আরেক রকম ● দশম বর্ষ ত্রয়োবিংশ সংখ্যা ● ১-১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ● ১৬-২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল, ২০২২

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়


কেন্দ্রীয় সরকার ‘দ্য ডিজিটাল পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল, ২০২২’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। বিলটি জনসমক্ষে এনে সমাজের সব মহলকে এই সম্পর্কে মতামত, অভিমত, সুপারিশ দিতে অনুরোধ করেছে যাতে সব কিছু বিবেচনা করে বিলের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা যায়। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সময়সীমা ধার্য হয়েছে। বিল প্রকাশ করার পর কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, সরকার চাইছে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য এই আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তা নিশ্চিত করতে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিমার্জন শেষে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সরকার বিলটি সংসদে পেশ করবে।

‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’য় ব্যক্তিগত তথ্য ‘সুরক্ষিত’ করে ব্যক্তির অধিকার ‘নিশ্চিত’ করতে সরকার অনেক দিন ধরেই ‘সচেষ্ট’। সচেষ্ট বলেই বছর চারেকের তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার পর ২০১৯ সালে সরকার এই বিলের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছিল। খসড়া বিলটি সংসদে পেশ করা হয়। সেই বিল নিয়ে নানা মহলে নানা আপত্তি উঠেছিল। কেননা, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার মোড়কের আড়ালে বিলের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র ও সরকারকে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী করে তোলা। তীব্র আপত্তির দরুণ সেই বিল বিবেচনার জন্য গঠিত হয়েছিল যুগ্ম সংসদীয় কমিটি। কমিটির নেতা হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ প্রেম প্রকাশ চৌধুরী। বিজেপি সদস্যদের দাবি ছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার খাতিরে ওই বিলের আওতা থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর মতো সরকারি সংস্থাদের বাইরে রাখা হোক। খসড়া বিলেও সেটাই লেখা হয়েছিল। প্রবল প্রতিরোধের মুখে সরকার সেই বিল ২০২২ সালের ৩ আগস্ট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

কিন্তু মাসতিনেকের মধ্যে এবার সরকার যে নতুন খসড়া প্রকাশ করেছে, কী আশ্চর্য, তাতেও ‘রাষ্ট্রীয় স্বার্থে’ ওই একই প্রস্তাব একটু ঘুরিয়ে রাখা হয়েছে! সঙ্গত কারণেই তথ্যভিজ্ঞ মহল এবারেও সরব। আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। এই জনমত সরকারকে আন্দোলিত করবে কি না, মতামত গ্রহণের পর সরকার তার অবস্থান বদল করবে কি না, খসড়ায় পরিবর্তন আনবে কি না সেই জল্পনা অনর্থক। কারণ, তাদের সরকার যেটা ন্যায্য ও যথাযথ মনে করেছে, গত আট বছরে কখনও সেই অবস্থান থেকে তারা পিছিয়ে আসেনি। তারা যেটা করবে বলে মনস্থ করে কখনও সেই বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি। সংসদীয় গরিষ্ঠতা এবং ছত্রখান বিরোধীদের কল্যানে তারা ‘সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস, সবকা বিশ্বাস সবকা প্রয়াস’-এর রথ গড়গড়িয়ে ছুটিয়ে চলেছে। সম্ভবত এ ক্ষেত্রেও তাই হবে।

সুপ্রিম কোর্টের ৯ সদস্যের সংবিধান বেঞ্চ ২০১৭ সালে সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছিল, ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের আওতাভুক্ত। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় ছিল যুগান্তকারী। মনে রাখতে হবে, ওই রায়ের দু’বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চালু করেছিলেন তাঁর সাধের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্প। ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র গতি যত বাড়ছে, সমাজের সর্বস্তরে যত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে তথ্য আয়ত্ত করার গুরুত্ব। প্রযুক্তি নির্ভর এই দুনিয়ায় তথ্য ভান্ডার যার যত সমৃদ্ধ সে তত লাভবান। তথ্য আহরণ, তার বিশ্লেষণ এবং বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে গৃহীত হয় যাবতীয় প্রকল্প, কর্মসূচি, সিদ্ধান্ত। নির্ধারিত হয় ‘টার্গেট গ্রুপ’। এই কারণে সাম্প্রতিক কালে গোয়েন্দা বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে ব্যক্তি, সংস্থা, সংগঠন ও কোম্পানি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যের কদর অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সব মহল তাই বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দিচ্ছে। তথ্য দাখিলের দাবিও জানাচ্ছে। ফলে সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, গগনচুম্বি এই চাহিদা ও দাবির মুখে ব্যক্তি বিশেষের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার আদৌ থাকবে কি না। সরকারের আনা এই দ্বিতীয় খসড়ায় আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে ব্যক্তি অধিকার রক্ষায় নানা রক্ষাকবচ রাখা হয়েছে। অধিকার নিশ্চিত করতে নানা উপায়ের তল্লাশি করা হয়েছে। কিন্তু নিবিড় নিরীক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এই খসড়া বিলও আদতে সরকারি অধিকারকেই নিশ্চিত ও নিরঙ্কুশ করবে। তা করতে গিয়ে সরকারের অজুহাত একটাই, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা। এই খসড়ায় রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বা জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে একাকার করা হয়েছে জনস্বার্থকে। বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে’ সরকারি সংস্থাদের এই আইনের আওতার বাইরে রাখা যাবে।

জনস্বার্থ বলতে কী কী বোঝাবে, বিলে বিস্তৃতভাবে তা বলে দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যাখ্যা অনুযায়ী সংজ্ঞার ব্যাপ্তি আকাশের মতো সীমা পরিসীমাহীন। যেমন, দেশের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব জনস্বার্থের আওতায় পড়বে। নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাও জনস্বার্থ। বিদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষার খাতিরে যা কিছু করণীয় সব জনস্বার্থের মধ্যে পড়বে। যেমন পড়বে প্ররোচনামূলক কাজকর্ম ও মিথ্যা প্রচার রোখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও। খসড়া বিলে বলা হয়েছে, এইসব জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের খাতিরে আইনের বিধান মেনে চলা থেকে সরকার তার সংস্থাদের ছাড় দিতে পারবে। যা কিছু ‘স্পর্শকাতর’ তা রক্ষায় যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাদের ছাড় দেওয়া যাবে। সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারবে। এই আইন সেই অধিকার সরকারকে দেবে। মজাটা হল, ‘জনস্বার্থ’-এর ব্যাখ্যা খসড়া বিলে দেওয়া থাকলেও ‘স্পর্শকাতর’ বলতে কী কী বোঝানো হচ্ছে সেই সংজ্ঞা রাখা হয়নি। তবে, স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন এই বিশেষ অধিকার সরকারকে দেওয়া হচ্ছে। সেই ব্যাখ্যায় খসড়া বিলে সরকার মনে করিয়ে দিয়েছে, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা বেশি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।’

ব্যক্তিস্বার্থ অলঙ্ঘনীয় কি না সেই বিতর্ক বহুদিনের। জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সঙ্গে ব্যক্তিস্বার্থের সংঘাত দেখা দিলে কোনটি কতটা প্রাধান্য পাবে, গণতন্ত্রে তা নিয়ে দীর্ঘকাল চর্চা চলছে। ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিয়ে যুগ্ম সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় স্বার্থের জন্য ব্যক্তিস্বার্থ কখন কতটা সংকুচিত করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনার সময় যুগ্ম সংসদীয় কমিটির সদস্যরা সুচিন্তিত এক মত দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, ‘ন্যায়, ন্যায্য ও যুক্তি ভিত্তিক’ ক্ষেত্র বিশেষে সরকারকে বিশেষ ছাড় দেওয়া যেতে পারে। পুরনো খসড়ায় এই রক্ষাকবচ রাখা হলেও নতুন খসড়ায় কিন্তু তার কোনও উল্লেখ রাখা হয়নি। ফলে ‘রাষ্ট্রীয় স্বার্থে’ সরকারের ক্ষমতা হয়ে যাচ্ছে অপার ও অসীম। ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’ এর চোখে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সরকারি সংস্থাদের ছাড় দেওয়ার বিষয়টি তাই ‘অস্পষ্ট ও দিগন্ত বিস্তৃত’। দিল্লি ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ডায়লগ’-এর অভিমতও তাই। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কাজিম রিজভি বলেছেন, নতুন খসড়ায় ব্যক্তির অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে কোনও রক্ষাকবচই রাখা হয়নি। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা হয়ে যাচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত। গোয়েন্দা সংস্থাদের এই ছাড় দেওয়া হলে, ছাড়ের জন্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারির অধিকার থাকলে, চিরন্তন নজরদারির জন্য ব্যক্তির অনুমতি ছাড়াই যে কোনও তথ্য তারা অনির্দিষ্টকাল কাছে রাখতে পারবে। সেই তথ্য যেমন খুশি তারা ব্যবহার করতে পারবে। কারও কোনও প্রশ্নের অধিকারই থাকবে না।

সরকারকে এভাবে সন্দেহ করা ঠিক কি না, সেই প্রশ্ন সচেতন নাগরিকের মনে উঠতে পারে। এই সেদিন এক ওয়েবিনারে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর বলেন, একান্ত প্রয়োজন না হলে সরকার ব্যক্তি অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে না। মন্ত্রী মহাশয় বলছেন বটে, কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে এমন প্রতিশ্রুতি এই সরকার গত আট বছরে বারবার খানখান করে ভেঙেছে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সরকার ‘রাফাল’ সংক্রান্ত তথ্য সুপ্রিম কোর্টে জমা দিতে অস্বীকার করেছে। শেষে সর্বোচ্চ আদালতকে যা দেখিয়েছে তা গোপনে। একই যুক্তিতে ‘পেগাসাস’ বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। এ সব ক্ষেত্রে প্রশ্নকারীদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দেশদ্রোহ আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে ও হচ্ছে চোখের পলক না-পড়তেই। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থ দেখিয়ে ‘ইউএপিএ’র মতো আইনের প্রয়োগ মুড়ি-মুড়কির মতো করে চলেছে। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদের অবমাননা চলছে দিনের পর দিন। যে গণতন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী আজ পর্যন্ত কোনও সাংসদকে সংসদে প্রশ্ন করার অধিকার দেননি, কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি, যাঁর দলের মুখ্যমন্ত্রীরা রাজ্যে রাজ্যে পান থেকে চুন খসলে বুলডোজার চালিয়ে বিরুদ্ধ স্বর স্তব্ধ করায় বিশ্বাসী, সেই সরকার কী করে এমন ধরনের সন্দেহের ঊর্ধ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে? বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে? জনগণ ঘরপোড়া গরুর মতো আচরণ করলে দোষটা তাদের নয়।

তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষিত হচ্ছে কি না দেখার জন্য খসড়া বিলে ‘ডেটা প্রোটেকশন বোর্ড’ গঠনের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সেই বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের অধিকার থাকবে পুরোপুরি সরকারের হাতে। রাজীব চন্দ্রশেখর আশ্বাস দিয়েছেন, ওই পদে কোনও সরকারি আমলাকে নিয়োগ করা হবে না। সেটাই নাকি বোর্ডের নিরপেক্ষতার সবচেয়ে বড় প্রমান। বছর বছর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অধিকর্তার মেয়াদ বেড়ে চলেছে। নির্বাচিত সরকারের চেয়ে ক্ষমতাবান করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অনির্বাচিত উপরাজ্যপালদের। সিবিআই, সিভিসি, সিএজির পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) মেরুদন্ডহীন করে তোলার কৃতিত্বের অধিকারী যাঁরা, তাঁরা বিশ্বাসযোগ্যতা কীভাবে অর্জন করতে পারেন তা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। ইসি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ, যা কিনা ভর্ৎসনারই সামিল, তীক্ষ্ণ ও তীব্র। এতে সরকারের আত্মোপলব্ধি হবে কি না তা আরও এক নতুন জিজ্ঞাসা। দেশের জনগণ এমনি এমনি সন্দেহবাতিক হয় না।

খসড়া বিলে বলা হয়েছে, গ্রাহকের সম্মতি বিনা কেউ ‘ডেটা’ বা তথ্য ব্যবহার করতে পারবে না। গ্রাহকের সম্মতি প্রত্যাহারের অধিকার থাকবে সমসময়। তথ্য অপব্যবহারের শাস্তি মোটা টাকার জরিমানা। যে সার্ভার হবে তথ্যের আধার তা দেশে অথবা বন্ধু দেশে রাখা হতে পারে। এ সবকিছু ছাপিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দিগন্ত বিস্তৃত অধিকারের প্রসঙ্গ। সরকারের প্রতি কেন এই অনাস্থা সেই অনুসন্ধান সরকারেরই করা উচিত। কোনও আত্মসচেতন, জনমুখী, গণতন্ত্রী, নির্ভরযোগ্য, নিরপেক্ষ এবং অ-কর্তৃত্ববাদী সরকারের কাছে এমন সন্দেহ সম্মানজনক ও গৌরবের নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৮ সালে ‘জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন’ (জিডিপিআর) গ্রহণ করে। গোটা পৃথিবীকে তা তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় আইন প্রণয়নে সাহায্য ও প্রভাবিত করেছে। একদর্শী ও ক্ষীণদৃষ্টি সরকারের অদূরদর্শিতা ‘জিডিপিআর’কে ব্যবহার করতে চাইছে তার আদর্শ ও রাজনীতির স্বার্থে। জনগণ সেখানে গৌণ। মুখ্য কর্তৃত্ববাদ। কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি. এন. শ্রীকৃষ্ণর সুপারিশ মেনে মোদি-সরকার ২০১৯ সালে যে খসড়া বিল পেশ করেছিল, বিচারপতি শ্রীকৃষ্ণ নিজেই তা খারিজ করে বলেছিলেন, ওই খসড়া ‘বিপজ্জনক’। বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে ভারত ‘অরওয়েলিয়ান রাষ্ট্রে’ পরিণত হবে। পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত নতুন খসড়া বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে আরও মারাত্মক! ‘রাষ্ট্রীয় স্বার্থে’ ডিজিটাল ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় গোপনীয়তা রক্ষার ব্যক্তি অধিকার অতঃপর কোন চুলোয় যাবে ঈশ্বর জানেন।