আরেক রকম ● দশম বর্ষ দ্বাবিংশ সংখ্যা ● ১৬-৩০ নভেম্বর, ২০২২ ● ১-১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

প্রবন্ধ

ঈশ্বর এবং বিজ্ঞানঃ বিশ্বাস বনাম প্রমাণ

শুভময় মৈত্র


এই লেখা ঈশ্বর এবং বিজ্ঞান নিয়ে। সঙ্গে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ শুরুতেই থাকল। এই আলোচনা যেহেতু সরাসরি অঙ্ক বা বিজ্ঞান নয়, তাই এর পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি আর প্রতিযুক্তি থাকবেই। পাঠক পাঠিকাদের কাছে তাই এই লেখা কোন নিদান নয়। এর মধ্যে ঠিক ভুল মিশে আছে, এবং ব্যাখ্যা যিনি পড়ছেন তাঁর। জীবন, সমাজ বা রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ের মতই ঈশ্বর এবং বিজ্ঞানের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকবেই। আর সেই দ্বন্দ্ব একদিকে যেমন সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অন্যদিকে সেই দ্বন্দ্ব ব্যবহার করে মুনাফা লোটারও চেষ্টা করবে অনেকে। তবে এই লেখা ঈশ্বর এবং বিজ্ঞান নিয়ে যত না, তার থেকে বেশি বিশ্বাস এবং প্রমাণের দ্বন্দ্ব নিয়ে। শুরুতেই সহজ কিছু আলোচনা সেরে নেওয়া যাক। মানবসভ্যতার একেবারে শুরু থেকে বুদ্ধি আমাদের একটা বড় অস্ত্র। বুদ্ধি থেকেই অধিকতর যুক্তির সৃষ্টি হয়, আর সেখান থেকেই আমরা সত্যি মিথ্যে বোঝার চেষ্টা করি, কোনো ঘটনার কারণ বোঝার চেষ্টা করি, ঘটনা ঘটে গেলে তার অনুসিদ্ধান্ত খুঁজি। সেই প্রসঙ্গেই কিছু সত্যির উদাহরণ খুঁজে নেওয়া যাক শুরুতে। যেমন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এই ঘোরা আমরা দেখতে পাই না। অন্যদিকে সবার চোখের সামনে সূর্য বেচারি রোজ সকাল সন্ধে পূর্বদিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়। এই নিয়েই গত সহস্রাব্দ থেকে অসম্ভব হানাহানি। সাধারণভাবে ঈশ্বর বা ধর্ম নিয়ে যাদের ব্যবসা, তারা কিছুতেই পৃথিবীর অবমাননা সইবেন না, বলবেন পাক মারছে সূর্য। অন্যদিকে গ্যালিলিওর মত লোকজন হাজার অত্যাচার সত্ত্বেও সত্যকে প্রমাণ করেই ছাড়বেন। শেষমেশ কয়েক শতক আগেই আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমাধান করতে পেরেছি এই সূর্য আর পৃথিবীর ঘোরাঘুরির বিষয়টা। সেখানে কোন বিশ্বাসের প্রশ্ন নেই, আছে সঠিক তথ্যপ্রমাণ, এবং তা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। আজকাল তাই আর চার্চের পাদ্রীসাহেব খুব একটা উল্টো বোঝানোর চেষ্টা করেন না। তবে দোষ আমাদেরও আছে। শোনা যায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেছিলেন, "আমি ক্লাসে এত করিয়া ছাত্রদের পড়াইলাম, যে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপরে পড়িয়া চন্দ্রগ্রহণ হয়। তাহারা তা পড়িল, লিখিল, নম্বর পাইল, পাস করিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হইল যখন আবার সত্যি সত্যি চন্দ্রগ্রহণ হইল তখন চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করিয়াছে বলিয়া তাহারা ঢোল, করতাল, শঙ্খ লইয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। ইহা এক আশ্চর্য ভারতবর্ষ।" শুধু প্রফুল্লবাবুর ভারতবর্ষ নয়, আসলে গোটা পৃথিবী এমনই। মানুষের যুক্তিবোধের ক্ষেত্রে বহু বিষয় এতো বেশি অসরলরৈখিক, যে সহজ অঙ্কে আমাদের মনের নাগাল পাওয়া অসম্ভব।

অর্থাৎ শুরুতেই বুঝে নিতে হবে যে, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোন বক্তব্য বা বিষয় প্রমাণ করা অসম্ভব না হলেও ভীষণ কঠিন। সামাজিক সমস্যা তো থাকেই। সবথেকে বড় কথা যুক্তি দিয়ে কিছু প্রমাণ করা সবসময় শক্ত। তার জন্যে অনেকটা প্রস্তুত হতে হয়, শিখতে হয় অনেক কিছু। অর্থাৎ অনেক সময় ধরে বিপুল পরিশ্রমের ফল একটা বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ। মাধ্যমিকের জ্যামিতিতে ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ প্রমাণ করতেই মানুষের অনেক দিন লেগেছে। আবার সেখানেও সাবধান থাকতে হবে যে ত্রিভুজটি সমতলে আঁকা। বিশ্বাসে কিন্তু কোনও বখেড়া নেই। আমি বিশ্বাস করে নিলাম মা কালীকে। ঝামেলা মিটে গেল। আমার বিপদে আপদে তিনি পাশে এসে দাঁড়াবেন, এই আত্মবিশ্বাস মনের মধ্যে থাকলে, সকালবেলা স্নান সেরে "মায়ের পায়ে জবা হয়ে" গাইলে মন বেশ ঝরঝরে লাগে। তাই শুরুতেই একথা বলে নেওয়া যাক, যে অন্য লোকের সঙ্গে ঝামেলা না করে নিজের মতো করে ঈশ্বর বিশ্বাসে সমাজ সংসারের কোন অসুবিধে নেই। এবং এই কাজটা তুলনায় সহজ। এর জন্যে পরিশ্রম কম। অর্থাৎ সৎ ধর্ম বা ঈশ্বর বিশ্বাস খুব সহজেই সমাজজীবনকে একটা সুস্থ ধারার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেখানে জটিল আঙ্কিক বা বিজ্ঞানসম্মত সত্য-মিথ্যার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সরল প্রমাণ-বর্জিত সৎ-অসৎ-এর দ্বন্দ্ব। এটুকু বুঝতে অসুবিধে হয় না যে একশ্রেণীর মানুষ ধর্ম বা ঈশ্বরকে ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এ প্রসঙ্গে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের কথা অবশ্যই উঠে আসবে। রাজনীতি এবং ধর্মের মেলবন্ধনে এই দুনিয়ায় যে কত যুদ্ধ হয়েছে, কত মানুষ মরেছে, তার ইয়ত্তা নেই। তবে এই লেখার মূল বিষয় থেকে দূরে সরে গিয়ে লাভ নেই। বিশেষ করে যখন বিজ্ঞানও অস্ত্র বানিয়ে যে পরিমাণ মানুষ মেরেছে তা গোনা বেশ শক্ত।

প্রমাণ এবং বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে আর যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণতা এবং অনিশ্চয়তার প্রভাব। বিজ্ঞান শুরুতেই মেনে নেয় যে, সে অনেক কিছু জানে না, অনেক কিছুর সমাধান সে যুক্তি দিয়ে এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। সহজ উদাহরণ, কখন ভূমিকম্প হতে পারে তা আগে থেকে বলে দেওয়া আজকের দিনেও প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে বিজ্ঞান এগিয়েছে। কারণ আপনার মুঠোফোনে আজকাল আপনি প্রায় নিখুঁতভাবে জানতে পারেন সাইক্লোনটা ঠিক কোন পথে আসছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণতা হল কোন একটি বিষয়, যেখানে সমস্যাটি আমি জানি, কিন্তু তার সমাধান এখনও যৌক্তিক উপায়ে করে ওঠা যায়নি। ধরুন প্রশ্ন হল, একটি জোড় সংখ্যাকে কি সবসময় দুটি মৌলিক সংখ্যার যোগফল হিসেবে লেখা যায়? একটি জোড় সংখ্যাকে যে সবসময় দুটি বিজোড় সংখ্যার যোগফল হিসেবে লেখা যায় এর প্রমাণ খুব সহজ। আগে উদাহরণ নিয়ে কাজ করা যাক। জোড় সংখ্যা যদি আট হয়, তাহলে তার থেকে ছোট একটি বিজোড় সংখ্যা পাঁচ নিয়ে নিন। বাকি থাকবে আর একটি বিজোড় সংখ্যা, অঙ্ক মিলবে সহজে। এবার আট না বলে যে কোনো জোড় সংখ্যা 'ক' ধরুন। তার থেকে ছোট একটি বিজোড় 'খ' নিন। 'ক' থেকে 'খ' বিয়োগ করলে যে সংখ্যা 'গ' পাবেন সেটি বিজোড়। কিন্তু বিজোড়ের বদলে যেই মৌলিক বলবেন, অমনি খেলা ঘুরে যাবে। সেখানে উৎপাদকে বিশ্লেষণের উৎপাতে তিনটি শতক ধরে রণক্লান্ত হাজারো গণিতজ্ঞ। গোল্ডবাক সাহেব ১৭৪২ সালে অয়লার মহাশয়কে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার সম্পূর্ণ সমাধান এখনও হয়নি। একেই বলে বিজ্ঞানের অসম্পূর্ণতা। এবার অনিশ্চয়তায় আসা যাক। পরমাণুর গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বৈদ্যুতিন কণা। কে যে কোন কক্ষে কখন আছেন, সেটা কোনো সময়েই সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব নয়। হাইসেনবার্গ সাহেব একথা বলেছিলেন ১৯২৭ নাগাদ, আর আমাদের সুকুমার রায়ের গেছোদাদার কথা তো আমরা সকলেই জানি। অর্থাৎ এখানে অনিশ্চয়তা যে থাকবে, সেটাই প্রমাণ করে বিজ্ঞান। আর সেই অনিশ্চয়তাকে কতটা ভালো অনুমান করা যাবে, সেখানেই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সাফল্য। ধর্ম এবং ঈশ্বর সাধনার যে গভীর দর্শন, সেখানে এই অসম্পূর্ণতা আর অনিশ্চয়তার কথা উঠে এসেছে বারবার। যেখানে আমরা এই অসম্পূর্ণতার আর অনিশ্চয়তার কাছে অসহায়, সেখানেই তো ধর্ম আমাদের ধারণ করে, ঈশ্বর আমাদের আগলে রাখেন। ঠিক সেই জায়গাতেই ঈশ্বর আমাদের বিশ্বাস। মন যে জটিলতার সঙ্গে কাজ করে, সেখানে কোনো এক অপ্রমাণিত বিশ্বাস যদি চলার পথে সাহস যোগায়, তাতে ক্ষতি কি?

ক্ষতি অন্য জায়গায়। ক্ষতি সেখানেই, যেখানে বিরিঞ্চিবাবা হাত নেড়ে সূর্য ওঠান। ক্ষতি সেখানেই, যেখানে অদ্ভুত মানসিক বৈকল্য নিয়ে দেবতার নামে নরবলি হয়। ক্ষতি সেখানেই, যেখানে রাজনৈতিক লাভের জন্যে ধর্মের হানাহানিকে চাগিয়ে দেওয়া হয়। আবার আগে যেমনটা বলছিলাম, বিজ্ঞানের যুক্তিবোধে সৃষ্টি হওয়া বোমা-গুলিও মানুষের ক্ষতিতে সরাসরি সাহায্য করে। অর্থাৎ ছোটবেলার রচনা লেখার সেই বিষয় রয়ে গেছে আজও। বিজ্ঞান বলুন বা ঈশ্বর, তিনি আশীর্বাদ হবেন, নাকি অভিশাপ, তা নির্ধারিত হয় মানুষের হাত ধরেই। সবার ওপরে সত্য মানুষ তাই দুনিয়ার সব মিথ্যেরও দখলদার। সেই জায়গাতেই সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়টায় আসা যাক।

ধরা যাক, একজন মানুষের যথেষ্ট বিজ্ঞান শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে খবর হওয়া নেতানেত্রীর মত ভুয়ো নয়, বরং তিনি দেশ বিদেশের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহু খেটে সেই বিজ্ঞানী ডিগ্রি জুটিয়েছেন। তিনি আবার একই সঙ্গে ধর্ম বা ঈশ্বর বিশ্বাসী। তিনি যতক্ষণ এই দুইয়ের সমন্বয় সাধন করছেন, ততক্ষণ সভ্যতা এগোয়। অর্থাৎ একজন স্থাপত্যবিদ খুব দায়িত্বের সঙ্গে একটি কালীমন্দির নির্মাণ করলে এবং সেখানে আনন্দের উৎসব হলে সমাজ শান্তিতে থাকে। কিন্তু সেই জায়গায় পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক দেশের মন্ত্রী হয়ে গণেশের দুধ খাওয়া নিয়ে রাজনীতি করলে তার বিপদ অনেক বেশি। বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ যখন ঈশ্বর এবং ধর্মকে ব্যক্তি বা দলগত স্বার্থে বিক্রি করার চেষ্টা করেন, এবং সেই কারণে বিজ্ঞানকে বিকৃত করেন, সেই বিপদ সবথেকে ক্ষতিকারক। অর্থাৎ যদি দেখা যায় পদার্থবিজ্ঞানের জটিল তত্ত্বকে সচেতনভাবে ভুল ব্যাখ্যা করে আমাদের বিশ্বাসের মা কালীকে প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে, তখনই সচেতন হওয়ার প্রয়োজন। দক্ষিণেশ্বরের সন্ধ্যারতি, ধূপ-ধুনোর গন্ধ, অনেকে মিলে ঈশ্বরের আরাধনা আমাদের বিশ্বাসের পরিধিকে বাড়ায়, মনকে শুদ্ধ করে। কিন্তু তা কখনই আঙ্কিকভাবে বা অন্য কোন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মায়ের পার্থিব অস্তিত্বের প্রমাণ দেয় না। ঈশ্বর আর বিজ্ঞানের তাই দ্বন্দ্ব নেই, যেমন দ্বন্দ্ব নেই বিশ্বাস আর প্রমাণের। কিন্তু বিশ্বাস আর প্রমাণকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলেই মুশকিল। দেবতাকে বিশ্বাস করে উদ্বুদ্ধ দেশনেতা যদি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রমাণ করতে পারেন যে, আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্যসুরক্ষা বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব, সেখানেই সভ্যতার সার্থকতা। রামপ্রসাদ বা লালনের কথা যদি সলিল চৌধুরীর গানে মিশে আজকের কৃষককে নিজের জমির ধান নিজের ঘরে তোলায় উদ্বুদ্ধ করে, আর সেখানে কৃষিবিজ্ঞানী বুঝিয়ে দেন ফলন কিসে বাড়বে, সেখানেই মেলে ধর্ম, রাজনীতি আর বিজ্ঞানের সঠিক মিশেল।

আবার তাই মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে সবথেকে বিপজ্জনক মানুষ হলেন বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত সেইসব বিজ্ঞানী বা প্রযুক্তিবিদ, যারা বিশ্বাসকে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রমাণের নামে, অন্ধ কুসংস্কার বিক্রি করেন নিরীক্ষার মোড়কে। বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্মেলনে যখন অবৈজ্ঞানিক কথা আসে তখনই মুশকিল। অবশ্যই বৈদিক যুগে কিছু না কিছু অঙ্ক ছিল। কিন্তু সেই অঙ্ককে আজকের দিনে ব্যবহার করে গণকযন্ত্রের জটিল সার্কিট বানানো এবং তা নিয়ে গবেষণাপত্র লেখা অত্যন্ত গোলমেলে কার্যকলাপ। এতে বিশেষ বিশেষ ধর্ম বা রাজনীতিকে পুষ্ট করা যেতে পারে, বিজ্ঞানকে নয়। ঘরের কোন কোণে কোন দেবতার মূর্তি রাখলে সংসারে সুখশান্তি বিরাজ করবে এই বাস্তুশাস্ত্র দেশের সর্বোত্তম কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সিলেবাসের অংশ হতে পারে না। মিষ্টির দোকানের ক্যালেন্ডারে মা কালীর ছবি থাকায় কোন অস্বাভাবিকতা নেই, কিন্তু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে সনাতন ঈশ্বরবিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিক যুক্তি হিসেবে পেশ করা অবশ্যই অপরাধ। বিজ্ঞানের অনিশ্চয়তা বা অসম্পূর্ণতাকে যদি কোনো ঠগ ধর্ম বা ঈশ্বরের নামে বেচেন, তার থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আর সেই ঠগবাজ যদি ডিগ্রিধারী বিজ্ঞানী হন, তখন সমাজের বিপদ সবথেকে বেশি। পৃথিবীতে ঈশ্বর এবং ধর্মভিত্তিক আনন্দের উৎসব আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিজ্ঞানকে সঙ্গী করেই সেই বিশ্বাসে সামিল হওয়াটাই উৎসবের সার্থকতা। এটুকু আশা তাই উপসংহারে রাখা যেতেই পারে যে, ঈশ্বর বিশ্বাসের আর বিজ্ঞান প্রমাণের সঙ্গে এই লেখার শুরুর মতই আরও একটি বিজ্ঞানসম্মত (বিধিসম্মত না হলেও চলবে) সতর্কীকরণ থাকুক, যে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সত্য কিংবা মিথ্যার বিষয়টা আদৌ প্রামাণ্য বা যুক্তিভিত্তিক নয়। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণতা এবং অনিশ্চয়তার গণ্ডী পেরিয়ে যদি কিছু দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সঠিকভাবে প্রমাণিত হয় তখন তা সত্যই, এবং সেটাই সত্য। তাই বিধাতার আশীর্বাদ থাকুক কি না থাকুক, ঈশ্বরে বিশ্বাস থাকুক কি না থাকুক, পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘোরে।