আরেক রকম ● দশম বর্ষ দ্বাবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০২২ ● ১-১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

যখন ভারতভূমি ছিল এক জীবন তরণী

মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়


২০ কোটি বছর আগের জুরাসিক পর্যায়ের সময়কার পৃথিবীতে যদি বিমানে চড়ে চলে যেতে পারতেন কেমন দেখতেন ওপর থেকে পৃথিবীটাকে? যখন বিশাল ডাইনোসররা ডাঙায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল তখন পৃথিবীর মানচিত্র কেমন ছিল?

সেই পুরনো পৃথিবীর এক পিঠে ছিল বিশাল সমুদ্র, অন্য পিঠে টানা স্থলভূমি, প্যাঞ্জিয়া। আমরা সেই মহাসমুদ্রের নাম দিয়েছি প্যানথালাসা। প্যানথালাসাকে পুরনো-প্যাসিফিক বলা যায়, কারণ সেদিনের প্যানথালাসার সঙ্গে আজকের প্রশান্ত মহাসাগর নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা আছে। প্যাঞ্জিয়ার পুব দিকে ছিল একটি ছোট সমুদ্র, টেথিস। টেথিসের তীরভূমিতে ছিল প্রচুর গাছপালা, ছিল বিশাল ফার্ন গাছ, অচেনা কনিফার এবং চেনা গিঙ্কোস। বেঁটে সুপারি গাছের মত দেখতে গিঙ্কোসের এক আধুনিক প্রকার আজকাল বাগান সাজাতে ব্যবহার করা হয়। এখানে সম্ভবত সারা বছর বৃষ্টিপাত হত। কিন্তু সুপারমহাদেশের ভিতরের ভূমি ছিল ঊষর, শুকনো। কোথাও একবিন্দু ঘাস নেই, একটা ফুল নেই। আসলে তখনও পৃথিবীতে ঘাস, ফুল আসেনি।

পৃথিবীর ইতিহাসে সমস্ত স্থলভাগ বারবার একত্রিত হয়েছে, আবার ভেঙে গেছে। ২০ কোটি বছর আগে সুপারমহাদেশ প্যাঞ্জিয়া দুই খণ্ডে ভাঙতে শুরু করে। দুই ভূখণ্ডকে ফালি করে অতলান্তিক মহাসাগর জামার চেন খোলার মত ফাঁক হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ধীরে ধীরে খুলে গেছে। ফলে উত্তরে লরেশিয়া মহাদেশ প্যাঞ্জিয়ার বাকি অংশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লরেশিয়া ভূখণ্ডে ছিল আজকের ইউরেশিয়া এবং উত্তর আমেরিকা। এ অন্তত ১৫ কোটি বছর আগের কথা।

গোন্দ থেকে গন্ডোয়ানা

তখনও অতলান্তিক মহাসাগর দক্ষিণে বিস্তারলাভ সম্পূর্ণ করেনি, তখনও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারতভূমি, অ্যান্টার্কটিকা পরস্পর যুক্ত ছিল। সেই সুপারমহাদেশকে বলে গন্ডোয়ানাল্যান্ড। এই নামকরণের এক গল্প আছে। ১৮৮৫ সালে ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রিয়ান ভূতাত্ত্বিক এডুয়ার্ড সুয়েস প্রথম একত্রিত ভূমির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এই ভূতত্ত্ববিদ ঝাড়খণ্ডের কয়লা খনি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পাওয়া উদ্ভিদ জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে দেখতে পেলেন যে, উদ্ভিদের এই জীবাশ্ম শুধু ভারতেই পাওয়া যায় না, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, মাদাগাস্কার এমনকি অ্যান্টার্কটিকাতেও পাওয়া যায়। আবার এই জীবাশ্ম উত্তর গোলার্ধে পাওয়া যায়নি। তখন তাঁর চিন্তায় আসে যে, ভূখণ্ডগুলো কোনও এক সময়ে হয়তো যুক্ত ছিল।

এক ব্রিটিশ অনুসন্ধানকারীর লেখা পড়ে মধ্যপ্রদেশের গোন্দ জনজাতিদের নামে তিনি সেই প্রাচীন ভূমির নামকরণ করেছিলেন, গন্ডোয়ানাল্যান্ড। গন্ডোয়ানাল্যান্ডের ধারণাটি ১৯৩৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ভূতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার ডু টয়েট আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর বই, 'আওয়ার ওয়ান্ডারিং কন্টিনেন্টস'-এ তিনি এই মহাদেশগুলিতে পাওয়া প্রত্নজীববিদ্যা এবং ভূতাত্ত্বিক প্রমাণগুলোর কথা বিশদভাবে বলেছেন।

ভারতভূমি তখন ছিল দক্ষিণ গোলার্ধে। অবশ্য এই যুক্ত স্থলভাগ একেবারে দক্ষিণ মেরুতে ছিল না, আর তখন মেরু অঞ্চলও বরফে ঢাকা ছিল না। এই স্থলভাগ ছিল জঙ্গলে ঢাকা; তখন অ্যান্টার্কটিকাতেও ডাইনোসর ঘুরে বেড়াতো। অবশ্য তখনও অ্যান্টার্কটিকাই ছিল পৃথিবীর দক্ষিণের শেষ স্থলবিন্দু। গাছ এবং ঠাণ্ডা রক্তের সরীসৃপের জীবাশ্ম দেখে তখনকার ভারতভূমির জলবায়ু কেমন ছিল তার একটি চিত্র তৈরি করা যায়। তখন সেই অঞ্চলের আবহাওয়া ছিল অনেকটা আজকের ইতালির মত, এই পচা গরমে ঘামতে ঘামতে, ভাবতেই মন ভরে যায়, বসে আছি যেন ইতালির কোনো লেগুনের ধারে।

এই সব কাণ্ডকারখানা, ভাঙ্গনের প্রভাব প্রাণীদের মধ্যে পড়েনি। প্রাণীরা মোটেই আতঙ্কিত হয়নি, কারণ তারা একেবারে টেরটি পায়নি। পৃথিবী ছিঁড়ে গেছে, ভূমিকম্প হয়েছে, অগ্নুৎপাত হয়েছে। এসব হয়েছে কয়েক কোটি বছর ধরে। যেমন আজকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে উত্তরে লেবানন পর্যন্ত দীর্ঘ গ্রেট রিফ্ট ভ্যালিতে থাকা অসংখ্য পশু আর মানুষ পৃথিবীর নতুন এই ফাটলকে মোটেই বুঝতে পারে না। অথচ এই অঞ্চলও ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয়, এখানেও আগ্নেয়গিরি এবং ভূমিকম্পে মহাদেশ ভাঙার আলামত সুস্পষ্ট।

যাত্রা শুরু

জুরাসিক পর্বের শেষভাগে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অবশ্য মাদাগাস্কার আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারত এবং বাকি গন্ডোয়ানার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই সময়ে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট মূল গন্ডোয়ানাল্যান্ড ছেড়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এশিয়ায় তার বর্তমান অবস্থানের দিকে যাত্রা শুরু করে। ভারত, শ্রীলঙ্কা, সেশেলস ও মাদাগাস্কারের মিলিত স্থলভাগ অ্যান্টার্কটিকাকে টাটা করে উত্তরের পথে চলতে থাকে। ক্রিটেসিয়াসের শেষের দিকে, ৮.৮ কোটি বছর আগে ভারত ও মাদাগাস্কারের বিচ্ছেদ শুরু হয়, যা আজকের ‘ম্যাপসই’ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে। তখনও ভারত-ভূখণ্ড দ্বীপভূমি, তখনও সেই ভূখণ্ডে ছিল না ভারতের আইকনিক হিমালয় পর্বতমালা, ভারতভূমির মাথা তখনও মোড়ানো।

ভারতভূমিতে সরীসৃপ বংশের ডাইনোসরেরা

ক্রিটেসিয়াস পর্যায়ের শেষের দিকে, ৮ কোটি বছর আগে কোন ডাইনোসররা চরে বেড়িয়েছে সেই ভারত-তরণী? টিরানোসরাস রেক্স-এর ফসিল এই দেশে পাওয়া যায়নি। কারণ তখন টি-রেক্স আমেরিকাতে উদ্ভূত হবার আগেই মহাদেশগুলো অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। তবে তার খুড়তুতো ভাই তখন এখানে ছিল। এই সময়ের ডাইনোসর জীবাশ্মের সেরা নিদর্শনগুলো পাওয়া যায় নর্মদা নদের ধারে। জবলপুর অঞ্চলে পাললিক শিলার মধ্যে পাওয়া গিয়েছে পেল্লায় লম্বা গলাওয়ালা ৮০ ফুটের ওপরে লম্বা আর ৪০ ফুট উঁচু; প্রায় চার তলা বাড়ির সমান টাইটানোসরাসের অত্যাশ্চর্য জীবাশ্ম। সেই সময়ে এই অঞ্চলে অগভীর সাগর ছিল। তাতে ছিল ছোট বড় দ্বীপ। সেই জলাভূমির পাশে বেশ গোবেচারা মত প্রকাণ্ড ডাইনোসররা গাছপালার সন্ধানে ঘুরে বেড়াত।

নর্মদার ঘন জঙ্গলে ছোটখাট মাংসাশী ডাইনোসর ইন্ডোসরাসের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। আর ছিল ইন্দোসুকাস। ইন্দোসুকাস কিন্তু ছোট নয়। এদের মাথার খুলি ছিল প্রায় তিন ফুট লম্বা। সামনের ক্ষুরের মত ধারালো দাঁত ছিল ৪ ইঞ্চি লম্বা, অর্থাৎ আপনার মাঝের আঙ্গুলের সমান। ইন্দোসুকাস সম্ভবত দল বেঁধে শিকার করত।

মধ্য ভারতে পাওয়া গেছে ডাইনোসরের বাসা। ১৯৮২ সালে বিখ্যাত প্রত্নজীবাশ্মবিজ্ঞানী অধ্যাপক অশোক সাহনি আহমেদাবাদের কাছে রাহোলিতে গিয়ে নারকেলের সাইজের গোলগাল পাথর দেখে সেগুলোকে ডাইনোসরের ডিম হিসাবে চিহ্নিত করেন। ওই অঞ্চলে সিমেন্ট কারখানা তৈরির সময়ে এই 'কামানের গোলা’গুলো আবিষ্কৃত হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই অঞ্চল এবং তার চারিপাশে অজস্র ডাইনোসরের নেস্ট বা ডিম পাড়ার বাসা পাওয়া যায়। ডাইনোসররা কাদামাটির মধ্যে সারি দিয়ে ডিম পাড়তো। বোঝা যায় 'রাহোলির নেস্ট' ছিল পৃথিবীর অন্যতম বড় ডাইনোসরের বাসা।

ওই অঞ্চলে টেম্পল হিল সাইটে বেশ কিছু ডাইনোসরের হাড় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এটি কোন সাধারণ ডাইনোসর নয়। ভারতে ক্রিটেসিয়াস যুগের সব চাইতে বড় মাংসাশী প্রাণীটির নাম হল রাজাসরাস নর্মডেনসিস (নর্মদার রাজা টিকটিকি)। এর খুলির আকার থেকে অনুমান করা যায় যে, শিকারী প্রাণীটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৩২ ফুট। যদিও ‘নর্মদার রাজা টিকটিকি’ টিরানোসরাস রেক্সের চেয়ে সামান্য ছোট ছিল, তবে রাজাসরাস সম্ভবত আরও হিংস্র ছিল। ছিল আরও ক্ষিপ্র এবং এদের কামড় ছিল শরীর অনুপাতে বেশি জোরালো। এই দুই ভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর ছিল তখনকার পৃথিবীর দুই প্রান্তের রাজা।

নোয়ার আর্ক বনাম নাগকন্যা

ইউরোপীয়রা সেই আলগা হয়ে যাওয়া ভারতভূমিকে বলে নোয়ার আর্ক। রকমারি ডাইনোসর, সরীসৃপ, উদ্ভিদ, পোকা-মাকড় ইত্যাদি জীবন্ত প্রাণী নিয়ে নোয়ার জাহাজ চলেছে অজানা সফরে। আমরা এই তরণীর একটা নতুন নাম দিতে পারি। সেই ভারতভূমি যেন নাগরাজ বাসুকীর কন্যা। ডাইনোসর হল সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। সরীসৃপ বংশের ডাইনোসর ও অন্য প্রাণীদের বাঁচাতে সে অ্যান্টার্কটিকাকে ঝেড়ে ফেলে মহাকাব্যিক ভ্রমণ শুরু করে। আবার সত্যি সত্যি ধরে নেবেন না যেন, ভারতভূমি স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্না হয়েছিল। আসলে সে প্লেট টেক্টনিকের গুঁতোয় বাধ্য হয়েছিল উত্তরের পথে চলতে। তবে রোমান্টিসিজমের মিঠে ভাবনায় ভর দিয়ে ভাবতে অসুবিধা নেই যে, শৈত্যের হাত থেকে, অভূতপূর্ব ভবিষ্যতের বিপদ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের প্রাণীদের রক্ষা করতে অর্ধেক পৃথিবী পেরিয়ে দ্রুত বেগে সে সাঁতরে চলেছিল বিষুব রেখা ছাড়িয়ে উষ্ণ পৃথিবীর দিকে। চলার পথে একসময়ে তার গতি ছিল বছরে ১৮-২০ সেমি। ভূতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে এই গতি রীতিমত বিপজ্জনক রকমের বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি বছর ধরে এই যাত্রা চলেছে।

স্বাভাবিকভাবেই, এই যাত্রা মহাসমুদ্রের বুকে কোনো স্থলভূমির ভেসে বেড়ানো ছিল না, সমুদ্রের নিচে একটি প্লেট অন্যটার নীচে পিছলে গেছে, সেই ভূমি ক্রমাগত ধাক্কা মেরেছে ভারতীয় প্লেটকে। বারবার ভূমিকম্প এবং অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে এবং ভারতের প্লেট ক্রমাগত উত্তরে সরে গেছে। সেই ভয়ানক লাভা উদগীরণের চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে। ইলোরার অসাধারণ রক কাট মন্দির দেখতে সারা পৃথিবী থেকে ট্যুরিস্ট ভিড় করেন মহারাষ্ট্রে। সেই মন্দির তৈরি হয়েছিল ক্রিটেশিয়াসের শেষে লাভা উদগীরণের ফলে যে ব্যাসল্ট পাথর তৈরি হয়েছিল সেরকম এক একশিলা খোদাই করে।

শেষ পর্যন্ত ভারতীয় প্লেট ইউরেশিয় প্লেটকে ধাক্কা মারল। অগভীর টেথিস সাগরের জায়গায় জলের থেকে যেন সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠল হিমালয় পর্বতমালা এবং তিব্বতের মালভূমি। সে মাত্র ৫.৫ কোটি বছর আগের কথা। অন্যান্য পর্বতের তুলনায় হিমালয় বড্ড নবীন, তাই সে এখনও বেড়ে উঠছে আর বৃদ্ধির চঞ্চলতায় পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে শিলা। তখন পৃথিবী থেকে ডাইনোসররা লুপ্ত। মেসোজোয়িক বা মধ্যকল্প শেষ, শুরু হয়েছে সেনোজোয়িক বা আধুনিকতম কল্প।

এই প্রসঙ্গে একটা মজার গল্প বলি, তার সঙ্গে আবার কলকাতারও যোগ রয়েছে।

কাশিমবাজারের জব চার্নক ও বিবেকানন্দ রক

দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু দেশে এক বিশেষ রকমের শিলা পাওয়া যায়, তার নাম চার্নকাইট। ভারতবর্ষের দক্ষিণ বিন্দু বিবেকানন্দ রকে বহু বাঙালি গিয়েছেন। মূল স্থলভূমি থেকে স্টিমারে যেতে হয় ওই ছোট্ট পাথরে, যেখানে মিলেছে তিন সমুদ্র। বিংশ শতকে চার্নকাইট দিয়ে তৈরি হয়েছিল বিবেকানন্দ রকের বিশিষ্ট স্মৃতিস্তম্ভ বিবেকানন্দ স্মৃতিসৌধ। স্তম্ভটি একটি ছোট একশিলা চার্নকাইট পাথরের উপরে নির্মিত। দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরে অবস্থিত ভারতীয় মূল ভূখণ্ড। এই চার্নকাইট শিলা পাওয়া যায় আবার অ্যান্টার্কটিকার পূর্ব প্রান্তে। এক সময়ে ভারতভূমি যুক্ত ছিল অ্যান্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। তারপরে যখন ভারতভূমি অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তখন মায়ের পেছনে বাচ্চার মত সেই পাথর লেগে থেকেছে ভারতভূমির সঙ্গে। এই অবস্থানটি ভূতত্ত্বে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সেই প্রাচীন 'ব্রেকিং পয়েন্ট ' যা ভারতকে অ্যান্টার্কটিকার সাথে সংযুক্ত করেছিল। আর চার্নকাইট নামটা এসেছে, ঠিকই ধরেছেন, কলকাতা শহরের প্রতিষ্ঠাতা বলে যাকে ভাবা হয় সেই জব চার্নকের নাম থেকে। ১৮৯৩ সালে ভূতাত্ত্বিক টি. এইচ. হল্যান্ড ভারতের কলকাতার সেন্ট জনস চার্চে জব চার্নকের সমাধির নামানুসারে এর নামকরণ করেন। চার্নকের সমাধিও ছিল এই বিশেষ শিলা দিয়ে তৈরি।

ভারত অ্যান্টার্কটিকার থেকে বিচ্ছেদ নিয়ে চলে এসেছিল। সঙ্গে করে এনেছিল এদের এক সন্তানকে। এই দেশে বসেই ছুঁয়ে আসতে পারেন তাকে। প্রাচীন সেই শিলাস্তুপকে। ভূতত্ত্ববিদরা এই বিন্দুকে বলেন ‘গন্ডোয়ানা জাঙ্কশন’। তবে পণ্ডিত থাকলে বিতর্কও থাকে, এতো আমরা সকলেই জানি। এটাই ভারতের সঙ্গে আন্টার্কটিকার ভেজালহীন সন্তান কিনা তাই নিয়েও আছে বিতর্ক।

সাধে কি আর ভারতভূমিকে নাগরাজকন্যা বলেছি!


তথ্যসূত্রঃ

১) Chatterjee, Sankar & Scotese, Christopher & Bajpai, Sunil. (2017). The Restless Indian plate and its epic voyage from Gondwana to Asia: Its tectonic, paleoclimatic, and paleobiogeographic evolution. Special Paper of the Geological Society of America. 529. 1-147. 10.1130/2017.2529.
২) Jennifer Chu, India drift, MIT researchers explain mystery of India’s rapid move toward Eurasia 80 million years ago, MIT News Office.
৩) Michel J Benton, The history of Life, a very short introduction, Oxford, 2008.
৪) Pranay Lal, Indica, A deep Natural History of Indian Subcontinent, Penguin Random House, India, 2016.
৫) Mikhalsky, Evgeny & Sheraton, J. W. & Hahne, K. (2006). Charnockite composition in relation to the tectonic evolution of East Antarctica. Gondwana Research. 9. 379-397. 10.1016/j.gr.2005.11.007.