ্ধে নামলেন?

এই মুহূর্তে রাশিয়ায় যেমন পশ্চিমী গণমাধ্যম নিষিদ্ধ, তেমনি পশ্চিমী দুনিয়া নিষিদ্ধ করেছে রুশ মিডিয়া। ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়া সত্ত্বেও ভারতে রাশিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল দেখানো বন্ধ হয়ে গেছে। সব তথ্য পশ্চিমী মিডিয়া নির্ভর। আন্তর্জাতিক মিডিয়া কেবলমাত্র ইউক্রেনে পৌঁছেছে। রুশ সীমান্ত থেকে মিডিয়ার কভারেজ প্রায় নেই।

ইউক্রেনে আক্রমণের পূর্বে পুতিন প্রথমে ২১ ফেব্রুয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে) এবং পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতির উদ্দেশ্যে দীর্ঘ ভাষণ দেন। সেই ভাষণের সারবত্তা - ইউক্রেনের উপর হামলার যুক্তি। সকলে একমত নাও হতে পারেন। তবু জানা প্রয়োজন। পুতিন বলছিলেন, ডনবাস এলাকায় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা। এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা। কেন?

ইউক্রেনের রাশিয়া সীমান্ত বরাবর দক্ষিণ পূর্বের অঞ্চল ডনবাস। ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র ইউক্রেন মূলত কয়লা সম্পদে ভরপুর। মূল বাসিন্দারা নোমাডিক উপজাতি। সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সপ্তদশ শতাব্দীতে কসাকরা বসবাস শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জার সম্রাট এই এলাকা দখল করে নাম দেয় 'নয়া রাশিয়া'। এরপরেই মূল ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ান-সার্ব ও গ্রীকরা এখানে এসে বসবাস শুরু করে। মূলত ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের দৌলতে কয়লা শিল্প বিকশিত হয়। খনিজ সম্পদের কারণে অ্যাডলফ্ হিটলারও এই এলাকা দখল করেছিলেন। পরে সোভিয়েত লালফৌজ এই এলাকা দখল করে নেয়। ১৯৯১ সালে গণভোটের মাধ্যমে ডনবাসের দুটি প্রদেশ ডনেৎসক এবং লুহানৎসক স্বাধীন হয়ে রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। অবশ্য ততদিনে সোভিয়েতের পতন হয়েছে।

ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত হয় রাজধানী কিভ থেকে। শুরু হয় বৈষম্য। ১৯৯৩ সালে প্রথম কয়লা খনি শ্রমিকরা লাগাতার ধর্মঘটে নামে। আদতে ডনবাস চেয়েছিল স্বশাসন। কিভ থেকে শাসন নয়। ১৯৯৪ সালে ধর্মঘটের পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত গণভোট নেওয়া হয়। স্বশাসন নাকি কিভ থেকে শাসন? ৯০ শতাংশ ভোট দেয় স্বশাসনের পক্ষে। কিভের শাসকরা রাজি হয়নি। গণভোটের রায় প্রতাখ্যান করা হয়। এরপর বিশ্বব্যাঙ্ক-এর উদারীকরণের নীতির ফলে বহু খনি বন্ধ হয়ে গেল। কিভের শাসকদের মদতে এখানকার অভিজাতরা রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডনবাস সর্বনিম্ন আর্থিক অবস্থায় এবং গণতান্ত্রিক অধিকার বঞ্চিত একটি প্রদেশে পরিণত হয়ে গেল। ২০১৪ সাল থেকে পরিস্থিতি বদলাল। রুশপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধল কিভপন্থীদের। ততদিনে ক্রিমিয়া রাশিয়ার দখলে। ১১ মে ২০১৪-য় ফের গণভোট। ডনবাসের দুই প্রদেশ স্বশাসনের পক্ষে রায় দেয়। কিভ সরকার এবং আন্তর্জাতিক পশ্চিমী দুনিয়া সেটা মেনে নেয়নি।

ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠলো ডনবাস। রুশ সামরিক সহায়তায় ডনবাসের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ লাগল। রাশিয়া তখন থেকেই অভিযোগ করতে থাকল ইউক্রেনের সরকার ডনবাসে গণহত্যা করেছে এবং বেছে বেছে রুশ ভাষাভাষীদের হত্যা করেছে। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনী সরকার যুদ্ধ বিরতি চাইল। ২০১৪-র সেপ্টেম্বর মাসে বেলারুশ-এর রাজধানী মিনস্ক-এ প্রথম চুক্তি হল। এতেও শান্তি না ফেরায় ফের দ্বিতীয় চুক্তি হল - মিনস্ক-টু। ২০১৫ সালে। এই চুক্তিতে ডনবাসকে আর্থিক স্বশাসন দেওয়ার কথা হয়। কার্যত যা পালিত হয়নি। কেননা, ইউক্রেনের ধারণা রাশিয়া ডনবাসের মাধ্যমে ইউক্রেনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ২০২২-এর জানুয়ারি পর্যন্ত ২৯ বার 'যুদ্ধবিরতি চুক্তি' হয়েছে। যার কোনোটাই সফল হয়নি।

ডনবাসে জাতিগত ভাবে ইউক্রেনীয়রা সংখ্যাগুরু। রাশিয়ানরা সংখ্যালঘু। প্রায় ৩৮ শতাংশ। এখানকার প্রথম ভাষা রুশ। এদের সঙ্গে সংঘাত ইউক্রেনের বর্তমান ইহুদি শাসক প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি-র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এখানকার ইহুদিদের জার্মান ইহুদিদের মতো হত্যা করা হয়। অনেক পরে ধীরে ধীরে তারা ইউক্রেনের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। মূলত ইজরায়েল এবং পশ্চিমী শক্তির মদতে। এক সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ডনবাসের ভিক্টর ইয়ানোকোভিচ। তিনি নিরপেক্ষ ইউক্রেনকে ২০১৩ সালে রাশিয়ার সহযোগী করে তোলেন। পশ্চিমী শক্তির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার চুক্তি বাতিল করেন। ডনবাস-এর প্রভাব ছিল ইউক্রেনে। শেষ পর্যন্ত রুশপন্থী ভিক্টরকে উৎখাত করা হয়।

ইউরোপের মধ্যে সবথেকে গরীব দেশ, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার আগে ২২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ডনবাসের দুই প্রদেশ - ডনেৎসক এবং লুহানৎসক-কে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। রুশ পার্লামেন্ট অনুমোদন করে। তাদের দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

পুতিন ভাষণে বলছিলেন - পূর্ব দিকে অর্থাৎ রাশিয়ার সীমান্তের দিকে ন্যাটো শক্তি প্রভাব বিস্তার করছে। ১৯৪৯ সালে পশ্চিমী সামরিক জোট ন্যাটো গঠনের সময়ে ১২টি ইউরোপীয় দেশ এবং দুটি উত্তর আটলান্টিক রাষ্ট্র সদস্য ছিল। এখন তাঁর সদস্য সংখ্যা বেড়ে ৩০। এরমধ্যে ন্যাটো ঘোষণা করে পূর্ব সোভিয়েতের জর্জিয়া ও ইউক্রেন-কে সদস্য করা হবে। এতেই প্রমাদ গোনে রাশিয়া। ডিসেম্বর মাসে পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি করেন জর্জিয়া ও ইউক্রেন-কে যেন ন্যাটো সদস্য করা না হয়। ওয়াশিংটন দাবি খারিজ করে। রাশিয়ার সীমান্তের কাছে ন্যাটো দেশ হওয়ার অর্থ যে কোনো মুহূর্তে সেখানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে উঠতে পারে। বিডেন-পুতিন-এর বৈঠক ব্যর্থ হয়। পুতিন হুমকি দেয় যদি সামরিক ঘাঁটি গড়ার কোনোরকম প্রচেষ্টা করা হয় তাহলে রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে বাধ্য হবে। সেই মুহূর্তে আমেরিকা হুমকি দেয় পুতিন যদি তা করতে সচেষ্ট হন তাহলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যা আজ করা হয়েছে। আমেরিকা নানা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো রাশিয়ার জ্বালানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি! কারণ - আমেরিকা সহ ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ করে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এই জন্যই বারবার আবেদন করছেন রাশিয়ার জ্বালানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।

পুতিন দাবি করেন, গত ত্রিশ বছর ধরে ন্যাটোকে বোঝানো হচ্ছে ইউরোপের শান্তি যেন বিঘ্নিত না হয়। অথচ ন্যাটো ক্রমেই "আমাদের সীমান্তে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে।" এরপর পুতিন পুরোনো সোভিয়েতের পতনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, "আশির দশক থেকেই সোভিয়েতকে দুর্বল করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সোভিয়েতের পতন হয়েছে। আমাদের সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে।" ১৯৯০ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গরভাচভ-এর সঙ্গে আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রী জেমস্ বেকার-এর বৈঠকে প্রতিশ্রুতি ছিল, যা আজ বিখ্যাত উক্তি বলে ধরা হয়, "ন্যাটো কোনোমতেই পুবদিকে বিস্তার করবে না।" পুতিন বললেন, "সোভিয়েতের পতনের পরে সেইসব প্রতিশ্রুতি উধাও।" তিনি এও সতর্ক করেন, "এটা কেবলমাত্র রাশিয়ার সমস্যা নয়। এতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটবে। এমনকি আমেরিকার সহযোগীদের উদ্বিগ্ন হওয়ারও কারণ আছে।"

পুতিন মনে করিয়ে দেন, "মনে আছে? ১৯৯৯ সালে এই ন্যাটো বেলগ্রেডে বিমান দিয়ে বোমাবর্ষণ করেছিল ইউরোপের মধ্যে।" এতে কিছুটা কাজ হয়েছে। সার্বিয়া - ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছে। তখনও তো রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ নিষেধ করেছিল। তাও তো ন্যাটো বোমাবর্ষণ থেকে বিরত থাকেনি। কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে বোমা বর্ষিত হয়।

একে একে লিবিয়া, ইরাক এবং সিরিয়া, - সকলেই ন্যাটোর আক্রমণে বিধ্বস্ত। পুতিনের মতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিকৃত ব্যাখ্যা করে রাষ্ট্রগুলিকে ধ্বংস করা হয়। মানবতার বিপর্যয়। গৃহযুদ্ধে বিদীর্ণ। এরপর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের জন্ম। এর পরিণতিতে লিবিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ইউরোপে পলায়ন ঘটে। সিরিয়ায় যা ঘটেছে তাকে আগ্রাসন ছাড়া আর কি বলা যায়? ইরাকের ক্ষেত্রে রাসায়নিক অস্ত্রের কারখানার অলীক কাহিনি প্রচার করে বিশ্বাস করানো হয় সকলকে। যা পরে প্রমাণিত হয়নি। "এরপর আমাদের বোকা বানানো হয়েছে এই বলে যে ন্যাটো পুবদিকে অগ্রসর হবে না।" - পুতিন বলেন। তাঁর কথায় "আমেরিকা মিথ্যার সাম্রাজ্য তৈরি করে।" তিনি এও বলেন, "সোভিয়েতের পতনের পরে রাশিয়া পশ্চিমের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করে।" অথচ পশ্চিমী দেশগুলি দক্ষিণ রাশিয়ায় বিচ্ছিন্নতা ও মাফিয়াদের সমর্থন করতে শুরু করে। ২০০০ সাল থেকে এই ঘটনা ঘটে চলেছে।

২০২১-এর ডিসেম্বরে রাশিয়া পুনরায় পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করে। বিষয় ছিল ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপে বিস্তার রোখা। ন্যাটো এককথায় তা খারিজ করে। তাদের যুক্তি ছিল ন্যাটো দেশগুলি স্থির করবে কাদের সদস্য করা হবে। এটা রাশিয়া চাপিয়ে দিতে পারে না। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে - এরপর কি? পুতিন বারবার পুরোনো সোভিয়েতের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, "১৯৪০-৪১ সালে সোভিয়েত বারবার যুদ্ধ ঠেকানোর চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় আত্মরক্ষার স্বার্থে। তখন কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।"

১৯৪১ সালের ২২ জুন হিটলারের জার্মানি সোভিয়েত আক্রমণ করে। শেষ পর্যন্ত হিটলার পরাস্ত হলেও সোভিয়েত রাশিয়াকে বহু মূল্য দিতে হয়েছিল। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে পুতিন ঘোষণা করেন, "সোভিয়েত যে ভুল করেছিল আমি তা করতে চাই না। আমাদের সেই অধিকারও নেই।" তিনি এও বলেন, "যারা বিশ্বে প্রভুত্ব করতে চায়, তারা কোনো অজুহাত মানবে না। জানি তারা আমাদের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাধর। আমাদের বহু আর্থিক ক্ষতিও হতে পারে। সোভিয়েত ভেঙ্গে গেলেও আজ রাশিয়া অনেক ক্ষমতা ধরে। কেউ যেন ভুলে না যায় রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রধর রাষ্ট্র। আমাদের অনেক উন্নত আধুনিক মারণাস্ত্র রয়েছে। আক্রমণকারী সমুচিত জবাব পাবে। কিন্তু আমাদের সীমান্তে যদি বিদেশী সামরিক শক্তি ঘাঁটি গাড়ে তাহলে সেটা কি আমরা অনুমতি দেবো? ন্যাটো বারবার ঘোষণা করেছে রুশ সীমান্তে তারা সামরিক পরিকাঠামো বাড়াবে। আমরা এসব মুখ বুজে মেনে নিতে পারি না। সীমান্তের ইউক্রেনে যদি সামরিক ঘাঁটি হয় তা আমরা মেনে নিতে পারি না।" পুতিন বলেন, "আমাদের প্রতিবেশী হলেও ইউক্রেন রাশিয়ার জমি। সেখানকার সরকার ন্যাটোর মদতে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। এটা অতিকথন নয়। এটা বাস্তব।"

এরপর তিনি ডনবাসের প্রসঙ্গ উথ্বাপন করেন। ২০১৪ সালে যারা ইউক্রেনের ক্ষমতা দখল করে তারা লোকদেখানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসার জন্য। যে গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়ার কথা ছিল ডনবাসকে তা দেওয়া হয়নি। আট বছর ধরে সংঘাতের পরেও কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হয়নি। সেখানকার মানুষের কথা ভেবেই রাশিয়া ডনবাসকে পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। পুতিনের মতে, ইউক্রেনের বর্তমান শাসক দক্ষিণপন্থী এবং নয়া-নাৎসী। ক্রিমিয়া ও শেভাৎসোপোল-এর রাশিয়ায় সংযুক্তি এরা মেনে নিতে পারছে না।

পুতিন বলেন, "সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়া বাস্তবতা। এটা আমরা মানি। কিন্তু আমাদের সীমান্তে বিদেশী শক্তি ঘাঁটি গাড়বে সেটা আমরা মেনে নেবো না।" ২০০০-০৫-এ ককেশাস অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীদের রুখতে রুশ সামরিক বাহিনী নামে। ২০১৫ সালে সিরিয়া থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশও রাশিয়া রুখে দেয়। পুতিনের যুক্তি গণপ্রজাতন্ত্রী ডনবাস সাহায্য চেয়েছে বলেই রাশিয়া যুদ্ধে নেমেছে। পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনকে সামরিকভাবে নিরস্ত্রকরাই উদ্দেশ্য। ইউক্রেন দখল করা নয়। কিন্তু আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।