দশম বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা ● ১৬-৩১ মার্চ, ২০২২ ● ১-১৫ চৈত্র, ১৪২৮

সম্পাদকীয়

পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে


সদ্য সমাপ্ত পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি-যুগ শুধু সমাগত নয়, বহু গুণে শক্তিশালী হয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে ভারতের রাজনীতি এক নয়া মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। একদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিগ্রস্থ, পরিবারতান্ত্রিক এবং তাদের আনুকুল্যে চলা গান্ধী পরিবারের স্নেহধন্য মোসাহেবদের ভিড়, যাদের মতাদর্শ এবং রাজনৈতিক দৈন্য দিনের আলোর মতন পরিষ্কার। অন্যদিকে, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং তথাকথিত হিন্দু-জাতীয়তাবাদের উপর নির্ভরশীল আরএসএস-বিজেপি-র রাজনীতি, যার প্রাণকেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর অধিষ্ঠান। এই দুইয়ের টক্করে দেশের পুঁজিপতি শ্রেণি ও মিডিয়ার অপার আশীর্বাদধন্য মোদী ও বিজেপি দিল্লির মসনদ দখল করেছে আজ ৮ বছর হল। এই আট বছরে দেশের মানুষের দুরবস্থা বেড়েছে বৈ কমেনি। তবু, বিজেপি ও মোদীর অশ্বমেধের ঘোড়া থামার নাম যেন নিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, কেরল, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র-র মতন রাজ্য বাদ দিয়ে বিজেপি সমস্ত রাজ্যে হয় ক্ষমতাশীল নয়ত তাদের মিত্ররা সেখানে সরকার চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতির বদল হয় কি না, তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল ২০২২ সালের এই বিধানসভা নির্বাচনগুলির দিকে। কিন্তু সেই ফল আসার পরে দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি পুনরায় সরকার গঠন করেছে, তাদের ২০১৭ সালের তুলনায় প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ বাড়িয়ে। উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরেও বিজেপি সরকার গঠন করছে। একমাত্র ব্যতিক্রম পাঞ্জাব যেখানে কংগ্রেস-অকালি-বিজেপি-র মতন চিরাচরিত রাজনৈতিক দলগুলিকে পরাজিত করে আপের উত্থান পৃথক আলোচনার দাবি রাখে। প্রশ্ন হল, একদিকে বিজেপি-র এই বিপুল জয়, অন্যদিকে আপের উত্থানের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের কোন রাজনৈতিক ছবি আমাদের সামনে ফুটে উঠছে?

ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হলে বর্তমানের দিকে তাকানো আবশ্যিক। উত্তরপ্রদেশে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, কৃষি সংকট, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণ, মুসলমান দমন, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, কোভিডে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু—সমস্ত কিছুর পরেও সেখানে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রীত্বের চেয়ারে বসবেন যোগী আদিত্যনাথ। কেন মানুষ এত সমস্যার মধ্যেও একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সরকারকে বেছে নিল? এর একটি সহজ উত্তর আছে, যা সামাজিক মাধ্যমে সবজান্তা চেয়ার গরম করা বুদ্ধিজীবিরা লিখে চলেছেন। তাঁদের মতে, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মানুষ আহাম্মক এবং ঘোরতর সাম্প্রদায়িক। ফলত, তাঁরা যোগী-মোদীর উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে দুই-হাত তুলে সমর্থন করেছে। অর্থাৎ, সাম্প্রদায়িকতার জয় হয়েছে এবং জনগণ অপদার্থ বলেই এমনটা হয়েছে। সচরাচর বুদ্ধিজীবিদের কথা যেমন অন্তঃসারশূণ্য হয়, এই ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা নিশ্চিতভাবেই এই নির্বাচনের ফলাফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক, কিন্তু একমাত্র নির্ণায়ক নয়। একদিকে ৮০-২০ শতাংশের কথা বলে বিজেপি মুসলমানদের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করেছে। আবার পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র কুখ্যাত দাঙ্গাবাজ বিধায়করা নির্বাচনে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে। অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টি তাদের ইতিহাসে সর্বাধিক ভোট এই নির্বাচনে পেয়েছে। শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভোট হলে এই ফলাফল সমাজবাদী পার্টির পক্ষেও করা সম্ভব হত না। অতএব, সাম্প্রদায়িকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও একমাত্র উপাদান নয়।

আমাদের মতে উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের পুনর্নির্বাচন সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতের রাজনীতির এক অসামান্য মেলবন্ধন। বহু বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে জাত-পাত ভিত্তিক রাজনীতি হয়েছে। বামপন্থীরা এই রাজনীতি দেখে যতই নাক সিঁটকোন না কেন, এই রাজনীতির মাধ্যমে সমাজের অবদমিত মানুষের এক বৃহদাংশ যে সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়নের মুখ দেখেছে এই কথা অস্বীকার করা যায় না। ১৯৭০-৮০ দশকের উত্তরপ্রদেশে দলিত-ওবিসি মানুষের উপর যেই অত্যাচার হত, তার তুলনায় সমাজবাদী পার্টি বা বহুজন সমাজ পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়া এক বিরাট ঘটনা। কিন্তু মুখে আম্বেদকরের কথা বললেও এই তথাকথিত জাত-ভিত্তিক পার্টিগুলি জাতিপ্রথার অবলুপ্তির জন্য কোনো সংগ্রাম করেনি। বরং নিজের জাতের লোকেদের অধিক সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, তাদের গুণ্ডামি করার লাইসেন্স দেওয়া সমাজবাদী পার্টি এবং বিএসপি সেই রাজ্যে নির্লজ্জভাবে করেছে। তাই সমাজবাদী পার্টির খাতায় যাদব ও মুসলমান ভোট এবং বিএসপি-র খাতায় দলিত, বিশেষ করে জাটব-ভোট লিখে দিয়ে তারপরে বাকি ভোটের হিসাব খুঁজত উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিবিদ এবং গবেষকরা।

কিন্তু খুব দ্রুত এই রাজনীতি মানুষকে শুধুমাত্র জাতভিত্তিক কিছু ভোটে পর্যবসিত করতে সক্ষম হয়। কোনো দৃঢ় রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে এই জাতিগুলিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়নি। বরং, নিজের নিজের জাতের লোকেদের যাতে ভালো হয় এই চেষ্টাই এরা করে এসেছে। বিজেপি বর্তমানে এই রাজনীতির কবর খুঁড়ে ফেলেছে। প্রথমত, যাদব ব্যতিরেকে বাকি ওবিসি, এবং জাটব ব্যতিরেকে বাকি দলিতদের মধ্যে তারা সমর্থন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। যেমন সিএসডিএস-র সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি যাদবদের মধ্যে ভোট পেয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ, যেখানে সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৮৩ শতাংশ। কিন্তু অ-যাদব ওবিসিদের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৬৬ শতাংশ ভোট আর সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ২৩ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে জাটব দলিতদের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ২১ শতাংশ ভোট (২০১৭তে যা ছিল ৮ শতাংশ), যেখানে বিএসপি পেয়েছে ৬৫ শতাংশ ভোট (২০১৭তে যা ছিল ৮৭ শতাংশ)। অ-জাটব দলিতদের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৪১ শতাংশ আর বিএসপি পেয়েছে ২৭ শতাংশ ভোট।

উপরের পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার যে বিজেপি ওবিসি এবং দলিতদের একটি বড় অংশকে নিজেদের রাজনীতির দিকে টানতে পেরেছে। এর অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, মায়াবতী বা মুলায়ম ও অখিলেশ যাদব, এই সম্প্রদায়ের মানুষগুলির উন্নয়নের কথা আসলে কোনোদিন ভাবেনি। বিজেপি সেখানে এই সম্প্রদায়গুলির সঙ্গে সেতুবন্ধন করার চেষ্টা করেছে এবং মণ্ডল রাজনীতির পতাকাধারী রাজনৈতিক দলগুলির জাতের প্রশ্নে দ্বিচারিতার কথা, শুধু নিজের জাতির উন্নতিসাধনের কথা সোচ্চারে বলেছে। এই বস্তুগত উপাদানের সঙ্গে বিজেপি অত্যন্ত সুচারুভাবে জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিকে মিশিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে তাদেরকে লাগাতার আক্রমণ করতে করতে, হিন্দুত্বের পতাকাতলে বিজেপি দলিত ও ওবিসি বর্গের এক বিশাল সংখ্যক মানুষকে যে একত্রিত করতে পেরেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সাম্প্রদায়িকতা, জাতপাত, জাতীয়তাবাদের রাজনীতির সঙ্গে বিজেপি মিশিয়েছে জনবাদী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরকারী বিভিন্ন স্কিম ও সহায়তা। তবে বিজেপি-র সরকারী সহায়তার সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তফাত আছে। নবউদারবাদে নিমগ্ন বিজেপি ধনীদের থেকে গরীবদের হাতে টাকা দেওয়ার মতন কোনো নীতি গ্রহণ করেনি। বরং তাদের নীতিগুলি এমন যেখানে গরীবদের নিজের ভালো নিজেকেই বুঝে নিতে হবে শুধু সরকার তাদের হাত ধরবে। যেমন উজ্জ্বলা যোজনা — এখানে সরকার আপনার কাছে বিনামূল্যে শুধু গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কিন্তু সিলিন্ডার আপনাকে নিজের পয়সা খরচ করেই কিনতে হবে। আবার বাড়িতে শৌচালয় হলেও নিকাশি ব্যবস্থার দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে না। অন্যদিকে, কৃষকদের হাতে নগদ টাকার মতন প্রকল্প বিজেপি-র জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।

সাম্প্রদায়িকতা-জাতীয়তাবাদ-জাতপাত-সামাজিক প্রকল্পের মেলবন্ধনে বিজেপি যেই রাজনৈতিক আখ্যানটি তৈরি করেছে তার প্রত্যুত্তরে কোনো বিকল্প রাজনীতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এই যে গ্রহণযোগ্যতার অভাব তা বোঝার জন্য তাকাতে হবে কংগ্রেস নামক দলটির দিকে। এখনও অবধি কংগ্রেস বিজেপি-র বিরুদ্ধে কোনো বিকল্প কর্মসূচী মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। একদিকে নবউদারবাদের প্রতি দলটির আনুগত্য, এবং গান্ধী পরিবারের পুত্র-কন্যার হাতে দলটির ভবিষ্যৎ দুই-ই দলটির প্রভূত ক্ষতি করছে। একদিকে মোদীর মতন সাধারণ মানুষের গল্প শোনাচ্ছে বিজেপি, যিনি নিজের দমে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আরেকদিকে গান্ধী পুত্র-কন্যা যাদের একমাত্র যোগ্যতা তারা রাজীব গান্ধীর পুত্র ও কন্যা। দেশ পাল্টাচ্ছে, হুজুর মাই-বাপের দিন শেষ। সেখানে বিগত অতীতের জমিদার সন্তানদের মতন দেশের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবারের সন্তানের কোনো আলাদা দাবি থাকতে পারে না। সেই দাবি আদায় করে নিতে হয় রাজনীতির ময়দানে, মাঠে নেমে গা ঘামিয়ে। মাঝে মাঝে বেড়াতে যাব, সংসার করব, তারপরে বাড়তি সময়ে রাজনীতি করব, এমনটা হয় না। মোদী-শাহর তীব্র বিরোধিতা করলেও মানতেই হবে তাঁরা ২৪ ঘন্টা, ৩৬৫ দিন রাজনীতি নিয়ে থাকেন, এবং তাদের রাজনৈতিক জয়ের স্পৃহা ঈর্ষাজনক।

কংগ্রেসের দ্বারা যে কিছু আর হবার নয়, তার প্রমাণ পাঞ্জাব। বিগত পাঁচ বছর ধরে এখানে সরকার চালিয়েছে দলটি। ব্যাপক কৃষক আন্দোলন হয়েছে রাজ্যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে কংগ্রেসের কী! নিজেদের মধ্যে কোন্দল পাকিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীকে রাতারাতি পালটিয়ে, একজন অচেনা ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী করে, নবজ্যোত সিধুর মতন একজন ভাঁড়কে প্রদেশ সভাপতি করার মিলিত ফল হল পাঞ্জাবে কংগ্রেসের পরাজয়। কিন্তু সেখানে বিজেপি নয়, জিতেছে আপ। সমস্ত প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলিকে পরাজিত করে আপের এই উত্থান প্রমাণ করে যে মানুষ বিজেপি ও কংগ্রেসের বাইরে বিকল্প চাইছে। তাদের সামনে সেই বিকল্প গ্রহণযোগ্যভাবে হাজির করতে হবে। আপের রাজনীতির অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাদের জয় মানুষের যেই আকাঙ্ক্ষার কথা বলে তা সত্য। সেই বিকল্পের সম্ভাবনা পাঞ্জাবে থাকলে দেশের অন্যান্য প্রান্তেও রয়েছে। মানুষ সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে বা হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছে বলে দিল্লি-মুম্বাই-কলকাতা-চেন্নাইতে হল্লা করলে কাজের কাজ কিছু হবে না, বরং সত্যিই হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি হবে। তা যদি না হতে দিতে চাই তাহলে পথে নেমে বৃহৎ আন্দোলন করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

বিজেপি ক্ষমতার শিখরে রয়েছে। অর্থ, মিডিয়া, জনসমর্থনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তবু তাদের বিরাম নেই। উত্তরপ্রদেশের পরেই তাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে গুজরাটের দিকে যেখানে ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হবে। এর বিপ্রতীপে কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টির মতন রাজনৈতিক দল যারা রাজনীতির নামে কিছু পরিবারের পারিবারিক ব্যবসার মতন একেকটি দল পরিচালনা করে। নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে যাদের দেখা পাওয়া যায়। কোভিডে যখন গঙ্গা-যমুনায় লাশ ভাসছে রাহুল গান্ধী বা অখিলেশ যাদব কোনো আন্দোলন করার চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। ছয় মাস আগে অবধি অখিলেশকে উত্তরপ্রদেশে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। শুধু ভোটের আগে এসে কিছু ভালো ভালো কথা বলো ভোটে জেতা যায় না, যেখানে বিপরীতে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরএসএস-বিজেপি-র মতন শক্তি। কিন্তু এত দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও সমাজবাদী পার্টি তাদের ইতিহাসের সর্বাধিক ভোট পেয়েছ, তাদের আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আগের বিধানসভার তুলনায় এই বিধানসভায় উত্তরপ্রদেশ বেশি সংখ্যক বিরোধী দলের বিধায়ক দেখতে পাবে। এইসব ঘটেছে মানুষ নিজেরাই বিরোধীতা করতে চেয়েছেন এবং করেছেন বলে।

এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বাধিক বড়ো গণ-আন্দোলন, কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় না থেকেও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিপুল আকার ধারণ করে। সেই আন্দোলনের জোরে বিজেপিকে হারানো যায়নি, কিন্তু তাদের বিরোধিতা করে তাদের পিছু হটানো যায়, তা প্রমাণ করেছে। সমাজবাদী পার্টি এই নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের নেপথ্যে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনগুলির ভূমিকা আছে।

এর থেকেই শিক্ষা নিতে হবে প্রগতিশীল, বাম ও গণতান্ত্রিক শিবিরকে। কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টি বা বিএসপি-র সঙ্গে জোট করে বিজেপিকে হারাবো এই কথাগুলির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। উত্তরপ্রদেশে বিরোধীরা জোট করলেও বিজেপি জিতেছে, না করলেও জিতেছে। তাই নির্বাচনী জোট নয়, জোর দিতে হবে গণআন্দোলনের উপর। পুরোনো ধাঁচের তথাকথিত সেকুলার রাজনীতি ও জোট বর্তমানে বিজেপি-র খুব বড়ো কোনো চিন্তার কারণ নয়। কিন্তু বড়ো গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের পরাস্ত করতে হবে।