আরেক রকম ● দশম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা ● ১-১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ● ১৬-৩০ মাঘ, ১৪২৮

প্রবন্ধ

এভাবেও হয়

অসীম চট্টরাজ


দৃশ্য ১: আলো অন্ধকারে যাই...

ছেলেটি কলকাতার মঞ্চে থিয়েটার করত। বৈভবের থিয়েটার। অনেক আলো, অনেক মঞ্চ উপকরণ, অনেক বিজ্ঞাপন, নামিদামি স্টার অভিনেতা, অনেক হল ভাড়া, এককথায় অনেক টাকার নাটক। বেশ নামডাকও হয়েছিল। সিনিয়র 'নাট্য-ব্যক্তিত্ব'রা এক ডাকে তাকে চিনত। তার নাটক দেখতে আসত। সে তখন থিয়েটার জগতে যাকে বলে 'কচি-ব্যক্তিত্ব'।

একদিন ছেলেটির মগজে আলো-অন্ধকারের হিসেব গুলিয়ে গেল। মঞ্চে এত আলো অথচ দর্শকের আসন অন্ধকার কেন? যারা নাটক দেখতে আসে তাদের মুখ দেখতে পাই না কেন? নাটকে বলছি বঞ্চিত মানুষে, নর-নারীর কথা, সে কথা বলতে এত খরচ কেন? নিঃস্ব মানুষের কথা বলতে এত উপকরণ কেন? আমার জীবন-দর্শনের সঙ্গে নাট্যক্রিয়ার এত বিরোধ কেন? মত আর পথের মিল হচ্ছে না যে! আমার নাট্য পরিসর আমার চেতনার পরিসরকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে না তো?

ছেলেটি কলকাতা থেকে পালিয়ে গেল অন্য পরিসরের খোঁজে। সঙ্গী হল এক অভিনেত্রী দিদি। পালিয়ে গিয়ে প্রচুর জমি কিনে নাট্যগ্রাম বানিয়ে নাট্য-ব্যক্তিদের ডেকে এনে ঘটা করে উদ্বোধন করল না। এই দেখন-যোগীদের দলে ভিড়ল না সে। এক ফ্যাশান ছেড়ে অন্য ফ্যাশানের দিকে ছোটা বা জোটা তার ধাতে নেই। একটা ঘর, কয়েকটি চেয়ার, একটা উঠোন পরিসরে আড়াল নিল এক শৈল্পিক নিঃসঙ্গতা, নিজস্বতা। তবে পথনাটকের মতো মঞ্চ নাটকের সব উপকরণ বর্জন করল না সে। ঘরের মঞ্চেই সে বানিয়ে নিল থিয়েটার মঞ্চের এক বাহুল্য বর্জিত মঞ্চমায়া। হাতের কাছের উপকরণ দিয়েই নির্মিত হল মঞ্চ। ঘরের আলোতেই আরও কিছু আলো সংযোজন করে আলো-অন্ধকারের মজাও তৈরি করা গেল। সে আলো অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই নিয়ন্ত্রণ করে। মাত্র কুড়ি জন দর্শক বসার আয়োজন। অভিনয়ের শেষে দর্শক ভালোবেসে যা দেয় তা-ই টিকিটের মূল্য। ছেলেটি গর্ব করে বলে - আমাদের সরকারের কাছে ভিক্ষা করে দল চালাতে হয় না। সব রীতিই যখন ভাঙা হল তখন আস্ত নাট্যকারের একটা আস্ত 'রীতিমত' নাটকেরই বা দরকার কি? গল্পকে গল্প রেখেই মঞ্চে তোলো, বেছে নাও কোনো প্রবন্ধ, কোনো সংবাদ, সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো লেখা। এইভাবে তাদের সাহস ও সূজনশীলতা একদিন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ফ্যাসিবাদ' প্রবন্ধটিকেই মঞ্চে তুলে আনল। নিয়ম করে মাসে দু'দিন তাদের অভিনয়। এখন আর দর্শকের আশায় তাদের বসে থাকতে হয় না। শুধু লোকাল দর্শক নয়, এখন কলকাতা থেকেও দর্শক আসছে তাদের নাটক দেখতে। পরিচিত দর্শকের গণ্ডি ছাড়িয়ে অনেক নতুন দর্শক পরিচিত হচ্ছে, অভ্যস্ত হচ্ছে এই নাটকে। ছোট্ট পরিসরে দর্শক হয়ে উঠছে বন্ধু। ছেলেটি তো ঠিক এটাই চেয়েছিল - সকল বন্ধন মাঝে লভিব মুক্তির স্বাদ। মঞ্চ অহংকার নয়, অলঙ্কারও নয়, মঞ্চ এই বন্ধন। মায়ার বন্ধন। এইভাবে ছোট পরিসর চেতনায় বড় হয়ে ওঠে। দর্শকের মুখে আলো পড়ে।

এমন সময় কর্পোরেট ও রাষ্ট্রনেতাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে নেমে এল করোনার থাবা। সবার আগে কোপটা পড়ল শিক্ষা আর সংস্কৃতির উপর। কুম্ভমেলা বন্ধ হয় না, বন্ধ হয় বইমেলা। পানশালা বন্ধ হয় না, বন্ধ হয় পাঠশালা। রাজনৈতিক সভা বন্ধ হয় না, বন্ধ হয় থিয়েটার হল। কলকাতার নাটকের দলগুলোর মাথায় হাত। ছেলেটি মুচকি হাসে। রাষ্ট্র তাদের মঞ্চের হদিস জানে না। জানে না এভাবেও থিয়েটার হয়।

দৃশ্য ২: অন্ধকারের উৎস হতে...

ডিরেক্টর গম্ভীর। অন্যদিন গোপনে খোঁজ খোঁজ রব উঠত - দলের কে কী করল আবার! কেউ দল ছাড়ল নাকি! কিন্তু আজ সকলেই বিষণ্ণ। আজ সকলেই জানে এর কারণ লকডাউন। এত দিন শুধু মালিক লকডাউনের নোটিশ ঝোলাত রাতারাতি। এখন সরকার এক রাতের নোটিশে গোটা দেশ লকডাউন করে দিয়েছে। থিয়েটার হলও বাদ যায়নি। টানা ছ-মাস মহড়া দেবার পর দু-দিন বাদে স্টেজ রিহার্সাল, এক সপ্তাহ পর প্রথম শো-এর জন্য হল বুক হয়ে গেছে। বিশিষ্টজনেদের কার্ড পাঠনো হয়েছে। এমন সময় বজ্রাঘাত। আর, এ এমন একটা কারণ যে, সরকারের বিরুদ্ধে পথসভা বা পথনাটকও করা যাবে না। ঠিক হল এখন মহড়া বন্ধ থাকবে। নাটক 'বিসর্জন'।

মনের দুঃখে পরিচালক নিজের গাড়ি চেপে বেড়াতে চলে গেলেন কোলকাতার উপকণ্ঠে গঙ্গার ধারে বন্ধুর ফাঁকা বাড়িতে, বেড়াতে। আপন মনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ আবিষ্কার করলেন গঙ্গার ধারে একটা পুরোনো মন্দির। গঙ্গা পর্যন্ত নেমে গেছে সিঁড়ির ধাপ। মন্দিরটা দেখে মনের ভিতরে 'এত রক্ত কেন?' এমন নয় যে এই মন্দির তিনি আগে দেখেননি। কিন্তু আজ এই মন্দির, মন্দির সংলগ্ন চত্বর, পুরোনো বটগাছ, দূরে একটা জীর্ণ বাড়ি, সবকিছু মনে হল একটা নাটকের মঞ্চ। 'বিসর্জন'-এর মঞ্চ। ওই চত্বরটায় ভাড়া করা চেয়ার বসিয়ে দিলেই দর্শকের আসন। কোভিড বিধি মেনে দূরে দূরে পঞ্চাশটা চেয়ার। আর দর্শক? ওই যে, কাছের আধা-শহর আধা-গ্রামের মানুষগুলো। হয়ত এরা কলকাতায় নাটক দেখতে যায়, হয়ত এদের কেউ কেউ তাদের দলের নাটকও দেখেছে। কলকাতায় পরিচয় হয়নি, এখানে হবে।

দলের ছেলেরা এল। সাথে এল নানা বর্ণের কাপড় কাগজ, প্রাণহীন মন্দিরটাকে জীবন্ত করে তুলতে। মশাল এল আলো দিতে। কিছু বিশিষ্টজনও এলেন কলকাতা থেকে। আর পাশের নগরি থেকে এল পঞ্চাশ জনেরও বেশি মানুষ হয় নাটক অথবা রবীন্দ্রনাথকে ভালোবেসে। সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখল।

এখন দলের ভাবনা পরের প্রডাকশনটা এখানেই আরও ভালোভাবে কী করে করা যায়।

হলের ভাড়া দিতে হয় না, তাই এখন সব রিহার্সালই স্টেজ রিহার্সাল।

ডিরেক্টর দলের ছেলেদের বললেন - দেখো! এভাবেও হয়।

দৃশ্য ৩: ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর...

প্রথম দুটো মাস ঠিকই চলছিল। পরিযায়ী পড়ুয়া ছেলে এখন বাড়ি থেকেই অনলাইন ক্লাস করছে। মেয়ে তো বাড়িতেই থাকে। তার অনলাইন ক্লাসেরও বালাই নেই। নিজেই নিজের পড়াশুনা সামলাচ্ছে। অনেকদিন পর ঘরের সকলের সাথে গল্লগুজব করে 'তুমি তো বাড়িতে সময়ই দাও না' গোছের অভিযোগে খানিকটা প্রলেপ দিতে পেরে ডিরেক্টর খুশি। তাছাড়া অনেক দেশি-বিদেশি নাটক পড়ে আনন্দেই সময় কাটছে।

কিন্তু তিন-চারমাস যেতেই শরীরটা কেমন আনচান করতে শুরু করল ডিরেক্টরের। না, কোভিড নয়। ডিরেক্টর মনে করেন থিয়েটার-কর্মীদের মনের খিদে শরীর থেকে জানান দেয়। অনেকদিন ব্যায়াম করার পর হঠাৎ একদিন ছেড়ে দিলে যেমনটা হয় । শুনেছেন অনেক ডিরেক্টর বন্ধু অনলাইন মহড়া চালু রাখছেন দল আর নিজেকে চাঙ্গা রাখতে। এটা তাঁর না-পসন্দ। শুধু মন? থিয়েটার? তোমার কি শরীর নাই? শুধু কণ্ঠ? আর হাত-পা কি নীরব দর্শক?

একদিন লক্ষ করলেন ছেলের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ফোকাস করছে। মা রান্না করছে। বোন পড়ছে। ব্যালকনিতে পাখি। ব্যালকনি থেকে রাস্তার মানুষজন। পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশির সাথে ব্যালকনি টু ব্যালকনি দূরত্ববিধি মেনে আড্ডা। ছাদে উঠে দিন-রাতের আকাশ - সব ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। - কী করছিস রে? - করোনা কালের সিনেমা। - এডিটিং? সাউন্ড? - সব অ্যাপ আছে।

ডিরেক্টর কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। তারপর প্রশ্ন করলেন - একটা নাটক ঘরের মধ্যে শ্যুট করে, সাউন্ড এডিটিং করে নামাতে পারবি? - আলোটা বাদ দিলে কেন? এখন লো-ভোল্টেজ পার ফলো হ্যালোজেন সব পাওয়া যায়। রিফ্লেক্টার হিসেবে দুটো থার্মোকল - ব্যাস। আরেকটা ক্যামেরা হলে ভালো হত। ঠিক আছে, সৌভিককে ডেকে নেব।

ডিরেক্টর হামলে পড়ল বাংলা ছোটগল্প সংকলনগুলোয়। একটা ভালো গল্প, ঘরের সমস্যা নিয়ে ঘরের মধ্যে। পাওয়া গেল। এক সপ্তাহের মধ্যে নাট্যরূপ। পনের দিনের মহড়া মা-মেয়ে-বাবার। মা বলল - যাক! ভাগ্যে করোনা এল তাই আমিও একটু চান্স পেলাম। মেয়ে নাম দিল - চাটুজ্জে নাট্য কোম্পেনি। ছেলে সেটাকেই টাইটেলে চাপিয়ে দিল। ইউটিউবে একমাসে ২কে ভিউ। বাবা বলল - আমি দশটা শো করলেও এত লোক দেখত না। ছেলে বলল - এভাবেও হয়।

দৃশ্য ৪: বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে...

Bocconi University মাস্টার ডিগ্রির ছাত্রদের নিয়ে একটা অনুসন্ধান চালায়। ৪১-টি performing art institution এতে যোগ দেয়। এই গবেষণা থেকে যা বেরিয়ে আসে -

ক) থিয়েটার ব্যবসায় শতকরা ৫১ ভাগ রেভিনিউ ঘাটতি গত দু-বছরে।
খ) শো-এ ঘাটতি শতকরা ৫৬ ভাগ।
গ) নতুন প্রোডাকশনে ঘাটতি শতকরা ৪৯ ভাগ।
ঘ) এই ব্যবসায় সর্বক্ষণের কর্মী ছাঁটাই শতকরা ১২ ভাগ।

পাশাপাশি অন্য একটি চিত্র উঠে আসছে। উঠে এসেছে একটা নতুন টার্ম - ভাইরাল থিয়েটার। অক্সফোর্ডে সেক্সপিয়ারের 'টেমপেস্ট' নাটক দিয়ে এই পদ্ধতির সফল সূচনা। এখন অন্তত তিন ডজন থিয়েটার দল এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে থিয়েটার করছে। প্রধানত জুম জাতীয় অ্যাপকে কাজে লাগিয়ে মঞ্চের উপর ঘটতে থাকা একটা লাইভ পারফরমেন্সকে দর্শকের ঘরে পৌঁছে দেওয়া। আপনি বাড়িতে বসে অনলাইন টিকিট কেটে তা উপভোগ করতে পারবেন। অর্থাৎ থিয়েটারটা থিয়েটার হলেই হবে, দর্শক ছড়িয়ে থাকবে সারা বিশ্বে। এইরকম নানা ভাবে বিশ্বজুড়ে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে থিয়েটার। এমনিতেই মানুষকে গূহবন্দী রাখার অনেক কৌশল ধনতন্ত্রের আয়ত্বে। মানুষ বিচ্ছিন্ন হোক একা হোক এটাই এই ব্যবস্থার লক্ষ্য। কোভিড সেই ব্যবস্থাকে আরও তরান্বিত করেছে। সিনেমা থিয়েটারের মতো যূথবদ্ধ উপভোগকেও এই ব্যবস্থা করে তুলেছে ব্যক্তিগত। এই বিচ্ছিন্নতাকেই বিজ্ঞাপিত করা হয় ব্যক্তিস্বাধীনতা হিসেবে। সিনেমায় দর্শক প্যাসিভ, কেননা সে সামনে যাকে পায় সে ছবি, রক্তমাংসের অভিনেতা নয়। বিশ্বময় বাজারের আশায় থিয়েটার যদি দর্শককে 'ভার্চুয়াল দর্শকে' পরিণত করে তবে তা চিন্তার।

দৃশ্য ৫: বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে...

সামনে বাধা এলে, আর সে বাধার ধরনটা যদি হয় নতুন, তা অতিক্রম করার অনেক নতুন নতুন পথও খুলে যায়। অনেক নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা। বাধা একদিন সরে যায়, কিন্তু হাতে যা এল পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো তা ক্রমশ প্রত্যাশার আঠের আনাকেও ছাড়িয়ে যায়। যা ছিল প্রয়োজনের তাগিদ তা-ই হয়ে ওঠে প্রকাশের মাধ্যম। যা কখনও ভাবাই হয়নি তা করে ফেলার পর মনে হয় - তাইতো! এভাবেও হয় তাহলে? এই বাধাটা কখনওবা ভিতরের বাধা, নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। আবার কখনও বাইরের। প্রকৃতির মহামারী বা রাষ্ট্রের মহামার। যখন প্রকাশের পুরোনো প্রকরণগুলো বাতিল হয়ে নতুন প্রকরণ হাতে আসে, তখন পিছন দিকে তাকালে মনে হয় এতদিন থিয়েটার করার জন্য যে বস্তুগুলো একান্ত জরুরি বলে মনে হয়েছিল, যে পরিমণ্ডলটা ছাড়া মনে হয়েছিল থিয়েটার করা অসম্ভব, তার অনেক কিছুই তখন অসার, অতিরিক্ত মনে হয়। মনে হয় ঢক্কানিনাদ। কিন্তু মুশকিল হয় তখনই যখন পুরোনো অভ্যাস সংস্কারে পরিণত হয়। তখন ছেড়ে আসা বৈভবের মোহ কাটিয়ে ওঠা যায় না। নতুন যে আপৎকালীন সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছিল, চর্চার মধ্যে দিয়ে যা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত, তার অকালমৃত্যু হয় তখন। থিয়েটারের সঙ্গে বানিজ্য জড়িত এটা ঠিকই। কিন্তু বানিজ্য মানেই বানিজ্যসর্বস্বতা নয়। যে কোনো মূল্যে জিনিস বিকোনো নয়। নয় বৈভবের ধামাকা। দু-একজন স্টার অভিনেতা-অভিনেত্রী, আলো, পোষাক, মঞ্চ উপকরণ, চড়া আবহের নির্বোধ প্রদর্শন। কেউ কেউ তো ঘোষণাই করছেন তারা কর্পোরেট ধাঁচে নাটকের দল চালান। সরকারের কাছে কিছু সুযোগ সুবিধাও পাওয়া যায়। টাকা থাকলেই প্রদর্শন প্রবণতাও বাড়ে। তাতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি। তৃপ্তি মিত্র বলতেন - একটা ভালো নাটক আর কয়েকজন ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী দে, তাহলেই নাটক হবে। এখন নাট্যকলায় ওই দুটি জিনিসের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রোডাকশন ডিজাইনটা ঝাঁ চকচকে হলেই হবে। মনের আর মগজের দরজা রুদ্ধ করে দিয়ে দর্শকের কান আর চোখকে ব্যস্ত রাখো দু-ঘন্টা। তাহলেই হিট। কলকাতার বিশেষ কিছু হলে এই থিয়েটারের রমরমা। থিয়েটারের একটা ধারা চিরকালই এই ধামাকার বিরুদ্ধে ছিল। করোনার বাধ্যবাধকতায় বৈভব নির্ভরতা কমলে এই ধারাটা কি পরিপুষ্ট হবে? থিয়েটার খুঁজে নেবে কি নতুন পরিমণ্ডল? দেখা যাক, এভাবেও হয় কিনা।