আরেক রকম ● দশম বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ● ১৬-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ● ১-১৫ ফাল্গুন, ১৪২৮

সমসাময়িক

পুরভোট পুরো পোড়া


পুরভোট পুরোদমে গণতন্ত্র বিস্তারে ব্যবহৃত হয়েছে। হইতেছে। এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮০টি জায়গায় হইবে। ভুল বলছি, ৭৭টি পুরসভায়। তিনটিতে কোনো 'বিরোধী' নাই। তো শাসকদল কী করবে নিজেরা নিজেরা খেলবে। সে তো চলছেই, অভিষিক্ত অথবা মমতাময় হয়ে। সত্তর দশকের মতো 'আদি মাদি' নব-র লড়াই শুরু হয়েছে। তখন পেটো বেশি। এখন পয়সার ঝনঝনানি। আইপ্যাক প্যাক আপ করেনি এখনো।

কে যে কার লোক বলা ভারি শক্ত। এই দিদি তো এই ভাতিজা। মাঝে কাজিয়ায় মার খেয়ে মরে গরিব মানুষ। সব তো আশি নব্বইয়ের মতো 'আমাদের লোক' ।

কে আর ঘরের বাইরের হতে চায়।

ঘর বাহির সদর অন্দর সব একাকার।

এক ব্যক্তি এক পদ - এখন বাংলার প্রধান বিপদ। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, দারিদ্র্য, আত্মহত্যা, কারখানা বন্ধ, সরকারি চাকরি প্রায় নেই - সব ধুয়ে মুছে সাফ।

সমস্যা কে কোন পদ পাবেন? এবং কত্তো তাড়াতাড়ি পাইবেন?

আম দুধ মিশে গেলে আঁটির আঁখি কি কিরকিরির কী হইবে ভাবিয়া আমাদের কী দরকার।

আমরা আদার লোক আধারহীন হয়ে আধার কার্ড নিয়ে আঁধারে আছি। আদা নয় এখন আদানির যুগ। এবং ডানে বামে আমদানির। তাই, আরো কার্ড আসিতেছে! নেবো। জীবনটাই তো কার্ডের খেলা। যে পারছে, যেমন পারছে, খেলে নিচ্ছে।

নিতে দিন। ট্রাম্প কার্ড ২০২৪-এ খেলবে জনতা।

২০১৮-য় পঞ্চায়েত নির্বাচনে উন্নয়ন খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যথা করে ফেললো। তাই ২০১৯-এ লোকে সবক শেখাতে পারলো।

আরে বাবা, বিপদ মহাবিপদ আপদ সব আছে। লোকে মহাবিপদ থেকে বাঁচতে আপদকেই বেছেছেন ২০২১-এ। সেটা আপদদের কে বোঝাবে? সবাই তো দলের বিভূষিত সম্পদ। বোঝা এবং বোঝানোটাই এখন সবচেয়ে বড় বোঝা।

মাথা আছে বলেই না, মাথাব্যথা। না থাকলে কী সারিডন বাজারে আসতো!

ওষুধের জন্য নয় এখন অসুখের যুগ। অসুখের জন্য ওষুধের নয়।

আগে টিকা আবিষ্কার পরে রোগ আতঙ্ক বিস্তার।

ভোটের টিকা আবিষ্কার কবেই হয়েছে। ভোট দেওয়ার বড় ঝামেলা।

সে দায়িত্ব বহু সময় শাসকদের দল নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে পরিতৃপ্ত।

কোনো পরিশ্রম নাই।

মরেও শান্তি পাবেন না।

যতই নামী বা ঘনিষ্ঠ হোন।

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় সার্থকতা লাভ করেছেন। ভোট দিয়েছেন দ্বিতীয় জন্ম লাভ করে। চেহারায় মিল নাই? তো কী? মৃত বলে ভোট দিতে পারবেন না? মৃত ব্যক্তি তো খেতে পারেন না, তবু পিণ্ড দেন কেন? জাবালি কবেই বলেছেন।

আধুনিক হা-রামজাদারা সে-সব বুঝতে নারাজ। তাই শবাধার প্রস্তুত হচ্ছে। গণতন্ত্রের পিণ্ডি চটকে, মটকে, গণতন্ত্র উদযাপন। আর পুলিশ? সে তো সব কালে সব সময় আমার পুলিশ।

যে ব্যক্তি জয়ললিতার শাড়ি টানবেন তিনিই মহা উৎসাহে করুণানিধির কলার ধরবেন। এ তো রাজ্যে কেন্দ্রে সম্মিলিত সত্য।

সংগঠিত গণতন্ত্র অসংগঠিত স্বৈরতন্ত্রের চেয়ে মারাত্মক। এখন দুই হাত ধরাধরি করে চলে। পুরাণ কাহিনী উদ্ধৃত করলেও থানা ডাকে এখন বাংলায়। সরস্বতীর যুগ। সবাই সারস্বত হয়ে ষাঁড়-সত্য এবং ষাঁড়স্বত্বময়।

রামমোহনকে পূজা করবো এবং মূর্তিপূজা ঐতিহ্য সংস্কৃতি বলে হলুদ শাড়ি ফুল নিয়ে কাব্যি ফেঁদে যাব। ওদিকে বিজেপির গোপন এজেন্ট ওয়েসিরা হিজাবের জন্য হেদিয়ে মরবেন, ওদিকে একদল হিজাব আটকাতে।

আসল প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাধিকার, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন। সে নিয়ে কথা কই?

আন্দোলন সে তো পাঞ্জাবের কৃষকরা করবেন। আমরা ইভেন্ট ঠেকাতে ইভেন্ট করবো।

জগৎ এখন ইভেন্ট(স)ময়।

ভয় নেই?

আছে। হারানোর। সর্বহারা কই? থাকলেও তাদের কথা ভাবে কে? মরার পর গাইবো, জাগো জাগো সর্বহারা।

বাকি সময় সর্বস্ব-হারা।

অতএব প্রহসন চলিবে।

ছাত্ররা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জেলে যাবে। বড় বড় রাজনৈতিক দল নিরুত্তর রবে। কারণ সবাই এখন 'সহি' হিন্দু বা 'সহি' মুসলিম হতে ব্যস্ত।

আর আন্দোলন নেই কর্মসূচি আছে। তাই ইভেন্ট সর্বস্ব সময়ে পুর ভোট পুরো গণতন্ত্র পোড়া।

পোড়া কপাল বলে একটা মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে দেখলে কেমন হয়।

কেননা জনগণ চায়?

জনগণ কী চায়, কে জানিতে আগ্রহী।